তারিখ: নেই (অনুমান এপ্রিল,১৯৯৩)
মানুষ বুঝি জন্মগতভাবেই স্বার্থপর হয়, রূপা ? যুবকটি তো বটেই। নাস্তিক্য দর্শনে বিশ্বাসী এই যুবক ধর্মতত্ত্বের অনেক কিছুই একবাক্যে মেনে নিতে পারে না। ভাবের গভীরতাকে খাটো না করেও সে কথিত নিষ্কাম-কর্মে একাত্ম হতে পারে না। এটাই কি যৌবনের ধর্ম ?
‘ফলের আশা না করে কাজ করে যাওয়া’-এর সাথে এখনো আমি একমত নই। এটা যে কী ধরনের কর্ম, তা আমার অগভীর উপলব্ধিতে আসে না। অনুভবে যা আসে তা এতো ভয়ঙ্কর মনে হয় যে, মরে গেলেও আমি তা নিজের জন্য মানতে পারবো না। আমার কল্পনার বাইরে উঁচুদরের কেউ পারেন কি না আমার জানা নেই ; ঐ যুবকও জানে না। ঈশ্বরের চরণ বন্দনায় সরলমনা ভক্তরা সর্বস্ব বিলিয়ে দেন- এটা কী ধরনের নিষ্কাম কর্ম, যুবকের সরল চিন্তায় আসে না। তাইলে এক বুক ভালোবাসার বিনিময়ে যুবকটি যে তার প্রেমাস্পদকে পেতে চায়, ওটা কী ধরনের কর্ম হবে ? লক্ষ্যবিহীন কৃতকর্মের অনুপ্রেরণা বা শক্তির উৎস কোথায় থাকে ? না এড়িয়ে এর উত্তর কে দেবে ? রূপা, তুমিই বলো তো, গন্তব্যহীন পথ চলা ভবঘুরেমি নয় কি ?
ইহজগতে কে কবে প্রিয়জনকে কামনা না করে ভালোবেসেছে ? সাফল্য ব্যর্থতা সে তো পরের কথা। আর পরজগতের অতিকল্পনায় বুঁদে থাকা আমার কর্ম নয়। মিথ-সদৃশ এমন কল্পনার যৌক্তিকতার সামাজিক প্রয়োজন হয়তো অস্বীকার করি না, তবে চূড়ান্ত দৃষ্টিতে তা পুরোপুরি অলীক নয় কি ? তত্ত্বের কচকচানি পণ্ডিতের কাজ বটে ; কিন্তু হৃদয়ের কারবারে এদের স্থান কোথায়।
তাই রূপা, অতীন্দ্রীয়রূপে নয়, ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য তোমাকেই চাই আমি। আমাকেও তেমনি করে ডেকো।
‘লগা নহ্ দিলকো কহীঁ, কেয়া সুনা নহীঁ তুনে
জো কুছ কেহ্ মীর কা ইস্ আশিকীনে হাল কিয়া ?’
(মন দিও না কাউকে, তুমি কি শোন নি- প্রেমে পড়ে মীরের কী দশাটা হলো ?)... মীর তকী মীর।
চলবে...
আগের পর্ব (১৬): Click This Link
পরের পর্ব (১৮): Click This Link