আগের পর্ব (১৪)
পরীক্ষা শেষ হলো বাকি রইল ভাইভা। এদিকে ইমতিদা আর নাহিম ভাই হার মানলেন, আমাকে জানিয়ে দিলেন আমি যেন রুমিকে নিয়ে আর বিশেষ কিছু না ভাবি, আমিও তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, আসলে তাদের দুজনের প্রতি আমার খুব আস্থা ছিল, শুধু বলেছিলাম আপনারা হার মানবেন সেটা ভাবতে পারিনি তাই আপনারা যখন দায়িত্বটা নিয়েছিলেন আমি না করিনি, কিন্তু ওরা করেছিল কি? কেন হার মানল সেটাতো জানা হয়নি, জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ইমতিদা বললেন ওদের ফ্যামিলি আমার যোগ্য না তাই ইমতিদা আর এগুচ্ছেননা, বুঝলাম আমাকে সান্তনা দেয়া হল, পরে নাহিম ভাইকে আবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম, নেপথ্যের ঘটানা কি! নাহিম ভাই বললেন, ওরা দুইজন রিমির সাথে দেখা করেছিল, রিমির সাথে কথা বলে জানা গেল, রিমি অনেক আগেই রুমির সাথে এ ব্যাপারে আলাপ করেছেন, রুমি নাকি হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিল, অসম্ভব, অবাস্তব টাইপ এর একটা অভিব্যাক্তি দেখিয়েছিল, ইমতিদা আার নাহিম ভাই কথাটা শুনেই আর এগুতো চাইলনা, ওখানেই ইতি টানলেন।
ভাইভা এর দিন আসল, গেলাম কলেজে, আমাদের হয়তো আজ শেষ দেখা, কলেজে গিয়ে দেখি সবার চোখে মুখে উৎকন্ঠা, কেউ গাইড বই পড়ছে, কেউ এমনি বসে আছে ক্লাশ রুমে, কেউ কেউ অবশ্য আড্ডাও দিচ্ছে, কেউ একজন ভাইভা ফেইস করে আসলে এগিয়ে যাচ্ছে উৎসুক কেউ কেউ, কি প্রশ্ন করেছে জানার জন্য, রুমি চুপচাপ হয়ে বসে ছিল ক্লাশ রুমটার এক কোনায়, আমি এসে কয়েকজনের সাথে হায় হ্যালো হলো, রুমি আমাকে দেখেও দেখেনি এমন একটা মুড এ আছে, সাধারণত সে নিজ থেকেই এসে কথা বলে, আজ এমনটা হলনা।
আমি নিজ থেকেই গিয়ে পাশে বসলাম, জিজ্ঞাসা করলাম কেমন আছ? সেকি! সে কাঁদছে, চোখ গড়িয়ে পানি পড়ে গেল কয়েকফোটা, আমি বুঝতে পারলাম খুব বিশ্রি রকম একটা সিচ্যুয়েশান ফেইস করতে যাচ্ছি আমি, সে কিছু বলার আগেই আমি বললাম, প্লিজ এমন কিছু করনা যাতে তুমি আমি দু'জনই বিব্রত একটা অবস্থানে পড়ি, এখানে সবাই আছে প্লিজ চোখ মু'ছ।
চোক মুছে সে একটু স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করল, তারপর বলল তোমার সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে, ধারণা করলাম নিশ্চয় ইমতিদা আর নাহিম ভাই এর সাথে কোন ঝামেলা হয়েছে, আমি বললাম, দেখ একটু পর তোমার সিরিয়্যাল নাম্বার কল করবে, এখন এই মুহুর্তে তোমার অন্য কোন ব্যাপারে কথা বলা উচিত হবে? অন্তত ভাইভাটা ফেইস কর, তারপর তোমার যা বলার বল আমি শুনব, আমার ক্রমিক নাম্বারতো শেষের দিকে, অন্তত তুমি ভাইভা ফেইস করে আস তারপর তোমার যা বলার বলবে।
রুমি ভাইবা ফেইস করে আসল, তার পরপরই লাঞ্চ ব্র্যাক ডিকলেয়ার দিল, ঘন্টা খানেক পর আবার শুরু হবে, রুমিকে বললাম এবার বলতে পার কি বলতে চাচ্ছিলে, সে বলল এখন না, আমিও আগে ভাইভা ফেইস করে নিই তারপর বলবে কথাটা, কিন্তু আমাকে কল করতে তো অনেক দেরী হবে, তবুও সে অপেক্ষা করবে, সেদিন দুপুরে কলেজের পাশেই একটা রেষ্ট্রুরেন্টে বসে হাল্কা কিছু খেয়ে নিলাম, দু'জনেই চুপচাপ তেমন কোন কথা হলনা, একটা ঝড়ের পূর্বাভাস!
আমি যখন ভাইভা ফেইস করে বের হয়ে এলাম তখন প্রায়ই সন্ধ্যা হওয়ার পথে, পুরো কলেজ ফাঁকা, আমার পরের আর দু'কজন পরিক্ষার্থী আছে তারা ছাড়া সবাই চলে গেল নিজ নিজ গন্তব্যে, রুমি বসে রইল আমার অপেক্ষায়, দু'জন হেঁটে কলেজ গেইটে চলে আসলাম কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই, বললাম তোমার জন্য কি রিকশা দেখব? কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য পুরুটো দিন রয়ে গেলে, ওটা কি বলতেই হবে? না বললেই কি নয়! কোন সাড়া শব্দ পেলামনা, আনমনা হয়ে সে তাকিয়ে আছে অন্যদিকে
কিসের একটা শূন্যতা অনুভব করলাম, এমন নির্জিব কলেজ আর কখনো দেখা হয়নি, যখনই এসেছি মানুষ গিজ গিজ করেছে, আজকে যাবার মূহুর্তে কেমন শুনশান নিরবতা, বাতাসে গাছের পাতার শব্দ শুনতে পাচ্ছি, মনে হল এইতো সেদিন কলেজে আসলাম আজকে যাবার সময় হয়ে গেল, ক্লাশ করা হবেনা আর, দেখা হবেনা অনেকগুলো প্রিয় মুখ, আমারতো ছোট হোক একটা চাকরী আছে অন্য অনেকে চাকরীর জন্য চেষ্টা করবে, কেউ কেউ বিদেশ পাড়ি দেবে, কেউ ধরবে পারিবারিক ব্যাবসার হাল, দুই একজন আরো উচ্চ শিক্ষার চেষ্টাও করবে হয়তো, কেউ জানিনা কারো গন্তব্য।
পাশদিয়ে একটা রিকশা চলে যাচ্ছিল, ডাক দিলাম এই রিকশা বলে, রিকশা ড্রাইভার পেছনে ফিরে তাকাল, প্রথমে কি যেন ভাবল তারপর ঘুরিয়ে আসল আমাদের কাছে, বুঝতে পারলাম সংগে যদি নারী না থাকত তাহলে সে হয়তো আসতনা, রুমি কে বললাম রিকশায় উঠো, সে উঠে বসল সংগে আমিও, রিকশা ড্রাইভার জিজ্ঞেসা করল কোথায় যাব, বললাম তুমি সোজা চালাতে থাক পথ ভুল হলে আমরা বলব।
চলবে......
পরের পর্ব (১৬)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:০৭