নির্মিত হলে ৪৩ ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে
।। সাকির আহমদ ও ফখরুল ইসলাম, সিলেট থেকে ।।
টিপাইমুখ বাঁধ নির্মিত হলে বাংলাদেশে পরিবেশ, সামাজিক-অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য সমস্যাসহ ৪৩ ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে। এই বাঁধ ইস্যুতে সিলেট বিভাগের সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পরিবেশবাদী সংগঠন, সুশীল সমাজ টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। আন্দোলনকারীরা টিপাইমুখ বাঁধের ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে দেশে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে যেভাবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে বিপর্যস্ত করেছে, অনুরূপভাবে টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত করতে চাইছে। তারা দাবি করছেন, সরকারকে জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভারতকে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ থেকে বিরত রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।
টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধী গণপার্লামেন্ট, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, গোলটেবিল বৈঠক ইত্যাদি প্রায় প্রতিদিনই পালিত হচ্ছে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, অবিলম্বে ভারত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধের ঘোষণা না দিলে আরো তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আন্তর্জাতিক নদী নীতি লঙ্ঘন করে ভারতকে এই বাঁধ নির্মাণ করতে দেয়া হবে না। সুরমা-কুশিয়ারা-মেঘনার মূল নদী বরাকের টিপাইমুখ নামক স্থানে ভারত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন সূত্র মতে, ইতিমধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০৮ মিটার উঁচুু এই বাঁধ নির্মাণের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে ভারত। বাঁধটি বাংলাদেশের জকিগঞ্জ উপজেলার আমলসীদ সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে নির্মিত হচ্ছে। যে বরাক নদীর উপর বাঁধ নির্মিত হচ্ছে তা জকিগঞ্জ সীমান্তে এসে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মেঘনায় মিলিত হয়েছে।
টিপাইমুখ বাঁধের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নদী নীতি লঙ্ঘন করে ভারত সুরমা, কুশিয়ারা ও মেঘনা নদীর পানি প্রত্যাহার করবে। এই বাঁধ নির্মিত হলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ দেশের সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মারাত্মক পরিবেশ ও আর্থিক বিপর্যয় নেমে আসবে। কৃষি, মৎস্য, জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। বর্ষাকালে প্রবল বন্যা আর শীতকালে পানির জন্য হাহাকার দেখা দিবে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আকতারুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল শুক্রবার ইত্তেফাককে বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মিত হলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পরিবেশগত ২৩ ধরনের, সামাজিক-অর্থনৈতিক ১০ ধরনের ও স্বাস্থ্যগত ১০ ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৩ থেকে ৫ কোটি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার প্রকোপ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাবে, সুরমা, কুশিয়ারা ও মেঘনা নদীতে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছবে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাবে, মাছে-ভাতে বাঙালি এই প্রবাদটির অপমৃত্যু ঘটবে, কৃষি, মৎস্য, শিল্প ও অন্যান্য সেক্টরে বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি আর্থিক ক্ষতি হবে, জনস্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে, মহামারী আকারে মাছের মড়ক দেখা দেবে, ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধি পাবে।
টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বিশেষ করে সিলেটে অনেকদিন ধরে আন্দোলন চলছে। কিন্তু এসব উপেক্ষা করে ভারত বাঁধ নির্মাণের তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ায় দিন দিন আন্দোলন তীব্র হচ্ছে। নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেও টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংসদে সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনের এমপি আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজ আহমদ মজুমদার টিপাইমুখ বাঁধের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে এ ব্যাপারে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের দাবি জানান। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে সিলেটে সুরমা নদীর তীরে গণপার্লামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। অঙ্গীকার বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত গণপার্লামেন্টে সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করে এই বাঁধ নির্মাণ প্রতিহত করার আহবান জানান। গণপার্লামেন্টে টিপাইমুখ বাঁধ ইস্যুতে বিল উত্থাপন করেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নাজিয়া চৌধুরী।
টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরে সিলেটে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও কর্মসূচি পালন করছে। জামায়াতে ইসলামী, বাসদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, তালামীয়ে ইসলামীয়ার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মুক্তমঞ্চের উদ্যোগে টিপাইমুখ বাঁধের প্রভাব নিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মোহাম্মদ আকতারুল ইসলাম চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারত ইতিমধ্যে ৩৫টি ট্রান্স বাউন্ডারি (দুই দেশের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত নদী) নদীর উপর ৫০টিরও বেশি বাঁধ নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের সাথে কোন আলাপ-আলোচনা না করেই। একইভাবে তারা ট্রান্স বাউন্ডারি নদী বরাকের টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ করতে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক নদী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মিত হলে বাংলাদেশে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে।
উৎসর্গ দিগন্তকে এবং যারা ভারতে মোহে ও গুনগানে অন্ধ সেই সব ভারতপ্রেমিদেরকে।
একেই বলে প্রতিবেশী। বাংলাদেশের মরু করণের পথে আর এক ধাপ এগিয়ে ভারত।
লিংকঃ
Click This Link
শিয়ালের কাছে জানতে চাওয়া যে মুরগির খাচার মডেল কেমন হবে। বিডিআর পুনর্গঠনে প্রতিবেশী দেশের সহায়তা নেয়া হবে : স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
লিংকঃ
Click This Link
সিলেটবাসী আপনাদের সাথে পুরা বাংলাদেশের দেশপ্রমি মানুষ আছে এবং থাকবে।
বাংলাদেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে যারা অন্যকে সন্তুষ্ট করতে চাই তারা বাংলাদেশের শত্রু।