আহা জীবন ভ্রাম্য জীবন। ০১।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
প্রতিদিনের প্রাত্যহিকতাগুলো মেনেও রোজ সকালে অফিসের পথে বেরিয়ে আরেকটা যে কাজ প্রতি কর্মদিবসেই করতে হয় আমাকে তা হচ্ছে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় এসে হাতটা উঠিয়ে অহেতুক নাকটাকে চেপে ধরে ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের স্বাভাবিকতাটুকু কিছু সময়ের জন্য রুদ্ধ করে রাখা। কেন ? কারণ রাস্তাটার প্রায় আধেক অংশ জুড়ে যে বড় ডাস্টবিনটাতে এলাকার সব বর্জ্য ও আবর্জনা এসে জমা হয়, তার তীব্র দুর্গন্ধ জায়গাটাকে সাংঘাতিক ভারী করে রাখে। তাই এ জায়গাতে এসে সব পথচারীরাই হেঁটে কিংবা রিক্সায় যেভাবেই যান না কেন, দম বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে পেরিয়ে যাবার তাড়নায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু এক দমে কখনোই পেরনো সম্ভব হয় না কারোরই। তাড়া থাকলে যা হয়, সবাই একযোগে একই কাজে হামলে পড়ে মূলত স্বাভাবিক অবস্থাটাকে অস্বাভাবিক করে রীতিমতো একটা জট পাকিয়ে তুলি আমরা। ভ্রু কুঞ্চিত, নাসিকা বিকৃত এবং চোখে মুখে বিরক্তির বেসামাল ভাব ধরে আমরা যা করি তা মূলত এক ধরনের বিচ্ছিন্নতাবোধে আক্রান্ত হওয়া। অর্থাৎ তখন আর সামাজিক মানুষ থাকি না আমরা। আমাদের অজান্তেই আমরা প্রচণ্ড এক আত্মকেন্দ্রিকতায় আবদ্ধ হয়ে যাই।
সামাজিক প্রাণী হিসেবে আমরা কেউ কি কখনো খেয়াল করেছি যে ওইটুকু দূরত্বের মধ্যে আমাদের কারো মুখে কোন হাসি থাকে না ? কার আগে কে জায়গাটা পেরিয়ে যেতে পারি সেই এককেন্দ্রিক বোধে আমরা একেকটা স্বার্থপর প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়ে যাই। সেই কয়েক মুহূর্তের জন্য বন্ধুতা, ভ্রাতৃত্ব, সামাজিক রুচি প্রকাশ কিংবা পরহিতব্রতীতার মতো ইতিবাচক অন্য গুণগুলো (আদৌ যদি তা আমাদের মধ্যে থেকে থাকে বা আরোপিত হয়) দূরে দাঁড়িয়ে হয়তো আমাদেরকে ব্যঙ্গ করতে থাকে। অভ্যস্ত স্বাভাবিকতার বাইরে এই যে মুহূর্তের জন্য আমাদের ভিন্ন প্রেক্ষাপট ফুটে ওঠতে থাকে, এটাই কি আমাদের প্রকৃত চেহারা !
নইলে পেটের দায়ে কর্তব্যরত পরিচ্ছন্নকর্মী নামের যে লোকগুলো এই তীব্র দুর্গন্ধময় অস্বস্তিকর আবহের মধ্যে কোদাল বা বেলচা দিয়ে নির্বিকারভাবে ময়লা আবর্জনাগুলোকে জড়ো করে বিরাট ভ্রাম্যমান ডাস্টবিনটার মধ্যে পুরতে থাকে, তাদের প্রতিই কি আমরা আমাদের বিরক্তিটা বিভিন্নভাবে প্রকাশ করি না ? আমরা হয়তো তা করতেই পারি। কেননা এমন ভদ্রজনোচিত বিরক্তি প্রকাশের অধিকার যে আমাদের ভদ্রলোকদেরই আয়ত্তে ! কিন্তু ক’জনে আমরা এটা ভাবি যে, পেটের দায়ে আরো কতো কাজই তো মানুষ করে। এই ঘৃণ্য কাজটা ছাড়া এরা কি অন্য কোন কাজ বেছে নিতে পারলো না ? আমরা যারা এরকম ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি তাঁরা হয়তো এটা কখনো ভাবি না যে, যদি এরকম সময় কখনো এসেই পড়ে যখন এই পরিচ্ছন্ন কর্মীরা এ কাজটাকে সত্যি সত্যি ঘৃণ্য ভেবে একযোগে কর্মবিরতি দিয়ে অন্য কাজে পেটের দায় মেটাতে উদ্যোগী হয়ে ওঠে, ফিটফাট ভদ্রলোক আমাদের কী গতি হবে তখন ?
(১৮-০৩-২০০৯)
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ভারতীয় পতাকার অবমাননা
বাংলাদেশের ২/১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় পতাকার অবমাননা আমার কাছে ছেলেমী মনে হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রচন্ড রকমের ভারত বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে।
কিন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভিসা বন্ধ করায় ভারতকে ধন্যবাদ।
ভারত ইদানীং ভিসা দিচ্ছেনা; তারা ভিসা না দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিতে চায়! তাদের করদ রাজ্য হাতছাড় হওয়া খুবই নাখোশ, এতোই নাখোশ যে মোদী মিডিয়া দিনরাত বয়ান দিচ্ছে এই দেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতের চিকিৎসা বয়কট এবং
ভারতের এক হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কোন রুগিকে তারা চিকিৎসা দিবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে হাসপাতাল থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ
চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র করেছে।
সোমবার... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে তবে............
শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন