somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাথিং ইজ সামথিং বাট সামথিং ইজ নাথিং... !

১৭ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানুষের ব্যস্ততা দু’ধরনের। হয় বিজি ফর সামথিং, নয়তো বিজি ফর নাথিং। কাজের ভিন্নতা থাকতেই পারে। কিন্তু ইংরেজি ভাষায় সামথিং এবং নাথিং এই শব্দ দুটোকে বেশ ঘোরালো বলেই মনে হয় আমার কাছে। কীভাবে ? সেটাই বলছি।

সামথিং মানে কী ? যদি হয় কোনো কিছু বা বিশেষ কিছু, সেই বিশেষ কিছুটা কী, তা কিন্তু নির্দেশ করে না। বরং একটা দার্শনিক বিভ্রম জড়িয়ে থাকে শব্দটার মধ্যে। আসলেই কি কিছু ? কী সেটা ? জগতের অনন্ত সম্ভাবনার সম্ভাব্য যে কোনো কিছুই হতে পারে। এই হতে পারে মানে, হতে পারে। অর্থাৎ সন্দেহ ! কোনটা ফেলে কোনটা ; একটা ধারণাগত অনিশ্চয়তার মধ্যে ঘুরপাক খেতে খেতে শেষ পর্যন্ত একটা সন্দেহমূলক অনিশ্চয়তাবাচক শব্দ হিসেবেই সামথিং শব্দটা চিহ্ণিত হয়ে পড়ে। তাছাড়া মানুষের সামর্থগত সীমাবদ্ধতার বিষয়টাকে বিবেচনায় রাখলে এটা তো সত্য যে, একজন মানুষ অভিন্ন স্থান কাল পাত্রগত অবস্থায় জাগতিক সমস্ত সম্ভাবনার মধ্যে একই সময়ে একইভাবে অবস্থান করতে পারে না। তা একান্তই অসম্ভব এবং কাল্পনিক। তাহলে সামথিং এর মানে কী দাঁড়ালো ? একটা অনিশ্চিৎ সম্ভাব্যতা, যা হতেও পারে, না-ও হতে পারে। এই হতে পারাটা কী ? যতক্ষণ পর্যন্ত ‘কী’ শব্দটি সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্ণিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই ‘কী’ মানে কিছুই না। অর্থাৎ নাথিং !

অন্যদিকে নাথিং শব্দটি কিন্তু পুরোপুরি নির্দিষ্টবাচক, মানে কিছুই না। এখানে সন্দেহের কোনো অবকাশই নেই। সমস্ত সম্ভাবনার অবস্থান বা অস্থিত্বকে সরাসরি অস্বীকার করা হয়েছে। ‘হতে পারে’ বলতে এখানে কিছু নেই। আসলে কি তাই ? এখন প্রশ্ন, মানুষ বা এই চরাচর বিশ্বে বস্তুগত বা ধারণাগত যেভাবেই হোক, কোন সম্ভাবনাহীন পরিপূর্ণ শূন্যাবস্থা থাকা কি সম্ভব ? ধারণাগতভাবে কোন সম্ভাবনাহীন শূন্যাবস্থার অস্তিত্ব থাকার সত্যতা মেনে নিলে আমাদের এই সৃষ্টিজগতের অস্তিত্বটাকে কি অস্বীকার করতে হয় না ? তাহলে নাথিং মানে কী দাঁড়ালো ? সত্যি সত্যিই অস্তিত্বহীন ‘কিছুই না’ ? না কি কোন সম্ভাবনা সৃষ্টির পূর্বের স্থিতাবস্থাকে বুঝাবে ? ধারণাগতভাবে দ্বিতীয়টাই সম্ভব। এর অর্থ কিছু একটা হবার সম্ভাবনা। মানে সামথিং !

এটা যুক্তিবিদ্যার ফ্যালাসি নয়। তবু সামগ্রিকভাবে কী দাঁড়ালো বিষয়টা ? যদি এভাবে বলি, নাথিং ইজ সামথিং, বাট সামথিং ইজ নাথিং ! তাহলে কি ভুল হবে ?

এখানে বলে রাখা ভালো, আমি কোন দর্শনের ছাত্র নই। তারপরেও মাঝেমধ্যে এই দর্শনের হামলায় এমনই নাজেহাল অবস্থায় পড়ে যাই যে, ইদানিং দর্শনের নাম শুনলেই রীতিমতো আঁতকে ওঠি ! এবং কীভাবে তা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা যায় তার উপায় হিসেবে সব সময় একটা না একটা ব্যস্ততার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতেই সচেষ্ট থাকি। যাতে দর্শন বাবাজী সহজে আর এমুখো না হতে পারে। কিন্তু যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত ! হাহ্ ! পেছনের যমের তাড়া খেয়ে পালিয়ে লুকোলাম এসে সেই যমের ঘরে !

নাহ্, কিছুতেই আর দর্শন নয়। তারচে’ সোজা নিজের অভিজ্ঞতার মধ্যেই ডুব দেই এবার।

সেদিন চেয়ারটায় চিৎ হয়ে প্রায়, নতুন কোন কবিতার ভাবদশায় কী এক গভীর মগ্নতায় ডুবে হয়তো অনেকক্ষণ যাবৎই দূর আকাশের দিকে চেয়ে আছি। আসলে কি চেয়ে ছিলাম ? কী ব্যাপার, চেয়ারের মধ্যে এমন কষ্ট না করে বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে নিলেই তো পারো ! আমার অর্ধাঙ্গিনী স্ত্রীর মাস্টারনীসুলভ এমন কটাক্ষে একটু নড়েচড়ে বসলাম। অতিশয় গৃহস্থ এবং সংসারীটাইপ সুখী আত্মীয় স্বজনের ভীড়ে এমন আহাম্মক ও অপদার্থ স্বামী পাবার দুর্ভাগা রমণী আমার স্ত্রী কখন যে আমাকে কাজে দেখতে ভালোবাসেন, আর কখন যে কাজে দেখতে ভালোবাসেন না, বিগত এক দাম্পত্য-দশকেও তা বুঝে ওঠতে পারলাম না। আর আমার কাজ মানে যে কী, এটার ব্যাখ্যা দিতে গেলে ফের দর্শনাক্রান্ত হবার আশঙ্কাই প্রবল। তাই সে দিকে না গিয়ে এক কথায় বললে, আমার কাজ মানেই তো এককালের কাগজ কলম আর ইদানিং পিসি’র কীবোর্ডে হাত রেখে গুঁজো হয়ে টেবিলে বসে থাকা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ! তাও না হয় হলো। তবু বেকার চোখ দুটোকে তাঁর ওই বহুবর্ণীল শ্রীমুখে ফেলে রাখলেও কথা ছিলো। কিন্তু তা যদি পড়ে থাকে জানলা গলে ঐ বিশ্রী রাস্তাটায় চড়ে বেড়ানো যতো সব গরু ছাগল কুকুর বেড়াল আর লাইটপোস্টে ঝুলে থাকা কাক বা বাদুড়ের বীভৎস শরীরের উপর, তাহলে কোন্ রমণী সেটা সহ্য করবে ?

অতএব এরকম সম্ভ্রান্ত কুঁড়ে স্বভাব নিয়ে অসহ্য স্বামীটি ছুটির দিনের মূলকর্ম ঘুম বাদ দিয়ে চেয়ারের মধ্যে এমন আহাম্মকের মতো ঝিমুচ্ছে, আর ঘর গোছানোর কথা বললে ব্যস্ত আছি বলে নতুন্ ভাব ধরছে, এটা কি নিশ্চিতভাবেই নিকম্ম স্বভাবের আরো স্খলন নয় ? আমি ভাবি, আসলেই তো ! আমি কি করছিলাম কিছু ? দৃশ্যমান কিছু তো নয় অবশ্যই। তবে মাথার ভেতরে যে সেই সৃষ্টির শূন্যতা ভাঙার খেলাটা চলছিলো ঠিকই, তা আমি বুঝাই কী করে ? যার কোন আকার নেই, হয়তো বিকার আছে, অন্তর্গত, কিন্তু ব্যাখ্যা নেই। কোনো ইন্দ্রীয়গ্রাহ্যতা তো নেই-ই। এটা কি কোন কাজ ?

গণিত না কি পদার্থবিদ্যার কোনো এক ভাইভার ধাঁ-ধাঁয় প্রশ্ন করা হলো, বলো তো দেখি, তুমি দেড়মণ বোঝা মাথায় নিয়ে না থেমে সোজা তিনশ’ গজ হেঁটে গেলে একই গতিতে ; কতটুকু কাজ করলে ? ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যাওয়া এতো বড় একটা কাজের উত্তরের বিপরীতে কী নৃশংস মন্তব্য, কোন কাজই হয় নি ! বলে কী ! এটা কীভাবে হয় ? কাজের সূত্র টেনে কী যেন এক ব্যাখ্যা দাঁড় করানো হলো। ভরবেগ না বল বা দূরত্বের রাশির সাথে গুণন অবস্থায় সাইন থিটা না কস থিটার মান নব্বই ডিগ্রী অনুযায়ী শূন্য হয়ে যাওয়ায় শূন্যগুণফলের ঠেলায় কাজের মোট ফলাফলও শূন্য ! বিজ্ঞানীদেরকে পাগল কি আর এমনি বলে ! মুটের মাথায় বোঝা চাপিয়ে বাসার গেইটে গিয়ে যদি বলি পদার্থবিদ্যার সূত্র অনুযায়ী তুমি তো ভাই কোন কাজ করো নি, কাজ সমান শূন্য, হাঁড়গোড় একটাও কি আস্ত থাকবে ? তারচে’ও ভয়ঙ্কর কথা হলো এতোবড়ো সংসারটাকে মাথায় নিয়ে আমার করিৎকর্মা স্ত্রী যে এই অনিশ্চিৎ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েও ফিজিক্সের সূত্র অনুযায়ী তাঁর কাজের ভয়াবহ শূন্যমানের ফলাফলটি জানবেন, এতে করে যে ধ্বংসের দাবানলটি জ্বলে ওঠবে সংসারে, তা কি স্বয়ং স্রষ্টা এসেও নেভাতে পারবেন ?

অতএব অবিরাম ঝিমুতে থাকা আমার মাথার ভেতরে যখন সেই কবিতার জন্মপূর্ব অসহ্য কষ্টকর আদি খেলাটা চলছিলো, ওটা কি কোনো কাজ ? নাথিং না সামথিং ছিলো, তা নির্ধারণ আমার কর্ম নয়। এবং পরবর্তীতে আচমকা গা-ঝাড়া কী বোর্ডে ঝড় তুলে একেবারে কষ্টহীন এক আনন্দস্রোতে কবিতার যে দেহবল্লরী ভেসে ওঠলো নিমেষে, এটাই বা কেমন কাজ ?

এসব ভাবতে ভাবতে কখনো কেউ যদি হঠাৎ দেখতে পায় আমাদের চেনা চেন চেহারার শ্মশ্রুগুম্ফমণ্ডিত মুখে উপরদেশ খোলা কেউ ভ্রুক্ষেপহীন হাঁটছেন আর হাঁটছেন, আর বিড়বিড় করে কী যেন বলছেন- “নাথিং ইজ সামথিং বাট সামথিং ইজ নাথিং ! মানে ? ঘোড়াড্ডিম !”

আমরা কি তাঁকে অপ্রকৃতিস্থ বলবো ?
(১৩/০৮/২০০৮)
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা
March for Gaza | ঢাকা | ২০২৫

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
আল্লাহর নামে শুরু করছি
যিনি পরাক্রমশালী, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী,
যিনি মজলুমের পাশে থাকেন, আর জালেমের পরিণতি নির্ধারণ করেন।

আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা—যারা জুলুমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডক্টর ইউনুস জনপ্রিয় হয়ে থাকলে দ্রুত নির্বাচনে সমস্যা কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪১



অনেকেই ডক্টর ইউনুসের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা বলছেন। এর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় নির্বাচন। আদালত যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহাল করেছে সেহেতু ডক্টর ইউনুস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডিসেম্বরে নির্বাচন : সংস্কার কাজ এগিয়ে আনার পরামর্শ প্রধান উপদেষ্টার

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪৯


ড. ইউনূস সাহবে কে বুঝি পাঁচবছর আর রাখা যাচ্ছে না। আজ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সাথে মত-বিনিময়ের সময় ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন কে সামনে রেখে তিনি দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কারের এগিয়ে আনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার দিনগুলি আর ফিরবে নারে

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:১৮

কোনো কোনো গল্প, কবিতা কিংবা গান সৃষ্টির পর মনে হয়, এটাই আমার সেরা সৃষ্টি। আমার এ গানটি শেষ করার পরও এমন মনে হলো। এবং মনে হলো, আমি বোধ হয় এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়ের কাছে প্রথম চিঠি

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪

Ex-Cadets Literary Society নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে, আমি যার সদস্য। এই গ্রুপে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বনামধন্য লেখক ও এক্স-ক্যাডেট শাকুর মজিদ একটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে ক্যাডেট কলেজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×