somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে....( ১৭)

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্ব (১৬)

পার্ক থেকে বের হয়ে রিকশা ভাড়া করলাম রুমিদের বাসার ঠিকানায়, রুমি রিকশাতে উঠে বসল, আমি বিদায় জানালাম, রুমি বলল তুমিও উঠ, সামনে বাস ষ্ট্যান্ডে নেমে যাবে, আমি উঠতে চাইনি, বললাম বিদায় তো নিতেই হবে এখানেই বিদায় দাও, সে জোর করেই উঠালো, তার চোখ ছলছল আর বলছিল আমাকে ক্ষমা করে দিও, আমি চুপচাপ ছিলাম, আমার মুখ দিয়ে কোন কথাই আসলে বের হচ্ছিলনা।

বাস ষ্ট্যাণ্ডে নেমে গেলাম আমি, রুমি চলে গেল, ঘুরপাক খেয়ে উঠল মাথাটা, চারপাশ যেন দুলছে, বুকের মধ্যে প্রচন্ড চাপ অনুভব করলাম, মিনিটের মধ্যেই যেন পৃথিবীর আমূল পরিবর্তন হয়ে গেল, আমার মনে হলো পথের শেষ পর্যন্ত আমি রুমিকে দেখি, তাই সাথে সাথে অন্য একটা রিকশা ধরে বললাম ওই যে ওই রিকশাটা ফলো কর, খুব জরুরী, ততক্ষণে রুমির রিকশাটা মেইন রোড ক্রস করে গলিতে ঢুকে গেছে আমি পরলাম জ্যামে, জ্যাম ছুটা মাত্রই রিকশা ড্রাইভার খুব জোরেই চালাল, সে যেন বুঝতে পারছে আমার মনের অবস্থা, এমন জোরে সে চালাল কিছুটা রিস্কিও ছিল, অনেকগুলো রিকশা পেছনে ফেলে এলাম, প্রতিবারই মনে হচ্ছিল সামনের রিকশাটায় রুমি আছে, কিন্তু না, খালি কিংবা অন্য কেউ, রুমিদের বাসা কোথায় আমি ঠিক জানিনা তবে যে জায়গার নাম বলে রুমির রিকশা ঠিক করে দিয়েছিলাম তার কাছেই আসতে দেখলাম এক মেয়ে রিকশা থেকে নেমে রাস্তার পাশের ভবনটার সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল, আমি দূর থেকেই দেখলাম কিন্তু সে'তো রুমি না, মেয়েটাকে নামতে দেখে আমি ড্রাইভারকে ইংগীত দিয়েছিলাম যেন স্লো করে চালায়, কিন্তু যখন কনফার্ম হলাম এটা রুমি নয়, তখন বললাম চালিয়ে যাও।

রুমির সাথে আর দেখা হলনা, আমি তখন সবকিছু ওলট পালট দেখছিলাম, রুমিকেতো পাওয়া গেলনা, কোথায় হতে পারে রুমিদের বাসা? জায়গাটাতো আগে থেকেই চেনা, কিন্তু কোন বিল্ডিংটা হতে পারে? জানতে মন চাইল, সেদিন বাসায় ফিরে এলাম, সারা রাত অস্থিরতায় কাটালাম, ঘুম হলনা, আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি বের হচ্ছিল, আর একটা ব্যাপার মনে মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল, যে মেয়েটাকে আমি দেখেছিলাম রিকশা থেকে নেমে চলে গেল, নিশ্চই রুমি হবে, আমার সেন্স তখন কাজ করছিলনা আমি তাই চিনতে পারিনি, আমি তখন চোখে ঝাপসা দেখছিলাম।

চেষ্টা করছিলাম স্বাভাবিক হতে কিন্তু পারছিলামনা, আমি অনুভব করছিলাম যেন প্রতিটা নিঃশ্বাস নিতে কোথায় যেন বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, নিজের কাছেই নিজেকে যেন ভারি মনে হচ্ছিল, আমি যেন আমাকেই বহন করতে পারছিলামনা, অফিসের কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়ছিলাম, হঠাৎ করেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল, অফিসে কেউ দেখে ফেলবে তাই ওয়াসরুমে গিয়ে আবার চোখে মুখে পানি দিয়ে আসছি এমন করে গেল সপ্তাহ খানেক, মনের ব্যাপারগুলো যে শরীরেও প্রভাব ফেলে তার একটা অভিজ্ঞতা হল, নিরুপায় হয়ে ভাবলাম রুমির সাথে অন্তত ফোনে হলেও মাঝের মধ্যে যোগাযোগ করলে হয়তো স্বাভাবিক হতে সহজ হবে তাই ফোন দিলাম রুমিদের বাসায়, ভাগ্যটা ভাল ছিল রুমিই রিসিভ করেছিল মোবাইল, বুঝিয়ে বললাম "আমাকে একটু হেল্প করা যাবে? আমি অস্বাভাবিক হয়ে পড়ছি, আমার দম নিতে কষ্ট হচ্ছে, তাই তোমার কাছে অনুরোধ আমার যখন খুব কষ্ট হবে এবং তুমি যদি অনুমতি দাও তাহলে মাঝের মধ্যে তোমার সাথে ফোনে কথা বলতে চাই, ফোন যে করবই তা কিন্তু না, একান্ত বাধ্য না হলে করবনা সে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, এবং আমি যখন সুস্থ্ হয়ে উঠব তখন আর করা হবেনা তাও বললাম।" রুমি শুধু বলেছিল "না, এখন একটু কষ্ট হলেও ধীরে বিষয়টা স্বাভাবিক হয়ে যাবে, কিন্তু আমার সাথে যোগাযোগ থাকলে তোমার কষ্টটা বরঞ্চ আরো বাড়বে, তাই আমার অনুরোধ আমার সাথে আর যোগাযোগ করবেনা, তাছাড়া তুমিতো জানো এইযে মোবাইলটা এটা তো আমার না, এটা বাসায় সবাই ইউজ করে, আমার মা জানলে ঘরে হুলুস্থুল কান্ড হবে, তোমাকে অনুরোধ করছি, আমাকে কখ্খনো ফোন করবেনা।" তারপরও আমি খুব রিকোয়েষ্ট করেছিলাম, সে প্রতিবারই না শব্দটা উচ্চারণ করে রাখি বলে রেখে দিয়ে্ছিল।

তারপর থেকে যেন শুরু হল আমার অন্য একটা জীবন, অন্য একটা জগৎ, যেখানে শুধুই আমি, পৃথিবীর সব কিছুই আমার কাছে তখন গুরুত্বহীন, জীবন, জগৎ সংসার এসবে আমার কিছু যায় আসেনা, কখন কি হল না হল কিংবা কি হবে না হবে এসব নিয়ে ভাবার কিছুই নেই, যা নিয়তি তাই হবে, তাইতো হয়, কেন আমরা জীবন নিয়ে এতো যুদ্ধ করি, কি দরকার এতো প্রতিযোগীতার, ইত্যাদি ওলোট পালট চিন্তা করতে করতে আমি ক্রমশ আমাকে সংগে নিয়ে যেন পৃথিবীর বাইরে অন্য কোন একটা জগতে চলে গেছি, আমার কাছে জন্ম যেমন মৃত্যু ও তেমন, সবকিছু সাদামাটা, ঘটনা দুর্ঘটনা সবই স্বাভাবিক আমার কাছে, কেমন যেন অনুভুতিহীন হয়ে যাচ্ছি দিনে দিনে, আনন্দ হাসি কান্না এসব আর আমাকে ভাবায়িত করেনা, যা হবার তাই হয়েছে এবং হচ্ছে এতে আমার কি করার আছে, আমার যেমন কোন কিছুতে হাসি যেমন পায়না তেমনি অস্বাভাবিক কোন কিছুতে আমি অবাক ও হইনা, সবই স্বাভাবিক আমার কাছে, আমার কাছে তখন অনিয়মটাই নিয়ম হয়ে যায় কেননা এটা যদি নিয়ম না হতো তাহলে তো ঘটতেই পারতনা, তাই অনিয়ম বলে কিছু নেই সবই নিয়ম।

তখনো আমি কবিতা লিখতাম, জীবনের ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো তখন আমার কবিতার উপজীব্য বিষয়, তেমনি একটা ছোট্ট কবিতা মাঝের মধ্যে চোখ বন্ধ করলে ভেসে উঠে মনের আয়নায়, আমার কবিতার ডায়ারীটা আর নেই, আমার নিজেরই কিছু কিছু কবিতা মুখস্থ আছে ওগুলো হঠাৎ কোন এক অবেলায় ভেসে উঠে.....

প্রেম

মনে পড়ে?
সেদিনের সন্ধ্যায়
আমি ছিড়লাম ঘাস
ভাংলে তুমি কান্নায়।

সেই দিন শুরু
সেই দিন শেষ
সেই থেকে তুমি আমি
দু'জনই নিরুদ্দেশ।

দেখা হয়নি
কথা হয়নি আর
তুমিও নিতে চাইলেনা
ভালবাসার ভার।

কাঁদলে তুমি
সে কি কান্না!
এটাই প্রেম
সেটাই সান্ত্বনা।


চলবে.....

পরের পর্ব (১৮)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সিথী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৫০



এই মহিলা পুরা ফেসবুকের রিল খাইয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

'কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়’

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৫

বই রিভিউ
‘কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়’
রুপক বিধৌত সাধু

বরাবরের মতোই এবারের একুশে বই মেলা থেকে অনেক বই কিনেছি। ইচ্ছে ছিল ব্লগার বন্ধুদের বইগুলো পড়ে ছোট করে হলেও পাঠপ্রতিক্রিয়া শেয়ার করবো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় নাগরিক পার্টি গুছিয়ে কথা বলে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:২৯



আজ আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা গুছিয়ে কথা বলে। তারা বলছে তারা ভারত পন্থী ও পাকিস্তান পন্থী রাজনীতি করতে দেবে না।এসময়ে ভারত বিরোধী ও পাকিস্তান বিরোধী রাজনীতিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত- পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ঠাঁই নাই বাংলাদেশে.....

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৫০


এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা নাহিদ ইসলাম। ইহা তো বাঙালির প্রাণের কথা ! ভারত ও পাকিস্তান আমাদের কে ছোট ভাই মনে করে কুবুদ্ধি দিয়ে বিপথগামী করতে চায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই একই কায়দায় আরো একটি কিংস পার্টি ‼️মুলত ড. ইউনুসের হিডেন পার্টির আত্মপ্রকাশ ॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০১ লা মার্চ, ২০২৫ রাত ২:০৪



ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের নিজেদের রাজনৈতিক দল ঘোষণা করেছে। আগের সব ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারদের মতো একই ধারায় এগুচ্ছে তারা।

সন্ত্রাস করে ক্ষমতা দখল করো, বিরোধী সবাইকে হত্যা করো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×