somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চন্দ্রাবতী সংবাদ

২৩ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চন্দ্রাবতী এবং জয়ানন্দ, যাদের বিয়োগান্তক প্রেমকাহিনী নিয়ে রচিত হয়েছিল মৈমনসিংহ গীতিকার 'চন্দ্রাবতী কাব্য'। কি হয়েছিল তাদের অনেকেই জানেন তবুও প্রাচীন সেই করুণ প্রেমের উপাখ্যানটি আরেকবার পড়ি আসুন.......

ফুলেশ্বর নদীর তীর ঘেষা ছোট্ট পাতোয়াইর গ্রাম, সেই গ্রামে ছিল চন্দ্রাবতী নামের অপরূপ রূপসী এক বালিকা। বালিকা প্রতিদিন পুকুরের পাড়ে যেতো ফুল তুলতে, সেখানে একদিন তার সাথে দেখয়া হয় যায় জয়ানন্দ নামের এক কিশোরের—

চাইরকোণা পুষ্কুনির পারে চম্পা নাগেশ্বর
ডাল ভাঙ্গ, পুষ্প তোল, কে তুমি নাগর?

এক সময়ে এদের দু'জনার প্রেম গভীর হয়, বিয়ের লগ্নও ঠিক হয়। ওদিকে স্থানীয় মুসলমান শাসনকর্তা বা কাজীর মেয়ে আসমানীর (মতান্তরে কমলা) অসামান্য রূপে মুগ্ধ হয়ে জয়ানন্দ আসমানীকে একাধিক প্রেমপত্র লেখেন ৷ এই ত্রিকোন প্রেমের ফলাফল হয় মারাত্মক ৷ জয়ানন্দের সাথে চন্দ্রাবতীর প্রেমের কথা জেনেও আসমানী তার পিতাকে জানান তিনি জয়ানন্দকে বিয়ে করতে চান৷ কাজী তখন জয়ানন্দকে বলপূর্ববক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে আসমানীর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন৷ঘটনাটি ঘটে যেদিন জয়ানন্দ ও চন্দ্রাবতীর বিয়ের দিন স্থির হয়েছিল সেই দিন ৷ সেদিন সন্ধ্যাবেলা চন্দ্রাবতী নববধুঁর সাজে বসে ছিলেন জয়ানন্দের অপেক্ষায়, তখনই সংবাদ পেলেন জয়ানন্দ ধর্মান্তরিত হয়ে অনত্র্য বিবাহ করেছেন ৷
এরপর শুরু হয় চন্দ্রাবতীর বিরহ বিধুর জীবন ৷ তিনি পিতার কাছে অনুমতি নেন যে সারা জীবন অবিবাহিত থেকে তিনি শিবের সাধনা করবেন ৷তখন তাঁর পিতা তাঁর জন্য একটি ফুলেশ্বর নদীর তীরে শিবের মন্দির নির্মান করে দেন ৷ সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ চন্দ্রাবতীর কৈশোরকাল থেকেই ছিল, বাকী জীবনটা তিনি শিবের উপাসনা ও সাহিত্যচর্চা করে কাটাবেন বলে স্থির করেন।

নদীর পানির সাথে সাথে সময়ও গড়ায় এবং একদিন জয়ানন্দের চেতনা ফেরে! সে বুঝতে পারে কি ভুলটাই না করেছে সে, চিঠি লেখে সে চন্দ্রাবতীর কাছে........

'অমৃত ভাবিয়া আমি খাইয়াছি গরল,
কণ্ঠেতে লাগিয়া রইছে কাল হলাহল!'


চন্দ্রাবতী ময়াবতী কণ্যার মন গলে যায় তাতে, দেখা দিতে চায় সে জয়ানন্দকে, কিন্তু বংশীদাস মেয়েকে বাধা দেয় 'যার কারণে সে বেঁচে থেকেও মৃত, সেই নিষ্ঠুর প্রেমিককে দেখা দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই'। প্রত্যাখ্যানের চিঠি পেয়ে ছুটে আসে জয়ানন্দ, মন্দিরের দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকে—
‘দ্বার খোল চন্দ্রাবতী দেখা দেও আমারে।’
কিন্তু মন্দিরের দুয়ার আর খোলে না চন্দ্রাবতী। হতাশ জয়ানন্দ তখন মালতী ফুলের রস দিয়ে দরজায় লিখে রেখে যায়-

'শৈশব কালের সংগী তুমি যৈবন কালের সাথী
অপরাধ ক্ষমা কর তুমি চন্দ্রাবতী।
পাপিষ্ঠ জানিয়া মোরে না হইলা সম্মত,
বিদায় মাগি চন্দ্রাবতী জনমের মত'


এরপর আত্মদহনে ফুলেশ্বরী নদীতে ডুবে আত্মহত্যা করে জয়ানন্দ। এদিকে সেই নদীতে স্নান তর্পণ করতে জলের ঘাটে যায় চন্দ্রাবতী, সেখানে দেখে জলের উপর ভাসছে তার জয়ানন্দের মৃতদেহ........

কি ভাবছেন এসব নিছকই কল্পকথা?
মোটেই তা নয়। আপনি চাইলে এখনও দেখে আসতে পারেন চন্দ্রাবতীর সেই শিব মন্দির, তার বাসস্থানকে, ফুলেশ্বর নদীকে। এর জন্য আপনাকে যেতে হবে কিশোরগঞ্জের পাতোয়াইর গ্রামে, চলুন তবে দেখা যাক......


চন্দ্রাবতীর প্রাসাদ


পেছন দিক থেকে


এই জানালা দিয়েই কি রাতের রূপ দেখতেন চন্দ্রাবতী?


প্রাসাদের ভেতরে


অন্দরসজ্জা


ফুলেশ্বরী নদীর ধারে চন্দ্রাবতীর শিব মন্দির, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত স্থাপনা এটি


দ্বিজ বংশীদাসের মন্দির


পরিশিষ্ট:
চন্দ্রাবতীর সময়কাল ছিল ১৫৫০-১৬০০ থ্রিষ্টাব্দ, তাঁর পিতা মনসা মঙ্গল কাব্যের অন্যতম রচয়িতা দ্বিজ বংশী দাস এবং মাতার নাম সুলোচনা। জয়ানন্দর আত্মহত্যার পরেও বেঁচে ছিলেন চন্দ্রাবতী এবং সাহিত্য চর্চা করেছিলেন। চন্দ্রবতীর রচনাগুলির মধ্যে মলুয়া, দস্যু কেনারামের পালা ও রামায়ণ কথা (অসমাপ্ত) অন্যতম ৷ ইতিহাস বলে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন তিনি। চন্দ্রাবতীকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর উপর গীতিকাব্যটি রচনা করেছেন নয়ানচাঁদ ঘোষ, আনুমানিক ২৫০ বছর আগে, দীনেশচন্দ্র সেন এগুলো সংকলিত করেছিলেন মৈমনসিংহ গীতিকা'য় । এতে মোট ৩৫৪টি ছত্র আছে এতে, দীনেশচন্দ্র সেন এগুলোকে ১২টি অঙ্কে ভাগ করেছেন।



ছবি স্বত্ব: হেরিটেজ বাংলাদেশ
তথ্যসূত্র:
কবি চন্দ্রাবতীর প্রাসাদ
কবি চন্দ্রাবতী এবং মধ্যযুগের লোকমানস
হায়, দুঃখিনী চন্দ্রাবতী!
মৈমনসিংহ গীতিকার পালাটির পুরোটা পড়তে চাইলে দেখুন.....মৈমনসিংহ গীতিকা : চন্দ্রাবতী



ধন্যবাদ বিশাল এই পোস্টটা দেখার জন্য,
জগতের সবাই সুখি হোক.........
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:১৭
১১২টি মন্তব্য ১০০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও আমার ভাবনা

লিখেছেন মেহেদী তারেক, ১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:৪০

অবশেষে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হলো
আমি সবসময়ই প্রজ্ঞাপন দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে ছিলাম। কারণ, বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী এখনো দলটিকে সমর্থন করে। এত বড় একটি জনগোষ্ঠীর মতামত কিংবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিষিদ্ধ নয়, শুধু নড়াচড়া বন্ধ: আওয়ামী লীগ, ‘কার্যক্রম’ ও বিরোধীদের বিভ্রান্তির রাজনীতি

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই মে, ২০২৫ রাত ১:৫২


“আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে”—এই লাইনটি ফেসবুকে ঝড় তুলেছে, চায়ের কাপে তুফান এনেছে, এবং কিছু বিরোধী রাজনীতিকের মুখে সাময়িক হাসি ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু একটু থামুন ! খেয়াল করুন: বলা হয়েছে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আঁচলে বাঁধা সংসার

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১১ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:২০



আমি তখন কলেজে পড়ি। সবেমাত্র যৌথ পরিবার ভেঙে মায়ের সঙ্গে আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হয়েছে। নতুন সংসার গুছিয়ে নিতে, মা দিনের প্রায় সবটা সময় ঘরকন্নার কাজে পার করে দিতেন। ঘরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৫৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ১১ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:৪৫



কেন জানি মন মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।
কিছুই ভালো লাগছে না। ইচ্ছা করছে ঘোড়ায় চড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। হাতে থাকবে চাবুক। যেখানে অন্যায় দেখবো লাগাবো দুই ঘা চাবুক। সমস্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন

লিখেছেন নতুন নকিব, ১১ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৫

একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

প্রিয় পাঠক, গতকাল ১০ মে ২০২৫। এই দিনটি কোনো সাধারণ দিন ছিল না। এটি ছিল ঐতিহাসিক এমন একটি দিন, যা বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×