বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি স্থানটি সাঙ্গু নদীর উজানে একটি মারমা বসতী। মারমা ভাষায় 'খুম' মানে হচ্ছে জলপ্রপাত। রেমাক্রি থেকে তিন ঘন্টার হাঁটা পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় আশ্চর্য সুন্দর সেই জলপ্রপাতে, যার নাম 'নাফাখুম'। রেমাক্রি খালের পানি প্রবাহ এই নাফাখুমে এসে বাঁক খেয়ে হঠাৎ করেই নেমে গেছে প্রায় ২৫-৩০ ফুট....প্রকৃতির খেয়ালে সৃষ্টি হয়েছে চমৎকার এক জলপ্রপাত! সূর্যের আলো পেলেই সাতরঙা রংধনু সেখানকার পাহাড়ি সৌন্দর্য্যকে বাড়িয়ে দেয় শতগুণ।
উপর হতে আছড়ে পড়া পানির আঘাতে ঝর্নার চারিদিকে সৃষ্টি হয় ঘন কুয়াশার। উড়ে যাওয়া জলকনা বাষ্পের সাথে ভেসে ভেসে শরীরে এসে পড়ে। রোমাঞ্চকর সে অনুভূতিটা বলে বোঝানোর মতো নয়। অনেকে এটাকে বাংলার নায়াগ্রাও বলে থাকে। এখানটায় পৌছার আগেই আমার মূল ক্যমেরাটা পানিতে পড়ে যাওয়ায় আর ছোট্ট ক্যামেরাটার ব্যটারিও প্রায় ফুরিয়ে যাওয়ায় খুব একটা ছবি তোলা সম্ভব হয়নি, তবে যেটুকু তুলতে পেরেছিলাম তা নিয়েই আমার আজকের পোষ্ট।
(২) রেমাক্রি বাজার থেকে এমন অনেকগুলো ধাপ বেয়ে নেমে যেতে হবে পাহাড়ি পাড়া পেনেডং এর দিকে।
(৩) রেমাক্রি বাজার থেকে নেমে ব্রীজ পার হয়ে আবার উপরের দিকে উঠে পেনেডং পাড়ায় ঢুকতেই এই সতর্ক বার্তাটা চোখে পড়ে।
(৪) পেনেডং পাড়ায় ভেতরে এমন পথে হেটে যেতে পাহাড়ি পাড়া পেনেডাং এর প্রেমে পড়তে খুব বেশী সময় লাগে না।
(৫) পেনেডাং ছেড়ে এক সময় আমরা নেমে এলাম রেমাক্রি খালের পাড়ে, এখানে কিছু আধিবাসী বন থেকে কাঠ কেটে পাড়ায় প্রবেশ করার আগে হয়তো বা একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল।
(৬/৭) এবার রেমাক্রি খালের সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে আমাদের নাফাখুমের দিকে এগিয়ে যাবার পালা।
(৮) কখনো হাটু পানি, কখনো কোমর পানি, কখনো বা পিচ্ছিল পাথুরে বা জংলাকীর্ণ পথ, কিন্তু শত কষ্টেও থেমে নেই ক্যমেরাম্যানদের ক্লিকবাজী করা।
(৯) এই পাহাড়েই যাদের কেটে যায় একটি জীবন, বেশীরভাগ এখানকার পাহাড়ির সভ্য জগতে কখনো প্রবেশ করা হয়ে উঠে না, তাদের শিশুরা রেমাক্রির পানিতে কলার ভেলা ভাসিয়ে খুঁজে নেবে আনন্দ, এতে আর অবাক হওয়ার কি আছে !!
(১০/১১) পাহাড়ের জঙ্গলে উৎপাদিত মুলি বাঁশগুলো সভ্য জগতে যাওয়ার জন্য প্রথমেই যাত্রা শুরু করে এই রেমাক্রি খাল দিয়ে, অতঃপর রেমাক্রি থেকে সাঙ্গু নদী হয়ে ওরা সভ্য জগতে প্রবেশাধিকার পায়।
(১২) মুলি বাঁশগুলো নিয়ে পাথুরে ঢালগুলো অতিক্রম করা বেশ কষ্টকর।
(১৩) রেমাক্রির এমন সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যাবে না।
(১৪) এক সময় নাফাখুম চরম সৌন্দর্য্য নিয়ে আমাদের চোখে ধরা দিলো।
(১৫) এমন সুন্দর দেখতে আমরা সারিবদ্ধভাবে পোজ দিয়ে বসে পড়লাম।
(১৬) একটু উজানে মারমা বসতির দিকে আগাতেই দেখলাম রেমাক্রির পানিতে কিছু ধোয়া মোছা করছে।
(১৭) কাছে যেতেই যা দেখলাম!!!
(১৮) পাড়ায় দাড়িয়ে আরো একবার ক্লিকবাজি।
অসাধারণ এই জলপ্রপাত দেখতে হাজার বার গেলেও দেখে তৃপ্তি মিটবে না, এ কথা বলা যায় অনায়াসেই। ফিরে আসার সময় নাফাখুমের কানে কানে বলেছিলাম, তোমায় ভালোবাসি অনেক। জবাবে সে রিনিঝিনি শব্দে হেসে লাফিয়ে পড়লো রেমাক্রির বুকে, আর হারিয়ে গেলো পাহাড়ের কোন অজানা বাঁকে............