আজকের পর্ব জামাতে ইসলামি দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক সমাজ কল্যান মন্ত্রী আলি আহসান মুজাহিদকে নিয়ে। সে জোট সরকারের আমলে টেকনোক্রেট মন্ত্রীত্ব বাগিয়ে নেয়। ১৯৯৬ এ জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ায় সে ২০০১ এ নির্বাচনে দাড়াতে সাহস পায় নাই।
ক. একাত্তরের কীর্তি
একাত্তরে মুজাহিদ কুখ্যাত আল বদর বাহিনীর প্রাদেশিক প্রধান (তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তান) থাকে। সে ওই সময়ে ইসলামি ছাত্র সংঘের প্রাদেশিক প্রধানও ছিল। ৭ নভেম্বরে তাদের এক সমাবেশে মুজাহিদ চার দফা দাবি প্রকাশ করে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলোঃ হিন্দু লেখকদের বই বা তাদের ‘দালালি’ করে লেখা কোন বই কেউ রাখতে বা বিক্রি করতে পারবে না; করলে স্বেচ্ছাসেবকরা জ্বালিয়ে দেবে। ২৩ নভেম্বরে আবার জানায় যে আশেপাশেই শত্রু আছে, তাই হুশিয়ার হয়ে কাজ চালাতে হবে; তাদের মনে রাখতে হবে যে শুধু পাকিস্তানকে বাঁচাবার জন্যই এই যুদ্ধ না, ইসলামের খাতিরেই যুদ্ধ করছে তারা।
খ. ইসলামের অপব্যবহার
এইভাবেই জামাতিগুলো ইসলামের কথা বলে সাধারন মানুষকে সেই সময় থেকেই বিভ্রান্ত করছে, যা এখনো চলছে। অথচ ব্যক্তিগত জীবনে তারা নিজেরাই সৎ না। আমাদের নবী (সা.) নিজে চিনি খাওয়া ছেড়ে তারপর তা ছাড়ার উপদেশ দিয়েছিলেন আরেকজনকে। অথচ এই জামাতিগুলো মুখে ইসলাম ইসলাম বলে ফাটিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত জীবনে তার লেশমাত্র পর্যন্ত দেখা যায় না, যার কিছু প্রমান আগের পোস্টে আছে, সামনে আরো দেবো।
গ. কিছু মামলা
মুজাহিদের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার মামলা করা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির জন্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই বছরের ৩রা মে তে ২৫ লাখ টাকার চাঁদাবাজির জন্য মামলা দায়ের করেছে সিলেটের এক ব্যবসায়ী।
ঘ. চাপাবাজি
এই বছরের ৩০ জুলাইয়ে সে এনটিভিতে এক সাক্ষাতকারে বলে যে আল বদর বাহিনীর সঙ্গে তার বা জামাতের কোনো সম্পর্ক নাই এবং ৭১ সালে সে ছিল ছাত্রনেতা ফলে তেমন কোন ভূমিকা রাখার সুযোগ তার ছিল না। অথচ দৈনিক সংগ্রামের ৮ নভেম্বর ১৯৭১ এর সংস্করণে মুজাহিদের বিবৃতি আছে আল বদরের নেতা হিসেবে। ইসলামের ঝান্ডা তুলে মিথ্যা বলার আপ্রাণ চেষ্টা!
ঙ. সাবেক শিবির নেতার বয়ান
বিডি নিউজের "নিজামী, মুজাহিদের যুদ্ধাপরাধের সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত মিছবাহুর" শিরোনামের খবরে সাবেক ইসলামী ছাত্র সংঘ (অধুনা ইসলামী ছাত্র শিবির) নেতা মিছবাহুর রহমান বলছেন - " জামায়াত ইসলামীতে মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও কাদের মোল্লাসহ ৪০ থেকে ৫০ জন যুদ্ধাপরাধী রয়েছেন।" এইভাবেই সত্য বেড়িয়ে আসতেছে আস্তে আস্তে।
চ. জনপ্রিয়তার নমুনা
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করেনি মুজাহিদ (অবশ্য ভয়ও ছিলো ১৯৯৬ তে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ায়)। ফলশ্রুতিতে মন্ত্রীত্ব বাগিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করেছে।
নির্বাচন করলে কি হতো?
এর উত্তর পাওয়া যাবে ১৯৯৬ এর নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকালে। ১৯৯৬ নির্বাচনে জামাত বিএনপির সাথে সাময়িক বিচ্ছেদ বরন করে। সেটা ছিল তাদের রাজনৈতিক খেলার অংশ। কারন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আওয়ামীলিগের সাথে থেকে ওরা ধারনা করেছিলো ওদের সার্বিক গ্রহনযোগ্যতা হয়তো বেড়েছে। সেই বিবেচনায় ওরা একক ভাবে নির্বাচন করে শক্তি যাচাইয়ের চেষ্টা করে। সেই নির্বাচনে জামাতের ৩ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়। ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে ২২৫ জন জামানত হারায়।
মুজাহিদও সেই নির্বাচনে ফরিদপুর ৩ আসন থেকে নির্বাচন করে এবং সর্বোমোট গৃহিত ভোট ১৫৪৩৩৫ ভোটের মধ্যে তার ঝুলিতে জমা পড়ে ১২৩৩৪। ফলাফল - জামানত বায়েজাপ্ত।
জনগন কর্তৃক পরাজিত এই চতুর রাজনীতিক টেবিল রাজনীতির কলাকৌশলে বাংলাদেশের মন্ত্রীত্ব করেছে ৫ বছর।
এই হলো সৎ (!) লোকের কিছু নমুনা।