somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছিটমহল সমস্যা: আদি থেকে বর্তমান, সমাধান নেই!!

২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বারো ভূঁইয়াদের একজনের নাম ছিল হাজো ভূঁইয়া। হাজো ভূঁইয়ার ছিল দুই মেয়ে। জিরা আর হিরা। সংকোশ বা সরলডাঙ্গা নদী আর চম্পাবতী নদীর মাঝখানে চিকনা পর্বতাঞ্চলে তখন ছিল মাঙ্গোলীয়দের আধিপত্য। চিকনা পর্বতের অবস্থান ডুবরী থেকে প্রায় ৫০ মাইল উত্তরে। ডুবরী হল বর্তমান আসামের গোয়ালপাড়া জেলা। চিকনা পর্বতের মাঙ্গোলীয় গোত্রের সর্দার ছিলেন হারিয়া। হরিদাস মন্ডল নামেই ইতিহাসে সবাই যাকে চেনেন। এই হরিদাস মন্ডল ছিলেন মাঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত হৈহৈ বংশের উত্তারধীকার। চিকনা পর্বতে সংঘর্ষ এড়াতে, জাতিগত দাঙ্গা বন্ধ করতে এবং শান্তি বজায় রাখতে হাজো ভূঁইয়া হরিদাস মন্ডলের সাথে তার দুই মেয়ে জিরা ও হিরা'র বিয়ে দিলেন। জিরা ও হিরা'র বিয়ের পর জিরার গর্ভে জন্ম নিল মদন আর চন্দন। অন্যদিকে হিরার গর্ভে জন্ম নিল বিশু (বিশ্ব সিংহ) ও শিশু (শিষ্য সিংহ)। হরিদাস মন্ডলের এই চার ছেলের মধ্যে বিশু (বিশ্ব সিংহ) ছিল সবচেয়ে বেশি সাহসী, বুদ্ধিমান, প্রতাপশালী এবং ক্ষমতাপিয়াসু। পরবর্তীকালে এই বিশু বা বিশ্ব সিংহের হাতেই ১৫১৫ সালে কোচ রাজবংশের গোরাপত্তন।
ভারতের কোচবিহার বা কুচবিহার-এর নামটি এসেছে এই কোচ রাজবংশী থেকেই। 'কোচ' এসেছে কোচ রাজবংশী থেকে। আর 'বিহার' শব্দটি এসেছে সংস্কৃত 'বিহার' থেকে। যার অর্থ হল 'ভ্রমণ'। জনশ্রুতি হল, কোচ রাজবংশী'র রাজা বিশ্ব সিংহ এবং পরবর্তীকালে তাঁর ছেলে মজারাজ নারা নারায়ন চিকনা পর্বতে যতোটুকু এরিয়া নিয়ে ভ্রমণ করতেন ততোটুকুই হল কোচবিহারের আয়তন। কোচবিহার রাজ্য সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল রাজা বিশ্ব সিংহের পুত্র মহারাজ নারা নারায়নের আমলে। তখন কোচবিহারের সীমানা ছিল উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ এলাকা, বর্তমান বাংলাদেশের রংপুরের সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা, বিহারের কিশানগঞ্জ জেলা, এবং ভূটানের দক্ষিণপাশের কিছু এলাকা। কোচ রাজবংশীদের নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে স্বতন্ত্র ও টিকিয়ে রাখার জন্য কোচ রাজা স্বাধীন কমতপুর বা কমতপুরী রাজ্য গড়ে তোলেন। ইতিহাসে যেটি আসলে কামতা কিংডম।
কামতা রাজ্যের দুটি প্রধান নগর বা ব্যবসাকেন্দ্র ছিল। একটির নাম কোচবিহার। অপরটির নাম কোচ হাজো। পরবর্তীকালে কোচবিহারে ব্যবসা-বাণিজ্যের অযুহাতে মুঘলদের অনুপ্রবেশ ঘটল। আর কোচ হাজো নগরটি অহমদের দখলে চলে যায়। কামতা রাজ্যের তৃতীয় আরেকটি শাখা বা ব্যবসাকেন্দ্র ছিল। সেটির নাম খাসপুর। খাসপুর পরবর্তীকালে কাচারি অঙ্গরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
আসামের প্রথম ঐতিহাসিক নগরীর নাম কামরূপ। কামরূপ নগরীর অস্তিত্ব ছিল ৩৫০ সাল থেকে ১১৪০ সাল পর্যন্ত। মোট তিনটি রাজবংশ কামরূপ শাসন করেছিল। বর্মণ রাজবংশ, মলেচ্ছা রাজবংশ এবং পাল রাজবংশ। আর ওই সময়কালে কামরূপের রাজধানী ছিল যথাক্রমে প্রাগ্যতিষপুর, হারুপেশ্বরা এবং দুর্জয়া। যা বর্তমানের গৌহাটি, তেজপুর এবং গৌহাটি। যার বিস্তৃতি ছিল গোটা ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকা, উত্তরবঙ্গ, এবং বর্তমান বাংলাদেশের কিছু এলাকা।
প্রাচীন বাংলার পাল রাজবংশের লোকজন ছিল বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। আর কামরূপার পাল রাজবংশের লোকজন ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ওই সময়ে ক্রমাগত হিন্দুদের প্রভাব বিস্তারের ফলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ধীরে ধীরে দক্ষিণে, পূর্বে এবং উত্তর-পূর্বের দিকে সরে যেতে বাধ্য হয়। ছিটমহল সমস্যার শুরু আসলে তখন থেকেই। সীমানা সমস্যা মেটানোর জন্য কোচবিহারের রাজা এবং রংপুরের মহারাজা ১৭১৩ সালে মুঘল সম্রাটের নির্দেশে একটি সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। ১৭১৩ সালের ওই সীমান্ত চুক্তি অনুসারেই পরবর্তীকালে বৃটিশ আমলেও কোচবিহার ও রংপুরের সীমানা সেভাবেই ছিল।
১৯৪৭ সালে বৃটিশদের কাছ থেকে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টির সময় রংপুর সেই সীমান্ত সমস্যা নিয়েই পূর্ব-পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হল। আর কোচবিহার ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত স্বতন্ত্র বৃটিশ কলোনি হিসেবে থেকে পরে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হল। ১৯৫৮ সালে ছিটমহল সমস্যা সমাধানের জন্য পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদ মিমাংসায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ হয়েছিল। কিন্তু সমস্যার তেমন কোনো সুরাহা তখন হয়নি। এরপর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে রংপুর ও কোচবিহার সীমান্তের সেই পুরানা সমস্যা আবারো শুরু হল।
১৯ শে মার্চ ১৯৭২ সালে ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ বছর মেয়াদী এক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ভারত-বাংলাদেশ শান্তি চুক্তির পর উভয় দেশের মধ্যে সীমানা সমস্যা সমাধানের জন্য ছিটমহল বিনিময়ের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালের ১৬ মে দিল্লীতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যা ১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাশ হয়। ১৯৭৪ সালের ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি অনুসারে মোট ১৫টি সমস্যার সমাধান হয় তখন। তখন ২.৬৪ বর্গ মাইল এলাকার বেরুবাড়ি ছিটমহল ভারতকে দিয়ে বাংলাদেশ পায় তিনবিঘা করিডোরের পাশে ১৭৮ মিটার X ৮৫ মিটার সাইজের দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল। এছাড়া ওই চুক্তি অনুসারে মিজোরাম-বাংলাদেশ সীমান্ত, ত্রিপুরা-সিলেট সীমান্ত, ভগলপুর রেলওয়ে লাইন, শিবপুর-গৌরাঙ্গালা সীমান্ত, বেলুনিয়া পয়েন্টে মুহুরী নদী সীমান্ত, ত্রিপুরা-নোয়াখালী সীমান্ত, ত্রিপুরা-কুমিল্লা সীমান্ত, ফেনী নদী সীমান্ত, ত্রিপুরা-হিলট্র্যাকস সীমান্ত, বিয়ানিবাজার-করিমগঞ্জ সীমান্ত, হকার খাল, বইকরী খাল, হিলি সীমান্ত, লাঠিটিলা-দুমাবেড়ী সীমান্ত এবং অন্যান্য ছিটমহলের সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের কথা ছিল।
কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ভারত বাংলাদেশ শান্তি চুক্তি এবং ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি মুখ থুবড়ে পড়ল। এর দীর্ঘ দিন পর ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মানমোহন সিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও ভারতের সমস্যা জর্জরিত ১৬২ টি ছিটমহলের সীমানা পুনঃনির্ধারণ, তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি, রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, সুন্দরবন সংরক্ষণ, বাঘ সংরক্ষণ, উভয় দেশের উন্নয়ন ফ্রেমওয়ার্ক, বাংলাদেশ থেকে নেপালে ট্রানজিট সুবিধা, খনিজ সম্পদ আহরণ, মৎস্য সম্পদ আহরণ, জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম বিনিময়, ভারতের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশ ডিজাইন এবং বাংলাদেশের বিজিএমইএ ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি'র মধ্যে সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তখন ভারতের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ঢাকায় না আসায় তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি এবং ছিটমহল সংক্রান্ত সীমান্ত সমস্যা সমাধান চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি।
সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মানমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত সমস্যা জর্জরিত ১৬২ টি ছিটমহলের সীমানা পুনঃনির্ধারণ, ছিটমহলগুলোর জনগণের নাগরিকত্ব এবং যাতায়াত সুবিধা নির্ধারণে যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, সেখানে ৫১ টি ছিটমহল ভারত নেবে, যার আয়তন প্রায় ৭,১১০ একর। আর ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশ পাবে, যার আয়তন প্রায় ১৭,১৪৯ একর। চলতি বছরের (২০১৩ সালের) আগস্ট মাসে ভারতীয় লোকসভায় ছিটমহল সংক্রান্ত নতুন সীমানা নির্ধারণ বিলটি কংগ্রেস নের্তৃত্বাধীন জোট সরকার লোকসভায় পাশের জন্য উত্থাপন করলেও বিরোধীদল বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বাধার মুখে তা লোকসভায় পাশ হয় নি। ভারতীয় লোকসভায় এই বিলটি পাশের জন্য কংগ্রেস নের্তৃত্বাধীন জোট সরকারের দুই তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন। যা কংগ্রেসের নেই। ফলে বিলটি আর পাশ হল না। ওদিকে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় আবারো ছিটমহল সীমানা নির্ধারণ নিয়ে নতুন করে গোল পাকিয়ে বলেছেন, 'এই চুক্তিটির খসড়া করার সময় কেন্দ্রীয় সরকার একরকম কথা বলেছিলো। কিন্তু চুক্তি হওয়ার পর তা অন্যরকম হয়ে গেছে। জমি পুনর্বন্টন চুক্তির ক্ষেত্রেও আমরা প্রথম থেকেই কেন্দ্রকে বলে আসছি যে, হস্তান্তর হওয়ার কথা আছে যেসব জমির, সেখানকার বাসিন্দাদের সম্মতি নেয়া প্রয়োজন।' এছাড়া মমতা রাজ্যের জমি হারানোর প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘এই চুক্তিতে রাজ্যের ছিটমহলের ১৭ হাজার একর জমি হস্তান্তর হওয়ার কথা। বদলে আমরা পাবো মাত্র ৭ হাজার একর। সুতরাং যারা এইসব এলাকায় থাকেন তাদের সম্মতি না নিয়ে এমন জিনিস কীভাবে আমরা মেনে নিতে পারি?’ কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের কাছে তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘রাজ্যের সম্মতি ছাড়াই আমাদের জমি (ছিটমহল), জল (তিস্তা) বিলিয়ে দিতে এত তাড়া কীসের? কী ধরণের রাজনীতির খেলা খেলতে চাইছে তারা?’
সামনে ভারতের জাতীয় নির্বাচন। ১৫তম লোকসভার মেয়াদ শেষ হবে ৩১ মে ২০১৪ সালে। আবার বাংলাদেশেও সামনে জাতীয় নির্বাচন। ২৫ শে অক্টোবর ২০১৩ সালে নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, দশম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে হবে। একথা প্রায় নির্দিধায় বলা যায় যে, ভারতে কংগ্রেস সরকার এবং বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার উভয় দেশের আগামী নির্বাচনে পুনঃনির্বাচিত না হতে পারলে ছিটমহল সমস্যা আবারো মুখ থুবড়ে পড়বে।
আওয়ামী লীগ নের্তৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকার ছিটমহল সমস্যা সমাধানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে কূটনৈতিক তৎপরতায় কম গুরুত্ব দেওয়ায়, একা মমতাই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে টেক্কা মেরে ছিটমহল সমস্যা এবং তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি আটকে দিতে সক্ষম হলেন। আগামীতে ভারতে কংগ্রেস দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কিনা তার কোনো গ্যারান্টি নেই। এমন কি আগামী নির্বাচনে কংগ্রেস সরকার গঠন করতে পারবে কিনা তা নিয়েও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা চিন্তিত। ভারতে যে দলই কেন্দ্রে সরকার গঠন করুক না কেন, রাজ্য সরকারকে পাশ কাটিয়ে কোনো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করার ক্ষমতা কেন্দ্রের কার্যত নেই। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দোপাধ্যায় একটি ফ্যাক্টর থেকেই যাচ্ছে। আর বাংলাদেশে তো আগামী দশম সাধারণ নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে, তা নিয়েই এখনো সরকার ও বিরোধীদল কোনো সমঝোতায় বসার উদ্যোগ নেয়নি। অর্থ্যাৎ আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে সেই প্রশ্নে দিন দিন দেশ একটি ভয়াবহ সমস্যার দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। তাই ভারত এবং বাংলাদেশের ছিটমহল সমস্যা এবং তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি কখন কিভাবে হবে, চুক্তি হলেও তা কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে, তা একটি গহীন ধোয়াশার মধ্যেই পতিত হয়েছে।
১৭১৩ সালে যে সমস্যার আনুষ্ঠানিক শুরু এবং যে সমস্যাটির বয়স এখন ৩০০ বছর, সেই সমস্যা সমাধানে উভয় দেশের রাজনৈতিক নের্তৃত্বের যেমন আরো অনেক প্রাজ্ঞ এবং দূরদর্শী হতে হবে, তেমনি ভারত বাংলাদেশ পারস্পরিক আস্থা এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী না হলে ছিটমহল সমস্যা আগামী ১০০ বছরেও সমাধান হবার কোনো লক্ষণ নেই। উভয় দেশের এই ১৬২ টি ছিটমহলে প্রায় ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ জনবসতি। ভারত বাংলাদেশ সীমানার দৈর্ঘ ৪,১৫৬ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ সীমানার সীমান্তের এপাশে বাংলাদেশে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আর ওপাশে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স বা বিএসএফ। প্রায়ই সীমান্ত আইন লংঘন করে বিএসএফ বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা করছে। অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বাংলাদেশীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এটা প্রায় প্রতিদিনের খবর। আজ রৌমারীতে তে কাল বুড়িমারীতে। আজ গোদাগাড়িতে তো কাল সোনা-মসজিদে। বিএসএফের এই অবৈধ তৎপরতা বন্ধ করতেই যেখানে খোদ ভারত সরকারের এক ধরনের গড়িমসি ভাব প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়, সেখানে ছিটমহল সমস্যা বা তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একটি চালবাজ কিনা সে বিষয়ে বাংলাদেশকে আরো সজাগ হতে হবে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম, কেন্দ্র আর রাজ্য দু'জনেই সবকিছু জানেন, কিন্তু ঘটনাকে রাজনৈতিক মেরুকরণের জন্য এবং সময় ক্ষেপণের কৌশল হিসেবে কংগ্রেস নের্তৃত্বাধীন সরকার একটি রাজনৈতিক ভেলকি হিসাবে দাঁড় করিয়েছে।
কারণ, তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি এবং ছিটমহল সমস্যা নিয়ে ভারতের কেন্দ্র বা রাজ্যের মধ্যে সমঝোতা বা ঐক্যহীনতা একটি রাজনৈতিক খোসগল্প। সেই গল্পের আড়ালের খবর হল, আগামী নির্বাচনে ভারতের সীমান্তবর্তী মানুষকে দলে ভেড়ানো। এমনিতে আসামে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নানা সময়ে মূল ভারত থেকে আলাদা নাগাল্যান্ড গঠনের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। সেসব বিষয়কে আড়াল করে হুট করেই তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি করা বা ছিটমহল বিনিময় করা বেশ দুরুহ কাজও বটে। এটি করতে গিয়ে যদি গোটা আসামকেই ভারত থেকে আলাদা হবার মতো রাজনৈতিক বলি দিতে হয়, সে বিষয়ে নিশ্চয়ই ভারতের বাঘা বাঘা রাজনৈতিক কুতুবরা একটেবিলে বসেই এসকল বিষয়ে শলাপরামর্শ করেন বলেই আমার ধারণা।
অদূর ভবিষ্যতে তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি করার জন্য আন্তর্জাতিক নদীর শর্তানুসারে, ভারতের উপর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক চাপ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি চুক্তি স্বাক্ষর করে তা বাস্তবায়নের দিকেই বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে এককাতারে আসতে হবে। সরকার বা বিরোধীদলের সেই এককাতারে আসা না আসার উপর ঝুলে থাকবে তিস্তা জল বিনিময় চুক্তি। আর ছিটমহল নিয়ে যেহেতু বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেই জোড়ালো সমর্থণ আদায় করা সম্ভব না, ব্যাপারটা অনেকটাই দ্বিপাক্ষিক, বিশ্বের অনেক দেশে এখনো ছিটমহল সমস্যা বিদ্যমান। সে হিসেবে বলা যায়, ছিটমহল সমস্যার শীঘ্রই কোনো সমাধান হবে না। ছিটমহলবাসীর জন্য তাই কোনো সুখবর সত্যি সত্যিই নেই। আসলেই নেই। এক লাখ ছিটমহলবাসী তোমরা পৃথিবীর রাষ্ট্র আইনে সত্যি সত্যিই নরকে বসবাস করছো। এটাই সবচেয়ে বড় দুঃখের বিষয়।।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:০৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×