ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট এডভাইসর লিসান্কা সোতো আর ক্রেডিট ইভালুয়েটর সান্দ্রা ল্যাকায়, দুজনের একজনকেও না পাওয়ায় আমি প্রচন্ড টেনশনে পরে গেলাম। ই-মেইলের কোন রিপ্লাই পাওয়া গেল না মিজ লিসান্কা সোতো এর কাছ থেকে। আমি বুঝতে পারছিলাম এই সেমিস্টারের টাকাটা ফাও যাবে। করা কোর্স গুলো আবার করতে হবে। পরের দিন আবার কলেজে গিয়ে জানতে পারলাম রেজিস্ট্রেশনের আর বেশি দিন বাকি নেই। আমার মাথা প্রায় নষ্ট অবস্থা। রেজিস্ট্রেশন করতে না পারলে আউট অফ স্ট্যাটাস হয়ে যাব। ভাবলাম যা থাকে কপালে, টাকা গেলে যাক কিন্তু আউট অফ স্ট্যাটাস হওয়ার রিস্ক নেয়া যাবে না।
রেজিস্ট্রেশন করার জন্য গেলাম ইন্টারন্যশনাল অফিসে। কথায় বলে অভাগা যেইদিকে যায় সাগর ঐদিকেই শুকিয়ে যায়। আর জীবনের নানা ঘটনায় ইতিমধ্যে বুঝে গেছি যে অভাগা সম্প্রদায়ের একজন কুল রত্ন আমি। কোনো কাজ করতে যাব আর একটা ঝামেলা লাগবে না, এইটা কি সম্ভব? রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আমাকে দুইটা ফর্ম দিল যার একটা হচ্ছে আমি যে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা তা প্রমান করার জন্য। যেহেতু আমার নিউ ইয়র্ক স্টেট আই.ডি. নেই তাই এই ফর্মটা পূরণ করতে হবে। ফর্মে যেখানে থাকি তার বাড়িওয়ালার নাম, ফোন নাম্বার আর সাথে বাড়ি ভাড়ার রিসিট দিতে হবে। বাড়িওয়ালার প্রতয়ন পত্র টাইপ ও জানি কি একটা সাথে দেয়ার কথা ছিল এখন মনে পরছে না। এগুলো নিয়ে বেশি চিন্তা করলাম না কারণ ভেবেছিলাম ফিরোজ ভাইদের বাসারটা দেয়া যাবে। করতে পারলাম না ঐদিন ও রেজিস্ট্রেশন।
বাসায় এসে ফিরোজ ভাইয়ের রুমমেটদের একজনকে বললাম ভাইয়া এই পেপারসগুলো লাগবে। তখন উনি বলল বাসা নেয়া হয়েছে ফিরোজ ভাই আর অন্য একজনের নামে। সেই ভাই মাস ছয়েক আগেই অন্য বাসায় উঠেছেন আর ফিরোজ ভাই তো বাংলাদেশে। ওনাদের কারো নাম নেই আর কোনো রিসিট ও নেই ওনাদের কাছে। এমনকি বাড়িওয়ালা জানেও না ওনারা যে চারজন এই বাসায় থাকেন। ভাড়া আর অন্যান্য ব্যাপার ফিরোজ ভাই সামাল দেন। ওনারা শুধু টাকা দিয়ে দেন। এই অবস্থায় আমাকে বাড়িওয়ালার কাছে নিয়ে যেয়ে আমার নামে কোনো পেপারস বানিয়ে আনবেন সেটাও সম্ভব না। আমার ভুল ও হতে পারে কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছিল উনি এই ঝামেলা নিতেও চাচ্ছেন না আমার জন্য। আবার কলেজে যেয়ে বললাম আমার সমস্যার কথা। অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম যে দেখো আমি তো মাত্র নিউ ইয়র্কে এসেছি, এখনো পার্মানেন্ট ভাবে কোথাও উঠি নাই। এই পেপারসগুলো আমি পরে সাবমিট করব। কে শুনে কার কথা। মহিলা সোজা বলে দিল এই পেপারসগুলো না পেলে সে আমার রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেনা। আমি আরো কিছুক্ষণ রিকোয়েস্ট করায় বলে দিল আমি যেন আর বিরক্ত না করি। আমার তখন খুব মেজাজ খারাপ হলো। এটা কেমন কলেজ? এডভাইসর থাকে না, স্টুডেন্টদের সমস্যা বুঝে না।
ওই কলেজ থেকে বের হয়ে সোজা গেলাম কিউনি'র আরেকটা কম্যুনিটি কলেজ "বোরো অফ ম্যানহাটান কম্যুনিটি কলেজ" এ। এই কলেজটায় শুনেছি প্রচুর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট। ভাবলাম এই কলেজে চলে আসলে এত পেইন নিতে হবে না। ওদের অফিসে যেয়ে বললাম আমি হোস্টস কম্যুনিটি কলেজে ট্রান্সফার হয়ে এসেছি মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে। কিন্তু এখন ভাবছি তোমাদের এখানে পড়ব। এর জন্য কি ভাবে কি করতে হবে? ওখানে বলল ওদের এডমিশনের ডেট শেষ। এখানে আসতে হলে নেক্সট সেমিস্টারে। কি করব কিছুই বুঝতে না পেরে আলাপ করলাম রাজীব আর সুমি আপুর সাথে। ওদের কাছ থেকেই খবর পেলাম নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশী সহ অন্যান্য ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের ভরসার জায়গা, শেষ আশ্রয়স্থল এ.এস.এ. কলেজ যাকে আমরা মজা করে ডাকি আশা কলেজ। ওরাও ঐখানেই পড়ে। প্রাইভেট কলেজ। ভর্তি হওয়া খুবই ইজি। পরেরদিন চলে গেলাম এ.এস.এ. কলেজে। একজন ইন্টারন্যাশনাল এডভাইসরকে পুরো ঘটনা খুলে বললাম। তারপর জিগ্গেস করলাম এখন তোমাদের কলেজে ট্রান্সফার হওয়া সম্ভব কিনা? উনি বললেন তুমি হোস্টস কলেজে যেয়ে বল এখানে ট্রান্সফার হবে। ওরা যদি তোমার সেভিস আই.ডি. আমাদের কলেজের নামে ট্রান্সফার করে দেয় তাহলে ট্রান্সফার হতে পারবে নয়তো না। তবে এর আগে আমাদের কলেজ থেকে তোমার এক্সেপ্টেন্স লেটার নিতে হবে। আমি ভাবলাম এত তাড়াহুড়া করে কিছু করা ঠিক হবেনা। তাই একটু ভেবে দেখি কি করব বলে ঐদিন চলে আসলাম।
(চলবে)
অন্যান্য পর্ব:
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:০৬