শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুসংবাদ ছিল একটি দুঃস্বপ্ন
--------------------------------------- ড. রমিত আজাদ
তখন আমি নিতান্তই বালক। সকালের দিকে, ঘরের বাইরের মাঠটিতে বন্ধুদের সাথে খেলছিলাম। এসময় আমার চাইতে কিছুটা বড় একজন এসে বললেন, "জিয়া মারা গেছেন"। বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি, জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই উনাকে দেখে আসছি। নিজের চোখেও দেখেছি কয়েকবার। এই তো গত বছরই উনাকে দেখলাম ঢাকার স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোরদের সমাবেশে। সেই তিনি আর নেই! সকাল সকাল খেলার মাঠে এসে একজন সেই ভয়াবহ সংবাদ দিলো! নাহ্! বিশ্বাস করতে পারছি না। সন্দেহের চোখে একে অপরের দিকে তাকালাম। একজন উনাকে জিজ্ঞেস করলো, "কি বলিস ব্যাটা?"। উনি আরো জোর দিয়ে বললেন, "বললাম জিয়া মারা গেছেন।" ইতিমধ্যে অরো কয়েকজন জড়ো হয়ে গেছে। অনেকটাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় সবাই। এটা একটা সিরিয়াস নিউজ, কিন্তু কেউই এই নিউজটা একসেপ্ট করতে পারছে না। "কোথায় শুনলি?" আবারও একজন প্রশ্ন করলো। "রেডিওতে", উত্তর দিলেন তিনি। পাশেই উনার বাসা ছিলো, সবাই মিলে গেলাম উনার বাসায়। বারান্দায় উনার মা দাঁড়িয়ে ছিলেন। "খালাম্মা কি বলে আপনার ছেলে, জিয়াউর রহমান নাকি মারা গেছেন?" অনেকটা অভিযোগ, অনেকটা অবিশ্বাস আর অনেকটা আশংকা নিয়ে প্রশ্ন করলাম আমরা। "হ্যাঁ বাবারা আমিও রেডিওতে তাই শুনেছি, চিটাগাং-এ উনি মারা গেছেন", ধ্বক করে উঠলো আমাদের হৃদয়। উনার মৃত্যু সংবাদ কখনোই আশা করিনি। আর সেটাই শুনতে হলো। তার উপরে চিটাগাং, এই তো দুদিন আগেই শুনলাম, বঙ্গপোসাগরে তালপট্টি দ্বীপকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উত্তপ্ত হতে শুরু হয়েছে। বেশ কিছু ভারতীয় রণতরী বঙ্গপোসাগরে অবস্থান নিয়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের একজন বন্ধু ছুটে এলো, "হায় হায় হায়, জিয়া মারা গেছেন, জিয়া মারা গেছেন, চিটাগাং দখল হয়ে গেছে।"
সাথে সাথে সবাই ছুটলাম যার যার বাড়িতে। রেডিও শুনতে হবে। সত্য মিথ্যা জানতে হবে। কি হয়েছে? এখন দেশের কি হবে? বাড়ি গিয়ে সবাইকে বললাম, কেউ আমার কথা বিশ্বাস করে না। দেশ চলছে চমৎকার, কোন সংকট নেই, কোন সমস্যা নেই, কর্মচঞ্চল-উদ্যমী জিয়াউর রহমানকে তো গতকালও সুস্হ দেখলাম, হঠাৎ কি হলো? কেন তিনি মারা যাবেন। রেডিও খোলা হলো (তখন দিনের বেলায় টিভি চলতো না) আর যা শুনলাম তাতে সবাই হতবাক, কোন এক ঘোষক বলছেন "দেশবাসী, আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আজ ভোরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারীর হাতে নিহত হয়েছেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহে রাজিউন"। এর পরপরই শুরু হলো হামদ, 'আল্লাহু, আল্লাহু, আল্লাহু, আল্লাহ্, 'আল্লাহু, আল্লাহু, আল্লাহু, আল্লাহ্'।
শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়লো ঘরের সবাই। পাশাপাশি সবার মনে প্রশ্ন, কি হলো? কে উনাকে মারলো? কেন মারলো? আমি ছুটে বেরিয়ে গেলাম ঘর থেকে, জানতে চাই কি হলো, সবাই কি বলে। সবাই ততক্ষণে রাস্তায় নেমে এসেছে। সবার মুখেই একই ভাব একই কথা, শংকিত মুখে সবার মনেই প্রশ্ন, হায় হায়! কি হলো কি হলো? মুরুব্বীদের সবাইকে দেখলাম অফিস থেকে ফিরে আসছেন, অফিস-আদালত সব ছুটি হয়ে গেছে। একজন মুরুব্বীকে আসতে দেখে তার ছোট্ট মেয়ে ছুটে গেলো, "আব্বা, আব্বা, জিয়াউর রহমান মারা গেছেন"। ওর আব্বা উত্তরে বললো, "মারা যায়নি রে মা, মারা যায়নাই, মারছে মারছে, উনারে মারছে ।"
একটু এগিয়ে গেলে একটা রেশন দোকান ছিলো। ওখানে দেখলাম আমার গৃহশিক্ষক লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি স্যারকে সালাম দিয়ে বললাম, "স্যার, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তো মারা গেছেন।" উনি অনেকটা হতাশ কন্ঠে বললেন, "হ্যাঁ, তাইতো শুনলাম।" পাশ থেকে একজন বললো, "গেলো গেলো, এহন সবই গেলো, ভাতও গেলো, কাপড়ও গেলো।"
আজ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৩ তম শাহাদত দিবস। এইদিনে দেশপ্রেমিক এই মহান নেতা ও যোদ্ধার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
এই মহান দেশপ্রেমিককে নিয়ে আমি লিখেছি একটি ই-বুক - '১৯৮১ সালের ৩০শে মে, একটি নক্ষত্রের ঝরে পড়া, শোকে মূহ্যমান জাতি' । বইটির প্রকাশক সাকি বিল্লাহ্। প্রকাশনা সংস্থা ইজি পাবলিকেশন। নিচে বইটির লিংক দেয়া হলো।
http://allfreebd.com/dr-ramit-azad-ebooks/
পাঠকগণ পড়ে তাদের মতামত জানালে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুসংবাদ ছিল একটি দুঃস্বপ্ন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর


আলোচিত ব্লগ
প্রেমিকাকে বা বউকে প্রেম নিবেদনের জন্য সেরা গান
নীচের দেয়া গানটাতে হিন্দি, বাংলা, গুজরাটি, পাঞ্জাবী এবং ইংরেজি ভাষায় প্রেম নিবেদন করা হয়েছে। নীচে গানের লিরিক্স এবং বাংলা অর্থ দিলাম। আশা করি গানটা সবার ভালো লাগবে। এই হিন্দি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আজকের ডায়েরী- ১৫৩
কেন জানি মন মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।
কিছুই ভালো লাগছে না। ইচ্ছা করছে ঘোড়ায় চড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। হাতে থাকবে চাবুক। যেখানে অন্যায় দেখবো লাগাবো দুই ঘা চাবুক। সমস্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
সব আমরাই করেছি
পাছায় হাজার লাত্থি, গালে কষে চর,
এমনি করে কেটে গেলো ১৭ বছর।
ছাত্র তরুণ, সাধারণ জনতা বুবুরে দিলো খেদায়া,
হঠাৎ করেই গর্ত থেকে উঠলো এরা চেগায়া।
চোখের পানি নাকের পানি করলো একাকার,
ডুকরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন
একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন
প্রিয় পাঠক, গতকাল ১০ মে ২০২৫। এই দিনটি কোনো সাধারণ দিন ছিল না। এটি ছিল ঐতিহাসিক এমন একটি দিন, যা বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা নিয়ে ছোট্ট দুটি কথা।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম তো নিষিদ্ধ হল। অনেক আলোচনা সমালোচনা চারিদিকে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু কথা আছে যেগুলো এড়ানো যায়না। আফটার অল,অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এহেন সিদ্ধান্ত ঠিক এদেশের আমজনতার ম্যাণ্ডেট... ...বাকিটুকু পড়ুন