সিনেমার রুপোলি জগতে প্রতিযোগিতা সব দেশে সব কালেই ছিল। বাংলাদেশে শাকিবের সাথে অনন্তের, বলিউডে খান্ রা নিজেদের সাথে এবং কাপুর, রোশনদের সাথে কিংবা হলিউডে লিউনার্দো, ক্রুজ, ব্র্যাড পিট, জনি ডেপদের প্রতিযোগিতা ছিল, আছে এবং থাকবে। আরেকটু পিছনে তাকালে টম হ্যাঙ্কস – রাসেল ক্রো, আল পাচিনো- রবার্ট ডি নিরো, বোগার্ট – গ্যাবলদের সুস্থ প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে লাভবান কিন্তু হয়েছে দর্শক। আমরা আরেকটু পিছন দিকে তাকাই, বিশ্ব সিনেমা যখন আঁতুর ঘর পার হয়ে মাত্র হামাগুড়ি দিতে শুরু করেছে। প্রতিযোগিতায় কেউ কেউ দু কদম এগিয়ে থাকবে এটা যেমন নিয়ম, তেমনি সব নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বাক ছবির সেই হামাগুড়ি দেবার যুগে চার্লি চ্যাপলিন এতোটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন যে এশিয়ার অনেকেই তার সহযোদ্ধার নামটাই জানেনা। এশিয়াতে তার একক আধিপত্য থাকলেও ইউরোপ, আমেরিকাতে আরেকজন বিখ্যাত অভিনেতার সাথে তাকে জনপ্রিয়তা ভাগাভাগি করতে হয়েছে, সেই আরেকজনের নাম বাস্টার কিটন।
কিটনঃ চ্যাপলিনের সাথে মিল বলতে দুইজন-ই নির্বাক চলচিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক এবং কাহিনীকার।বাকি সবটুকুই অমিল, চ্যাপলিনের যেখানে ট্রেডমার্ক ছিল শতছিন্ন প্যান্ট, ময়লা কোট, লম্বা ফ্ল্যাট জুতো, দুমরানো হ্যাট সেখানে কিটনের পরিচ্ছদ ছিলো কেতাদুরস্থ জামা কাপড় এবং কালো রঙের চমৎকার সুট। চ্যাপলিন যেখানে হাটতেন একটু কার্টুন স্টাইলে, কিটনের হাটা ছিল বুক টানটান করে সোজা পায়ে। চ্যাপলিনের প্রধান অস্ত্র ছিল ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন, তার ছিল বিশ্ব জয় করার মতো ভুবন ভুলানো হাসি, সেখানে কিটন ছিলেন ঠিক উল্টো, কিটন যেন যানতেন-ই না কিভাবে হাসতে হয়। ভয়ঙ্কর সব দৃশ্যে অভিনয় করার সময় ও তার অভিব্যক্তি থাকতো ভাবলেশহীন। তার অভিনয় দেখে আপনি চেয়ার সহ উল্টে যাবেন আর সে পাথরের মতো মুখ নিয়েই আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে, যে কারনে তার ডাকনাম হয়ে গিয়েছিল “The Great Stone Face”. এন্টারটেইনমেন্ট উইকলির গ্রেটেস্ট ডিরেক্টরদের লিস্টে কিটনের অবস্থান ৭ম, আর আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউটের ১০০ বছরের সেরা ১০০ অভিনেতার তালিকায় কিটনের অবস্থান ২১-তম। সিনেমা জগতে চ্যাপলিন এবং কিটনের প্রভাব এতোটাই যে একসময় কিটন এবং চ্যাপলিনের প্রতিযোগিতা ফিল্ম স্টাডিজে আলাদা সাবজেক্ট করে পড়ানো হতো।
প্রায় ৭০/৮০ টার মতো ছবিতে অভিনয় করা কিটনের জনপ্রিয় অনেক ছবির মাঝে চারটি হলো Our Hospitality, Sharlock Jr. The Navigator এবং The General
Our Hospitality: (1923)
IMDB: 7.9
কিটনের ২য় ফিচার ফিল্ম। কিটনের ছবির অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য ছিল সবার চেয়ে আলাদা কিছু দেখানো। সেই নির্বাক ছবির যুগেই এ্যাডভেঞ্চার এবং কাহিনী নির্ভর ছবিগুলোতে কিটন কখনোই স্ট্যান্টম্যান ব্যবহার করতেন না। ২ পরিবারের পারিবারিক কলহের জের ধরে ছোট বেলায় কিটনের মা কিটন কে নিয়ে শহরে চলে আসেন, বড় হয়ে কিটন যায় তার বাবার সম্পত্তির খোঁজে, যাবার পথে প্রেমে পরে যায় এক মেয়ের আর নিজের গ্রামে গিয়েই পড়ে শত্রু পরিবারের সামনে। জলপ্রপাত থেকে পরে যাওয়া, পাহাড়ের এক পাথর থেকে লাফিয়ে আরেক পাথরে যাওয়ার মতো দৃশ্যগুলোতেও কিটন অভিনয় করে গেছেন অবলীলায় এবং নির্লিপ্ত অভিব্যক্তি দিয়ে।
লিঙ্কঃ টরেন্ট
The Navigator (1924)
IMDB: 7.9
AFI এর 100 funniest films of all time লিস্টে অবস্থান ৮১-তম। ২ জন মানুষ ঘটনাক্রমে আটকা পড়ে এক শীপে আর যখন এক জন আরেকজনের দেখা পায় শীপ তখন মাঝ সাগরে। গুগলে ঘাটাঘাটি করে দেখলাম The Navigator-ই প্রথম ছবি যেখানে সমুদ্রের নিচে ডাইভ দেয়া এবং আন্ডার ওয়াটার শুটিং হয়েছে। অনভিজ্ঞ এক তরুন এবং তরুনীর শিপ চালানো এবং বিভিন্ন বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার কাহিনী নিয়ে ছবি, দি নেভিগেটর।
লিঙ্কঃ [link|http://thepiratebay.sx/torrent/8348229/El_Navegante.[The_Navigator].Buster_Keaton.1924.Cine_Mudo.[DVDri|টরেন্ট]
Sharlock Jr. (1924)
IMDB: 8.2
কিটনের আরেক অসাধারন সৃষ্টি। AFI এর 100 funniest films of all time লিস্টে শারলক জুনিয়রের অবস্থান ৬২। কিটনকে বলা হয় জন্মগতভাবে অসাধারন স্ট্যানম্যান। গাছ, জানালা, পাহাড়, ট্রেন, সাইকেল, ঘোড়া, বিল্ডিং এমন কোন কিছু নাই যেখান থেকে সে পড়েনি। শারলকের অভিনয় করার সময় পানির টাঙ্কি থেকে পড়ার সময় এতোটাই ব্যথা পায় যেটাতে তাকে ভুগতে হয় দীর্ঘ ৮ বছর।
মুভি থিয়েটারের প্রজেকশন রুমে কাজ করা এক ছেলের স্বপ্ন দূর্ধর্ষ গোয়েন্দা হবার। হাসি তামাশার মধ্য দিয়ে চলতে চলতে এক সময় তার প্রিয়তমার ঘরে চুরি হয়, দূর্ধর্ষ গোয়েন্দা শারলক হোমসের পথ অনুসরণকারী শারলক জুনিয়রকে কি আর থামানো যায়?
লিঙ্কঃ টরেন্ট
The General (1926)
IMDB: 8.3
এবার আর ফানিয়েষ্ট ফিল্মের তালিকায় না, বেস্ট ফিল্মস অফ অল টাইমের লিস্টে দি জেনারেলের অবস্থান ১৫ তম। অনেক সিনেমা ক্রিটিকরা এই মুভিকে বলছেন সর্ব শ্রেষ্ঠ নির্বাক মুভি। Orson Welles একবার The General সম্পর্কে বলেছিলেন, “the greatest comedy ever made, the greatest Civil War film ever made, and perhaps the greatest film ever made”।
রেল ইঞ্জিনিয়ার কিটন ভালবাসে দুইটা জিনিস, তার প্রেয়সী হবু স্ত্রী আর তার ট্রেন।ঘটনাক্রমে তার দুই প্রেমেই বাঁধা পড়ে একসাথে। প্রেমিকাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে শত্রু পক্ষের সেনাবাহিনী আর তাদের পিছনে ট্রেন নিয়ে একা একা ছুটছে কিটন।
সে সময়ের সবচেয়ে ব্যায়বহুল এই ছবিতে দেখানো হয়েছে সিভিল ওয়ারের পরের সত্যিকারের পরিবেশ, কিছু অসাধারণ স্ট্যান্ট, কয়েকশত এক্সট্রা আর্টিস্ট (সে সময়ের জন্য দূর্লভ), এবং একটি জলন্ত ব্রীজ থেকে ফেলা দেয়া হয়েছে একটা লোকোমোটিভ (ট্রেনের ইঞ্জিন)।
লিঙ্কঃ [link|http://thepiratebay.sx/torrent/3735154/The_General_[Buster_Keaton]_(1927)|টরেন্ট]
নির্বাক সিনেমা যারা দেখেন এবং চ্যাপলিনের যারা ভক্ত তাদের জন্য কিটনের মুভি দেখাটা কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। বাকিদের কর্তব্য না হলেও কিটনের মুভি দেখে আপনাকে আফসোস করতে হবে না বা মনে হবেনা সময়টা নষ্ট করলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:২৩