নিজ ঘরেই যৌন নিপীড়নের শিকার বাংলাদেশের শিশু মেয়েরা(১৮+)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বাংলাদেশে শিশু অধিকার কর্মীদের ভাষ্যমতে, দেশটির শতকরা নব্বই ভাগ শিশুই পারিবারিক গণ্ডিতে ধর্ষণ থেকে শুরু করে অনাকাঙ্ক্ষিত শারীরিক স্পর্শসহ নানা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে থাকে।কোনও কোনও ক্ষেত্র নিকটাত্মীয় বিশেষ করে, বাবা, চাচা, কিংবা ভাইয়ের হাতেও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে শিশুরা।'একদিন রাতে হঠাৎ কি একটা পড়ে আমার উপরে। আমি ভয় পেয়ে যাই। বুঝতে পারি না কি হচ্ছে''।
বছর সাতেক আগে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া চরম অবমাননাকর ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বার বারই গলা কেঁপে যাচ্ছিল একুশ বছরের তরুণীটির।
''এভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকে। একদিন আমি বুঝতে পারি প্রতি রাতে আমার উপরে এসে উঠে পড়ছে আমার বাবা।''কিশোরী বয়সে আপন বাবা দিনের পর দিন তাকে ধর্ষণ করেছে।প্রথমে ভুল বুঝিয়ে, পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে। কিন্তু প্রতি রাতের ধর্ষণ একটি দিনের জন্যও থামে নি। মেয়েটি তখন মোটে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী।হঠাৎ করেই আমি বুঝতে পারি আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে,'' বললেন আপাদমস্তক বোরখায় মোড়া তরুণীটি।একদিন তার বাবা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তারের কাছে গিয়ে তিনি জানতে পারেন তিনি গর্ভবতী হয়ে গেছেন।
পরে ওই ডাক্তারই তাকে নিয়ে গিয়েছিলো থানায়। অভিযোগের পর বাবাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ ,কিন্তু জানাজানি হয়ে যাওয়ায় মেয়েটিকে ছাড়তে হয় গ্রাম।পরে ঢাকাতেই একটি বাচ্চা জন্ম দেয় মেয়েটি। বাবার ঔরসজাত সেই শিশুটি এখন বড় হচ্ছে একটি শিশু-সদনে।মেয়েটি আর কখনো গ্রামে ফিরে যায়নি। ঢাকাতেই কাজ করছে সে, বিয়েও করেছে।নিজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ মাথায় নিয়ে সেই বাবা এখনো কারাগারে। মেয়েটি তার স্বামীকে বলেছে তার বাবা বেঁচে নেই।একদিন তার বাবা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তারের কাছে গিয়ে তিনি জানতে পারেন তিনি গর্ভবতী হয়ে গেছেন।
চরম সর্বনাশ
আরেকটি মেয়ে বলছিলেন, তার কিশোরী বয়সে সে ধর্ষণের শিকার হয় আপন মামাত ভাইয়ের হাতে।
একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মামার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন, তরুণীটি বলছিলেন।
''গভীর রাতে আমি বাথরুমে গিয়েছি। পাশেই সম্ভবত ওঁত পেতে ছিল আমার মামাত ভাই। বেরিয়ে আসার সাথে সাথে সে আমার মুখ চেপে ধরে ঝোপের আড়ালে নিয়ে যায়''।''সেখানেই আমার চরম সর্বনাশ করে সে,'' তিনি বলেন।বছর চারেক আগের সেই ঘটনা বিবিসি বাংলাকে বলছিল মেয়েটি।ঘটনাটি সে চেপে যায়। কিন্তু একদিন সে আবিষ্কার করে সে গর্ভবতী হয়ে পড়েছে। তখন সে অভিভাবককে জানাতে বাধ্য হয়।
অভিভাবকেরা অবশ্য বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে চেয়েছিল এবং মামাত ভাইয়ের সাথে মেয়েটির বিয়ে দেবার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু মামাত ভাই বেঁকে বসায় অভিভাবকেরা আইনের আশ্রয় নেয়।মেয়েটি অবশ্য পরে একটি মৃত বাচ্চা প্রসব করে। তাকেও এলাকা ছাড়া হতে হয় লোকলজ্জার ভয়ে। চার বছর আগে দায়ের করা ধর্ষণের মামলাটি এখনো চলছে।
আইনের প্রতি অনীহা
উপরে বর্ণিত দুটো ঘটনাই প্রকাশ পেয়েছে কারণ অভিযোগকারীরা আইনের আশ্রয় নিয়েছেন বলে।কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিকটাত্মীয় বা পরিবারের সদস্যদের দ্বারা ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলো প্রকাশ হয়না।বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী বলছিলেন, প্রথমত লোকলজ্জা ও পারিবারিক বন্ধনজনিত কারণে বিষয়গুলো পরিবারের মধ্যেই মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়।যেগুলো প্রকাশিত হয়, সেসব ক্ষেত্রেই দেখা যায় বেশিরভাগ অভিযোগকারী আইনের আশ্রয় নিতে আগ্রহী হয় না, তিনি বলেন।'আত্মীয়-স্বজন, চাচা, মামা, খালু এবং বাবা দ্বারা যৌন নির্যাতনের অনেক অভিযোগ কিন্তু আমাদের কাছে আসে,'' সালমা আলী বলেন।''কিন্তু তারা থানায় মামলা করতে চায় না,'' তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন।শুধু মেয়ে শিশুদের সাথেই এমন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে তা নয়।সংবাদদাতা অন্তত দুটি ঘটনা জানতে পেরেছেন, যার একটিতে ৪ বছরের এক ছেলে শিশুকে যৌন নিপীড়ন করেছে তারা চাচাত ভাই।আরেকটি ঘটনায় বোনের ছেলেকে নিপীড়ন করেছে এক খালা।
দুটি ঘটনাতেই অভিভাবকেরা তাদের সাক্ষাতকার ধারণ কিংবা প্রচার করতে দিতে সম্মত হননি।তবে সংবাদদাতার বরাতে ঘটনা দুটো প্রকাশে রাজি হয়েছেন তারা।
মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব
খোঁজখবর নিয়ে জানা যাচ্ছে, দুএকটি ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ করছেন তারাই যারা পরবর্তীতে নিপীড়ন-জনিত কারণে শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন
ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট ফরিদা আক্তার বলছিলেন, প্রতি মাসে তিনি এ ধরনের অন্তত তিন থেকে চারজন রোগী পান।মিস আক্তার বলেন, যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এ ধরনের নিপীড়নের যারা শিকার তারা যৌন সংশ্রবের ব্যাপারে চরম অনাগ্রহী হয়ে পড়ে।''তারা পুরুষ মানুষ সহ্য করতে পারে না। কেউ কেউ যে কোনো ধরণের স্পর্শেই চমকে ওঠে,'' তিনি বলেন।আবার কোনও কোনও ক্ষেত্র উল্টোটাও দেখা যায়। অর্থাৎ তাদের কেউ কেউ যৌন সম্পর্কের ব্যাপারে অতিমাত্রায় আগ্রহী হয়ে পড়ে।
সংবাদদাতা এমন একজনের সাথে কথা বলেছেন, যিনি তার সৎ বাবার হাতে দিনের পর দিন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
''আমার বয়স যখন দশ বছর তখন প্রথম আমার সৎ বাবা আমাকে ধর্ষণ করে। আমি কোনও বাধা দিতে পারিনি, সেই ক্ষমতা আমার ছিল না'', বিবিসি বাংলাকে জানালেন মহিলাটি।মহিলাকে দেখে এবং তাঁর কথা শুনে তাকে একটি কিশোরী বৈ কিছু মনে হয় না। অথচ তাঁর বয়স এখন চল্লিশ।
মাথার চুলগুলো ছোট করে ছাঁটা। ফুট চারেক উচ্চতা আর বড়জোর ত্রিশ কেজি ওজনের এই মহিলাটির হাতে এবং মুখে দগদগে ঘা। কথা-বার্তা কিছুটা অসংলগ্ন।ছোট বেলার সেই নির্যাতনের ফলেই এমনটি ঘটেছে কী না নিশ্চিত না, তবে তাঁর মায়ের সেরকমই ধারণা।মা বলছিলেন, ওই সময়ে ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে অবগত ছিলেন তিনি। তবে সামাজিক কারণে কিছু বলতে পারেননি স্বামীকে।
নব্বই ভাগ শিশু নির্যাতিত
বাংলাদেশে এখন বেশ কিছু সংস্থা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে, নানা পরামর্শ দিচ্ছে এবং সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে।ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স নামে একটি বেসরকারি সংস্থা বলছে, ১৯৯৬ সালে তারা যৌন নির্যাতনের শিকার ৫০ জন মানুষের সাক্ষাতকার নেয় যাদের মধ্যে ৪৬ জনই ছিলেন পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতদের হাতে নির্যাতনের শিকার।
'' বাংলাদেশের শতকরা নব্বই ভাগ শিশুই পারিবারিক গণ্ডিতে ধর্ষণ থেকে শুরু করে স্পর্শজনিত নিপীড়ন পর্যন্ত কোনও না কোনও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে,'' বললেন সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা রোকসানা সুলতানা।
মিস সুলতানা আরও জানাচ্ছেন, তারা ঢাকার একটি এলাকাসহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় এখন এ ব্যাপারে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন এবং ইতিবাচক ফলাফল পাচ্ছেন।
তথ্য সূত্রঃ
আহরার হোসেন
বিবিসি বাংলা, ঢাকা
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমাদের দাদার দাদা।
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।
আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?
আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।
পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়
অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন