ঈদের কেবল্ টিভির ডিশ লাইন ব্যবসা বনাম নৈতিকতা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আজ ঈদের ঠিক আগের দিনটাতে টিভির কেবল্ লাইনটা হঠাৎ অফ হয়ে গেলো। টিভি অন করতেই মনিটরে শুধু ঝিরঝিরি। হয়তো সাময়িক যান্ত্রিক ত্রুটি হবে ভেবে গা করি নি। তা ছাড়া এমনিতেই আমি লেখালেখি আর কম্পিউটার নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকি যে টিভির সামনে খুব একটা বসা হয় না। তাই কোন্ চ্যানেলে কবে কী অনুষ্ঠান এসব সূচিটুচিরও ধার ধারি না। হঠাৎ করে রিমোট হাতে নিয়ে এতোগুলো চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ভালো কোন অনুষ্ঠান খোঁজার বিরক্তির চেয়ে বিজ্ঞাপন আর ভাঁড়ামোর বিড়ম্বনা আরো বেশি। তা ছাড়া জেন্যুইন দর্শক যিনি, বাচ্চার স্কুল বন্ধের সুবর্ণ সুযোগটাকে যথোপযুক্ত কাজে লাগানোর মহতি ইচ্ছা নিয়ে নাইওরী হয়েছেন। অতএব আমার তো টিভিমুখো হবারই কথা না।
কিন্তু ঈদের লম্বা বন্ধের সুযোগে চাকুরেরা যখন পইপোটলাসহ ঢাকা ছেড়ে বাড়িঘরমুখো হচ্ছেন, ছোট্ট ভাইটা সে সুযোগে উল্টো ঢাকামুখি। গতকাল এসে হাজির। বাড়ির হাউকাউ গইগ্যাঞ্জামের চেয়ে ঢাকাতে ক’টা দিন নিরিবিলিতে ঈদের স্পেশাল অনুষ্ঠানগুলো তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা যাবে। আর ফাঁকে ফাঁকে ফাঁকা হয়ে যাওয়া ঢাকা শহরটাকে নিরুপদ্রবে ইচ্ছেখুশি ঘুরে ঘুরে দেখা যাবে। কিন্তু প্রথম পরিকল্পনাতেই ধাক্কা খেয়ে ভাই আমার রীতিমতো তটস্থ। আট ঘণ্টা পেরিয়ে গেলো লাইন তো ঠিক হচ্ছে না !
এমন নয় যে বিল বাকি। সংশ্লিষ্ট মাসের ডিশের বিল কেবল অপারেটররা শুরুতেই অগ্রীম নিয়ে যায়। অতএব বিষয়টা কী তা বোঝার জন্য আশেপাশের ফ্ল্যাটগুলোতে খোঁজ খবর নিতে লাগলাম। খুবই পরিতাপের বিষয়, আমাদের পুরনো লাইনের সব গ্রাহকরাই বুড়ো আঙুল চুষছেন। অথচ নতুন চালু হওয়া সেদিনের অপারেটর লাইনটা ঠিকই বহাল তবিয়তে চালু এবং আগের চাইতেও নাকি রঙ বেশি ছড়াচ্ছে। আহারে, নতুন চালু করার সময় কতো সুযোগ সুবিধা অফার করেছিলো এরা ! তখন কেন যে লাইনটা পাল্টালাম না ! আফসোস হচ্ছে। আমাদের অপারেটরের নম্বরে মোবাইল কল করছি, লাইন বিজি এবং রিং বাজলেও ফোন ধরছে না। বিষয় কী ? শেষপর্যন্ত সন্ধ্যের পর বাসা থেকে বেরোলাম। বেশ কিছুদূর হেঁটে তাদের অফিসে গিয়ে দেখি দোকানের সাটার নামানো এবং প্রতিটা পয়েণ্টে ইয়া বড়ো বড়ো তালা ! মাথাটা উষ্ণ হয়ে উঠছে। আশেপাশের দোকানগুলোতে খোঁজ নিলাম, এরা কোথায় ? গতকাল থেকে কর্মচারিদের ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে, তাই কেউ নেই।
নেই মানে ! আমি তো রীতিমতো হতবাক ! আসার পথেই তো অন্য কেবল অপারেটরদের অফিসগুলো খোলা এবং সক্রিয় দেখে এলাম। অথচ এদেরটা বন্ধ ! কিছুতেই হিসাব মিলছে না। এখন এই ঈদের তুমুল সময়টাতে এসে যখন তাদের সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয়তা সেনসেটিভলি খুব গুরুত্ব দাবি করছে, তখনই কিনা এরা নেই ! এ কেমন এদের ব্যবসা, আর কী রকমই বা এদের ব্যবসা পলিসি, বুঝতে পারছি না। তাদের পরিচালকের নম্বরেও বারবার রিং করলাম। শুধুই নো আনসার !
ব্যর্থ অসন্তোষ নিয়ে ফিরে এসে দেখি বাসার সামনে হল্লা। সামনের লাইটপোস্টের গায়ে মই লাগানো। শহরের ডিশ লাইন সরবরাহ ব্যবস্থাটা রাস্তার লাইট পোস্টগুলোকে অবলম্বন করে গড়ে উঠা বলে মোড়ে মোড়ে লাইট পোস্টের গায়ে কেবলের কম্বাইন্ড সংযোগ পয়েণ্ট তৈরি করা। আমার বাসার সামনেও তা-ই। মইয়ের চূঁড়ায় দাঁড়িয়ে কর্মরত লোকটিকে ভেতরে ভেতরে বহু আশা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আপনি কোন লাইনের লোক ? নীচে দাঁড়ানো অন্য একজন আবছা আলো থেকে জবাব দিলো, আমরা ... ... কেবলের। মানে আমাদেরটা নয় ! আবারো আশাহত হলাম। অথচ এই এরা যখন নতুন লাইন বসায়, আকর্ষণীয় সুযোগ ও রেট অফার করলেও পুরনো লাইনটা পাল্টাই নি শুধু নৈতিকতা নামের কী অদ্ভুত একটা বিষয়কে মাথায় রেখে ! চলমান লাইনে যেহেতু কোন সমস্যা নেই, কোন অজুহাত ছাড়াই পুরনোদের সাথে কোনরূপ জয়জিজ্ঞাসা না করে হুট করে লাইন পাল্টে নেয়াটা তখন আমার কাছে খুবই অনৈতিক মনে হয়েছিলো। এখনো যখন খুব যুক্তিসঙ্গতভাবেই আশেপাশের ফ্ল্যাটের লোকজন ঝটপট নিজেদের লাইনগুলো পাল্টে নতুন লাইনের সংযোগ দিয়ে টিভিগুলো সচল করে নিচ্ছে, আমাকেও করে দেবে কিনা জানতে চাইলে এবারও আমি ইতিবাচক কোন সাড়া দিতে পারলাম না। বললাম, আগে তাদের সাথে আলোচনা করে না নেয়াটা অনৈতিক হয়ে যায় না ?
থাকেন আপনার নৈতিকতা নিয়ে, বলেই লোকগুলো চলে গেলো।
আমি বিষণ্ন মনে ঘরে ফিরে এলাম। নীরব ছোট্ট খালি বাসায় হাসিখুশিপ্রিয় ভাইটির মুখে রাজ্যের হতাশা।
একটা মাসের রোজার সংযম শেষে আগামীকাল পবিত্র ঈদ। চারদিকে আনন্দের কোলাহল। ছোট ভাইটার জন্য জমে উঠা কষ্টটা বুকে চেপে দোতলার বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। কাচের জানলা ডিঙিয়ে এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে পাশের ফ্ল্যাটের টিভিটাতে সচল রঙের ঝলকানি। ফ্ল্যাটের ভদ্রলোকও, যিনি একটু আগেই লাইন পরিবর্তন করিয়েছেন, বোধ করি তাঁর বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তিনি আমাকেই পর্যবেক্ষণ করছেন। চোখে চোখ পড়তেই বিজয়ীর মতো একটা অচেনা হাসি ছুঁড়ে দিয়ে রুমে ঢুকে গেলেন। আর আমি তখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই হাসির অর্থ উদ্ধারের কসরত করে যাচ্ছি...।
(০১/১০/২০০৮)
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন
নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন
দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।