ওটা কি পানের খিলি !
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
যে যাই বলুন, মনের কথা বাদই দিলাম, বাঙালি সংস্কৃতির একটা মাত্র চিহ্ন যদি আমি শরীরে ধারণ করে থাকি, সেটা হচ্ছে পান। দাঁতের বিকট চেহারা দেখে শুভাকাঙ্খীরা আতকে উঠুক আর যাই করুক, অরিজিনাল হাকিমপুরী জর্দ্দা কড়া করে বাড়তি একটু চুন আর শুকনো সুপারি দিয়ে মচমচে খিলিটা মুখে পুরে রসিয়ে রসিয়ে মজানোর মধ্যে যে কী মাজেজা, যিনি এই রসে রসিক না হয়েছেন তাকে বুঝানোর চেষ্টাও বৃথা। অতএব আমার বন্ধুদের হৈ হৈ ফোড়ন কাটায় অতিষ্ঠ হলেও তাদের একটাই কথা, ধোপদুরস্ত পোশাকের সাথে এই গাবড়ের মতো পান চিবানো শুধু যে বেমানান তাই নয়, অসংস্কৃতও। আমি যতই যুক্তি ওঠাতে চাই, গণতন্ত্রের এই জয় জয়কারের যুগে একা আমি শেষ পর্যন্ত তাদের কাছে একাই।
কিন্তু দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণহীন পাগলা দৌঁড়ে পানের মাজেজা দ্বিগুন মূল্যে ঠেকবে এটাই স্বাভাবিক। এক মুঠো ভাতের জন্য আমাদের তথাকথিত সোনাবিছানো গ্রামগুলো থেকে দলে দলে ক্ষুধার্ত মানুষের মিছিল এই শহরকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ না করাতক আমাদের রাষ্ট্রপিতা পিতৃব্যরা হয়তো দেশে যে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে তা স্বীকার করবেন না। কিন্তু আমরা মধ্যবিত্ত পদবাচ্যের প্রাণীরা উভয় সঙ্কটের শ্যাম ছাড়ি না কূল ছাড়ি যাতাকলে অক্ষম ধুকে ধুকেও ওই সব ধেয়ে আসা ভিক্ষার হাতগুলোর লক্ষ্য থেকে কীভাবে সরাবো নিজেদের ? তাদের চেহারায় যে নিজেদের অবয়বই দেখতে পাই !
আশেপাশের অসম্ভব বেড়ে যাওয়া ভিক্ষুকদের গঞ্জনা সইতে সইতে আজও বন্ধুদের ঠোকাঠুকির মধ্যেই খিলিটা মুখে পুরেছি কেবল। কোত্থেকে বৃদ্ধ ভিক্ষুকটি আকস্মিক আমার সামনে এসে তার অসহায় ক্ষুধার্ত মুখে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলে ওঠলো- ‘বাবা, একটা পান খাবো!’ ভাতের তাড়নায় ক্ষুধার্ত পাকস্থলীর অসহ্য কষ্টের মধ্যে ভাত নয় রুটি নয়, পান খাবে ! চমকে তাকালাম বৃদ্ধের মুখের দিকে। শুকনো মুখে পানের লাল চিহ্ন পুরনো মেড়মেড়ে হয়ে আছে। আমি কি ভুল শুনলাম ? নিশ্চিৎ হতে চাইলাম। মুখে শব্দ করে বৃদ্ধ তার অবশিষ্ট শক্তিটুকু বুঝি আর খরচ করতে চাইলো না। অথবা সে শক্তিটুকুও অবশিষ্ট নেই হয়তো। ইঙ্গিতে টং দোকানের পানের থালাটা দেখিয়ে দিলো। আমার বন্ধুদের ফোড়ন কাটা মুখ ততক্ষনে নিঃশব্দ হা হয়ে গেছে। ভাতের বদলে পান ! ক’বেলা ভাত খায় না এই বৃদ্ধ ? এক খিলি পান দু’টাকা। পকেট থেকে এক টাকার দু’টো কয়েন দোকানদারকে দিয়ে আমি হাঁটা শুরু করলাম।
তৈরি হতে থাকা খিলিটার দিকে বৃদ্ধের বুবুক্ষু চোখ কী দেখছে তখন ! এক দলা ভাত ? এক টুকরো রুটি ? অথবা...? সে ভাষা আমার জানা নেই। জানার চেষ্টা না করেই হাঁটতে থাকলাম। না কি পালাচ্ছিলাম !!
(০৯/০৪/২০০৮)
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর


আলোচিত ব্লগ
শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা, লোভী এবং সাম্রাজ্যবাদীও বটে.....
শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা এবং লোভীও....
জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের হিংস্র ও আগ্রাসী। পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে চাওয়া এবং স্বাধীন থাকতে চাওয়া কিছু অঞ্চল যেমন হায়দ্রাবাদ, ত্রিবাংকুর, ভূপাল, যোধপুর, জুম্ম-কাশ্মীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গলা-বুক জ্বালা দেখে অম্বলের ওষুধ দিয়েছিলেন চিকিৎসক, চ্যাটজিপিটি ধরল ক্যানসার
ক্যানসার ধরল চ্যাটজিপিটি! চিকিৎসকেরা ভুল ওষুধ দিয়েছিলেন। তাতে অবস্থা আরও খারাপ হয় মহিলার। চ্যাটজিপিটিই বলে দেয়, কী রোগ বাসা বেঁধেছে তলে তলে। চিকিৎসকেরা ধরতেই পারেননি। কিন্তু চ্যাটজিপিটি... ...বাকিটুকু পড়ুন
২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র
২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন
শিক্ষকদের দ্বৈত চরিত্র এবং বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা!
বাংলাদেশে শিক্ষার মান নিয়ে সবার মুখে নানা রকম কথা শোনা যায় । কেউ কেউ বলছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি হচ্ছে , কেউ বলে দিন দিন তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। এপিআই প্ল্যান্ট
ওষুধে দুটো উপাদান থাকে। ওষুধের যে রাসায়নিক উপাদানটি মূলত রোগ সাড়ানোর কাজ করে, সেটিকে বলে এপিআই। দ্বিতীয় উপাদানটিকে সহকারি উপাদান বলে, যেমন— স্টার্চ, রং বা ফ্লেভার।
এপিআইয়ের... ...বাকিটুকু পড়ুন