এই লেখাটা আমি কমেন্ট আকারে প্রথমে মইনুল ভাইয়ের পোস্টে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু পড়ে দেখি যে এটি এত বড় হয়ে গেছে যে আলাদা পোস্ট হিসাবে দেওয়াটাই যুক্তিসংগত হবে। মাঈনউদ্দিন মইনুল এর লেখাটির লিংকঃ
আউটসোর্সিং: ব্লগে কোন আঁকিয়ে কি আছেন, একটি বেদনাতুর ছবি/কার্টুন এঁকে দেবার জন্য!?
Click This Link
আউটসোর্সিং’কে আমি সবদিক থেকে ইতিবাচক বিষয় বলে গণ্য করে থাকি কারণ এটি এমন একটি সেক্টর যেখানে সর্টকাট, দুই নম্বরি অথবা ঘুষের কোন স্থান নেই। আর মেধাবীদের কথা- বাংলাদেশে একেবারে ছোটবেলা থেকেই আমাদের মধ্যে এই চেতনা ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যে রেজাল্ট আসল কি শিখলাম তা আসল নয়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন শিক্ষক এবং অনেক মেধাবী ছাত্রদের আমরা এমএলএম বা ডেস্টিনি মার্কা ব্যবসায় জড়াতে দেখেছি। সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে আউটসোর্সিং অনেক ভাল একটি কাজ।
ছাত্র বয়সে আমি নিজেও অনেক ছাত্র পড়িয়েছি বা টিউশনি করিয়েছি অর্থের প্রয়োজনে। কিন্তু টিউশনির দেশের অর্থনীতির জন্য কতটা উপকারী সে ব্যপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বরং সেই সময় আমি যদি কোন একটা স্কিল ডেভেলপ করতে পারতাম তা ভবিষ্যতে আমার অনেক কাজে লাগত। অবশ্য ছাত্র বয়স থেকে আমি পত্রিকাতে লেখালেখি করি এবং পরবর্তীতে তা অনেক কাজে দিয়েছে। আমাদের দেশে ছাত্রজীবনে শিক্ষিত তরুণদের জন্য খুব বেশী কাজের ক্ষেত্র আছে বলে আমার মনে হয় না। আউটসোর্সিং আমাদের সেইদিকটিতে অনেক ক্ষেত্র উন্মচন করে দিয়েছে। কেউ হয়তো ইংরেজি ভাল পারে তার যেমন কাজের সুযোগ রয়েছে তেমনি গ্রাফিক্স ডিজাইন, অনলাইন মার্কেটিং, সিইও, রিসার্চ অ্যাসিসট্যান্ট ইত্যাদি নানা ধরণের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের তরুণদের জন্য যা এমনকি পাঁচ বছর আগেও চিন্তা করা যেত না।
আমাদের মেধাবী তরুণদের আউটসোর্সিং এ আরও অনেক বেশী সংখ্যক আসা দরকার। কারণ এর বিকল্প গুলো বাংলাদেশে আসলেই খুব হতাশাজনক। বরং কিছু মেধাবীরা সরকারী চাকরী ঘুষের মায়া এবং কর্পোরেট জগতের রঙিন হাতছানি উপেক্ষা করে আউটসোর্সিং এর মত একটি চ্যালেঞ্জিং পেশায় প্রথমে কর্মী এবং পরে তাদের মেধা খাটিয়ে উদ্যোগতা হিসাবে নামতে পারলে তা আমাদের দেশের জন্য এক বড় আশীর্বাদ হবে।
অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিত লোকদের জন্য গার্মেন্টস সেক্টরে প্রায় ৩০-৪০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ঠিক তেমনি আউটসোর্সিং এ যদি ১০ লাখ শিক্ষিত লোকের কর্মসংস্থান হয় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চিত্রই বদলে যাবে। গার্মেন্টস সেক্টরে বেতন বাংলাদেশের তুলনায়ও খুব কম। আউটসোর্সিং এ কিন্তু তেমনটি নয়। বরং এই খাতে মাসিক আয়ের সম্ভাবনা চাকরির বেতনের থেকে বেশী বলেই অনেকে এইদিকে ঝুকছে। আর এই খাতে যত বেশী লোক দক্ষ এবং সফল হবে তাও আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এক বিশাল আশীর্বাদ হবে। বাংলাদেশে এখন ই-কমার্সের প্রসার ঘটছে, এরপরে আসছে ই-লার্নিং এর দিন। সামনে আসবে ক্লাউড কম্পিউটিং, বিগ ডাটা, গেমিং, মোবাইল অ্যাপস ও অ্যানিমেশনের দিন।
তাই ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং এর দিকে যত বেশী লোক উচ্চ শিক্ষিত- স্বল্প শিক্ষিত, মেধাবী-অমেধাবী, তা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য ভাল। কারণ আইসিটি সেক্টরে বাংলাদেশের সত্যি এক দারুন সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু দরকার এই খাতে প্রচুর পরিমানের দক্ষ কর্মশক্তি। এমনকি আমাদের দেশের ভেতরেই অনেক কোম্পানি ও প্রজেক্টের জন্য অনেক লোকের দরকার হবে এ দিকে। আমরা যদি তা না করতে পারি তাহলে এসব চাকুরী ভারতীয়দের হাতে চলে যাবে এটাই বাস্তবতা।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে খুব ভালমতই জানি যে ফ্রিল্যান্স আউটসরসিং কোন ছেলে খেলা নয়। প্রচন্ড ধৈর্য ও অধ্যাবশ্যায় থাকতে হয় এবং অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়। এখানে লড়াই করতে হয়। প্রথম প্রথম কাজ পাওয়া খুব কঠিন। কাজ পাবার পরও টিকে থাকতে হয়, কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে হয়। অনেককে আবার রাত জেগে আমেরিকান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সারা রাত কাজ করতে হয় এবং সারা দিন ঘুমানো। মোটেও আনন্দের জীবন নয়। ছুটি বলতে কিছু নেই- রজা-পুজাতেও কাজ করতে হয়। বিকেল ৫ টা বা রাত ৫ টা বলে কিছু নেই। সফল হতে হলে ঠকতে হবে, লড়তে হবে- সেই গ্ল্যাডিয়েটর সিনেমার গ্ল্যাডিয়েটরের মত।
বাংলাদেশের ইন্টারনেটের গতি স্লো, টাকা আনা বেশ ঝামেলার, পেপাল নেই- ২-৩ বছরের আগে আসবে কিনা জানি না, অনলাইনে বিদেশী কিছু কেনাও বেশ ঝামেলার- মোট কথা নানা রকম প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আর এখনো আমাদের দেশে অনেকেই কোন কোম্পানিতে কেউ ৯-৫ টা চাকুরী না করতে পারলে তাঁকে ব্যর্থ মনে করে।
আমেরিকা ইউরোপ সস্তা শ্রমের আকর্ষণে এখানে আসছে এবং সামান্য কয়েকশত ডলার মাসে দিয়ে (যা ডলার থেকে টাকায় ৪০-৫০ হাজার হচ্ছে) স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়ে আমাদের তরুণদের সকাল, দুপুর, রাত সব সময়কেই কিনে নিচ্ছে। আমরা মুখে হয়তো বলছি যে ৯-৫ টার চাকুরী জীবনের ধরাবাধা নিয়ম নেই কিন্তু বাস্তবতা হল আউটসোর্সিং এমন এক জগত যেখানে যে কোন চাকরির থেকে অনেক বেশী কষ্ট করতে হয়। কিন্তু তারপরও আমি এ সেক্টরকে আমাদের দেশের জন্য খুব বড় একটা আশীর্বাদ বলে মনে করি। আমাদের প্রজন্মের তরুণদের কষ্ট ও আত্বত্যগে যদি এক দশক পরের বাংলাদেশে কোন গরীব লোক না থাকে তবে এর থেকে ভাল আর কি হতে পারে।
আপনি যদি কোরিয়ার দিকে তাকান তাহলে দেখবেন যে ১৯৬০ সাল থেকে ১২-১৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করে, বছরের পর বছর লেগে থেকে শুধু এশিয়া নয় সারা বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এ পথে আমাদেরও যেতে হবে এবং এখনই তা শুরু করার সময়।
সবশেষ কথা হল বাংলাদেশে মানব সম্পদ ছাড়া কিছুই নেই। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি হওয়াতে অশিক্ষিত লোকদের একটা গতি হয়েছে। এখন আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে শিক্ষিত লোকের যদি কিছুটা গতি হয় তবে তা আমাদের জন্যই মঙ্গল।
আমার ব্লগঃ http://ecombd.net/
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৩:৪৬