somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৭)

১৬ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট এডভাইসর লিসান্কা সোতো আর ক্রেডিট ইভালুয়েটর সান্দ্রা ল্যাকায়, দুজনের একজনকেও না পাওয়ায় আমি প্রচন্ড টেনশনে পরে গেলাম। ই-মেইলের কোন রিপ্লাই পাওয়া গেল না মিজ লিসান্কা সোতো এর কাছ থেকে। আমি বুঝতে পারছিলাম এই সেমিস্টারের টাকাটা ফাও যাবে। করা কোর্স গুলো আবার করতে হবে। পরের দিন আবার কলেজে গিয়ে জানতে পারলাম রেজিস্ট্রেশনের আর বেশি দিন বাকি নেই। আমার মাথা প্রায় নষ্ট অবস্থা। রেজিস্ট্রেশন করতে না পারলে আউট অফ স্ট্যাটাস হয়ে যাব। ভাবলাম যা থাকে কপালে, টাকা গেলে যাক কিন্তু আউট অফ স্ট্যাটাস হওয়ার রিস্ক নেয়া যাবে না।

রেজিস্ট্রেশন করার জন্য গেলাম ইন্টারন্যশনাল অফিসে। কথায় বলে অভাগা যেইদিকে যায় সাগর ঐদিকেই শুকিয়ে যায়। আর জীবনের নানা ঘটনায় ইতিমধ্যে বুঝে গেছি যে অভাগা সম্প্রদায়ের একজন কুল রত্ন আমি। কোনো কাজ করতে যাব আর একটা ঝামেলা লাগবে না, এইটা কি সম্ভব? রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আমাকে দুইটা ফর্ম দিল যার একটা হচ্ছে আমি যে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা তা প্রমান করার জন্য। যেহেতু আমার নিউ ইয়র্ক স্টেট আই.ডি. নেই তাই এই ফর্মটা পূরণ করতে হবে। ফর্মে যেখানে থাকি তার বাড়িওয়ালার নাম, ফোন নাম্বার আর সাথে বাড়ি ভাড়ার রিসিট দিতে হবে। বাড়িওয়ালার প্রতয়ন পত্র টাইপ ও জানি কি একটা সাথে দেয়ার কথা ছিল এখন মনে পরছে না। এগুলো নিয়ে বেশি চিন্তা করলাম না কারণ ভেবেছিলাম ফিরোজ ভাইদের বাসারটা দেয়া যাবে। করতে পারলাম না ঐদিন ও রেজিস্ট্রেশন।

বাসায় এসে ফিরোজ ভাইয়ের রুমমেটদের একজনকে বললাম ভাইয়া এই পেপারসগুলো লাগবে। তখন উনি বলল বাসা নেয়া হয়েছে ফিরোজ ভাই আর অন্য একজনের নামে। সেই ভাই মাস ছয়েক আগেই অন্য বাসায় উঠেছেন আর ফিরোজ ভাই তো বাংলাদেশে। ওনাদের কারো নাম নেই আর কোনো রিসিট ও নেই ওনাদের কাছে। এমনকি বাড়িওয়ালা জানেও না ওনারা যে চারজন এই বাসায় থাকেন। ভাড়া আর অন্যান্য ব্যাপার ফিরোজ ভাই সামাল দেন। ওনারা শুধু টাকা দিয়ে দেন। এই অবস্থায় আমাকে বাড়িওয়ালার কাছে নিয়ে যেয়ে আমার নামে কোনো পেপারস বানিয়ে আনবেন সেটাও সম্ভব না। আমার ভুল ও হতে পারে কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছিল উনি এই ঝামেলা নিতেও চাচ্ছেন না আমার জন্য। আবার কলেজে যেয়ে বললাম আমার সমস্যার কথা। অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম যে দেখো আমি তো মাত্র নিউ ইয়র্কে এসেছি, এখনো পার্মানেন্ট ভাবে কোথাও উঠি নাই। এই পেপারসগুলো আমি পরে সাবমিট করব। কে শুনে কার কথা। মহিলা সোজা বলে দিল এই পেপারসগুলো না পেলে সে আমার রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেনা। আমি আরো কিছুক্ষণ রিকোয়েস্ট করায় বলে দিল আমি যেন আর বিরক্ত না করি। আমার তখন খুব মেজাজ খারাপ হলো। এটা কেমন কলেজ? এডভাইসর থাকে না, স্টুডেন্টদের সমস্যা বুঝে না।

ওই কলেজ থেকে বের হয়ে সোজা গেলাম কিউনি'র আরেকটা কম্যুনিটি কলেজ "বোরো অফ ম্যানহাটান কম্যুনিটি কলেজ" এ। এই কলেজটায় শুনেছি প্রচুর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট। ভাবলাম এই কলেজে চলে আসলে এত পেইন নিতে হবে না। ওদের অফিসে যেয়ে বললাম আমি হোস্টস কম্যুনিটি কলেজে ট্রান্সফার হয়ে এসেছি মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে। কিন্তু এখন ভাবছি তোমাদের এখানে পড়ব। এর জন্য কি ভাবে কি করতে হবে? ওখানে বলল ওদের এডমিশনের ডেট শেষ। এখানে আসতে হলে নেক্সট সেমিস্টারে। কি করব কিছুই বুঝতে না পেরে আলাপ করলাম রাজীব আর সুমি আপুর সাথে। ওদের কাছ থেকেই খবর পেলাম নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশী সহ অন্যান্য ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের ভরসার জায়গা, শেষ আশ্রয়স্থল এ.এস.এ. কলেজ যাকে আমরা মজা করে ডাকি আশা কলেজ। ওরাও ঐখানেই পড়ে। প্রাইভেট কলেজ। ভর্তি হওয়া খুবই ইজি। পরেরদিন চলে গেলাম এ.এস.এ. কলেজে। একজন ইন্টারন্যাশনাল এডভাইসরকে পুরো ঘটনা খুলে বললাম। তারপর জিগ্গেস করলাম এখন তোমাদের কলেজে ট্রান্সফার হওয়া সম্ভব কিনা? উনি বললেন তুমি হোস্টস কলেজে যেয়ে বল এখানে ট্রান্সফার হবে। ওরা যদি তোমার সেভিস আই.ডি. আমাদের কলেজের নামে ট্রান্সফার করে দেয় তাহলে ট্রান্সফার হতে পারবে নয়তো না। তবে এর আগে আমাদের কলেজ থেকে তোমার এক্সেপ্টেন্স লেটার নিতে হবে। আমি ভাবলাম এত তাড়াহুড়া করে কিছু করা ঠিক হবেনা। তাই একটু ভেবে দেখি কি করব বলে ঐদিন চলে আসলাম।

(চলবে)

অন্যান্য পর্ব:
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:০৬
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×