আগের পর্ব (২৭)
গাড়ীতে উঠে বশলাম, দুইজন দুই প্রান্তে বসার চেষ্টা করলাম যাতে মাঝখানে ফাঁকা থাকে, দুইজনই চুপচাপ, আমাদের আসলে আর কিইবা কথা থাকতে পারে, আমাদের দুরুত্ব এখন দুই সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ আগেও রুমির প্রতি হয়তো আমার কিছুটা অধিকার ছিল আজ আমার খালি হাত, নদীর তীরে দাঁড়িয়ে যদিএকটা কাগজের নৌকা ভাসিয়ে দেয়া হয়, দৃশ্যটা কেমন হতে পারে! ঢেউ এর সাথে দোল দিয়ে নৌকাটা ধীরে দূরে সরতে থাকবে, তারপর আরো একটু দূর, আরো দূর, আরো দূর তারপর দৃষ্টি সীমানা পেরিয়ে হারাবে সেই নৌকা, রুমি আজ আমার কাছে সেই কাগজের নৌকা, দূরত্ব এখন দুই সপ্তাহের, আর ঢুলতে ঢুলতে হারিয়ে যাবে দৃষ্টি সীমানার বাইরে, হয়তো দেখা হবেনা আর কোনদিন, মৌনতা ভাঙ্গালাম, একটা অনুরোধ করে
- একটা অনুরোধ ছিল রাখবে?
-কি বল
-আমার কাছে তোমার কোন ছবি নেই, একটা ছবি দেবে? তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলার অধিকার আমার নেই, অতীতে তো ছিল, আমাকে একটা ছবি দেবে অতীতের? আমি কথা দিচ্ছি আমি তোমাকে ওটা ফিরিয়ে দেব, কখন দেব সেটা এখন বলতে পারছিনা, তবে আমি নিশ্চিত তোমাকে ওটা ফিরিয়ে দেব, কিংবা সময় হলে ছিড়ে ফেলে দেব, অথবা নদীতে ভাসিয়ে দেব, তবে এখন একটা ছবি খুব প্রয়োজন, দেবে?
-না দেবনা, তোমার কাছে আমার ছবি থাকলে, তোমার কষ্ট আরো বাড়বে, আমাকে ভুলতে কষ্ট হবে তোমার, ছবি দেয়া যাবেনা
-তুমি কি বুঝতে পারছ আমি ভাল নেই, তুমি কি বুঝতে পারছ আমি অসুস্থ, আমি ছবিটা চাইছি কারণ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমার দম যখন বন্ধ হয়ে আসে তখন তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে, তাই ছবিটা এখন আমার খুব দরকার, আমাকে দিতেই হবে, আমিতো কথা দিচ্ছি, আমি সুস্থ হলে ওটা আর রাখবনা, আমাকে কি বিশ্বাস হয়না? আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই, আমার কাছে তুমি এখন মৃত, আমি ধরে নেব রুমি আর জীবিত নেই, ছবিটা আমার ঠিক ততদিন দরকার যতদিন আমি স্বাভাবিক না হচ্ছি, ছবি থাকলেই যে আমি ওটা দেখব তা-ও না, আমি ওটা রাখব যখন খুব যন্ত্রণা হবে আমার মৃত রুমিকে একবার দেখার, তখন সেটা লাঘব এর জন্য একবার হয়তো দেখব, প্রয়োজন না পড়লে দেখা হবেনা তারও নিশ্চয়তা দিচ্ছি, রুমি তুমি যাননা, মনের মধ্যে যখন তোলপাড় চলে সেটা যে কি ভয়ানক, আমি অতীতে এমনটার মুখোমুখি হয়েছি, আর হতে চাইনা, আমার পক্ষে আর সম্ভব না এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া, আমি চাইনা আমার দম বন্ধ হয়ে আসুক, আমি চাইনা আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হোক, এসব ধারণ করার বিন্দু পরিমাণ শক্তি আমার নেই, তাই ছবিটা দেখে যদি পরিস্থিতিগুলো এড়ানো যায়, ছবিটা আমার লাগবে, তোমার অতীতের যেকোন একটা ছবি, অবশ্যই সেটা বিয়ের কিংবা বিয়ের পরের না, এসব নিয়ে আমার কিছু যায় আসেনা।
-আচ্ছা দেব
-কখন দেবে?
-জানাবো পরে
-আমার কাছেতো তোমার কোন ঠিকানা নেই, আমাকে কি আবারও অপেক্ষায় থাকতে হবে?
-জানিনা, আমার কাছে তোমার মোবাইল নাম্বার আছে, সময় হলে আমি জানাব
আমি নেমে গেলাম রুমিদের বাসার কিছুটা আগে মেইন রোডে, ওদের বাসা কোথায় আমার জানা নেই এবং প্রয়োজনও নেই, মেইন রোড থেকে একটু ভেতরে যেতে হয়, গাড়ীটা থামিয়ে হয়তো শেষবারের মতো চোখাচোখি, খোদাহাফেজ বলে বিদায় জানালাম।
আমি যে মাঝের মধ্যে নিজের সাথে নিজেকেই বলতাম রুমির বিয়ে হয়না কেন? বিয়েটা হলেইতো আমার যন্ত্রণাটা হয়তো মুক্তি পাবে, অন্তত অপেক্ষার দিনতো আর গুণতে হবেনা, এখন বুঝতে পারছি কত বেদনা দায়ক ব্যাপারটা, নিজেকে ধীক্কার দিচ্ছি আমি কেন এতদিন অপেক্ষায় থাকলাম, সরাসরি ওদের বাসায় গিয়ে একবার মুখোমুখি হলেইতো পারতাম, হোক না হোক একটা চেষ্টাতো করতে পারতাম, আমার অবহেলার জন্য হারালামনাতো! আমিতো আল্লাহর উপর ভরসা করেছিলাম, আমার সবকিছু আল্লাহইতো পুরণ করে দিচ্ছিল, আমার চাকরী চেন্জ হল, রুমি নিজ থেকেই ফিরে আসল, তাই আমি আর সরাসরি মুখোমুখি হইনি, আমার ধারণা বিষয়টা সরাসরি আল্লাহ গুছিয়ে দিচ্ছে আামাকে, তাই আমি তাড়াহুড়ো করিনি, কিন্তু আজ একি হল! রাগটা গিয়ে পড়ল সৃষ্টি কর্তার উপর, আমার সাথে সেই বেঈমানী করেছে, এমন উল্টাপাল্টা চিন্তা আসছিল মনে, নাহিম ভাই শুনে আমাকে রিকোয়েষ্ট করেছিল, এমন কিছু যাতে না বলি কিংবা না করি যেটা ঈমাণ এর সাথে সাংঘর্ষীক, একটা মেয়ের জন্য নিজের ঈমাণকে জলাঞ্জলি দেয়াটা বোকামী ছাড়া অন্য কিছুই নয়।
অঞ্জন দত্তের গানের খুব ভক্ত ছিলাম তখন, এই গানটা খুব শুনটাম সেই সময়টাতে............
আমি বৃষ্টি দেখেছি
বৃষ্টির ছবি এঁকেছি
আমি রোদে পুড়ে, ঘুরে ঘুরে
অনেক কেঁদেছি
আমার আকাশ কুশুম স্বপ্ন দেখার
খেলা থামেনি....
শুধু তুমি চলে যাবে
আমি স্বপ্নেও ভাবিনি
আমি বৃষ্টি দেখেছি
চার দেয়াল মানেই নয়তো ঘর
নিজের ঘরেও অনেক মানুষ পর
তখন কিসের টানে মানুষ
পায়যে খুঁজে বাঁচার মানে
ঝাপসা চোখে দেখা এই শহর
আমি অনেক ভেঙ্গে চুরে
আবার শুরু করেছি
আবার পাওয়ার আশায়
ঘুরে মরেছি
আমি অনেক হেরে গিয়েও
হারটা স্বীকার করিনি
শুধু তোমায় হারাব
আমি স্বপ্নেও ভাবিনি
আমি বৃষ্টি দেখেছি
হারিয়ে গেছে তরতাজা সময়
হারিযে যেতে করেনি আমার ভয়
তখন কিসের টানে মানুষ
পায়যে খুঁজে বাঁচার মানে
ঝাপসা চোখে দেখা এই শহর
আমি অনেক স্রোতে বয়ে গিয়েও
অনেক ঠকেছি
আমি আগুন থেকে ঠেকে শিখে
অনেক পুড়েছি
আমি অনেক কষ্টে অনেক কিছু
দিতে শিখেছি
শুধু তোমায় বিদায় দিতে হবে
স্বপ্নেও ভাবিনি
আমি বৃষ্টি দেখেছি
আমি বৃষ্টি দেখেছি
আমি বৃষ্টি দেখেছি
গানের লিংক
জীবনের গল্পটা যেন সিনেমার পর্দায় ভেসে উঠা কাহিনী হয়ে গেল, তাই ভাবলাম শেষ চেষ্টা করা যাক পরিসমাপ্তিটাও সিনেমার সাথে মিলে যায় কিনা, শুনতে অবাক লাগতে পারে কিন্তু আমি সত্যিই কাজটা করেছিলাম, সিনেমায় হয়না, নায়ক নায়িকার মাঝখানে তৃতীয পক্ষ চলে আসে নায়িকার জীবনে, আবার যখন সত্য উদ্ভাসীত হয় তখন সেই তৃতীয পক্ষই ক্ষমা চেয়ে নায়িকার হাত তুলে দেয় নায়কের হাতে, আমার ভাবনার আশ্রয়টা ঠিক তেমনটাই হয়েছিল, ভেবেছি হতেও তো পারে, চেষ্টা করে দেখতে তো সমস্যা নেই, রুমির বরকেই একটু ইংগীত দিয়ে বুঝিয়ে বলা যাক, দেখা যাক কি হয়
চলবে..............
পরের পর্ব (২৯)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৫৭