somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাকদীরের মাসয়ালাঃ আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই লেখাটি আমার নয়। প্রশ্নকর্তা কে তাও জানি না। তবে উত্তরদাতাকে জানি, আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী, বর্তমান বিশ্বের একজন অন্যতম নির্ভরযোগ্য ইসলামিক স্কলার। পড়ে দেখতে পারেন, ভাল লাগলেও লাগতে পারে।

প্রশ্নঃ
এই দুনিয়ায় মানুষের জীবনে যা কিছু ঘটছে তা সব কিছু কি আযলের দিন থেকেই তাদের তকদিরে লেখা রয়েছে? মৃত্যু, রেযেক, সাফল্য, ব্যর্থতা, বেহেশতী হওয়া, দোযখী হওয়া এসবই কি পূর্ব নির্দ্ধারিত? যদি এসব কিছুই পূর্ব নির্দ্ধারিত হয়ে থাকে তবে মানুষের চেষ্টা প্রচেষ্টার কি প্রয়োজন? কোনো ঘটনায় করো আহত হওয়ার পর জীবন রক্ষার এতো চেষ্টা কেন করতে হবে? আয়ু থাকলে তো এমনিতেই বেঁচে যাবে। ব্যবসা বাণিজ্য, কৃষিকাজে এতো পরিশ্রমের কি প্রয়োজন? যা কিছু তকদিরে রয়েছে সেটাই তো পাওয়া যাবে।

উত্তরঃ
এ প্রশ্ন নতুন নয়। মনে হয় যুগ যমানা যতোই দীর্ঘ হোক না কেন প্রত্যেক যুগেই এ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হবে। এটা কোন বিষ্ময়কর প্রশ্ন নয়। কেননা, ইসলাম এ প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিয়েছে।

1. এটা অবধারিত সত্য যে, পৃথিবীতে যা কিছুই ঘটছে এসব কিছুই 'রোযে আযলে' (পূর্বেই) লেখা হয়ে গেছে। এটা এমন ইসলামী বিশ্বাস যার মধ্যে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আমরা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তায়ালা সমগ্র বিশ্ব জগত সৃষ্টি করেছেন। আসমান, যমীন, জীবজন্তু, মানুষ, বৃক্ষ, তরুলতা সবই আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহ তায়ালা এসব কিছু সৃষ্টি করার আগেই এসব কিছু তাঁর জ্ঞানের মধ্যে ছিলো। কাজেই যা কিছু পৃথিবীতে ঘটে সবই আল্লাহর জ্ঞান এবং ইচ্ছা অনুযায়ী ঘটে থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

"একটি পাতা কোথাও ঝরে না, যার খবর তিনি জানেন না। মাটির অন্ধকারে একটি শস্যকণাও নেই, নেই কোন তাজা সবুজ (কিংবা ক্ষয়িষ্ণু) শুকানো (কিছু), যার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ একটি সুস্পষ্ট গ্রন্থে মজুদ নেই। (আল আনআম, আয়াত 59)।"

অন্য একটি আয়াতে বলা হয়েছে, "(সামগ্রিকভবে গোটা) দুনিয়ার ওপর কিংবা (ব্যক্তিগতভাবে) তোমাদের কারও উপর যখনি কোন বিপর্যয় আসে (তখন তোমাদের জানা উচিত যে,) তাকে আবার সংঘটিত করার (বহু) আগেই (তার বিবরণ একটি গ্রন্থে) লিখে রাখা হয়েছে, আর আল্লাহ তায়ালার জন্যে এই কাজটি অত্যন্ত সহজ। (আল হাদীদ, আয়াত 22)।"

2. বিশ্বজগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে এসব কিছু সম্পর্কে আল্লাহর জানা থাকা এবং তকদীরে লেখা থাকা মানুষের চেষ্টা সাধনার পরিপন্থি নয়। কারণ যেভাবে মানুষ চেষ্টা করবে, চেষ্টার পরিণাম কি দাঁড়াবে, চেষ্টার উপাদান কি হবে সবই লেখা রয়েছে। সেই চেষ্টা অনুযায়ী ফল পাওয়া যাবে। যদি কারও তকদিরে সফল হওয়া লেখা থাকে তবে সেসব উপাদানও লেখা রয়েছে, যার মাধ্যমে সফলতা পাওয়া যাবে। যেমন পরিশ্রম করা, নিজের বুদ্ধি বিবেক ব্যবহার করা ইত্যাদি। কাজেই চেষ্টা করা তকদিরের পরিপন্থি নয়; বরং এসব কিছুই তকদিরের একটা অংশ। রসুলকে (সা.) একবার প্রশ্ন করা হয়েছিলো, ওষুধের সাহায্যে কি সেসব অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় যেসব অসুখ তকদিরে লেখা রয়েছে? রসুল (সা.) জবাবে বলেছিলেন, ওষুধ সেবনও তকদিরের লেখার একটি অংশ।

সিরিয়ায় যখন ব্যপক আকারে মহামারীরুপে প্লেগ দেখা দিয়েছিলো। হযরত ওমর (রা.) সাহাবাদের সাথে সেখানে রওয়ানা হয়েছিলেন, কিন্তু এখবর পাওয়ারপর যাত্রা স্থগিত করেন। একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, হে আমীরুল মুমেনীন! আপনি কি আল্লাহর লেখা তকদির থেকে পলায়ন করছেন? তিনি বললেন, হাঁ, আমি আল্লাহর লেখা একটি তকদির থেকে অন্য একটি তকদিরের দিকে পলায়ন করছি। অর্থাৎ, রোগ থেকে দুরে চলে যাওয়াও তকদিরের একটি অংশ।

3. তকদিরের লেখা আমাদের কাছে গোপন রয়েছে এটাও সত্য। আমরা জানি না আমাদের তকদিরে কি লেখা রয়েছে। তবে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবো না বরং আমাদেরকে অবশ্যই কাজ করতে হবে। উপায় উপকরণ কাজে লাগাতে হবে। সকল প্রকার সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এসব কিছু তো তিনিও করেছিলেন, আল্লাহর প্রতি যার বিশ্বাস ছিল সকলের চেয়ে অধিক। অর্থাৎ, রসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি সেনাবাহিনী তৈরী করেছিলেন, কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন, বর্ম পরিধান করেছিলেন। হাবশা ও মদিনায় হিজরতের আদেশ দিয়েছিলেন। হিজরতের সময় গুহায় আত্নগোপন করেছিলেন। নিজের পরিবারের লোকদের জন্য এক বছরের খাদ্যদ্রব্য মজুদ করেছিলেন ইত্যাদি।

4. তকদিরে লেখা আছে একথা বলে মানূষ যেন অলসতার দিকে ঝুঁকে না পড়ে। তকদিরের প্রতি বিশ্বাসের তাকিদ হচ্ছে, মানুষ প্রথমে কাজ করবে, উপায় উপকরণ গ্রহণ করবে, চেষ্টা সাধনা চালাবে, তারপর পরিণাম ফল আল্লাহর ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেবে।

একবার মহানবী (সা.) এর সামনে দু'জন সাহাবী কুস্তি প্রতিযোগিতা করলেন। পরাজিত ব্যক্তি কোন প্রতিদ্বন্দিতা না করেই হেরে গেলো। হেরে গিয়ে বলল, আল্লাহ তায়ালা আমার সাহায্যকারী। রসুল (সা.) একথা শুনে ভীষণ অসন্তুষ্ট হলেন। প্রথমে পরিশ্রম করে চেষ্টা করো, তারপর পরাজিত হও, তারপর বলবে যে, আল্লাহ তায়ালা আমার সাহায্যকারী (আবু দাউদ)।

5. তকদিরের প্রতি ঈমানের উপকারিতা হচ্ছে যে, মানুষ সকল প্রকার চেষ্টা পরিশ্রম করার পরও যদি পরাজিত হয়, তখন তার মধ্যে হতাশা দেখা দেয় না। বিপদে যখন পড়ে তখন ধৈর্য হারা হয় না। পরিশ্রম করার পর যা কিছু পায় সেই পাওয়াকে আল্লাহর মর্জি ভেবে সন্তুষ্ট থাকে এবং ধৈর্য ধারণ করে। আল্লাহর শোকর আদায় করে।

তকদিরের প্রতি বিশ্বাস যদি মুসলিম মিল্লাতের অন্তরে জাগ্রত হয়, তবে এমন একটি উম্মত তৈরী হতে পারে, যারা আধ্যাতি্নক দিক দিয়েও হবে শক্তিশালী এবং তাদের মধ্যে চেষ্টা প্রচেষ্টা করার গুণ বৈশিষ্টও থাকবে বিদ্যমান। সেই উম্মত ইতিহাসের গতিধারা পাল্টে দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে।

--------------------------------------- লেখাটি 'ফতোয়া' নামক বই থেকে নেয়া। জনাব কারযাভীর বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের বাংলায় সংকলন করেছেন হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমদ। বইটি প্রকাশ করেছে আল কোরআন একাডেমী লন্ডন।
১১টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×