পরিবার হচ্ছে বাচ্চাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান; আর বাবা-মা হচ্ছে সবচেয়ে বড় শিক্ষক! একটা বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে ভাল-মন্দ যে সব গুণাবলী এবজর্ভ করে তার সিংহভাগ সে পায় তার পরিবার থেকে। বাইরের সমাজে আমরা অনেক সময় ডিপ্লোম্যাসি করে চলে মানুষের কাছে আমাদের স্ট্যাটাস ধরে রাখতে পারি, কিন্তু একটা পরিবারের ভিতরের প্রকৃত অবস্থা কি সেটা বোঝা যায় সেই পরিবারের বাচ্চাদের দেখে। কারন বাচ্চারা শুনে কিছু শিখে না, তারা শিখে দেখে। পৃথিবীর এমন কোন বাবা-মা নেই যে বাচ্চাকে খারাপ হতে বলেন; সকল বাবা-মা ই বাচ্চাকে সব সময় ভাল উপদেশ দিয়ে থাকেন। কিন্তু সব বাচ্চা কি বড় হয়ে ভাল গুনের অধিকারী হয়? এর মুল কারন হচ্ছে, আপনি বাচ্চাকে কি হতে বলছেন সেটা বাচ্চা শিখিবে না, সে শিখবে আপনি তার সামনে কোন পরিস্থিতেতে কি আচরণ করছেন সেটা। জাস্ট একটা উদাহরণ দিই, আপনি অবশ্যই বাচ্চাকে বলে থাকেন, রাগ হলে কখনও বাজে কথা বলবে না; কিন্তু আপনি রেগে গেলে মুখ দিয়ে বাজে কথা বের করেন। তখন দেখবেন আপনার বাচ্চাও রাগ হলে স্পন্টেনিয়াসলী বাজে কথা বলে ফেলছে। এ জন্যই বাচ্চা সুন্দর ভাবে মানুষ করা এত সহজ কাজ নয়! এজন্য বাবা-মা কে নিজেদের চরিত্র পরিবর্তন করতে হয়। মনে রাখবেন বাচ্চাদের কখনও ধোকা দেওয়া যায় না।
বাবা’দের কাছে অনুরোধ! জানি, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে, সংসারের চাকা সচল রাখতে আপনাকে অনেক কষ্ট করতে হয়। কিন্তু আপনি যার জন্য পরিশ্রম করছেন, ক্যারিয়ারের উন্নতি সাধনে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সেই বাচ্চাই যদি মানুষ না হয় তাহলে আপনার সব পরিশ্রম তো বৃথা! ৪০/৪২ বছরের পর একজন সাধারন মানুষের ক্যারিয়ারে আর বিশাল কোন পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়; এর পরে আপনার সফলতা বিফলতা নির্ভর করে আপনার বাচ্চার উপর। তাই নিজের ক্যারিয়ারের পিছনে ছুটতে ছুটতে বাচ্চার প্রতি অবহেলা করবেন না; বাচ্চার কাছে দুরের মানুষ হয়ে যাবে না। আপনি বাইরের জগত থেকে একটু সময় বাঁচিয়ে তা বাচ্চা কে দেওয়ার চেষ্টা করুন। আর দয়াকরে সৎ ভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে চেষ্টা করুন! আপনি সৎ উপায়ে সংসার চালাতে গিয়ে বা তার আবদার পুরন করতে গিয়ে আপনার যে কষ্ট হচ্ছে সেটা সন্তানের সাথে শেয়ার করুন। পৃথিবীতে সেই সন্তানের চেয়ে দুর্ভাগা আর কেও নেই যে তার বাবার সততা নিয়ে গর্ব না করতে পারে!
মা’দের কথা আর কি বলব! মা’হচ্ছে বাচ্চার হৃদ-স্পন্দন! যে সংসারের মা বাচ্চার প্রতি সচেতন সেই সংসারের বাচ্চারা কখনও বিপথে যেতে পারেনা। দয়া করে বাড়ী-গাড়ী-ফ্লাট-শপিং এর কম্পিটিশন একটু কমান, বাচ্চাকে ভাল ভাবে বড় করার কম্পিটিশন করুন! আবার বাচ্চাকে বড় বড় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করানোর বা বাচ্চা কে ক্লাশে ফাস্ট বানানোর জন্য তার উপর দিয়ে ষ্টীম রোলার চালাবেন না – তাকে বুঝতে চেষ্টা করুন, তাকে ভাল মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। বাচ্চার সামনে হিন্দি চ্যানেলের চরম নৈতিক অধঃপতনের সিরিয়াল দেখবেন না। আপনি বউ-শাশুড়ী, মা-মেয়ের নোংরা দ্বন্দের সিরিয়ালের ভক্ত হবেন আর বাচ্চাকে উপদেশ দিবেন গুরুজন কে সম্মান কর- তা কখনও হবে না। আপনার সন্তান সেই ব্যবহারই শিখবে যেটা আপনি আপনার বাবা-মা বা শশুর-শাশুড়ির সাথে করেন। সবচেয়ে বড় কথা বাচ্চাকে আন্তরিক ভাবে সময় দিন, বাচ্চার সুস্থ-সবাভাবিক বৃদ্ধির জন্য উপায় খুঁজে বের করুন! নইলে আল্লাহ্ না করুক, ১৬ বছরের বাচ্চা ইয়াবা নেশার জন্য বাবা-মা কে খুন করে; এটা পত্রিকায় পড়া দুরের কোন পরিবারের ঘটনা আর থাকবে না। আমার আপনার ঘরেই খুনি বাচ্চা বেড়ে উঠছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন। একটা বাচ্চা মাদকাসক্ত হওয়ার মূল ব্যর্থতা তার পরিবারের।
খুব বেশী দেশ দেখার সৌভাগ্য হয়নি, তবে জাপানে দেখেছি এদেশের বাচ্চারা কত ভাল পরিবেশে বেড়ে উঠে! বাচ্চাদের আদর্শ মানুষ বানানোর জন্য এদের পরিবারের, স্কুলের বা সরকারের কত আয়োজন! এসব দেখে আমার দেশের বাচ্চাদের জন্য খুব মায়া হয়! সামগ্রিক অবস্থা আমরা চেঞ্জ করতে পারব না, কিন্তু আমরা নিজেরা তো সচেতন হতে পারি! আধুনিক মা’দের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলছি, আপনাদের এসব দেশে এসে দেখে যাওয়া উচিৎ বাচ্চা মানুষ করার জন্য মা কে কতটা স্যাক্রিফাইস করতে হয়, কতটা কেয়ারী হতে হয়, কতটা ধর্য্যশীল হতে হয়। সেটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে অন্তত আপনার পুরাণ আমলের মায়েদের কাছ থেকে শিখে আসুন তারা ছোট বেলায় আপনাকে মানুষ করতে কতটা স্যাক্রিফাইস করেছেন!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:৩২