প্রফেসর ইউনূস ও অমর্ত্য সেন, ভিন্ন স্রোতেও এক অভিন্ন মুখ !
.
দু’জনকে দুই মেরুর অর্থনীতিবিদ বলা হয়। কেন বলা হয় তা বুঝি না আমি। অর্থনীতি আমার পঠিত বিষয় নয়, কিংবা এ বিষয়ে খুব একটা জানিও না। যেটুকু জানি, দুজনই বাঙালি, অর্থনীতির ছাত্র ও অধ্যাপক এবং নোবেল লরিয়েটও। অমর্ত্য সেন (Amartya Sen), একজন তাত্ত্বিক অর্থনীতিবিদ, যাঁকে কল্যাণমূলক অর্থনীতির প্রবক্তা বলা হয়। তিনি তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, দুর্ভিক্ষের সাথে উৎপাদনের সম্পর্ক ক্ষীণ, বরং খাদ্যের অসম বণ্টন ও ক্রয় ক্ষমতা বা খাদ্য সংগ্রহের বিপর্যয়ই দুর্ভিক্ষের মূল কারণ। বিশ্বের যেসব দেশ বিভিন্ন সময়ে যে বছর দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছিলো, তিনি দেখিয়েছেন, বিস্ময়করভাবে সেই বছর সেই দেশটিতে খাদ্যের বাম্পার ফলনের রেকর্ড রয়েছে অর্থাৎ গড় উৎপাদনের চাইতে ফলন বেশি ছিলো। আরো অনেক অনেক বিষয়ই ছিলো, যা এ বিষয়ে বিজ্ঞজনরাই ভালো বলতে পারবেন। অর্থনীতির তাত্ত্বিক দুনিয়ায় অনন্য অবদানের জন্য অমর্ত্য সেনকে ১৯৯৮ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
অন্যদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে (Muhammad Yunus) প্রাযোগিক অর্থনীতিতে ক্ষুদ্রঋণ তত্ত্বের জনক কিংবা পথিকৃৎ বলা হয়, যার ইংরেজী পরিভাষা মাইক্রো-ক্রেডিট নামটাকে পাল্টে বর্তমানে মাইক্রো-ফিনান্স নামেই অভিহিত করা হচ্ছে সর্বত্র। জামানতের বিনিময়ে যাদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ নেবার ক্ষমতা বা যোগ্যতা কোনটাই নেই এবং যারা জনগোষ্ঠির ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ, তাদের জন্য পেশা বা দক্ষতাভিত্তিক জামানত বিহীন প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ব্যবস্থা করে প্রচলিত ব্যাংকিং ধারণাটাকে উল্টে দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বলা হয়ে থাকে, দারিদ্র্য থেকে মুক্তিই শান্তির পথে যাত্রা শুরুর প্রথম ও প্রধান নিয়ামক। এই দুঃসহ দারিদ্র্য থেকে মুক্তির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিশ্বব্যাপি ক্ষুদ্রঋণের কার্যকারিতার সফল স্বীকৃতি স্বরূপ ড. ইউনূস’কে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। দু’জনই আমাদের গর্ব এবং গোটা মানব জাতির সম্পদ এঁরা। তাঁদেরকে নিয়ে তাই সবার কৌতুহল একটু বেশি থাকাই স্বাভাবিক। আমার কৌতুহলের জায়গাটা একটু ভিন্ন।
যতটুকু জানি ব্যক্তিগত জীবনে দুজনই খুব সাদাসিধে জীবন যাপন করেন এবং উভয়েই একটি করে কন্যা সন্তানের (যারা পরবর্তী জীবনে স্বনামখ্যাত) জনক হয়ে তাঁদের নিজ নিজ প্রথম বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটে। এই অদ্ভুত মিলগুলো আমার কৌতুহলের বিষয়বস্তু নয়। দুজনেই খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ এবং মানুষ ও দারিদ্র্য নিয়ে দুজনের চিন্তা ও দর্শন জগৎ নিয়ত ঘুরপাক খায় বলে জানি। অথচ চিরায়ত মানবজাতির কল্যাণকামী এই দু’জন নাকি দুমেরুর স্বীকৃত আর্থ-দর্শনে বিশ্বাসী ! অর্থনীতি বুঝি না বলে এই গেরোটা আর আলগা করা সম্ভব হয় না আমার। অথচ ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, গ্রেট ম্যান থিঙ্কস এলাইক। আমার কৌতুহলটা এই এলাইকনেস বা সাযুজ্যটাকেই খুঁজতে থাকে। সম্প্রতি দুজনেই আবার প্রায় একই সময়ে মিডিয়াতে আলোড়ন তুললেন। প্রফেসর ইউনূস গত ১২ আগষ্ট ২০০৯ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’ গলায় পরলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার হাত দিয়ে। আর অমর্ত্য সেন তাঁর সর্বশেষ গ্রন্থ ‘দ্য আইডিয়া অব জাস্টিস’-এর প্রকাশনায় ‘আয় দারিদ্র্য নিরূপণের সঠিক মাপকাঠি নয়’ বলে এক চিন্তা-দর্শন ছড়িয়ে দিলেন। বিষয় সংশ্লিষ্টতা ধরে রাখতে আমরা বরং তাঁদের দুজনের দারিদ্র্য বিষয়ক চিন্তা-দর্শনেই এক পলক দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে পারি।
গত ১৮ আগস্ট ২০০৯ তারিখের অনেকগুলো দৈনিকে অমর্ত্য সেনকে নিয়ে ‘আয় দারিদ্র্য নিরূপণের সঠিক মাপকাঠি নয়’ শিরোনামে একটি খবর কম-বেশি প্রকাশিত হয় পিটিআই অনলাইন নয়াদিল্লির বরাত দিয়ে। খবরটি হলো-
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তার নতুন বইয়ে বলেছেন, বেশিরভাগ সরকার ব্যক্তি বা পরিবারের মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে যেভাবে মানুষের দারিদ্র্য পরিমাপ করে থাকে, তা সামাজিক দৃষ্টিতে কল্যাণের একটি ত্রুটিপূর্ণ ধারণা। অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক ও গণিতজ্ঞ অমর্ত্য সেন তার সর্বশেষ বই ‘দ্য আইডিয়া অব জাস্টিস’-এ বলেছেন, দারিদ্র্য নিরূপণের আয়ভিত্তিক পদ্ধতি মানুষ কতটা ভালো জীবনযাপন করে, তা পরিমাপের যথাযথ প্রক্রিয়া নয়। এ পদ্ধতিতে বার্ষিক একটি নির্দিষ্ট পরিমাপ অর্থের কম উপার্জন করে এমন লোকদের দরিদ্র হিসেবে গণ্য করা হয়। এটা সঠিক মাপকাঠি নয়।
অমর্ত্য সেন এ পদ্ধতির পরিবর্তে জীবনযাত্রার এবং জীবনযাত্রা বাছাইয়ের সামর্থ্য বা সক্ষমতাকে অগ্রাধিকার দেন। অমর্ত্য সেন বলেন, পরিবারের ভেতর আয় বণ্টনে তারতম্যের কারণে আয় থেকে যতটুকু ধারণা পাওয়া যায়, দারিদ্র্য তার চেয়ে অনেক বেশি তীব্র হতে পারে।
তিনি বলেন, সম্পদ ও দারিদ্র্যের সম্পর্ক অনেকটা জটিল। এটি পরিবর্তনশীল এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার প্রাকৃতিক ও সামাজিক উভয় পরিবেশের বৈশিষ্ঠ্যের ওপর নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত।
সেন বলেন, আয় ব্যক্তির জীবনযাত্রার মানের সূচক নয়। মানুষের জীবনযাত্রার মান ভৌত পরিবেশের বৈচিত্র্য, সামাজিক পরিবেশের তারতম্য ও সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতের পার্থক্যের ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, বার্ধক্য, প্রতিবন্ধিতা ও অসুস্থতা ইত্যাদি বাধা মানুষের উপার্জন ক্ষমতা হ্রাস করে। এমন বাধা আয়কে সক্ষমতায় রূপান্তরিত করাকেও কঠিনতর করে তোলে। কেননা, অপেক্ষাকৃত বয়স্ক বা অধিক শারীরিক প্রতিবন্ধীকে একই জীবনযাত্রা অর্জন করতে অধিকতর পরিশ্রম করতে হয়। দারিদ্র্য অনুধাবন ও দারিদ্র্য মোকাবেলায় সরকারী নীতি নির্ধারণে সক্ষমতা বঞ্চিতদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন অসুবিধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হতে পারে।
সম্ভবত এটিই অমর্ত্য সেনের উল্লিখিত বইটির চুম্বক বক্তব্য, যা তাঁর দারিদ্র্য সম্পর্কিত চিন্তা-দর্শনকে সঠিকমাত্রায় প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে বলেই মনে হয়।
অন্যদিকে একটি প্রায়োগিক গবেষণার বীজ তিন দশক ধরে একটু একটু করে প্রস্ফুটিত হয়ে কিভাবে বিশাল মহীরুহে রূপান্তরিত হয়ে ছায়া মেলে দিলো গোটা বিশ্বে, সেই অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে ডক্টর ইউনূস তাঁর “গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার জীবন” গ্রন্থের প্রথম বাংলাদেশ সংস্করণ ২০০৪-এ দীর্ঘ ভূমিকাটি শুরু করেছেন এভাবে-
‘গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমার মনে একটা প্রগাঢ় প্রতীতী জন্মেছে যে, সকল মানুষের মধ্যে সীমাহীন সৃজনশীলতা লুকিয়ে আছে। এটা শুধু আবিষ্কারের অপেক্ষায় থাকে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন কাটাবার ভাগ্য নিয়ে কোনও মানুষ জন্মগ্রহণ করেনি। যাঁরা দরিদ্র তাঁদের এই দারিদ্র্য আমরা তাঁদের উপর চাপিয়ে দিয়েছি। দু’ভাবে আমরা এটা তাঁদের উপর চাপিয়ে রেখেছি। প্রথমত তাঁদের নিজস্ব সৃজনশীলতা সম্মন্ধে সন্ধান পাবার কোনও সুযোগ আমরা তাঁদের জন্য রাখিনি। দ্বিতীয়ত তাঁদের দারিদ্র্যের জন্য আমরা তাঁদের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের দায়িত্বমুক্ত রাখার সুবন্দোবস্ত করে রেখেছি।
দৃঢ়ভাবে এবং গভীরভাবে আমার মনে এই বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে যে, আমরা এমন একটি পৃথিবী তৈরি করতে পারি যেখানে একজন মানুষও দরিদ্র থাকবে না। এটা সম্পূর্ণ আমাদের সমবেত ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে। এই রকম একটা পৃথিবী সৃষ্টি করা সম্ভব হবে যদি সবাই মিলে এটা আমরা চাই। যা নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি, শুধুমাত্র তা-ই আমরা অর্জন করতে পারি। অর্জনের আগে স্বপ্ন দেখাটা একটা জরুরি শর্ত। দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী সৃষ্টি করা যে কোনও অলীক স্বপ্ন নয় সেটা গ্রামীণ ব্যাংকের কাজ করতে গিয়ে প্রতিদিন প্রমাণ পেয়েছি। সামান্য পুঁজি হাতে পেয়ে গরিব মহিলা কীভাবে নিজেকে বিকশিত করতে থাকে সেটা দেখে যাচ্ছি অবিরামভাবে । এতে আমার বিশ্বাস কেবল দৃঢ়তরই হচ্ছে। এ পর্যন্ত বিশ্বাসে কখনও ফাটল ধরার কোন অবকাশ ঘটেনি।
শুধু ক্ষুদ্রপুঁজির ব্যবস্থা করলেই দারিদ্রের সমাধান হয়ে যাবে এ কথা মনে করলে বড় রকমের ভুল করা হবে। আমি বারে বারে স্মরণ করিয়ে দিয়েছি ক্ষুদ্রপুঁজি আসলে গরিব মানুষের জন্য একটা উপলক্ষ সৃষ্টি করে। একে কেন্দ্র করে মানুষ নিজের দিকে তাকাবার সুযোগ পায়, নিজের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ পায়। টাকা মানুষকে পরিবর্তন করে না। মানুষ নিজেই নিজেকে পরিবর্তন করে। কিন্তু তার হাতে একটা হাতিয়ার দরকার। যতদিন হাতে তলোয়ার আসেনি ততদিন বীর যোদ্ধা বুঝতে পারেননি তিনি কত বড় বীর। যতদিন হাতে রংতুলি আসেনি ততদিন শিল্পী বুঝতে পারেননি তিনি কত বড় শিল্পী। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে হলে অবশ্যই পুঁজির তলোয়ার দরকার। এই লড়াইয়ে তাঁর জেতা সহজ করার জন্য আরো আনুষঙ্গিক অনেক কিছু দরকার। যেমন প্রথম থেকে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে, দারিদ্র্য গরিব মানুষের নিজের তৈরি জিনিস নয়। এটা তাদের ওপর চাপানো একটা পরিস্থিতি। মানুষ সম্মন্ধে আমাদের ধারণা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, তার ভিত্তিতে তৈরি আমাদের নীতিমালা সব মিলে দারিদ্র্য সৃষ্টি করেছে। দারিদ্র্য দূর করতে হলে মানুষ ও তার সম্ভাবনা সম্বন্ধে আমাদের ধারণা পাল্টাতে হবে, তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো রচনা করতে হবে, নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। তবেই সহজে এবং স্থায়ীভাবে দারিদ্র্য দূর হবে।”
ভূমিকাংশটির এই উদ্বৃতির মধ্যেই ডক্টর ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ তত্ত্বের প্রয়োগিক দর্শনটি নিহিত বলে মনে হয়। এবং দারিদ্র্যকে তিনি কিভাবে দেখেন তার আভাসও এতে ফুটে উঠে।
এছাড়াও অন্তত একযুগ আগেই তাঁর দৃষ্টিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যের দারিদ্র্যমুক্তির দশটি নির্ধারক চিহ্ণিত করা হয়েছে এভাবে-
(১) সদস্যের পরিবার পরিজন নিয়ে সম্মানজনকভাবে বসবাস করার জন্য টিনের ছাউনিযুক্ত ঘর অথবা ন্যূনতম ২৫,০০০/- (পঁচিশ হাজার) টাকা মূল্যের ঘর আছে এবং পরিবারের সদস্যদের মেঝেতে না ঘুমিয়ে চৌকি কিংবা খাটে ঘুমানোর ব্যবস্থা আছে। (২) নিরাপদ নলকূপের পানি অথবা পানি ফুটিয়ে/ ফিটকারী/ আর্সেনিক মুক্ত/ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করে পানি পান করেন অথবা পানি বিশুদ্ধ করার জন্য যখন দরকার কলসী ফিল্টার ব্যবহার করেন। অর্থাৎ খাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করেন। (৩) সদস্যদের পরিবারের ৬ বছর ও ততোধিক বয়সের ছেলে-মেয়ে যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে স্কুলে যেতে সক্ষম তারা সবাই লেখাপড়া করেন। (৪) সদস্য নিজ আয় থেকে সাপ্তাহিক ২০০/- (দুইশত) টাকা বা তার বেশি কিস্তি প্রদান করেন। (৫) পরিবারের সকল সদস্য স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করেন। (৬) পরিবারের সদস্যদের নিত্য ব্যবহার্য কাপড়-চোপড় আছে। শীত নিবারণের জন্য শীতবস্ত্র যেমনঃ কাঁথা, চাদর, সুয়েটার, লেপ, কম্বল ইত্যাদি এবং মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করার জন্য মশারি আছে। (৭) সদস্যদের সংসারের উন্নতির জন্য বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা থাকা, যেমনঃ বাড়ির আঙ্গিনায় শাক সব্জি চাষ, গাছ লাগানো ইত্যাদি। যাতে করে সদস্যগণ বাড়তি আয় থেকে কিস্তি পরিশোধের সুযোগ পান। (৮) ব্যাংকে গড়ে বছরে অন্ততঃ ৫০০০/- টাকা সঞ্চয় জমা থাকে। (৯) পরিবারের সদস্যদের সারা বছর ধরে তিন বেলা খাওয়ার সামর্থ্য রয়েছে অর্থাৎ পরিবারে কোন খাদ্যাভাব নেই। (১০) পরিবারের সদস্যগণ স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন। পরিবারের কেউ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে সাথে সাথে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়াসহ চিকিৎসা খরচ নির্বাহ করার সামর্থ্য রয়েছে।
দারিদ্র্যমুক্ত অবস্থা নির্ণয়ে ড. ইউনূস চিহ্ণিত গ্রামভিত্তিক জীবনযাত্রার মাননির্ভর এই নির্ধারকগুলো পড়ে চমকে ওঠি অমর্ত্য সেনের দারিদ্র্য নিরূপণ বিষয়ক বর্তমান ধারণার সাথে মিলিয়ে ! আর অনভিজ্ঞ চিন্তাচ্ছন্নতার মধ্যেও কেন যেন মনে হচ্ছে, পরস্পর ভিন্নমেরুর হলেও দারিদ্র্যকে চিহ্ণিত করার ক্ষেত্রে দু’জনের মধ্যে কোথায় যেন একটা অদ্ভুত মিল বা গভীর সামঞ্জস্য রয়ে গেছে। ভিন্ন স্রোতের অভিন্ন সঙ্গমে এসে খাপে খাপে মিলে যায় যেন ! আমার অস্বচ্ছ ধারণা দিয়ে তা প্রকাশ বা ব্যাখ্যা করতে আপাত অক্ষম হলেও ঘুরেফিরে যে বোধটা বারবার এসে ভেতরে নাড়া দিয়ে যায়, তা হলো- সত্যিই, গ্রেট ম্যান থিঙ্ক এলাইক…!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ৯:১৬