কৌশিকের বিপাশা পোষ্টটি পড়ার পর একটি সুন্দর অভিজ্ঞতার সাথে নিজেকে সমন্বয় করাতে পারলাম, ভাই-বোনের সম্পর্ক যে কত মধুর হতে পারে তার বাস্তব কোন উপলব্ধি না থাকলেও সেদিনকার পোষ্টের খুবই সাধারণ একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে ভাই-বোনের এ সম্পর্কের শ্রেষ্ঠত্ব আর মহত্বকে কিছুট হলেও অনুভূত হয়েছে।
আমার কোন বোন নেই, না ছোট না বড়, না পেয়েছি বড় বোনের ভালবাসা, না দিতে পেরেছি ছোট বোনকে আদর, ভালবাসা, অসম্ভব রকম মিস করি, তাই যখন একটি পরিবারের ভাই-বোনের মধুর সম্পর্ক, খুনসুটি, রাগারাগি, আবার পাশাপশি এসব কিছু দেখি কেমন জানি মনে জীবনে বড় কিছু পাওয়া থেকে বঞ্চিত হলাম, অৎঅজন্তেই চলে আসে “ইস, আমার যদি একটা বোন থাকত কতই না মজা হত!”
আমরা দু-ভাই, আমিই বড় ছোটটা বছর দেড়েক ছোট তাই সবকিছু শেয়ার করতে হয় বাবা-মা’এর সাথে, সবকিছুতো করা যায়না, কিন্তু যদি বোন থাকত হয়তবা দেখা যেত সেই আমার সব ফিলিংসগুলো শেয়ার করে নিচ্ছে, মেয়েরা যা পারে। হয়ত বোন থাকলে সেই সকালে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিত, অফিসের গোছানাটো ওই করত, প্রতিদিন ফোন করে একটা না একটা আবদার থাকতই অভিমান, রাগারাগি, খুনসুটি কোনকিছুই হয়না, তবে একটা কষ্ট থেকে বেচে যাব বলে মনে হয় যখন ওকে বিয়ে দিয়ে পরের ঘরে দিতে হত সেই কষ্টটা বোধহয় আমাকে করতে হবেনা।
ছোট বেলায় যখন আমি ক্লাস ওয়ানে তখন পাশের বাসার আংকেলের ৫টা মেয়ে বেবী ছিল, তার মধ্যে যে সবচেয়ে ছোট ছিল তাকে কোলে নিতে না পারলেও সারাদিন তার কাছেই থাকতাম, আদর করতাম, আর বাড়ীতে ফিরলেই বাবার কাছে অন্যায় আবদার “বাবা, পাশের বাসার ওই পিচ্চি বাবুকে আমাকে এনে দাওনা” বাবা কিসব বলে বুঝিয়ে রাখতেন। আমাদের একটি বোনের জন্য তীব্র চাওয়া বাবাকে ব্যকুল করে তুলেছিলাম। বাবাও চাইতেন একটি মেয়ে কিন্তু পালিত। একবার সে সুযোগ এসেছিল, হাসপাতালে একটি মেয়ে সন্তান প্রসবের পর মেয়েটিকে বিছানায় ফেলে মা পালিয়েছিলেন, হাসপাতালের ডাক্তার আংকেলকে আগেই বলা ছিল কেউ যদি মেয়ে দিতে চায় তা যেন বাবাকে বলেন, তো বাবা জানা মাত্রই কাজ ফেলে ছুটলেন হাসপাতালে, কোলেও তুলে নিলেন, ডাক্তারকে সমস্ত কাগজপত্র রেডী করতে বললেন, শর্ত ছিল একটি এই মেয়েকে ভবিষ্যতে কেউ দাবী করতে পারবেনা ও একান্তই আমাদের হবে, আমাদের ছোট বোন হবে, আর আমার বাবা-মা’এর একমাত্র মেয়ে সন্তান হবে। সবকিছু রেডী এমন সময় ওই হাসপাতালেও একজন মহিলা ডাক্তার তার কোন ছেলেমেয়ে নেই, তিনি বাবাকে অনুরোধ করলেন বাচ্চাটি তাকে দেবার জন্য, বাবা প্রথমে ইতস্তত করলেও আমার মা-এর অনুরোধে তিনি দিলেন একটি যুক্তিতে আমরা তার দুটি সন্তান কিন্তু একজন মায়ের কোন সন্তান নেই, সে হয়তবা এই মেয়েটিকে নিয়ে সন্তানহীনতার দু:খ লাঘব করতে চাইছেন, মা হয়ে হয়ত আরেক মা’এর কষ্টটা বুঝতে পেরেছিলেন। মনে পড়ে বাড়ীতে এসে খুব কেদেছিলাম কেন বাবা আমাদের বোনকে দিয়ে দিলেন অন্যের কাছে, বাবা প্রতিশ্রুতি আমার কান্না থামিয়েছিল,আর একটি বোন এনে দেবার প্রতিশ্রুতিতে।
আজ বড় হয়েছি, বাবা-মা দুজনেরই বয়স হয়েছে আমাদের আর কোন বোন হয়নি, কোন বোনকে নিজের সমস্ত ভালবাসা, আদর, স্নেহ উজার করে দিয়ে আপন করতে পারিনি কিন্তু তাই বলে যে বোনের প্রতি মমত্ববোধ শেষ নয় তা নয়, আজও যখন কেউ ভাইয়া বলে ডাকে ভিতরে একটা কিছুই অনুভব করি আমি একজন বোনের ভাই, যা হয়ত কিছু ক্ষনিকের জন্য, হয়ত চেয়েছিলাম সারাজীবনের জন্য একটি বোনের ভাই হবার ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০০৭ সকাল ৭:১৯