প্রতিবন্ধীদের, বিশেষ করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সাথে টিম ইঞ্জিন কাজ করছে বেশ কিছুদিন হয়ে গেলো। আমি খুব অবাক হয়ে যাই যখন দেখি আমরা কি সচেতন ভাবেই না এদের নুন্যতম অধিকারও পাশ কাটিয়ে যাই। কেউ সোচ্চার না ওদেরকে নিয়ে, বেঁচে থাকার নুন্যতম সুযোগ সুবিধাও পায় না। টিম ইঞ্জিন নিজেদের হাজার অভাব অনটনের ভেতর দিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের সুযোগ সুবিধা নিয়ে কাজ করে চলেছে (বিদেশী বা বাইরের কোনও আর্থিক সাহায্য ছাড়াই); এবার প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে কিছু দাবী দাওয়া তুলে ধরছি এই পর্বে, আশা করি সবাই মিলে শেয়ার করলে একটা জনমত গড়ে তোলা যাবে। এই ব্লগ এ রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যাক্তিত্য আছেন ( সব দলের ), তাঁরা নিজ নিজ দলের নির্বাচনী ইশতেহার এ এই দাবীগুলোর প্রতিফলন ঘটানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন বলে আশা রাখি।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনগুলোর (ডিপিও) দাবিসমূহ বিবেচনার আহবান।
১. প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন:
ক. সম্প্রতি প্রণীত “প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩” এবং “নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন ২০১৩” এর কার্যকর বাস্তবায়নে কার্যকর দ্রুত আইন দুটির বিধি প্রণয়ন, অর্থ বরাদ্দ ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
খ. “লুনাসী অ্যক্ট ১৯১২” বাতিল করে মনো সামাজিক প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার সুরক্ষায় নতুন মানসিক স্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন করতে হবে।
গ. আইন কমিশনের উদ্যোগে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার অর্জনে জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার সনদের সাথে সাংঘর্ষিক প্রচলিত সকল আইনের সুনির্দিষ্ট ধারাগুলো চিন্হিত করে সংশোধন এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে তাদের বিশেষ চাহিদার প্রেক্ষিতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর শিক্ষা:
ক. নতুন আইনে প্রতিবন্ধী শিশুর সাধারন বিদ্যালয় কর্তৃক ভর্তি প্রত্যাখ্যান শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে বিশেষ শিক্ষাসহ সকল বিদ্যালয় হস্তান্তরিত করাসহ তাদের শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়নে সকল দায়দায়িত্ব প্রদান করতে হবে।
খ. একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাঠামো সংস্কার করতে হবে।
গ. প্রতিবন্ধী শিশুর অংশগ্রহন বৃদ্ধিতে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষা সহায়ক উপকরণ, উপবৃত্তি বৃদ্ধি, সাংস্কৃতিক, খেলাধূলা ও বিনোদন কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
ঘ. বাংলা ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপনসহ এই ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান ও প্রসারের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন:
ক. রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন: প্রতিনব্ধী ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতকরণে জাতীয় সংসদ সদস্যপদে এবং রাজনৈতিক দলের কমিটিতে এক শতাংশ পদ সংরক্ষণ ও ভোটদানে উৱসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
খ. সামাজিক ক্ষামতায়ন: অ. প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংক্রান্ত আইনের সকল কমিটিতে বেসরকারী সদস্য প্রতিনিধিত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নিয়োগ দান করতে হবে।
আ. সকল বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা শিশুর অভিভাবকের জন্য পদ সংরক্ষন করা।
ই. স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক ও বাজার কমিটিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব সংরক্ষেনের সুযোগ রাখতে হবে।
গ. সংগঠিতকরণ: অ. প্রতিবন্ধী মানুষকে সংগঠিত করণে উৰসাহ দান, সংগঠন সৃ্ষ্টিতে স্থানীয় সরকারের সহায়তা ও সংগঠনের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ আর্থিক অনুদান প্রদান।
আ. প্রতিবন্ধী জনগনের উন্নয়নে প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের সংগঠনকে অগ্রাধিকার প্রদান।
৪. প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন:
ক. জেন্ডার ও শিশু সংবেনদশীল বাজেট কাঠামের মতো প্রতিনব্ধী ব্যক্তি সংবেনদশীল বাজেট কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। এজন্য বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের প্রকল্পে উপকারভোগীর ছকে দ্রুত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
খ. প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, শিক্ষা, অর্থ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, মহিলা ও শিশু, পরিকল্পনা, গ্রহায়ন ও গণপূর্ত, যুব ও ক্রিড়া, সাংস্কৃতিক, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের কার্যবন্টন বিধিতে (Allocation of Business) দ্রুত সংশোধন করে প্রতিবন্ধী জনগণের উন্নয়নে দায়িত্ব প্রদান করে সুনির্দিষ্ট প্রকল্প গ্রহণ কর।
গ. বিবিএস এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বিষয়ে প্রতি তিন বছর পর একটি জরিপ পরিচালনা করতে হবে।
ঘ. সকল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে দরিদ্র প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অন্তর্ভূক্তকরণ ও তাদের উপযোগী বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন।
৫. স্বাস্থ্য:
ক. প্রতিবন্ধীতা সংক্রান্ত বিশেষায়িত সেবাসমূহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সকল স্তরে রেফারেল পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে।
খ. সকল প্রতিবন্ধী শিশুকে প্রতি বছরে প্রতিবন্ধীতার ধরন ও মাত্রা মূল্যায়নে ডাক্তারের দ্বারা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।
গ. প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু বিকাশকেন্দ্র স্থাপন ও অভিভাবকদের জন্য লালন প্রশিক্ষন প্রদান করতে হবে।
৬. কর্মসংস্থান:
ক. বিসিএস চাকুরিতে এক শতাংশ কোটা প্রবর্তনসহ সরকারী বিভিন্ন শ্রেণীর পদে কোটা বাস্তাবায়ন করতে হবে।
খ. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানে ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষন, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোগের জন্য ঋনের ব্যবস্থা করা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহারে সার্বজনীন নক্সা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং প্রশিক্ষন প্রদান করতে হবে।
৭. প্রতিবন্ধী নারী ও শিশু:
মহিলা অধিদফতরে প্রতিবন্ধী নারীদের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি সাধারণ নারী উন্নয়নের চলমান কার্যক্রমের সুযোগ-সুবিধা ও প্রকল্পে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। প্রতিবন্ধী নারীর আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষন এবং কর্মপরিবেশ সৃ্ষ্টিতে উৱসাহিত করতে হবে। নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারের চলমান সকল কার্যক্রমসহ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্যাতিত প্রতিবন্ধী নারী ও শিশু বান্ধব করতে হবে।
৮. বিবিধ:
ক. প্রস্তাবিত জাতীয় ইমারত নির্মান বিধিমালাসহ গণস্থপনা ও গণপরিবহনে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
খ. ভূমিহীন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের সংগঠনের জন্য খাস জমি বরাদ্দ এবং সামাজিক বনায়নে অংশগ্রহণে বিশেষ ব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
আমি আশা করি, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের অধিকার, মর্যাদা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উপস্থাপিত দাবিগুলো বিশেষ গুরুত্বের সাথে প্রতিফলিত হবে।