somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাঙ্গল ট্রেকিং- রেমা-কালেঙ্গা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারী

২০ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :







মাস দুয়েক আগে ট্রেকিং করতে গিয়েছিলাম রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রানী অভয়ারন্যে দুই সঙ্গী সহ। অফিসের এক ঘেয়েমি কাজ আর জ্যামে অতিষ্ঠ হয়ে ঢাকার বাইরে যাবার জন্য প্রানটা ত্রাহি ত্রাহি করছিলো। চট জলদি যাওয়া যায় এমন একটি জায়গা খুজতে গিয়ে হঠাৎ মাথায় এলো এ জায়গাটির কথা। বছর দশেক আগে বেশ ক’বার যেতে হয়েছিলো একাডেমিক প্রয়োজনে, জীব-বৈচিত্রের উপর একটি গবেষনা কাজের জন্য। যারা জাঙ্গল ট্রেকিং আর ওয়াইল্ড লাইফ পছন্দ করেন তাদের জন্য অল্প খরচে চমৎকার একটি অভিজ্ঞতা হতে পারে। যাহোক দেড় দিনের ট্রেকিংয়ে বনের ভিতর ব্যাপক ঘুরাঘুরি, জানা অজানা গাছ-গাছালি, বাহারি অর্কিড আর ওয়াইল্ড লাইফ দেখে দারুন কিছু সময় কেটেছে। ছবি দেখার আগে চলুন এই অভয়ারন্য সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই-

রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত। এটি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার খুব কাছে এবং ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত সংলগ্ন। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়র পথে এর দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। হবিগঞ্জ জেলা বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের তিনটি বিট: কালেঙ্গা, রেমা আর ছনবাড়ী নিয়ে এই অভয়ারণ্য গঠিত।

এটি বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রানীর অভয়ারণ্য। বনের প্রকৃতি অনুযায়ী এটি একটি শুকনো ও চিরহরিৎ বন এবং সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বনভূমি। এছাড়াও এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র্যে দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল। রেমা–কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে এটির আরো সম্প্রসারণ করা হয়। বর্তমানে এই অভয়ারণ্যের আয়তন ১৭৯৫.৫৪ হেক্টর। বাংলাদেশের যে কয়েকটি প্রাকৃতিক বনভূমি এখনো মোটামু্টি ভাল অবস্থায় টিকে আছে, রেমা-কালেঙ্গা তার মধ্যে অন্যতম। তবে নির্বিচারে গাছ চুরি ও বন ধ্বংসের কারণে এ বনভূমির অস্তিত্বও বর্তমানে হুমকির মুখে।

এই অভয়ারণ্য বিরল প্রজাতির জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। বর্তমানে এই বনে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, সাত প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৬৩৮ প্রজাতির গাছপালা-লতাগুল্ম পাওয়া যায়। বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পাখির জন্য এই বন সুপরিচিত এবং এদের মধ্যে রয়েছে — ভীমরাজ, টিয়া, হিল ময়না, লাল মাথা কুচকুচি, সিপাহি বুলবুল, বসন্তবৌরি, শকুন, মথুরা, বনমোরগ, পেঁচা, মাছরাঙা, ঈগল, চিল প্রভৃতি।

এই বনে তিন প্রজাতির বানরের বাস, এগুলো হল: কুলু, রেসাস ও নিশাচর লজ্জাবতী বানর। তাছাড়া এখানে পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালি দেখা যায়। এর মধ্যে বিরল প্রজাতির মালয়ান বড় কাঠবিড়ালি একমাত্র এ বনেই পাওয়া যায়। বন্যপ্রানীর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য আরও রয়েছে মুখপোড়া হনুমান, চশমা হনুমান, উল্লুক, মায়া হরিণ, মেছোবাঘ, বন্যশুকর, গন্ধগোকুল, বেজি, সজারু ইত্যাদি। কোবরা, দুধরাজ, দাঁড়াশ, লাউডগা প্রভৃতি সহ এ বনে আঠারো প্রজাতির সাপের দেখা পাওয়া যায়। জানা যায় ৬০ এর দশকে এই বনে চিতাবাঘ আর বেঙ্গল টাইগারের ভালো বিচরন ছিলো। (তথ্যসুত্র- উইকি, নিসর্গ প্রজেক্টের বুকলেট)

ঢাকা থেকে এই অভয়ারন্যে দু ভাবে যাওয়া যায়, শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে চুনারুঘাট থেকে অথবা শ্রীমঙ্গল থেকে। চুনারুঘাট থেকে যাওয়া তুলনামুলক ভাবে সহজ আর সময় ও কম লাগে। যেতে হবে ঢাকা হবিগঞ্জ কিংবা ঢাকা সিলেটের বাসে। চুনারুঘাট দিয়ে যেতে হলে নামতে হবে শায়েস্তাগঞ্জ বাইপাসে। সেখান থেকে শেয়ারের (অথবা রিজার্ভ) সিএনজি ট্যাক্সিতে চুনারুঘাট, সময় ১৫ মিনিট। চুনারুঘাট থেকে অভয়ারন্যের প্রবেশ পথ পর্যন্ত সিএনজি সার্ভিস আছে অনিয়মিত যদিও, সময় লাগে আধা ঘন্টা থেকে ৪৫ মিনিট। তবে রিজার্ভ নিয়ে গেলেই ভালো, ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া নিবে। শ্রীমঙ্গল থেকে যেতে হলে গাড়ী রিজার্ভ করে যেতে হবে, সময় লাগে দেড় থেকে দু ঘন্টার মতো। শ্রীমঙ্গল শহরে থাকার জন্য চলনসই মানের হোটেল আছে। এছাড়া টি বোর্ডের রিসোর্টে ও থাকার ভালো বন্দোবস্ত আছে। অভয়ারন্যে রাতে থাকার জন্য বনের প্রবেশ মুখে বন বিভাগের বিট অফিসের লাগোয়া নিসর্গ প্রজেক্টের ইকো ফ্রেন্ডলি কটেজ আছে। দু রুমের কটেজ, ৫-৬ জন থাকা যায়। বাংলোর কেয়ারটেকার ফরমায়েশ অনুযায়ী রান্না করে দেয়। খাবারের দাম রিজনেবল, মানসম্মত ও। বনে ঘোরাঘুরির জন্য নিসর্গের ট্রেনিংপ্রাপ্ত গাইড আছে, বেশ নলেজেবল, পারিশ্রমিক সারাদিন ট্রেকিংয়ের জন্য ৬০০ টাকা, খুব বেশি না। ট্রেকিং করার জন্য বেশ কটি ট্রেইল আছে এ অভয়রান্যে, এক ঘন্টা, দেড় ঘন্টা, তিন ঘন্টা আর সীমান্তবর্তী রেমা বিটে গিয়ে ফিরতে হলে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রেক করতে হবে। বর্ষাকালে যেতে পারলে বনের পুর্নাঙ্গ রূপ দেখা যায় কিন্তু জোকের খুব উপদ্রব থাকে, ইচ্ছে মত কামড়েছে আমাদেরকে। যারা আরো ইভেন্ট যোগ করতে চান তারা অদুরেই সাতছড়ি অভয়ারন্যে কিংবা লাউয়াছড়া অভয়ারন্যে ও ট্রেকিং করতে পারেন। আরো আছে চা বাগানের ভিতর দিয়ে ড্রাইভ কিংবা সাইক্লিং করে মাধবপুর লেক দর্শন এবং হাম হাম জলপ্রপাত ট্রেকিং যা এডভেঞ্চারপ্রিয়দের ভালো লাগবে অবশ্যই । বলে রাখা ভালো নিসর্গ প্রজেক্ট হচ্ছে বাংলাদেশের প্রটেক্টেড ফরেষ্ট রক্ষা ও এর যথাযত ব্যাবস্থাপনার জন্য ফরেষ্ট ডিপার্টমেন্ট আর ইউএসএইডের একটি যৌথ উদ্যোগ। এবার তাহলে আমার আনাড়ি হাতে পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরায় তোলা নট সো গুড ছবি গুলি দেখি-



























































































































সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার ১৮ নম্বর বাসা পর্ব: ৭ (ভূতুরে ঘটনা)

লিখেছেন অপলক , ২৯ শে মে, ২০২৫ রাত ১১:৩৭

২০১৪ সালের ২৪ তারিখ আমার মেয়ে জন্ম নেয়। ওর জন্মে সময় আমার মা বাবা ছিল। তারা চলে যাবার দিনে শাশুড়ি, শালা আর এক শালি আমার বাসায় আসে। সবকিছু ঠিক ঠাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গঃ ডক্টর ইউনুস স্যারের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য...

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩০ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:০৪

প্রসঙ্গঃ ডক্টর ইউনুস স্যারের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য...

জাপান সফরে ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস স্যার উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন- "দেশের একটামাত্র দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়"।


কথাটা আংশিক সত্য।
কারণঃ
★ দেশে রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কৃমির হাজার বছরের ঘুম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩০ শে মে, ২০২৫ সকাল ১০:০৬




রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা সাইবেরিয়ার পারমাফ্রস্টে ৩০০টি প্রাগৈতিহাসিক কৃমি আবিষ্কার করেছেন, যার মধ্যে দুটিকে সফলভাবে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হয়েছে। এই কৃমিগুলি হাজার হাজার বছর ধরে বরফে আটকা পড়ে ছিল, তবুও গলানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নির্বাচন চাইলে নির্বাচন কমিশনের কাছেই চাইতে হবে, ড. ইউনুসের কাছে নয়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ৩০ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১২:১৯


বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি প্রশ্ন বারবার ঘুরেফিরে আসছে—বিএনপি আসলে নির্বাচন চায় কার কাছে? সম্প্রতি নানা বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, দলটি যেন নির্বাচন চাচ্ছে ড. ইউনুসের (অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টার) কাছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

"বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হবে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি".....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩০ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৬

"বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হবে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি".....


বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হতে হবে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি। হতে হবে সকল প্রেরণার উৎস। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের এই দর্শনের নিহিত রয়েছে আত্মসামাজিক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×