somewhere in... blog

সংখ্যালঘু ও বাংলাদেশঃ ধমীর্য় নিপীড়ন

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সকাল ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পার্বত্য চট্টগ্রামে সব থেকে বেশী যে ধমীর্য় নিযার্তন বা নিপীড়নের ঘটনা জানতে পারা যায় তা হল মন্দির ধ্বংস, ধমীর্য় উপাসনায় বাধা দান এবং জবরদস্তিমূলক ধমার্ন্তকরণ।

ধমীর্য় নিপীড়নের বিভিন্ন ধরন:

মন্দির ও গীর্জা ধ্বংস
ধমীর্য় উপাসনায় বাধাদান
বলপূর্বক ধমার্ন্তকরণ
বলপূর্বক বিবাহ
সংশ্লিষ্ট আইন ও প্রতিকার


মন্দির ও গীর্জা ধ্বংস:

বোয়ালখালী মন্দির এবং অনাথ আশ্রম দিঘীনালা
বাঘাইছড়ি মুখ মন্দির, দিঘীনালা
তিনতিল্যা মন্দির,লংগদু
দালাইলামা মন্দির
পুজগাং মন্দির, পানছড়ি
খাগড়াছড়ির সন্নিকটে বেতছড়ি খৃষ্টান পাড়া ।

বোয়ালখালী মন্দির এবং অনাথ আশ্রম দিঘীনালা

বোয়ালখালী গ্রামে একটি অনাথ আশ্রম ছিল যার নাম পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম। এই অনাথ অাশ্রমের সঙ্গে একটি মন্দির ছিল। ছিল একটি হাইস্কুলও। সেখানে ১৭ জন ভিক্ষু ছিল।১৯৮৬ সালের ১৩ জুন বেআইনীভাবে প্রবেশকারী বাঙালী মুসলমানেরা দিঘীনালা উপজেলায় নিকটস্থ ক্যান্টনমেন্টের সেনা সদস্যদের সহায়তায় বেশ কিছু গ্রামবাসীর ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দেয়। ১৩ এবং ১৪ জুন দিঘীনালা থেকে এইসব আর্মির লোকজন এসে ঘরবাড়ীগুলো জ্বালিয়ে দেয়।১৪ জুন সকালে অসংখ্য অনুপ্রবেশকারী এসে আশ্রমের নিকটস্থ বাড়ীগুলো পুড়িয়ে দেয় এবং আশ্রমের গুদামঘর পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।এর কয়েক মিনিট পর সামরিক বাহিনীর লোকেরা সেখানে আসে । আশেপাশের সমস্ত গ্রাম পুড়ে ছাই হয়ে যায় ভয় পেয়ে ঐ দিনই আশ্রমের একজন ভিক্ষু অনাথ শিশুদের সঙ্গে নিয়ে আশ্রম ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ভিক্ষুর সাথে ছিল ৮০টি অনাথ শিশু। সাতদিন পর করবুক ত্রাণ শিবিরে তারা আশ্রয় গ্রহণ করে। ঐ সময় ৭০ থেকে ৮০ টি পরিবার গ্রাম ত্যাগ করেছিল।



বাঘাইছড়ি মুখ মন্দির, দিঘীনালা

১৯৮৮ সালের আগষ্ট মাসে এবং ১৯৮৯ সালে সৈন্যবাহিনী ঘরবাড়ী ও মন্দির ধ্বংস করে দেয় ।সেখানে প্রথমদিকে ছিল ১৭৫টি পরিবারের বসবাস এবং ১৩৫টি পরিবার ত্রিপুরায় পালিয়ে যায়। ৩০টি পরিবারকে নিকটবর্তী একটি গুচ্ছগ্রামে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। সৈন্যবাহিনী সমগ্র এলাকা থেকে সব গাছপালা কেটে ফেলে এবং তা বিক্রি করে দেয়।

তিনতিল্যা মন্দির,লংগদু

১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে এই মন্দিরটি পোড়ানো হয়। লংগদুর সোনেই এলাকায় সেনা সদস্যরা সাদা পোষাক পরে এই গ্রামে আসে এবং সব ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দেয়। প্রায় ৪৫ জন বসতিস্থাপনকারী তাদের সাথে ছিল। হত্যার কাজটি তারাই করে। সেখানে তিনতলায় বনভান্তের একটি মন্দির ছিল। ঐ দিনই সৈন্যরা থাইল্যান্ড থেকে আনা বুদ্ধ মূতির্টিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। লংগদুর তিনতিল্যা মন্দিরটির কংক্রিটের কাঠামো এবং সুউচ্চ মন্দিরটি অক্ষত থাকলেও ভেতরটা আগুনে ভালোমত পুড়ে গিয়েছে। মন্দিরের কোন আসবাবপত্র আর অবশিষ্ট নেই এবং রেলিং-এর পাটগুলো পুড়ে কালো হয়ে গেছে। বুদ্ধমূর্তিটির গায়ে দা দিয়ে আঘাত করার চিহ্ন রয়েছে এবং একটি কান ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। আর একটি ছোট বুদ্ধ মূর্তিকে সম্পূর্ণভাবে পোড়ানো হয়েছে।



দালাইলামা মন্দির

১৯৮৬ সালে ধ্বংস হওয়া দালাইলামা বৌদ্ধ মন্দির ছিল ঠিক দিঘীনালা বাজারের পরেই যেখানে পরবতীর্কালে একটি সামরিক চেকপোষ্ট বসানো হয়। এক সময় যেখানে মন্দির ছিল এখন সেখানে খালি জায়গায় মেশিনগান দিয়ে নিশানা চর্চা করা হয়। মন্দির বলতে এখন শুধুমাত্র কিছু ইট এবং সিমেন্টের ভিত পড়ে আছে। সৈন্য বাহিনীর সহায়তায় বসতিস্থাপনকারীরা ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেয়। আশ্রমের কাছাকাছি অন্যান্য বৌদ্ধ মন্দির ছিল সেগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়।


পুজগাং মন্দির, পানছড়ি

মন্দিরটি আক্রমণ করা হয় প্রথমবার ১৯৮৬ সালে এবং আবার ১৯৮৯ সালের ২৮ জুন। মন্দিরের সামনের অংশ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয় এবং ভেতরে একটি বেদীর উপর ছিল শিরহীন তিনটি বৌদ্ধ মূর্তি।



খাগড়াছড়ির সন্নিকটে বেতছড়ি খ্রষ্টান পাড়া

১৯৯০ এর ৩১শে অক্টোবর খাগড়াছড়ির বেতছড়ি খৃষ্টান পাড়ায় কানাডীয় ব্যাপটিষ্টদের আথির্ক সাহায্যে তৈরী একটি গীর্জা ছিল যা ধ্বংস করা হয়েছে। ঐদিন বেতছড়ি এলাকায় উক্ত খৃষ্টান গীর্জাটিসহ অনেকগুলো পাড়া ধ্বংস করে দেয়া হয়। বেতছড়ির ধ্বংসযজ্ঞ চালায় ইউনিফরম পরিহিত সেনাবাহিনী ও বাঙালী বসতিস্থাপনকারীরা। তারা দা দিয়ে এবং পুড়িয়ে ফেলে বাড়ীঘর ধ্বংস করে দেয়।

খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি ইউনিয়নের বৌদ্ধ বন ভিক্ষু কুঠির বুধবার ১৪ জুন ২০০৬ সকালে সন্ত্রাসীরা পুড়িয়ে দিয়েছে।পাহাড়ীদের বৌদ্ধবিহারে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ),খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা নাগরিক কমিটি পৃথক বিবৃতিতে অভিযোগ করে সকাল ৭ টায় নুনছড়ি সেটেলার বাঙালীরা দলবদ্ধ হয়ে মাইসছড়ি মৌজার বৌদ্ধ বন ভিক্ষু কুঠিরে(বৌদ্ধ বিহার) এ অগ্নিসংযোগ করে। বিবৃতিতে তারা অভিযোগ করেন, ইতিমধ্যে মহালছড়ি উপজেলা প্রশাসন ওই এলাকার বিতকির্ত ভুমিতে নতুন করে বাড়ীঘর নিমার্ণে পাহাড়ী-বাঙালী উভয় পক্ষকে মৌখিক নিষেধাজ্ঞা দেয়।প্রশাসনের নিদের্শ অমান্য করে ওই জায়গায় ৩টি বাড়ী নির্মাণ করে বাঙালীরা। (যুগান্তর ১৫ জুন,২০০৬)






৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি লাগবে? পানি

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৬

আজকের নববর্ষের সেরা মোটিফটা দেখে ফেলেছি। যারা এই আইডিয়া নিয়ে এসেছেন তাদের স্যালুট ভাই। তোমরা মুগ্ধকে স্মরণ করেছো। যতদিন এই বাংলার বুকে মুগ্ধদের এভাবে স্মরণ করা হবে ততদিন পথ হারাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-বাংলাদেশে আলাদা দিনে বাংলা নববর্ষ কেন?

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৪

ভারত-বাংলাদেশে আলাদা দিনে বাংলা নববর্ষ কেন?


বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ আসে ইংরেজি মাসের ১৪ এপ্রিল। অন্যদিকে পশ্চিম বাংলায় ১৫ এপ্রিল উদযাপন করা হয় উৎসবটি। যদিও ১৯৫২ সন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেকারত্ত্ব এবং দেশের রিজার্ব বারানোর এইটা একটা পথ হতে পারে…

লিখেছেন ফেনা, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬



বাংলাদেশে শ্রমিকদের মধ্যে অদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৮.৫ কোটি। এর মধ্যে প্রায় ৯৬% শ্রমিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন, অর্থাৎ তারা অদক্ষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র ও নির্বাচিত শব্দের নয়া ব্যাখ্যা দিলেন ফরিদা-মজহার দম্পতি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৭


বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুটা ছিল জনতার কণ্ঠে, এখন সেটা রূপ নিচ্ছে কিছু নির্দিষ্ট গলার একচেটিয়া লোকের তর্জন-গর্জনে । শুরুর দিকে বলা হয়েছিল, এটা অস্থায়ী সরকার—জনগণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকা আমাদের দেশে সরকার পরিবর্তনে সক্ষম হয় কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৩৮



আমাদের দেশের সরকার সমূহ যখন সরকার পরিবর্তনের ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয় তখন বিশ্ব মোড়ল হিসাবে আমেরিকা আমাদের দেশের সরকার পরিবর্তন তাদের দায়িত্ব মনে করে। তারা এটা করে আমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×