somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে...(২১)

০২ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্ব (২০)
আমি দ্রুত সিড়ি দিয়ে নেমে আসলাম, তিন তলা থেকে দ্রুত নামতে গিয়ে কিছুটা হাপিয়ে উঠেছিলাম, আর আমার এ্যাডভেঞ্চারসুলভ কাজের জন্য এমনিতেই বুকটা একটু দুরু দুরু কাঁপছিল, নিচে নেমে এসে রাস্তা থেকে দাঁড়িয়ে আবার ফিরে তাকালাম রুমিদের করিডোর এর দিকে, দেখলাম রুমি দাঁড়িয়ে আছে, চোখে চোখ পড়তেই হাতের ইশারায় আমাকে টা-টা জানাল, দৃশ্যটা এমন অদ্ভূত সুন্দর লেগেছিল যে, আমি অনেকদিন ভুলতে পারিনি, কিংবা আজও...

সেই টা-টা দেবার দৃশ্যটা যে আরো কিছু একটা অর্থ বহন করছিল আমি সেদিন বুঝতে পারিনি, বুঝেছিলাম আরো মাস খানেক পর, আমাদের আর দেখা হয়নি দীর্ঘ সময়, এমনকি কোন যোগাযোগ, কেননা পারতপক্ষে আমি ফোন করতামনা রুমির প্রবলেম হবে ভেবে, রুমি যখন সুযোগ পেত আমাকেই কল করত আর আমি কেটে দিয়ে কলব্যাক করতাম, ভেবেছি সে নিশ্চয় সুযোগ করে উঠতে পারেনি তাই আর রিং আসছেনা, আমিও একটু অস্থিরতার মধ্যে রিংটোনের অপেক্ষায় ছিলাম কখন বাজবে মোবাইলটা।

ঈদ এর আমেজ চলে গেল কিন্তু রুমির কোন খবর নেই, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রুমির ফোন আসল, সে এখন ঢাকায়, তার ছোট মামার বাসায়, বাসার ল্যান্ড ফোন থেকেই ফোনটা করা হয়েছে, " কথা নেই, বার্তা নেই হঠাৎ আবার ঢাকায় কেন?" প্রশ্ন করেছিলাম, সে বলেছিল, ঢাকায় আসার কারণ হলো রুমির আম্মুর চালাকি, ঈদ এর সময় রুমির ছোট মামা পুরো ফ্যামিলি নিয়ে বাড়ী গিয়েছিল, তার ছোট মামী খুব করে রিকোয়েষ্ট করেছে তাদরে সংগে ঢাকা যেতে, রুমি বুঝতে পেরেছে এখানে ওর আম্মুর হাত আছে, তবুও সে ঢাকা গেল এক প্রকার চ্যালেজ্ঞ ছুড়ে দিয়ে, "দেখি মা আমার সাথে কত চালাকি করতে পারে!" বলার ধরণটায় আমি বিদ্রোহের সূর আন্দাজ করছিলাম, প্রশ্ন করেছিলাম, "কেন তোমাদের ঘরে কি কোন ঝামেলা হয়েছে! আমাদের ব্যাপারে?" সে বলেছিল "না কিছুই হয়নি।" তবুও আমার মনে হচ্ছিল নিশ্চই কিছু একটা হয়েছে।

এর পরের বার রুমি ফোনে জানাল, " শুনো আমার মামার বাসা চেন্জ হচ্ছে আমাদের হয়তো কিছুদিন আর যোগাযোগ হবেনা, তুমি চিন্তা করোনা আমি সুযোগ বুঝে তোমাকে ফোন দেব।

অপেক্ষার সময়গুলো যে কত বেদনাদায়ক সেটা অনুধাবন করলাম, প্রথমে ঘন্টা গেল তারপর গেল দিন, আমি অপেক্ষায় আছি, মাসও গেল, আমি অপেক্ষায়, তারপর গেল বছর আমি পড়লাম দ্বন্দ্বে এখনো কি অপেক্ষায় থাকতে হবে! পুরো একটা বছর গেল একবার ফোন করে কি বলা যায়না ঢের হয়েছে আর অপেক্ষায় থেকোনা, বিদায় টা কি নেয়া যায়না!

অপেক্ষার দিনগুলোই হৃদয়ে কি রক্তক্ষরণ হয়েছে সেটা শুধু আমিই জানি, কখনো কখনো মনে হত বুকের মধ্যে হাতটা ঢুকিয়ে দিই আর হৃদয়টা হাতে নিয়ে দেখি কি পরিমাণ অত্যাচার করেছি আমি তার উপর, কি দিন কি রাত সে শুধু কেঁপেই গেছে প্রতিনিয়ত, বেচারা বিন্দু পরিমাণ বিশ্রামটুকু পেলনা।

আমার কেন জানি বদ্ধমূল ধারণা ছিল রুমি আবার আসবেই, কেননা আমি আল্লাহর কাছে চেয়েই তাকে পেয়েছি, প্রথমবার তো সে নিজ থেকেই এসেছে নিজের সাথে বোঝাপড়া করে, এবারও নিশ্চই আসবে, আবার তার মা কিংবা অভিভাবকদের মোকাবেলা করে।

আমি চাইলে খবর নিতে পারতাম রিমিকে ফোন করে কিংবা সরাসরি তাদের বাসায় গিয়ে, কিন্তু তা করিনি, আমি চাইছিলাম সে আবার আসুক তার মত করে, আমার সততা, তার প্রতি আমার অগাধ ভাল লাগা এসব যদি সে যোগ্যতার মাপকাঠি বিবেচনা করে তাহলে সে আসবে, আর যদি ভাবে বৈষয়িক বৈষম্য আছে তাহলে তো আমি নিজেও প্রয়োজন বোধ করিনা।

এই সময়টা একটা কান্ড করতাম আমি, সন্ধ্যায় যখন অফিস ছুটি হতো আমি আমার সবুজ ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে দিয়ে উল্টো পথে হেঁটে যেতাম, একা একা হাটতাম আমি, প্রায়ই এই কাজটা করতাম, প্রতিদিন একই পথে একা একা একা আর আমি হেঁটে হেঁটে হেঁটে .....

এই হেটে যাবার ব্যাপারটাকে একটা নাম দিয়েছিলাম আমি, "দ্যা রোড টু রুমি," কেননা আমার গন্তব্য ছিল রুমিদের বাসা পর্যন্ত, তারা যে বাসায় ভাড়া থাকতো তার নিচের তলায় ছিল কিছু দোকানাপাট, ফোন ফ্যাক্স এর দোকান, একটার নাম ছিল তামান্না ষ্টোর, ওটা টি স্টল বলা চলে, তবে সেখানে চা বিস্কিট এর পাশাপাশি কসমেটিক সহ হরেক রকম মাল্টি ঘরোয়া জিনিসপত্র বিক্রি হতো এবং সেটা মনির ভবন এর ভাড়াটিয়া ফ্ল্যাটগুলো লক্ষ্য রেখে।

হাঁটাহাঁটির ব্যাপারটা নিয়ে ইমতিদা নাহিম ভাইরা খুব হাসা-হাসি করত, তবুও একজন সংঙ্গী পেয়া গেলাম, অফিসে নতুন জয়েন্ট করেছে ইমন সাহেব, যথারীতি হয়ে গেলেন ইমন ভাই, ওনার বাসাটা ওদিকটাই এবং তার কাছে খুব ইন্টেরেস্টিং মনে হল, সন্ধ্যার পর রাস্তায় হাটা-টা, অনেকদিন আমার সাথে হেঁটেছিলেন তিনি।

আমি আর ইমন ভাই যখন তামান্না ষ্টোরে গিয়ে বসতাম, প্রায়ই দেখতাম এক ভদ্রগেলোক পাজ্ঞাবী টুপি পড়া মসজিদের দিকে ছুটতেন ঈশার নামাজ পড়বে বলে, আমার কেন জানি ধারনা হয়েছিল ওনি নিশ্চই রুমির বাবা হবেন, ইমন ভাই এর সাথে কথাটা শেয়ার করেছিলাম, তারপর থেকে যতবারাই আমরা ভদ্রলোকটাকে দেখেছি ততবারই ইমন ভাই আমার সাথে ঠাট্টা করেছেন, "আপনার শ্বশুর মশায় যাচ্ছেন," বলে।

ইমন ভাই এর সিগেরেট খাওয়ার অভ্যাস ছিল, ওনি চা এর সাথে সিগেরেট ধরাতেন আর আমি বিস্কিট নিতাম, আমার সিগারেট খাবার অভ্যাস নেই তবে চা বেশী খাবার বদভ্যাস আছে, চা পর্ব সেরে তারপর আমরা চলে যেতাম দুজন দুই দিকে বাসার উদ্দেশ্যে।

চলবে.......

পরের পর্ব (২২)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৪৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সিথী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৫০



এই মহিলা পুরা ফেসবুকের রিল খাইয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

'কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়’

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৫

বই রিভিউ
‘কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়’
রুপক বিধৌত সাধু

বরাবরের মতোই এবারের একুশে বই মেলা থেকে অনেক বই কিনেছি। ইচ্ছে ছিল ব্লগার বন্ধুদের বইগুলো পড়ে ছোট করে হলেও পাঠপ্রতিক্রিয়া শেয়ার করবো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় নাগরিক পার্টি গুছিয়ে কথা বলে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:২৯



আজ আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা গুছিয়ে কথা বলে। তারা বলছে তারা ভারত পন্থী ও পাকিস্তান পন্থী রাজনীতি করতে দেবে না।এসময়ে ভারত বিরোধী ও পাকিস্তান বিরোধী রাজনীতিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত- পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ঠাঁই নাই বাংলাদেশে.....

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৫০


এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা নাহিদ ইসলাম। ইহা তো বাঙালির প্রাণের কথা ! ভারত ও পাকিস্তান আমাদের কে ছোট ভাই মনে করে কুবুদ্ধি দিয়ে বিপথগামী করতে চায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই একই কায়দায় আরো একটি কিংস পার্টি ‼️মুলত ড. ইউনুসের হিডেন পার্টির আত্মপ্রকাশ ॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০১ লা মার্চ, ২০২৫ রাত ২:০৪



ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের নিজেদের রাজনৈতিক দল ঘোষণা করেছে। আগের সব ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারদের মতো একই ধারায় এগুচ্ছে তারা।

সন্ত্রাস করে ক্ষমতা দখল করো, বিরোধী সবাইকে হত্যা করো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×