somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারিফ এজাজের স্বপ্ন, আর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের কথা

১৬ ই জুলাই, ২০০৭ দুপুর ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তারিফ এক কিশোর, ঢাকার এক কলেজে সদ্য এইচএসসি পরীক্ষা পেরুনো। বছর খানেক আগে ওর সাথে ইমেইলে আমার পরিচয়। বাংলা উইকিপিডিয়া নিয়ে বিস্তর ইমেইল চালাচালি, লেখালেখির পর মুনির ভাইয়ের কল্যাণে প্রথম আলোতে এই নিয়ে কিছু নিবন্ধ বেরিয়েছিলো ২০০৬ সালের মার্চ আর এপ্রিলে।


সেই লেখার দৌলতে বেশ কিছু উৎসাহী তরুণ যোগ দেন বাংলা উইকিপিডিয়া প্রকল্পে, বিপুল উদ্যমে কাজ শুরু করেন। আর বাংলা উইকিপিডিয়ার পাশাপাশি ইংরেজি উইকিপিডিয়াতেও বাংলাদেশের উপরে নিবন্ধের কাজ শুরু করেন অনেকে।

এর মধ্যেই একদিন তারিফ ইমেইল করে আমাকে। তখন কলেজে এইচএসসিতে পড়ুয়া তারিফ জানায় তার স্বপ্নের কথা, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দুনিয়ার সব মানুষের কাছে জানানোর স্বপ্ন। এই স্বপ্ন নিয়ে তারিফ কাজ শুরু করে। বাংলাদেশে ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো সর্বত্র ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়েনি, তাই ওকে প্রশ্ন করেছিলাম ওর ইন্টারনেট সংযোগের কথা। ওর জবাব শুনে তো আমি তাজ্জব বনে গেলাম - তারিফের কোনো কম্পিউটার নেই। গ্রামীণের মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে মোবাইল ফোন দিয়েই ও ইন্টারনেট ব্যবহার, এবং উইকিপিডিয়াতে লেখালেখি করে থাকে। এতো প্রতিকূলতার পরেও নানা বইপত্র ঘেঁটে, অনেক তথ্য যোগ করে তারিফ কাজ করে চলে ইংরেজি উইকিপিডিয়ার ভাষা আন্দোলনের নিবন্ধটির উপরে। মাঝে টেস্ট পরীক্ষা, ও অন্যান্য ব্যস্ততার মধ্যে একটু বাঁধা পড়ে এই কাজে।

ডিসেম্বরে আমি দেশে যাই এক মাসের ছুটিতে। ঐ সময় বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির আয়োজিত বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতামালায় উইকিপিডিয়ার উপরে বক্তব্য রাখি। অনুষ্ঠান শেষে এক তরতাজা কিশোর ছুটে আসে আমার কাছে। এতোদিন ইমেইলে পরিচয় ছিলো, সেদিন মুখোমুখি হলাম তারিফের। অনেক উৎসাহের
সাথে ও বলে গেলো, ভাষা আন্দোলনের নিবন্ধটিকে ইংরেজি উইকিপিডিয়ার ফীচার্ড আর্টিকলে উন্নীত করা।

এইচএসসি পরীক্ষা এগিয়ে আসলে আমিই তারিফকে বারণ করি, কিছুদিন পড়ার দিকে মন দিতে। পরীক্ষা শেষে মাস দুয়েক আগে, তারিফ আবার কাজ শুরু করে নিবন্ধটার উপরে। বাংলাদেশের অনেক নিবন্ধের উপরে কাজ করা ভারতীয় বন্ধু উইকিপিডিয়ান নীরব মৌর্যের চমৎকার সম্পাদনা, আর তারিফের তথ্য যোগাড় - এই দুই নিয়ে নিবন্ধটা তরতর করে আগাতে থাকে। নীরব মাঝে ডানপন্থী ভারতীয় ট্রোলবাহিনীর চরম আক্রমণে অভিমান করে উইকিপিডিয়া ছেড়ে যায়। তখন তারিফকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসি আমরা অন্যান্যরা। ঢাকার আদিত্য কবীর, কলকাতার দ্বৈপায়ন ও রিয়ানা, এবং খুঁটিনাটি সম্পাদনায় অভিজ্ঞ অনেক বিদেশী লেখক। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরী ঘেঁটে অনেক জার্নাল ও অন্যান্য বইপত্রের রেফারেন্স বের করি। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় তারিফের চরম উৎসাহ, আর সারাদিন ধরে লেগে থাকা।

উইকিপিডিয়াতে ফীচার্ড আর্টিকেল হিসাবে নির্বাচিত হতে হলে কঠিন এক মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। দাড়ি-কমা, বাক্য, তথ্যসূত্র - সবকিছুকেই যাচাই-বাছাই এর মধ্য দিয়ে পেরুতে হয়। প্রায় মাস খানেক ধরে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগুচ্ছিলো নিবন্ধটা। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি সুসংবাদ - নিবন্ধটা ফীচার্ড আর্টিকেলের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে - এখন ইংরেজি উইকিপিডিয়ার সেরা সব নিবন্ধের তালিকাতে এটাও যুক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ সম্পর্কে, আমাদের ইতিহাস নিয়ে দুনিয়ার মানুষের কাছে তথ্য যায় খুব কমই। আমরা নিজেরা না জানিয়ে অন্য বিদেশীদের সেই দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে থাকি, আর সত্যের বদলে অপপ্রচার, মিথ্যা সব কথা প্রচার করে এই সব বিদেশীরা। আমাদের ইতিহাস, আমাদের জীবন-ঐতিহ্যের কথা
প্রকাশের চেষ্টা করতে হবে আমাদেরকেই। তারিফ এজাজের মতো উদ্যমী তরুণেরা এগিয়ে আসবে, এসব সোনার ছেলেদের চেষ্টাতে আমাদের দেশের কথা

দুনিয়ার সব মানুষ জানতে পারবে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে তারিফের যেমন স্বপ্ন ছিলো, আমাদের দেশের সোনার ছেলেদের নিয়ে এটাও আমার নিজের স্বপ্ন।

(তারিখটা আজ ১৬ই জুলাই। ইমেইল ঘেঁটে দেখলাম, ঠিক এক বছর আগে, ১৫ই জুলাই, ২০০৬ তারিখে তারিফ তার ভাষা আন্দোলন প্রজেক্টের কথা বলেছিলো বাংলা উইকিপিডিয়ার মেইলিং লিস্টে)।

(তারিফ এখনো ওর সেই মোবাইল ফোনেই উইকিপিডিয়াতে লেখালেখি করে থাকে। আসলে চেষ্টা থাকলে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও অনেক কিছু করা সম্ভব।)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০০৭ দুপুর ১:৩৩
৪৫৬ বার পঠিত
১৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাই সরাসরি দুইস্তর বিশিস্ট প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন: নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার

লিখেছেন বিদ্রোহী ভৃগু, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৪

ভূমিকাঃ

ছাত্র-জনতার সফল জুলাই বিপ্লবের পর আজ বাংলাদেশ গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার, আইনের শাসন ও প্রকৃত উন্নয়নের এক নতুন পথে যাত্র শুরু করেছে। নোবেল লরিয়েট ড। ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=শোকর গুজার প্রভুর তরে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:১৪



প্রভু তোমার দয়ার কথা, বলে হয় না শেষ তো
কত রিযিক আহার দিয়ে, রাখছো মোদের বেশ তো!
তোমার সৃষ্টির কেরামতি, নেই কো বুঝার সাধ্য
তোমার বান্দা তোমার গোলাম, শুধু তোমার বাধ্য!

গাছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুপার সানডে : সংঘর্ষ ও নৈরাজ্যের পথে বাংলাদেশ!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭


আজকের দিনটি বাংলাদেশের সচেতন মানুষের দীর্ঘদিন মনে থাকবে। এত সংঘর্ষ ও মারামারি অনেকদিন পর ঢাকাবাসী প্রত্যক্ষ করলো। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মানুষ আগে থেকেই উদ্বিগ্ন তার উপর বিভিন্ন অবরোধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভয়েস অব আমেরিকার জরিপে সংস্কার শেষে ভোটের পক্ষে রায় দিয়েছে ৬৫.৯ % মানুষ

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


পাগল ও নিজের ভালো বুঝে ,কখনো শুনেছেন পাগল পানিতে ডুবে মারা গেছে কিংবা আগুনে পুড়ে মারা গেছে ? মানসিক ভারসাম্য না থাকলেও মানুষের অবচেতন মন ঠিকই বুঝে আগুন ও পানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনূস সরকার নিজেই নিজের চাপ তৈরি করছে

লিখেছেন রাকু হাসান, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩


ইউনূস সরকার সব সংস্কার কিংবা কাজ করতে পারবে না ,সেটা নিয়মিতর নিয়ম মেনে নিতে হবে । রাজনৈতিক দলগুলো , যে কালচার তৈরি করে গেছে সেটা এই সরকার আমূলে বদলে দিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×