আগের পর্ব (১৫)
রিকশায় রুমি চুপচাপ ছিল, আমি বুঝতে পারছিলামনা কোথায় যাব, চোখে পড়ল পার্কটার দিকে, ছোট পার্কটা একটু ঘরোয়া বলা চলে, অনেক ফ্যামিলি এখানে বাচ্চাদের নিয়ে আসে বেড়ানোর জন্য, ছোটদের জন্য খেলার ইভেন্ট আছে কিছু, বাড়তি টিকেট কাটতে হয় প্রতিটা ইভেন্ট এর জন্য, ইদানিং পাত্র-পাত্রী দেখানোর প্রোগ্রামটাও এই পার্কে করছেন অনেকে, পরিবেশটা খুব ভাল বলা চলে, খোলা আকাশের নিচে চারপাশ ফুলের বাগানের ভেতর বৃত্তাকার চেয়ার টেবিল দেয়া আছে রেষ্ট্রুরেন্ট গুলোর, হবু পাত্র পাত্রিকে বসিয়ে দিয়ে অভিভাবকরা পার্ক দেখার ছলে ওদের একা করে দেয় কিছুক্ষণের জন্য, পাত্র-পাত্রীর দেখা দেখির পর্বটা ঘরে করার চাইতে এখানেই নিরাপদ, তাই আজকাল এমন ব্যাবস্থাটা জনপ্রিয় হয়ে আসছে, কেননা আয়োজনটা ঘরে করলে খাওয়া দাওয়ার একটা বিশাল আয়োজন করতে হয় পাত্রী পক্ষের ঘরে, খরচের ব্যাপারতো আছেই তার উপর পাত্র পক্ষ আয়োজন শেষে দুইদিন পর যখন না বোধক বার্তা পাঠায় তখন পাত্রী পক্ষের কাছে বিষয়টা লজ্জার এবং বিব্রতকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়, যেহেতু ঘটা করে ব্যাপারটা করতে হয় তাই আশে পাশের সবাই জেনে যায় আর কথার ফাঁকে জিজ্ঞেস করতে থাকে রেজাল্ট কি? এটা সেটা।
দুটো টিকেট কিনে দু'জনে প্রবেশ করলাম, রুমিকে একটা পার্কবেঞ্চিতে বসিয়ে আমি সামনা সামনি ঘাসের উপর বসলাম, সন্ধ্যা হয়ে এল, ভৌঁ ভৌঁ শব্দে মশার উৎপাত শুরু হয়ে গেছে।
হুম, এবার বল তোমার কি বলার আছে, সে ব্যাগ থেকে একটা পুটুলি বের করে দিল, এটা আবার কি! জিজ্ঞেস করলাম, সে বলল, এখানে তোমার সব কবিতা, আর কিছু গানের ক্যাসেট যা তুমি আমাকে গিফ্ট করেছিলে, গানের ক্যাসেট সব আনতে পারিনি, কারন বাকিগুলো মামা বাড়িতে, আমি এখন মামা বাড়ি থাকিনা, মামা বাড়ির কাছেই আমরা এখন ভাড়া বাসায় থাকি, আমার বড় ভাইয়া সবসময় চাচ্ছিলেন আমরা এদিকটায় চলে আসি, কিন্তু বাবা রাজি হচ্ছিলেননা, নিজেদের বাড়ি ছেড়ে ভাড়া বাসায় গিয়ে উঠবেন সেটা বাবা মেনে নিতে চাচ্ছিলেননা, অবশেষে ভাইয়ার জেদ ধরলেন এবং আমরা চলে আসলাম এদিকটায়।
বললাম, উপহার দেয়া জিনিস কি আবার ফেরৎ নেয়া যায়, তোমার কাছে ওগুলোর মূল্যটা ফুরিয়ে গেলে তুমি ফেলে দিতে পার, আমাকেই ফিরিয়ে দেবে কেন? আমি না হয় জানলামনা ওগুলোর কি করুণ পরিণতি হয়েছে, আমার কাছে ওটাই সান্তনা থাকলো তোমাকেই দিয়েছি ওগুলো, রুমি বলল, " ওগুলোর ভার বহন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, তার উপর নাহিম ভাই রিমিকে নাকি বলেছে, আমি তোমার সাথে প্রতারণা করেছি, তোমার সাথে অভিনয় করেছি, ইত্যাদি। তাই ভাবলাম যার জিনিস তার কাছেই ফিরিয়ে দিই।" তাছাড়া রিমিকে আমার কাব্যা বা কবিতাগুলো পড়তে দিত রুমি, রিমি নাকি বলেছে ওগুলো রুমিকেই অপমান বা হেয় করে লিখা।"
আমি আসলে রুমিকে প্রতিকী অর্থে ব্যাবহার করে এবং আমার মধ্যবিত্তের চিন্তা-ভাবনার, জীবন-যাপনের, টানাপোড়নের বিষয়গুলো একটু ছন্দের ছাছে ফেলে লিখার চেষ্টা করতাম, ওরা বিষয়গুলো ব্যাক্তিগতভাবে ভেবে নিয়ে হয়তো অভিযোগটা করল, বিশেষ করে এই দু'টো কাব্য নিয়ে রুমি আমাকে অভিযোগ করে ছিল
(১)
তোমার এখন বাজার ভাল
সবার চোখে, সবার মুখে
সবার মনে, তোমার আলো।
তোমার এখন বাজার ভাল।।
(২)
তোমাকে সবাই করে ভোগ
আমি করি উপভোগ
হয়তো তোমার কাছে
দু'টোরই অর্থ এক
কেননা তুমি ভুক্তভূগী।
আমি বললাম, দেখ নাহিম ভাই আর ইমতিদা কি করেছে আর না করেছে আমি জানিনা, ওরা আমাকে কিছু বলেনি এ ব্যাপারে, তবে আমি ওদের হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কেননা আমার সূত্রে যেহেতু ওদের সাথে তোমাদের পরিচয় তাই দায়টা আমারই, ওরা আসলে আমাকে হ্যাল্প করতে গিয়ে ব্যাপারটা গুলিয়ে ফেলেছে, আমায় ক্ষমা কর, তুমি গিফ্ট গুলো তোমার কাছেই রাখ, যাওয়ার পথে ফেলে দিও কোথাও, অন্তত আমি জানলামনা।
তারপর দু'জনই নিশ্চুপ, আমি বসে বসে ঘাস ছিড়ছি আর রুমির ভেজা চোখ, আমারও কি কান্না আসা উচিত! কিন্তু না আমার কান্না আসছেনা, আমি রুমির কান্না দেখছিলাম আর হাতের কাছে ছোট ছোট ঘাসগুলো ছিড়ছি, কিসের কান্না এটা! সে কাঁদছে কেন? ইমিতিদা নাহিম ভাইরা অপমান করেছে তার জন্য? নাকি অন্য কিছু!
চোখ মুছে কান্নাটা থামানোর চেষ্টা করল রুমি, তারপর বলল, " তুমি আমাকেই ভালবাসতে গেলে কেন? কি আছে আমার কাছে, কলেজ লাইফের এতোগুলো বছর গেল অন্য কাউকে ভালবাসতে পারলেনা! কেন আমাকেই ভালবাসতে হবে, তোমাকে তো আমার ফ্যামিলি মেনে নেবেনা, আমার মা খুবই উচ্চ বিলাসী, ওনাকে মানানো যাবেনা, আর আমার ফ্যামিলি এবং প্যারেন্টস এর বিরুদ্ধে গিয়ে অস্বাভাবিক কিছু করাতো আমার পক্ষে সম্ভব না, তুমি সেই সেকেন্ড ইয়ার থেকেই আমাকে পছন্দ করছ আমিতো সেটা বুঝি, কিন্তু আমারতো কিছুই করার নেই, আমাকে আরো অনেকেই আকার ইংগিত দিয়েছে যে আমাকে পছন্দ করে কিন্তু আমি সেই সব পথে পা বাড়াইনি, যদি পা বাড়াতাম তবে হয়তো তোমাকেই বলতাম, আমাকে ক্ষমা কর শাকিল, আমার কিছুই করার নেই, আমার প্যারেন্টস যেভাবেই চাইবেন বিষয়গুলো সেভাবেই হবে, তুমি আমাকে ভুলে যেও....
বললাম, জানিনা ভুলতে পারব কিনা, ওটার উপরতো আর আমার হাত নেই, তুমি চোখ মুছ, তোমার দেরী হয়ে গেছে, বাসায় চিন্তা করবে, যেতে হবে, তারপর পার্কের ভেতরেই একটা রেষ্ট্রুরেন্টে গিয়ে বসলাম, রুমি আমার মোবাইলটা চেয়ে নিল, তখনো হাতে হাতে মোবাইল চলে আসেনি, রুমি মোবাইল ইউস করতনা, ওদের বাসায় সিটিসেল ইউস করত, আমার কাছে না্ম্বারটা ছিলনা, শুধু ওর মামা বাড়ির ল্যান্ড ফোন নাম্বারটা ছাড়া, যেহেতু সে তখন ওখানেই থাকতো, রুমি বাসায় ফোন দিল, ওর আম্মু রিসিভ করেছিল, বলল, এখনই চলে আসবে, ভাইভা ফেইস করতে দেরী হয়ে গিয়েছিল, পরে আমি নাম্বারটা সেইভ করে রেখেছিলাম।
চলবে..........
পরের পর্ব (১৭)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:১৫