somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খাগড়াছড়িতে আমাদের নিউজিল্যান্ড

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পানখাইয়া পাড়া থেকে বেড়িয়ে আপার পেরাছড়া গ্রামের দিকে যাওয়ার রাস্তাটাকে বলে নিউজিল্যান্ড সড়ক। সড়কের দুইপাশে সবুজ ক্ষেত খামার, এটাই খাগড়াছড়ির একমাত্র সমতল ভূমি। সবুজ শস্যক্ষেত আর তার পিছনের পাহাড়ের মিতালি এক অসাধারণ নান্দনিক সৌন্দর্য এখানে ছড়িয়ে আছে। এরূপ দৃশের কারণে স্থানীয় মানুষজন একে নিউজিল্যান্ড নাম দিয়েছে। এক্ষেত্রে বলা যায় পানখাইয়া পাড়া আর পেরাছড়ার কিছু অংশ নিয়েই নিউজিল্যান্ড গঠিত। তবে আলাদাভাবে কোন গ্রামের নাম নিউজিল্যান্ড আছে কিনা আমার জানা নাই। যেন অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের এক টুকরো নিউজিল্যান্ড ঠাই নিয়েছে খাগড়াছড়িতে।

এখানকার প্রকৃতিতে গাঢ় সবুজ পাহাড়, কলকলে বয়ে যাওয়া নদী, দূরে ঝিরঝির শব্দের ঝর্ণা, ওপরে নীল আকাশ, মাঝে মাঝে সাদা মেঘ, বর্ষায় বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ, রাতের আকাশে চন্দ্র-তারা ও দিনের আলোয় লাল সূর্য মিলেমিশে একাকার। খাগড়াছড়ি শহরের পাশ দিয়ে সর্পিল এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়া চেঙ্গী নদীর লালচে ঘোলা পানি কর্ণফুলী নদীর সাথে মিলেমিশে একাকার। মাঝে মাঝে নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবনধারা, জুমঘর, কোথাও সবুজের চাদরে মোড়ানো জুম চাষের ক্ষেত- যা ভিন্নমাত্রা এনে দিয়েছে।

লোক মুখে শোনা যায়, অনেক অনেক বছর আগে এক পাহাড়ি ভদ্রলোক এই এলাকা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, নিউজিল্যান্ডের মতো বাতাস সেই থেকে নাকি এলাকার নাম হয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড পাড়া। তো আসুন আমার ক্যামেরায় দেখা হয়ে যাক বাংলার নিউজিল্যান্ডকে।


(২) খুব স্বল্প সময়ের জন্য বৈসাবি দেখতে গিয়েছিলাম খাগড়াছড়িতে। ( এ উৎসবটি ত্রিপুরাদের কাছে বৈসুক, বৈসু বা বাইসু , মারমাদের কাছে সাংগ্রাই এবং চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের কাছে বিজু নামে পরিচিত। বৈসাবী নামকরনও করা হয়েছে এই তিনটি উৎসবের এর প্রথম অক্ষর গুলো নিয়ে। বৈ শব্দটি ত্রিপুরাদের বৈসু থেকে, সা শব্দটি মারমাদের সাংগ্রাই থেকে এবং বি শব্দটি চাকমাদের বিজু থেকে। এই তিন শব্দের সম্মিলিত রূপ হলো বৈসাবি )।


(৩/৪) শেষ বিকালে মারমাদের সাংগ্রাই উৎসবের শেষ অংক দেখেই আমরা পানখাইয়া পাড়া থেকে নিউজিল্যান্ড সড়ক ধরে পেরাছড়া গ্রামের দিকে গিয়েছিলাম।




(৫) নিউজিল্যান্ড সড়কটা শুরুতেই ভাঙ্গাচোড়া হলেও এলাকাটা দেখে আমরা সত্যিই মুগ্ধ হলাম।


(৬/৭) কোথাও সবুজ ধানক্ষেত, আবার কিছু এলাকা একেবারেই ন্যাড়া, দূরে কিছু বাড়ি ঘর আরো দূরে দাড়িয়ে আছে সবুজ উঁচু পাহাড়। শেষ বিকেলের ঝিরিঝিরি বাতাস সারাদিনের বৈসাবী দেখার ক্লান্তিকে নিমেষেই উড়িয়ে নিয়ে গেলো কোথায় কে জানে?




(৮) নিউজিল্যান্ড সড়ক ধরে ছুটা যাওয়া স্থানীয় কিছু যানবাহন।


(৯) পাহাড়ের কোল ঘেষে দাড়িয়ে থাকা বাড়ি ঘর গুলো দেখতে সত্যিই অন্য রকম।


(১০) নিউজিল্যান্ডের বুলবুলিদের দেখতে অনেকটা বাঙালী বুলবুলিদের মতোই মনে হয় :D


(১১) এটা নিউজিল্যান্ডের একটা মেটো পথ।


(১২) হাটতে হাটতে আমরা নিউজিল্যান্ডের অপর পাড়ের গ্রাম আপার পেরাছড়ায় চলে এলাম।


(১৩) এই নিউজিল্যান্ড সড়কেই দেখা হয়েছিলো একজন বোকা মানুষের সাথে, যিনি সব সময়ই কিছু বলতে চান।


(১৪) পেড়াছরা গ্রামে ঢুকেই দেখা হয়েছিলো এই চাকমা পরিবারের সাথে ওদের আতিথেয়তার কথা জীবনেও ভুলব না, আদিবাসিদের আতিথেয়তা নিয়ে সব সময়ই আমার ধরণা অতি উঁচু, কিন্তু ওরা যেনো সেসবকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলো।


(১৫/১৬) ওদের সাথে আমাদের টিমের দেখা হতেই ওরা আমাদেরকে ওদের বাড়িতে নিয়ে গেলো, এবং এতো প্রকার খাবার দাবার দিলো যাতে আমরা সত্যিই অভিভূত। এর মধ্যে সব চেয়ে বড় পাওয়া ছিলো ওদের বিজু উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ৩৬ রকমের পদ দিয়ে তৈরি পাজন।




(১৭/১৮) এতো খাবার দাবারের পর ঐ বাড়ির এমন ফলগুলোর দিকে আমাদের আর তাকানোর দরকার পড়েনি।




(১৯/২০) এক সময় সূর্য্যি মামা তার শেষ গন্তব্যে চলে যায়, আমরাও সেদিনের মতো নিউজিল্যান্ডে ভ্রমণ বাংলাদেশের আমরা কয়েকজন শেষ ছবিটা তুলে আস্তে আস্তে বিদাই হই।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:০৮
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×