যেমন ধরুন আপনি আজ রাতে ঘুমাতে গেলেন।বাতি নিভালেন নরম বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন--অল্প অল্প তন্দ্রা লেগে এলো হঠাৎ ই মনে হলো আপনি অনেক উচু থেকে নীচে পরে যাচ্ছেন।চমকে উঠলেন আপনি।
আবার হয়তো একদিন আপনি আরামেই ঘুমিয়ে আছেন.......।হঠাৎ ই ঘুমটা একটু পাতলা হতে লাগলো আর আপনি দেখলেন আপনি নড়াচড়া করতে পারছেন না..মনে হচ্ছে কেউ আপনাকে চেপে ধরে আছে।আপনি প্রান পনে চিৎকার করতে চাইছেন কিন্তু গলা দিয়ে কোন স্বর বের হচ্ছে না ....।একটা আন্গুলও নড়াতে পারছেন না আপনি..........।কিছুক্ষন পর ঘেমে নেয়ে উঠলেন আপনি ।স্বাভাবিক হয়ে আসলো সবকিছু..........।
উপরের ঘটনা দুটি জীবনে ঘটেনি এমন মানুষ পাওয়া বিরল। তাছাড়াও ঘুমের মধ্যে কথা বলা ,নাক ডাকা।বা ঘুমের মধ্যে হাটা কোনটাই বিচিত্র নয়।এবার আসুন দেখে নেই কেন এমন হয়? কি বা তার সাম্ভাব্য প্রতিকার----------------------
প্রথম ঘটনা ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মনে হওয়া যে উপর থেকে পরে যাচ্ছি...।একে বলে hypnic jerk.আমরা যখন ঘুমিয়ে পরি আমাদের সারাশরীর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে আসে মাংসপেশী গুলো শিথিল হয়ে আসে।কিন্তু যদি সে সময়ের মধ্যে আমাদের মষ্তিষ্ক ততটুকু বুঝতে না পারে তবে মষ্তিষ্ক একে উপর থেকে শরীর পরে যাচ্ছে এটা বলে ভুল করে সেক্ষেত্রে সে শরীর কে সে সময়ের জন্য প্রস্তুত করতে হাত -পা শক্ত করে ফেলে সেই আসন্ন বিপদ মোকাবেলা করার জন্য........ আর তাই আমরা ঝাকি দিয়ে হঠাৎ ই ঘুম থেকে জেগে উঠি। এটা আসলে সে সময় হয় যদি আমরা অনেকক্ষন ধরে ব্রেন কে রেস্ট না দেই একটানা পড়াশুনা বা অফিসের কাজ বা কোন গবেষনা এসব চিন্তা করতে করতে যদি ঘুমিয়ে পরি এবং আমাদের ঘুমের মধ্যেও যদি এসব চিন্তা চলতে থাকে তবে তখনই এ ঘটনা ঘটে।
২য় ঘটনা বা বোবায় ধরার ঘটনা- এর অনেকে কুসংস্কারের বশে বোবা ভুত ধরা বলে আসল নাম হচ্ছে sleep paralysis or hypnagogic paralysis.এ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু জটিল আর তা হচ্ছে আমাদের ঘুমের ২ টা পর্যায় আছে।REM(Rapid Eye movement) and NON REM( Non Rapid Eye Movement).ঘুমের মধ্যে এ দুটি চক্র পর্যার ক্রমে আসে আমরা যদি কোন ভাবে এর মাঝের সময়ে জেগে যাই আমরা হাত পা নাড়তে পারিনা।কথা বলতে পারিনা কারন আমাদের এই জেগে থাকা সম্পর্কে মষ্তিষ্ক অবগত থাকেনা। এ ক্ষেত্রে কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।আমরা জেগে আছি জানতে পারলে আবার আমরা হাত পা স্বাভাবিক ভাবে নাড়তে পারি।এবং জেগে উঠি এসময় কোন কিছু দেখা বা গন্ধ পাওয়া অস্বাভাবিক নয় কারন মষ্তিষ্ক তখন সপ্নের মত দৃশ্য তৈরী করতে পারে।
ঘুমের ঘোরে হাটা বা sleep walking- ঘুমের ঘোরে হাটা ঘুমের নন রেম পর্যায়ের খেলা।ঘুমের মধ্যে উঠে বসা হেটে বেড়ানো বাড়ীর বাহিরে চলে যাওয়া বা অনেক দূর পর্যন্ত ড্রাইভ করারও নজির আছে। বলা হয় ঘুমে হাটা ব্যাক্তিকে না জাগাতে কিন্তু এটা স্রেফ কুসংস্কার...বরং যত তাড়াতাড়ি জাগানো যায় ততই ভালো।
নাক ডাকা বা snoring- নাক ডাকা অল্প বা হাল্কা কম বেশী সবারই হয়। কিন্তু কেন? ঘুমানোর সময় যখন আমাদের পেশী সমূহ শিথিল হয়ে আসে তখন আমাদের জিহ্বা বা গলবিলের পিছনের মাংসপেশীও শিথিল হয়ে আসে সে সময় তা আমাদের শ্বাসনালীর পথরোধ করে আর তাই নাক ডাকে .......অল্প হলে ঠিকাছে কিন্তু যদি বেশী হয় এবং সে ব্যাক্তি ঘুমানোর পরও মনে করে যে ঘুম ভালো ভাবে হয়নি তবে সেটা ভয়াবহ স্লিপ এপনিয়া রোগের পূর্ব লক্ষন। এ রোগে সাধারনত মানুষ ঘুম থেকে দমবন্ধ হয়ে আসছে এই অভিজ্গতা নিয়ে হরবরিয়ে জেগে উঠে।এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়েটা উচিৎ।
যাহোক অনেক হলো এবার তবে শুভরত্রি।সবার সুন্দর পরিপূর্ন ঘুম হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১২ রাত ১১:৫১