আমাদের দেহে কাজ কর্ম যা ঘটে সব -ই প্রোটিনের কারিশমা । এরাই নির্মাণ সামগ্রী - এরাই নির্মাণ শ্রমিক ! এরাও যন্ত্রপাতি , এরাই মেশিণ অপারেটর । প্রোটিন সাহেব আবার দুরকম : স্ট্রাকচারাল আর ফাংশনাল । স্ট্রাকচারাল গুলো নির্মাণ সামগ্রী , আর ফাংশনালগুলো নির্মাণ শ্রমিক ! শর্করা -লিপিড ( চর্বি জাতীয় পদার্থ) গুলো স্রেফ জ্বালানীর কাজ করে ।
আধুনিক বিজ্ঞান বিবর্তণকে ব্যাক্ষা করে প্রটিনের বিবর্তণ হিসেবে । যেমন বিজ্ঞানীদের বক্তব্য এককোষী প্রাণীর দেহের প্রোটিন বিবর্তিত হয়ে মানুষের দেহের প্রটিন তৈরী হয়েছে , তথা মানুষের দেহ তৈরী হয়েছে , বা মানুষ তৈরী হয়েচে । বিবর্তণবাদের শুরুর দিকে মানুষ আকৃতি -প্রক্বতির মিল খুজত , মিল পেলে বলে দিত এদের একটি থেকে অন্যটি তৈরী হয়েছে । বর্তামাণে বিজ্ঞানীরা সেটা খুজেন না , খুজেন প্রোটিনের মিল । এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল প্রোটিণের 'ফর্মা' কিন্তু জিন , জিনে লিপিবদ্ধ বৈশিষ্ট থেকেই প্রোটিন তৈরী হয় । কাজেই প্রটিনের মিল এক অর্থে জিনেরও মিল বলতে পারেন । তাই আকৃতি -প্রকৃতিতে যতই মিল থাকুক না কেন আফ্রিকার হাতি আর এশিয়ার হাতি ভিন্ন প্রজাতির জীব ! এরা বিয়ে-শাদী করে বাচ্চা তৈরী করতে পারবে না, জিন ট্রান্সফার সম্ভব নয়, একেবারেই ভিন্ন প্রজাতি! যেমন মনে করেন মানুষ আর বানর ! এমন কি একটি থেকে বিবর্তিত হয়েও অন্যটি তৈরী হয় নি । ( কেউ কেউ ধারনা করেন বাণর থেকে মানুষ পয়দা হয়েছে, প্রিটিনের হিসেবে তা হয় না, বিজ্ঞানীরাও এখন এমনটা দাবী করেন না ।) এমন কি এশিয়ার হাতি আর আফ্রিকার হাতির একধাপ উপরের পূর্ব পুরুষও এক না ! অর্থৎ কোন একটি হাতি( বা ছাতি অন্য কিছুর) পরিবর্তনে এশিয়ার হাতি আর আফ্রিকার হাতি তৈরী হয়নি ! আরো উপরে যেতে হবে !! এতটা দুরত্বের কারণ প্রোটিনের অমিল। দেহ গঠনের অমিল । যেমন একটা হাত পা বিশিষ্ট বাবা মার হাত পা ছাড়া সন্টান হতে পারে, তবে তাদের মাঝে জিন ট্রান্সফার সম্ভব , দেহের গঠন এক, প্রোটিনের গঠনও একই ।
আরো সহজ একটা উদাহরণ দেই । এলিফেন্ট রোডে এরোপ্লেন মসজিদদের কথা অনেকেই জানেন । মসজিদের উপর একটা রড-সিমেন্ট নির্মিত বিমান বানিয়ে রাখা হয়েছে । নৃতাত্ত্বিক দৃস্তি ভংগী থেকে দেখেলে এই সিদ্ধান্তে আসতে হবে একটা বিমান প্ড়থমে তৈরী হয়েছে, সেটা কোন ভাবে ছাদের উপর চলে গেছে, তার পর বিবর্তিত হয়ে আসল বিমানে পরিণত হয়েছে, এরপর উড়ে চলে গেছে ! কারণ এডের আকৃতি প্ড়ায় একই রকম !
কিন্তু জিন-প্রোটিন বা বায়কেমিক্যাল প্রসেস নিয়ে যারা কাজ করেন তারা বাইরের আকৃতি দেখবেন না , দেখবেন ভিতরের স্ট্রাকচার । গাড়ীর ইন্জিনের সাথে বিমানের ইন্জিনের মিল পেলে বলে দিবেন গাড়ী থেকে বিমান বা বিমান থেকে গাড়ী তৈরী হয়েছে, আকৃতি যাই থাকুক । প্রোটিণের এই দীর্ঘ বয়ানের উদ্দেশ্য একটাই প্রাণের উৎপত্তি বা এর পদ্ধতি বুঝা ।
যেকোন প্রাণের দেহে ( প্রাণী না, উদ্ভিদ হোক আর যাই হোক ) যে কোন পরিবর্তন ( জন্ম - বৃদ্ধি বা যা কিছু ) বা নিয়মিত কর্ম কান্ড হতে হলে প্রথমত জিনের ভুমিকা থাকে । জিন বলে দেয় কি হবে । কাজটা করে এনজাইম ( ফাংশনাল প্রোটিন ) আর ফলাফল হয় স্ট্রাকচারাল প্রোটিন । কোষ - বিভাজন, দেহংঠন , বৃদ্ধি , জন্ম , ডিম পাড়া আর যা -ই বলেন । পৃথিবীর সবচেয়ে সরল কোষটা তৈরী হবে , সেটার জন্য জিন লাগবে , সে বলে দিবে কেমন হবে নতুন কোষটা । এই কাজগুলো করতে করাটে এনজাইম লাগবে । এদের ফলাফল হিসেবে কিছু স্ট্রাকচারাল প্রোটিন তৈরী হবে ,সেটাই নতুন দেহ , নতুন প্রাণ বা নতুন কোষ বা নতুন বৃদ্ধি বা নতুন পরিবর্তন । যাই বলেন ।
কোষ তৈরী হয় কোষ থেকে । বিশ্বের প্রথম কোষ তৈরী হয়েছিল প্রোটিন দিয়ে । প্রশ্ন হচ্ছে প্রোটিনের এই খোলস বা ডিম বা কোষের ভিতর কুসুম টা ( জিন বাহী ক্রোমজম ) ঢুকল কিভাবে ? আর ডিম ছাড়া ক্রোমজম এনজাইম গুলো কাজকরে আরেকটা ডিম তো বানানো যাবে না, মানে মুক্ত ক্রোমজন আর এনজাইম তো কোষ বানাতে পারবে না ! এগুলো কাজ করল কি ভাবে ? মানে খোসার ভিতর কলাটা ঢুকল কি করে ?
ডিম আগে না মুরগী আগে এটা যেমন একটা প্রশ্ন , তেমনি কোষ আগে না প্রাণ আগে এটাও একই রকম প্রশ্ন । মজার বিষয় ডিম কিন্তু একটা কোষ, একটাই কোষ । এবং প্রাণহীন । এটা থেকেই প্রাণের জন্ম , মুরগীর উদ্ভব । তাই প্রাণহীন থেকে -প্রাণের উৎপত্তি বিশ্বাস করলে বলতে হবে ডিম আগে মুরগী পরে । তাহলে প্রথম মুরগীর ডিমটা আসল কিভাবে ? হতে পারে হাসের পেটে । বা হাসের পেটে হাসের ডিম হয়ে মাটিতে পরে, তারপর কোন বিশেষ প্রক্রিয়ায় সেটা মুরগীর ডিমে পরিবর্তণ হয়ে যায় । এরপর ধারাবাহিক মুরগী পয়দা শুরু হয় ।কারণ আস্ত একটা হাসের দেহের কোটি কোটি কোষ বদলানোর থেকে একটা কোষ ডিম বদলানোটা সহজ।
কিন্তু খোসার ভিতর কলাটা ঢুলল কি করে , সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:২৪