তারিখ: নেই (অনুমান এপ্রিল,১৯৯৩)
রূপা, বড় বিচিত্র আমাদের এই সমাজ। এখানে মনের চেয়ে মুদ্রা মূল্যবান, সামাজিক স্বীকৃতির কাছে মনের বন্ধন একেবারেই মূল্যহীন। বাহ্যিক প্রাচুর্য আর অবস্থানের সন্তুটি সামাজিক এককে চেতনে অবচেতনে এমন জাঁকিয়ে বসা যে, হৃদয়-সচেতন দুজন নর-নারীর ভালোবাসার সম্পর্ক রীতিমতো নিষিদ্ধতার অপরাধে অভিযুক্ত হয়। এই বাসযোগ্যহীন প্রতিবেশেই রবিঠাকুর আমাকে আশ্রয় দেন-
‘আমি তোমার প্রেমে হবো সবার কলঙ্কভাগী
আমি সকল দাগে হবো দাগী কলঙ্কভাগী...’
এভাবেই এই প্রশ্নবোধক কদর্য সভ্যতার রুক্ষ মাটির নীচে প্রেমের ফল্গুধারা চিরদিন বয়ে চলে। ভালোবাসার অমিয়ধারায় যুগে যুগে প্রেমিকেরা হয়ে ওঠে উজ্জীবিত। তাইতো সাহসী কণ্ঠের অমর উচ্চারণ-
‘আমার একদিকে শুধু তুমি, পৃথিবী অন্যদিকে
একদিকে মাটির প্রদীপ, সূর্যটা অন্যদিকে
আমি তোমারই দিকটাই নিলাম... ।’
‘কুৎসিত মুখ কুৎসিত মনের চেয়ে অনেক অনেক ভালো।’- কে যেনো বলেছিলেন। ‘সভ্যতার এই অশ্লীল বাতাসে’ আমিও হয়তো কালিমামুক্ত থাকি নি। মুখ আমার দেখতে যতোই কুৎসিত হোক, মনটা হয়তো এতো কুৎসিত নয় রূপা, তোমাকে কী করে বুঝাবো বলো। সাথি হবার আহ্বান কি গ্রহণ করবে না তুমি ? ক্ষুন্নিবৃত্তির চাহিদা কতোটা মেটাতে পারবো জানি না, কিন্তু এই বুক ভরা ভালোবাসা, তোমারই জন্যে।
সমস্ত পৃথিবী বিরুদ্ধে গেলেও তুমি শুধু জড়িয়ে রেখো আমাকে নিবিড় করে !
‘বুৎকদহ্ মেঁ মানীকা কিসসে করে সওয়াল
আদম নহীঁ হ্যয়, সূরৎ-এ আদম বহুৎ হ্যয় য়াঁ।’
(এই মাটির পুতুলের রাজ্যে কার কাছে বিশ্বরহস্যের অর্থ শুধাবো ? এখানে মানুষ নেই, মনুষ্য আকারে অবশ্য আছে অনেকেই।)...- মীর তকী মীর।
চলবে...
আগের পর্ব (১৩): Click This Link
পরের পর্ব (১৫): Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০০৮ রাত ১১:১৪