somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে (১৪)

২৩ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে (১৪)



আগের পর্ব (১৩)

আমার ভয়টা ছিল রুমির মা এর ব্যাপারে, ওনি মেয়ের ব্যাপারে খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলেন এবং আমার মতো একটা ছাপোষা ছেলের ব্যাপারে ওনার ন্যুনতম আগ্রহ থাকবেনা সেটা আমি নিশ্চিত ছিলাম কিন্তু ইমতিদা তা মানতে নারাজ, ইমতিদা আমাকে বুঝালেন আমি নিজেকে নিজে আন্ডার স্টিম্যাট করছি, নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন সবকিছু ছকে বাঁধা নিয়মে হয়না।

ইমতিদার ঘটনাটা এমন, ওনি আর ভাবি সহপাঠি ছিলেন, ভাবির পরিবারের সবাই থাকে ইউএসএ, ইমতিদাও ভাবিকে পছন্দ করতেন কিন্তু বলার আর সময় হয়ে উঠেনি, ভাবিও পড়ার ফাঁকে হুট করে চলে গেলেন স্বপ্নের দেশে, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ব্যাবসার হাল ধরলেন আর পড়ালিখাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন, একসময় ছুটিতে দেশে এলেন, ইমতিদা দ্বিধা সংকোচহীন বলে দিলেন, ভাল লাগে পছন্দ করি, ভাবি প্রথমে একটু অপ্রস্তুত ছিলেন এবং ব্যাপারটা অভিভাবকদের উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন, ইমতিদা নিজে স্মার্টলি সব ফেইস করেছিলেন এবং বিয়েটা হয়ে গেল, ভাবি চলে গেলেন ইউ এস এ, এবং ইমতিদা যাবার কাগপজত্র প্রসেসিং হচ্ছে, যে কোনদিন হয়তো বিদায় নেবেন আমাদের কাছ থেকে, ইমতিদা শুধু উপদেশটা দিলেন স্মার্টলি ফেইস না করলে হাতের মুঠোয় থাকার পরও ফসকে যেতে পারে যে কোন কিছুই।

পরীক্ষা শুরু হল, প্রিপ্যারেশান যা ছিল সব তালগোল পেকে গেল, আমি পড়তে পারছিলামনা, অন্যরকম এক অস্থিরতা অনুভব করছিলাম, পরীক্ষার আগের রাতে পড়তে গিয়ে দেখি এতদিন যা শিখেছি সব ভুলে বশে আছি, আসলে সেই মুহুর্তে নতুন করে শিখার কিছু থাকেনা, পড়া গুলো একটু চোখ বুলিয়ে নিতে হয়, আমিও তাই করার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু ফল হচ্ছে উল্টো, যত পড়ার চেষ্টা করছি শেখা প্রশ্ন যেন আবার ভুলছি, ব্যাপারটা ঠিক এমন, আমি কম্পিউটারে একটা গল্প লিখেছি, লিখা শেষ হবার পর ব্যাক স্পেস টিপে ধরলাম আর এত কষ্ট আর ভাবনার লিখাগুলো পেছন থেকে মুছে সামনের গিকে এগুচ্ছে, ভাবলাম রাত জেগে আর পড়ে কাজ নেই তারচে বরং ঘুম দেয়ার চেষ্টা করাটাই ভাল হবে, সারারাত পায়চারী করে ঘুমও হলোনা, ঘুম ঘুম চোখেই পরীক্ষায় এটেন্ড করলাম।

মনে মনে ঠিক করেছি রুমির সাথে আর দেখা করবনা, কেননা ওর সাথে দেখা হলে আমি নিশ্চিত আবেগ তাড়িত হব এবং যার ফলশ্রুতিতে আমার পরীক্ষাটায় দেয়া হবেনা, প্রথম দুইদিন আমি শেষ ঘন্টা পড়ার পাঁচ মিনিট আগেই খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে আসলাম যাতে রুমির মুখোমুখি পড়তে না হয়, যদিও পরীক্ষার খাতায় কি লিখছি আমি নিজেও জানিনা, আমার সিট পড়েছিল ফাস্ট ফ্লোর এ, বাংলায় যদিও ওটাকে আমরা দুই তলা বলতে অভ্যস্থ, রুমির সিট পড়েছিল সম্ভবত আমার পরের ক্লাশ রুমটায়।

তৃতীয় দিনও যথারীতি আমি শেষ ঘন্টা পড়ার আগেই বের হয়ে আসলাম, সিড়ি দিয়ে নামতেই শুনতে পেলাম আমার নাম ধরে পেছন থেকে ডাকছে, প্রথম ডাকেই বুঝে গেলাম এটা রুমি ছাড়া অন্য কেউ নয়, তবুও আমি না শুনার ভান করে এগুতে চাইছিলাম কিন্তু আমার পা যেন যেতে চাইছেনা, রুমিও আবার একটা ডাক দিয়ে জোরে হেটে আসছে আমার দিকে, আমি পায়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।

সে এসে দাঁড়ালো মুখোমুখি হয়ে, " কি ব্যাপার তুমি আমাকে এভয়েট করছ কেন? গত দুই পরীক্ষার পর তুমি আমার সাথে দেখা করনি, পরীক্ষা শেষে আমি পুরো কলেজ খুঁজেছি তোমাকে, পেলামনা কোথাও, তোমার হয়েছেটা কি! এভাবে আমাকে এড়িয়ে চলছ কেন!!"

- রুমি, আমি পড়তে পারছিনা, কান্না পাচ্ছে সারা রাত, পরীক্ষার পর তোমার সাথে দেখা হবেনা বিষয়টা আমি মানতে পারছিনা, তোমার সাথে কথা হলে আমি আরো ইমোশনাল হয়ে পরীক্ষাটাই দেয়া হবেনা সেই ভয়ে আমি তোমাকে এভয়েট করছিলাম।

-কিসব বলছ আবোল তাবোল, মেয়েদের মতো কান্নাকাটি এসব কি! পরীক্ষাটা ঠিক করে দাও, ওসব ফালতু চিন্তা মাথা থেকে ঝাড়, আজ কলেজ গেইট থেকে রিক্সা নেবনা, চল মেইন রোড পর্যন্ত দু'জন কথা বলতে বলতে হেঁটে যাই, তারপর তুমি আমাকে রিক্সা ঠিক করে দেবে, আমি যাব মামার বাড়িতে আর তুমি তোমার বাসায়, চল।

- না এখান থেকেই বিদায় নাও, তুমি একাই যাও

- যাবেনা ?

- না যাবনা, তুমি একাই যাও

-রুমি বেশ কবার জিজ্ঞেস করেছিল, আমি যাব কিনা..
যাবেনা..যাবেনা...যাবেনা...

তারপর চোখেমুখে হাজার মেঘ জমিয়ে রুমি যেই পা বাড়ালো দেখলাম ইমতিদা আর নাহিম ভাই কোথথেকে এসে হাজির, ওরা আসলে সেদিন আমাদের ফলো করছিল, আমাদের পাশেই ছিল আমি খেয়াল করিনি, সম্ভবত আমাদের কথাগুলো না শুনলেও আন্দাজ করেছিল আমাদের কথাগুলো স্বাভাবিক ছিলনা।

ইমতিদা আর নাহিম ভাই ঠিক করেছিল রুমির সাথে পরিচয় হবে কিন্তু আমাকে জানায়নি, ওরা পরীক্ষা শেষের সময়টা বেঁছে নিল, ভাবল সেই সময়ে দু'জনকেই একসাথে পাওয়া যাবে।

ইমিতিদা একটু আগ বাড়িয়ে এসে প্রথমে রুমিকে থামাল, একটু দাঁড়ান বলে রিকোয়েষ্ট করে, আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম রুমির হেঁটে যাওয়ার দৃশ্যটা দেখব বলে, কিন্তু দু'কদম দিতেই ওরা এসে হাজির।

রুমি অবাক হয়ে ফ্রিজ হয়ে তাকিয়ে ছিল, বলা নেই কওয়া নেই অচেনা এক লোক এসে বলে কিনা, "একটু দাঁড়ান প্লিজ।" আমি পরিচয় করিয়ে দিলাম ইনি হলেন ইমতিদা আর ইনি নাহিম ভাই, আমার কলিগ, রুমি সালাম দিয়েছিল তাদেরকে, অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে ইমতিদার জড়তা নেই, আর যেহেতু হিংসা করার মতো সুদর্শন এবং শরীর এর গঠন গাঠন এমনিতেই আকৃষ্ট করে সবাইকে, এমন আন্তরিক আর আপন করে কথা বলেন যে কেউ একবার পরিচয় হলে ওনার সাথে, ভুলে যাবার কোন উপায় নেই।

আমরা হেঁটে আসছিলাম মেইন রোড পর্যন্ত, আমি আর নাহিম ভাই পেছনে, ইমতিদা রুমির সাথে পরিচয় হবার তাগিদে ওরা একসাথে হাঁটছিল, মেইন রোড আসার পর ইমতিদা অফার করল আমরা যদি কোন রেষ্ট্রুরেন্টে খানিক বসি তাহলে আপত্তি আছে কিনা, রুমি তাকাল আমার দিকে, আমি কি বলি ওটা শোনার জন্য, আমি রুমিকে বললাম তোমার কি সংকোচ বা ভয় কাজ করবে যদি ইমতিদার অফারটা গ্রহণ কর এবং আমি যদি না থাকি? ইমতিদা সাথে সাথে কথাটা লুফে নিলেন, আপনিতো সবসময় ফাঁকিবাজ, আপনার বিয়েতেও দেখা যাবে আপনি লজ্জায় স্টেজে বসবেননা, আমাকেই প্রক্সি দিতে হবে বর এর রোলটা, সবাই হেসে উঠলাম।

আমি বিদায় নিলাম, ওরা সেদিন কি আলাপ করেছিল আমার আজও জানা হয়নি, তবে ইমতিদা সেদিন রুমির মামা বাড়ির খবর পর্যন্ত বের করে আনলেন এবং রুমির মামাতো রিমির সাথে পরিচয় হবারও একটা প্ল্যান প্রোগ্রামও ঠিক করে ফেলেছিলেন।

চলবে.......

পরের পর্ব (১৫)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শয়তান ও রাজনীতিবিদ !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৫৬


এক মন্ত্রী মৃত্যুর পর পরজগতে গেলো। দুনিয়ায় তাঁর কিছু ভালো কাজ থাকার কারনে সৃষ্টিকর্তা তাকে ক্ষমা করে জান্নাতে জায়গা দিলেন।সে যখন জান্নাতে ঢুকবে, তখন ফেরেশতারা তাকে বলল,"জান্নাতে তো কিছু সৌন্দর্যবর্ধনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সিথী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৫০



এই মহিলা পুরা ফেসবুকের রিল খাইয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

'কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়’

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৫

বই রিভিউ
‘কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়’
রুপক বিধৌত সাধু

বরাবরের মতোই এবারের একুশে বই মেলা থেকে অনেক বই কিনেছি। ইচ্ছে ছিল ব্লগার বন্ধুদের বইগুলো পড়ে ছোট করে হলেও পাঠপ্রতিক্রিয়া শেয়ার করবো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় নাগরিক পার্টি গুছিয়ে কথা বলে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:২৯



আজ আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা গুছিয়ে কথা বলে। তারা বলছে তারা ভারত পন্থী ও পাকিস্তান পন্থী রাজনীতি করতে দেবে না।এসময়ে ভারত বিরোধী ও পাকিস্তান বিরোধী রাজনীতিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত- পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ঠাঁই নাই বাংলাদেশে.....

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৫০


এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা নাহিদ ইসলাম। ইহা তো বাঙালির প্রাণের কথা ! ভারত ও পাকিস্তান আমাদের কে ছোট ভাই মনে করে কুবুদ্ধি দিয়ে বিপথগামী করতে চায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×