somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে.........(পর্ব-৬)

১৩ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্ব (৫)

সুমাইয়া: তখনো আমি ষ্টুডেন্ড ছিলাম, একদিন শীতের রাত, রাতে ঘুমোতে যাব, বাইরে দরজার পাশে একটা বিড়ালের কান্না শুনতে পেলাম, কান্নাটা আমার কাছে খুব করুণ মনে হলো, মনে হল অসহায় কোন বিড়াল বিপদে পড়েছে, দরজা খুলে দেখলাম সত্যি সত্যে একটা বিড়ালের বাচ্চা শীতে জড়োসড় কাঁদছে, একটু নাড়া দিলাম, মনে হল পায়ে ব্যাথা পেয়েছে, একটু দাঁড়িয়ে আবার বসে পড়লো, কান্না থামছেনা, আমার মায়া হল খুব, আমি ঘরে নিয়ে আসলাম, ড্রয়িং রুমে সোফার পাশে পেপার বিছিয়ে পুরোনো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলাম, কান্নাটা আস্তে আস্তে কমে আসল, একটা বাটিতে ভাত আর কিছু তরকারী রেখে দিলাম, সেই রাতে আমার আর ঘুম হয়নি, কেমন যেন একটা মায়া পড়ে গেল অসহায় বিড়ালটার প্রতি, কিছুক্ষণ পরপর এসে দেখে যাচ্ছিলাম।

পরের দিন আপা আর দুলাভাই দিল বকা আমাকে, সারা রাত বিড়াল নিয়ে এসব কি! বিড়ালটা এখনো দেখছি ঘরে, যাও ছেড়ে দাও বাইরে, ওর পথ ও খুঁজে নেবে।

আমি বল্লাম না, বিড়ালটা অসুস্থ, ওর পায়ে ব্যাথা, ভাল না হওয়া পুর্যন্ত আমি ওকে ছেড়ে দেবনা, রেখে দিলাম ঘরে, নাম দিলাম পুষি, সেই থেকে বিড়ালটা আমার কাছে।

ধীরে ধীরে ওটা সবার প্রিয় হয়ে গেল, সেও এখন একজন ঘরের মেম্বার, বেড়ে উঠতে লাগল, পা এর ব্যাথাটাও আর নেই, সে এখন আর ছোট নেই অনেক বড় হয়ে গেল, তারপর হলো এক বিপত্তি।

কান্না করছে শুধু শুধু, রাতে কাউকে ঘুমোতে দিলনা, সবাই বিরক্ত আমার উপর, ভেভেছিলাম ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু না, দুই তিন দিন হয়ে গেল বিড়ালের কান্না থামেনা।

শাকিল: আবার কি হল, পায়ে ব্যাথা পেল নাকি?
সুমাইয়া: গাধা, ওর এখন সংগী দরকার

শাকিল: ও ও তাই নাকি, আমারও তো এখন সংগী দরকার তাহলে আমারও কি কাঁদতে হবে!
সুমাইয়া: জ্বি আপনি কাঁদেন বসে বসে আমি গেলাম

শাকিল: আরে না এখন কাঁদতে পারবনা, আগে শেষ করেন
সুমাইয়া: তারপর দুলাভাইকে বললাম ওকে ডাক্তার দেখাতে হবে, দুলাভাই বলল ওনার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, তারপর দিলাম আমি খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে, ওকে ডাক্তার না দেখালে আমি খাবনা, রুমের দরজা বন্ধ, কথা হবেনা কারো সাথে, অবশেষে দুলাভাই রাজি হলো, নিয়ে গেলাম স্থানিয় হাসপাতালে, ডাক্তাররা শুনে হাসল কিন্তু কেউ ট্রিটমেন্ট করাতে রাজি হলনা, এখানে পশুর চিকিৎসা করানো হয়না, সরি। জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাব, কেউ উত্তর দিতে পারলনা, চলে এলাম।

ঘরে এসে ইন্টারনেটে ঢু মারলাম কি করা যায়, ঘাটতে ঘাটতে পেয়ে গেলাম পশু হাসপাতাল এর ঠিকানা দুলাভাইকে সংগে নিয়ে আবার গেলাম ওখানে, একজন ইউরোপিয়ান ডাক্তার ঘটনা শুনে হাসল, তারপর বলল সার্জারী করাতে হবে, করালাম, তারপর ওকে অনেক সেবা শুশ্রুষা করে সুস্থ করলাম, এই হলো বিড়াল কাহিনী।

তারপর আমার এই চাকরীটা হলো, আপার বাসা থেকে ডিস্টেন্ট অনেক বেশী তাই আমি চলে আসলাম অফিসের মহিলা হোষ্টেলে, বিড়ালটা আপার কাছে রেখে আসলাম, আমি প্রতি বৃহষ্পতিবার অপিস ছুটির পর আপার বাসায় যাই, যাওয়ার সময় বিড়াল এর জন্য বিস্কিট, গোসলের সাবান এসব নিয়ে যাই, শনিবার চলে আসি শোজা অফিসে, মাঝের মধ্যে আমি যদি বৃহষ্পতিবার আপার বাসায় না যাই তাহলে ওইদিন রাতে বা পরের দিনে আপা দুলাভাই রান্না করা খাবার নিয়ে আসে আমার এখানে, তিনজন মিলে খাওয়া দাওয়া গল্প গুজব করি, আমার দুলা ভাইটা খুব ভাল, ওনি যেন আমাদের ঘরের বড় ছেলে, আমাদের ঘরের কোন ডিসিশান ওনি ছড়া হয়না।

আজ অনেক বক বক হলো, আমার ছুটির সময় হলো টাটা বাই বাই, টেক কেয়ার এন্ড বি গাধা এন্ড সো এন্ড সো :P:P:P:P:P:P

শাকিল দেশ ছেড়েছে তিন বছর হয়ে এলো, এতদিন দেশে যাবার তেমন তাগাদা অনুভব করেনি, দেশের প্রতি তার কিছুটা অনিহা কাজ করে, বড় ভাই বারবার তাগাদা দিচ্ছিল কবে আসবি কবে আসবি, একনাগাড়ে এভাবে বেশিদিন থাকাটা ভাল না, কিছুটা মাইন্ড রিফ্রেশ এর ব্যাপার আছে ইত্যাদি, যখন সে ঘোষণা দিয়েই দিল সামনের মার্চে ছুটিতে যাবে তার পর থেকে একটু একটু দেশের প্রতি মায়া হতে লাগল, প্রথম প্রথম বড় ভাইয়ার ছেলে দুটোর কথা বেশ মনে পড়তো, বিশেষ করে, ছোট ইয়াসিন এর কথা, তখন ওর ২ বছর বয়েস ছিল, শাকিল যখন সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরতো, তখন ঘরে ঢুকার সাথে সাথে ইয়াসিন দৌড়ে আসতো, স্পষ্ট করে কথা বলতে পারতনা, এসেই উপরের দিকে তাকিয়ে একটা হাত বাড়িয়ে বলত চা..চু..টাকা, শাকিল পকেট থেকে এক টাকার কয়েন বের করে দিত, সে খুব খুশি হয়ে দেখতো কয়েনটা, তার পেছনে ওত পেতে থাকত ইয়ামিন, ছো মেরে কয়েনটা নিয়ে ভো দৌড়, সে কান্না জুড়ে দিয়ে পেছন পেছন দৌড়াতো, শাকিল আবার আর একটা কয়েন বের করে দিলে তারপার শান্ত হতো।


চলবে.....

পরের পর্ব (৭)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:২৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সিথী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৫০



এই মহিলা পুরা ফেসবুকের রিল খাইয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

'কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়’

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৫

বই রিভিউ
‘কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়’
রুপক বিধৌত সাধু

বরাবরের মতোই এবারের একুশে বই মেলা থেকে অনেক বই কিনেছি। ইচ্ছে ছিল ব্লগার বন্ধুদের বইগুলো পড়ে ছোট করে হলেও পাঠপ্রতিক্রিয়া শেয়ার করবো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় নাগরিক পার্টি গুছিয়ে কথা বলে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:২৯



আজ আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা গুছিয়ে কথা বলে। তারা বলছে তারা ভারত পন্থী ও পাকিস্তান পন্থী রাজনীতি করতে দেবে না।এসময়ে ভারত বিরোধী ও পাকিস্তান বিরোধী রাজনীতিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত- পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ঠাঁই নাই বাংলাদেশে.....

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৫০


এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা নাহিদ ইসলাম। ইহা তো বাঙালির প্রাণের কথা ! ভারত ও পাকিস্তান আমাদের কে ছোট ভাই মনে করে কুবুদ্ধি দিয়ে বিপথগামী করতে চায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই একই কায়দায় আরো একটি কিংস পার্টি ‼️মুলত ড. ইউনুসের হিডেন পার্টির আত্মপ্রকাশ ॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০১ লা মার্চ, ২০২৫ রাত ২:০৪



ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের নিজেদের রাজনৈতিক দল ঘোষণা করেছে। আগের সব ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারদের মতো একই ধারায় এগুচ্ছে তারা।

সন্ত্রাস করে ক্ষমতা দখল করো, বিরোধী সবাইকে হত্যা করো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×