somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে...( ১৯)

৩০ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্ব (১৮)

তারপর দিনের পর দিন বিষয়টাকে আমরা কিছুটা আধ্যাত্মিকতার আদলে চিন্তা ও চর্চা করছিলাম যদিও আমাদের একে অপরের সাথে কোন যোগাযোগ ছিলনা, আমার এমনিতেই নামাজ পড়ার অভ্যাস ছিল, প্রায়ই নামায এর পর সময় পেলে নফল নামায পড়তাম এবং আল্লাহর কাছে সমাধান চাইতাম, চর্চাটা এতো গভীর এবং ভেতর থেকে করছিলাম যে, আমার মনে হচ্ছিল আমি একটা সমাধান পাব, আল্লাহ নিশ্চয় আমার মোনাজাত বিবেচনা করবেন।

রুমির ব্যাপারটা জেনেছিলাম আরো অনেক পরে রিমির কাছ থেকে, কেমন জানি সবাইকে এড়িয়ে চলছিল সে, যদিও নামাজটা সে নিয়মিত পড়তোনা কিন্তু এখন ওটা নিয়মিত পড়তে লাগল, রাতে তাহাজ্জুত ও পড়া শুরু করল, ভেতরে ভেতরে সেও আমার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ল এবং কান্নাকাটি করে মোনাজাত করত আর আল্লাহর কাছে সমাধান চাইতো, চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন হতে থাকল তার স্বভাব চরিত্রের, প্রথম দিকে সবাই গিয়ে রিমির কাছে জিজ্ঞেস করছিল কি হয়েছে রুমির! সে এমন চেন্জ হয়ে যাচ্ছে কেন? প্রেম জাতীয় কোন সমস্যা হচ্ছেনাতো! রিমি কিছুই জানাতে পারলনা কাউকে, রিমি শাকিল এর ব্যাপারে জানে কিন্তু সেটাতো ওয়ান সাইডেড, শাকিল এর প্রতি তো রুমির দূর্বলতা ছিলনা, তাই রিমির উত্তরটা ছিল সে কিছুই জানেনা, যার জন্য রিমির সাথে রুমির ফ্যামিলির একটা ভুল ভুঝাভুঝিও হয়েছিল।

অফিসে কাজ করছিলাম, জামাল ভাই একটা কল ট্রান্সফার করল, বলল কেউ একজন খুব জরুরী প্রয়োজনে আমার সাথে কথা বলতে চাইছে, জামাল ভাই হলো এমডির পিএস কাম ফোন অপারেটর, আমি হ্যালো বলতেই ওপার থেকে ভেসে আসল রুমির কন্ঠ, আকাশ থেকে পড়লাম ভুল শুনছিনাতো! রুমি আমাকে ফোন করেছে! এও কি সম্ভব! লক্ষ করলাম জামাল ভাই আড়ি পাতছে, ওনার এই স্বভাবটা আছে, যদিও অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই, কৌতুহল কাজ করলে আড়ি পাতেন ওনি, আমাকে যে বলেছিল খুব জরুরী ফোন, আসলে সেটা নিজ থেকেই বলেছে, কেননা একজন নারীর কন্ঠ এবং যেহেতু কোন অফিসিয়াল ফোন না, তাই দুষ্টামির ছলে কথাটা নিজ থেকেই বলেছিলেন।

= আজকে রেজাল্ট দিয়েছে জানতো? রুমি প্রশ্ন করল
- বললাম হুম জানি

= কলেজ যাবেনা রেজাল্ট দেখতে?
- যাব ভাবছিলাম তবে কখন যাব সেটা ঠিক করিনি

= আমি যাচ্ছি এখন, তুমি কি যাবে সংগে?
- তা যাওয়া যায়

= তাহলে তুমি জাষ্ট ত্রিশ মিনিট পর তোমার অফিসের পাশে যে মার্কেট টা আছে ওটার সামনে দাঁড়াও আমি রিকশায় তুলে নেব, ঠিক আছে রাখছি।
- ওকে তুমি আসো, আমি অপেক্ষা করছি

সেদিন আমরা একসাথে কলেজে গেলাম, আমি মজুমদার বাবুকে বলে তিন ঘন্টার অফিস ছুটি করেছিলাম, কলেজে আমরা খুব বেশীক্ষণ ছিলামনা, নোটিশ বোর্ডে রেজাল্ট টা দেখেই আবার ব্যাক করলাম, আমার যেহেতু আবার অফিসে যাবার তাড়া ছিল, রুমি অবশেষে মুখ ফোটে বলেই ফেলল, " আমি হার মানলাম তোমার কাছে, নিজের সাথে যুদ্ধ করে আমি আর পেরে উঠছিনা, যদিও আমি এখনো ভয়ের মধ্যেই আছি আমার প্যারেন্টস জানতে পারলে কি হুলুস্তুল কান্ড হবে আমি জানিনা, তবে আমার কিছুই করার ছিলনা, আমি ভাবিনি এমন কাউকে আমি এতটা ফি'ল করব, বর্তমান সমাজে সো কল্ড যে প্রেম ভালবাসা হচ্ছে বা চলছে এমন কিছু আমি কখনো ভাবিনি বা আদৌ ভাবিনা তবে নিজের অজান্তেই আমি তোমাকে ছাড়া এখন বিকল্প কিছুই আর ভাবতে পারছিনা।"

চেরাগ নেভার আগে ধূপ করে জ্বলে উঠে, আমাদের ব্যাপারটা বোধয় তেমনই হয়েছিল, আমি আল্লাহর কাছে বার বার শুকরিয়া জানাচ্ছিলাম, নফল নামাজ কিন্তু আমি তখনো ছাড়িনি, আল্লাহ যে আমার মোনাজাত কবুল করেছে তাই এখন নফল নামাজ এর উদ্দেশ্য হয়ে গেল শুকরিয়া জানানো, তাই চর্চাটা কন্টিনিউ করছিলাম

মাস এক পরের ঘটনা, আমাদের আর দেখা হয়নি, কথা হয়েছে ফোনে দু'একবার, রমযান মাস ছিল, মধ্য রমযান, সবাই ব্যাস্ত ঈদের কেনা কাটায়, ঈদের কেনাকাটার প্রতি আমার তেমন একটা আগ্রহ কাজ করেনা সেটা অনেক বছর ধরে, ছোট বেলায় মধ্যবিত্তের টানাপোড়নের সংসারে ঈদ এর নতুন জামা কাপড় নিয়ে মান অভিমানের হরেক কথা মনে পড়লেও যখন বুঝতে শিখেছি এটাই বাস্তবতা তখন থেকে বিষয়গুলো আমার কাছে স্বাভবিকই বলে মনে হয়। এখন যদিও ঈদে নতুন জামা কাপড় কেনা হয় তবুও এগুলো নিয়ে কোন অতি আগ্রহ কাজ করেনা।

ছোট বেলার ঈদ এর একটা ঘটনা শেয়ার করা যাক, আমাদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের দর্জী দোকান ছিল আমাদের ঘরের খুব কাছেই, আমাদের নূর ভাই, গ্রাম থেকে শহরে এসে প্রথম যখন দর্জি দোকানটা দিলেন আমার মা খুব হ্যাল্প করেছিলেন সেটা একটু অন্যভাবে, দোকানে রান্নার সমস্যা হলে প্রায়ই দেখতাম বাজার করে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দিতেন, আম্মা রান্না করে রাখতেন, ওনি এসে নিয়ে যেতেন, দোকানে মেশীনের শব্দে ঘুমের ব্যাঘাত হলে আমাদের ঘরে এসে ঘুম দিতেন, এধরনের ছোটখাট টুকিটাকি বিষয়ে মা হ্যাল্প করতেন এবং কখনো দেখিনি বিন্দু পরিমাণ বিরক্তবোধ করছেন।

আমাদের ঘরের সবার কাপড় শেলাই ওখানেই হতো এবং বিনে পয়সায়, সম্পর্কটা এতো আপন ছিল যে, সেখানে টাকা পয়সার আর ব্যাপার ছিলনা, আমাদের প্রায়ই জামা কাপড় সেলাই করে দিতেন নিজ থেকেই, আসলে কাষ্টমার এর দেয়া অতিরিক্ত খুচরো কাপড় ছিল মূল উৎস।

একবার ঈদে নূর ভাই বাবাকে বললেন আমার জন্য যেন শার্ট প্যান্ট কেনা না হয় উনি দেবেন, উনার কাছে ভাল কাপড় আছে, আমি তো অপেক্ষায় আছি কখন আমার জামা কাপড় আসবে।যেহেতু ঈদ মৌষম কাজের খু্ব চাপ থাকে তাই জিজ্ঞেস করলে দেব দেব বলতেন কিন্তু ঈদ চলেই এলো আমার শার্ট প্যান্ট আর শেলাই হয়নি, ঈদ এর আগের দিন দোকানে গিয়ে বসে রইলাম, নূর ভাই বলল তুমি বাসায় যাও আমি নিয়ে আসছি কিন্তু আর আসলেননা রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম, সকালে খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠেই মাকে জিজ্ঞাসা করলাম আমার জামা কাপড় নূর ভাই দিয়ে গেছে কিনা, মা বলল না দিয়ে যায়নি, তুই এক কাজ কর, সম্ভবত নিয়ে আসার টাইম পায়নি তুই গিয়ে নিয়ে আয়

আমার খুব কান্না পাচ্ছিল আর রাগ হচ্ছিল, তবুও দৌড়ে গেলাম নূর ভাই এর দোকানে, দোকান বন্ধই ছিল, তবে ভেতরে তখনো ওরা কাজ করছে, ব্যাপারটা আমি তখন বুঝিনি কিন্তু বড় হয়ে যখন আমার ঘটনাটা মনে পড়ে তখন বুঝলাম কেন এমন হল, ওরা সারা রাত ধরে কাপড় শেলাই করেছে, কেউ ঘুম যায়নি, ঈদ এর দিন সকালেও দু'চার জন কাষ্টমার এর কাপড় ডেলিভারী দেয়া হবে, আমি গিয়ে দরজা নক করতেই আমাকে ভেতরে ঢুকিয়ে আবার দরজা বন্ধ করে দেয়া হল, আমি বসে বসে দেখছি, এক কর্মচারী আমার শার্ট আর প্যান্টে বোতাম লাগাচ্ছে, অন্যরাও খুব দ্রুত মেশীন চালাচ্ছে গরর গরর শব্দে, এখনই ক্লায়েন্ট এসে চিল্লাচিল্লি করবে যদি এসে দেখে তাদের কাজগুলো শেষ হয়নি

আমার মধ্যে একটা উত্তেজনা কাজ করছে বোতাম লাগানো শেষ হয়না কেন! দরজার ফাঁকে দেখতে পেলাম সবাই ছুটছে মসজিদ এর দিকে নামাজ পড়ার জন্য, আমার তাহলে আর নামাজ পড়া হবেনা! এখনো গোসল করা বাকি, বোতাম লাগানো হলো এবার আয়রন করার পালা, আয়রন মেশীন এর প্লাগ লাগানো হল, গরম হবার অপেক্ষা, মনে মনে ভাবছিলাম আয়রন না করে নিয়ে যাই, এরই মাঝে দু'একজন কাষ্টমার তাদের কাপড় নিয়ে গেছে, সবশেষে শুধু আমারটাই বাকি

দরজার ফাঁকে দেখতে পেলাম সবাই নাময শেষে ঘরমুখি, আমার খুব মন খারাপ হলো, বাসায় গিয়ে খুব করে কেঁদেছিলাম, নূর ভাইয়ার তখন ঘুমের আয়োজন আর দোকানের কর্মচারীরা ব্যাগ গুছানো শুরু দেশের বাড়ীতে যাবে।

রুমির ফোন এলো, তুমি কি একটু আসতে পারবে? তোমার অফিসের পাশের মার্কেটটায়?

চলবে..........

পরের পর্ব (২০)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৪৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সিথী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৫০



এই মহিলা পুরা ফেসবুকের রিল খাইয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

'কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়’

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৫

বই রিভিউ
‘কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়’
রুপক বিধৌত সাধু

বরাবরের মতোই এবারের একুশে বই মেলা থেকে অনেক বই কিনেছি। ইচ্ছে ছিল ব্লগার বন্ধুদের বইগুলো পড়ে ছোট করে হলেও পাঠপ্রতিক্রিয়া শেয়ার করবো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় নাগরিক পার্টি গুছিয়ে কথা বলে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:২৯



আজ আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা গুছিয়ে কথা বলে। তারা বলছে তারা ভারত পন্থী ও পাকিস্তান পন্থী রাজনীতি করতে দেবে না।এসময়ে ভারত বিরোধী ও পাকিস্তান বিরোধী রাজনীতিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত- পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ঠাঁই নাই বাংলাদেশে.....

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৫০


এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা নাহিদ ইসলাম। ইহা তো বাঙালির প্রাণের কথা ! ভারত ও পাকিস্তান আমাদের কে ছোট ভাই মনে করে কুবুদ্ধি দিয়ে বিপথগামী করতে চায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই একই কায়দায় আরো একটি কিংস পার্টি ‼️মুলত ড. ইউনুসের হিডেন পার্টির আত্মপ্রকাশ ॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০১ লা মার্চ, ২০২৫ রাত ২:০৪



ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের নিজেদের রাজনৈতিক দল ঘোষণা করেছে। আগের সব ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারদের মতো একই ধারায় এগুচ্ছে তারা।

সন্ত্রাস করে ক্ষমতা দখল করো, বিরোধী সবাইকে হত্যা করো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×