তারিখ: নেই (অনুমান এপ্রিল,১৯৯৩)
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন- ‘ আবেগ ছাড়া কাজ, আর কাজ ছাড়া জীবন চলে না।’ এই আবেগই তো মানুষ আর যন্ত্রের মধ্যে সীমারেখা টানে। একমাত্র জড়বস্তুর আবেগ থাকতে নেই। জীবজগতে আবেগকে অস্বীকার করা মানে আপন অস্তিত্বকে অস্বীকার করা নয় কি ? অথচ মেয়েটি যখন ঐ যুবকের অন্তর থেকে বেরিয়ে আসা সত্যি কথাগুলোকে ভাবাবেগ বলে উড়িয়ে দেয়, কী যন্ত্রণায় যুবকটি যে তখন নিজকে অভিশাপে জর্জরিত করে কেন সে যন্ত্র হলো না বলে, তা-কি তুমি বুঝবে রূপা ? না কি এই যন্ত্রণাকেও ভাবাবেগ বলে উড়িয়ে দেবে ! তুমি উড়িয়ে দিলেও দিতে পারো, কিন্তু ঐ যুবক তা পারে না। কেননা সে যা বলে তা-ই বিশ্বাস করে, যা বিশ্বাস করে তা-ই বলে। এজন্যেই বোধ করি বিভিন্ন সময়ে চোখে পড়া অনেক বাক্যবন্ধকেই সে হেলা করতে পারে না, কুড়িয়ে রাখার চেষ্টা করে। এই যেমন-
‘প্রত্যেক মানুষেই আছে একজন আমি ; সেই অপরিমেয় রহস্যের অসীম মূল্য জোগায় ভালোবাসায়। অহঙ্কারের মেকি পয়সা তুচ্ছ হয়ে যায় এর কাছে। ওর নিখিল জগতের মর্মস্থান অধিকার করে আছি আমি, সেজন্যে আমাকে আর কিছু হতে হয়নি সাধারণ জগতের যে-কেউ হওয়া ছাড়া। সাধারণকেই অসাধারণ করে আবিষ্কার করে ভালোবাসা।’
- রবীন্দ্রনাথ (সানাই)-
মেয়েটির উদাসীনতা যখন খুব পীড়া দেয় যুবককে, তখন সে মরিয়া হয়ে এভাবেই সান্ত্বনা দেয় নিজকে-
‘ ব্যর্থ প্রেম বা ব্যর্থ প্রেমিক বলে কোনো কথা কখনও আছে বা ছিল বলে আমি বিশ্বাস করি না। প্রেম, সে যার প্রেমই হোক, সে যদি সত্যিকারের প্রেম হয় তা কখনই ব্যর্থ হয় না। প্রেমের সমস্ত সার্থকতা প্রেমাস্পদকে পাওয়ার মধ্যেই সীমিত নয়। তাকে পাওয়া যেতে পারে ; নাও যেতে পারে। প্রেমের সবচেয়ে বড় গৌরব প্রেমই। মানুষের জীবনে আর কোনো অনুভূতিই তাকে এমন এক আত্মিক উন্নতির চৌকাঠে এনে দাঁড় করায় না। যে ভালোবাসে সে নিজের অজানিতে কখন যে নিজের মনের আঁটসাঁট গরীব কাঠামোর চেয়ে অনেক বড় হয়ে যায়, সে নিজেও তা বুঝতে পারে না। অন্য কোনো অনুভূতিই তাকে এমন করে মহৎ, উদার ও উন্নত করে না। ভালো যে বাসে, সে ভালোবেসেই কৃতার্থ হয়; যাকে ভালোবাসে তার কৃপণতা বা উদারতার উপর তার ভালোবাসার সার্থকতা কখনও নির্ভরশীল হয় না।’
- বুদ্ধদেব গুহ (একটু উষ্ণতার জন্যে)-
রূপা, কথা ক’টা আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করি, একেবারে সমগ্র অস্তিত্ব দিয়ে। কিন্তু তোমাকে আমি পাবো না, এটা বিশ্বাস করতে হলে তার আগেই যেনো আমার মৃত্যু হয়। অন্তত এই দয়াটুকু কোরো তুমি। প্রাগুক্ত গ্রন্থকারের আরেকটি কথা ভেবে দেখো তুমি-
‘একদিন আমি, ... আমরা সকলে এবং প্রত্যেকেই এমনি নিঃসংশয় এক অস্তিত্বহীন অসহায়তায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো। অথচ কী আশ্চর্য ! যতদিন অস্তিত্ব আছে এবং থাকে ততদিন এই অমোঘ অস্তিত্বহীনতার কথা আমাদের কারোই একবারও মনে হবে না।’
এখানে অমোঘ মৃত্যুকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। রূপা, একটাই তো মাত্র জীবন আমাদের। চলো না, এই দুটি জীবনকে এক করে আমরা সার্থক ও পরিপূর্ণ করে তুলি এবং পরিপূর্ণ হয়ে যাই।
তুমি নাই ; বেঁচে থেকে এই অনুভূতি আমি চাই না, চাই না, চাই না !
চলবে...
আগের পর্ব (০৭): Click This Link
পরের পর্ব (০৯): Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০০৮ রাত ১২:১০