somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভু টু ক চা নে র ডা য় রি ✍ যে শহরে আমার কোনো বন্ধু নেই!

২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

⌚যেখানেই যেতাম, কোনো না কোনো আত্ত্বিয়তা থাকতোই। যার সাথে দেখা হতো তার সাথেই একটা পূর্বসূত্র থাকতো। পারিবারিক কোনো বন্ধন না থাকলেও সবচেয়ে বড় বন্ধনটা থাকতো বন্ধুত্বের। হ্যাঁ, আমার সেই মফস্বল শহরটা আমার বেশ প্রিয় ছিল। সেই শহরের অলিগলি, মানুষগুলো বেশ চীরচেনা আর আত্নার কাছাকাছি ছিলো। সবই আমার আর আমি সবার। কিন্তু মনের ভেতর তবুও একটা খটকা থাকতো, শহরটার প্রতি মুগ্ধতা থাকলেও আমি ছিলাম তার অদৃশ্য প্রেমিকের মতো। শহরের সাথে জড়িত প্রতিদিনকার জীবন আর আমার ভালবাসা মিশে থাকলেও সেই শহরের প্রতি তখনো আমার কোনো অধিকার ছিলো না। আমি সেই যোগ্যতায় যেতে পারিনি। কারণ আমার চোখ তখনো যে, ‘বাড়ি ভাড়া দেওয়া হবে’ সাইনবোর্ড খোঁজে! তখনো আমি আমার প্রিয় শহরটাতে ভাড়াটিয়া পরিচয়ে বেড়ে উঠছি, বড় হচ্ছি! আর এই বিষয়টা যখন মাথায় আসতো, আমার ভাবনায় কেবল একটা শূণ্যতা সৃষ্টিকারী লাইন চলে আসতো। মাথার ভেতর বার বার উচ্চারিত হতো,

এ শ-হ-র আ-মা-র ন-য়!


আজ আমি আততায়ীর মতো যে শহরে ঘুরি, সেই শহরটা আমার। প্যারিসের মায়াজাল আর তার জাদুময় মমতার ছিটেফোটা আমার উপরও বর্ষিত হয়েছে। আমিও আর্শিবাদপুষ্ট হয়েছি আর সকল দূর্ভাগাদের মতো। কিন্তু এই শহরের মানুষগুলো যে আমার নয়! এই শহরের আলো বাতাস আমার কিন্তু প্রিয় কোনো মানুষের নিশ্বাসের উষ্ণতা পাই না এখানে। বাড়িয়ে দেয়া হাতগুলো বন্ধুর পরিবর্তে পেশাগত পরিচয় নিয়ে হাজির হয়। কেউ কলিগ, কেউ পরিচিত বাঙালি বা কেউ নিতান্তই পথচারী। কারো কাছে আমি বিদেশী আর আমার কাছে অন্যরা। এ শহরে আমার কোনো বন্ধু নেই; কেউ নেই। শহর আমার হয়ে গেলো ঠিকই কিন্তু মানুষগুলো পর গেলো!

এখানে আমি সংকোচিত হয়ে থাকি, অদৃশ্য অপরাধে আততায়ীর মতো বিচরণ করি। কেউ না জানুক আমি তো জানি, কতশত সুখের মুহূর্ত্যের হন্তারক আমি! কত আশার ভ্রুণ পায়ে মাড়িয়ে, কত স্বপ্নের টুটি চেপে এগিয়ে চলেছি এক আততায়ীর মতো করে। এ যেনো নিজের ছায়ার তাড়া খেয়ে পালিয়ে বাঁচা!

এসব ভাবতে ভাবতে আমি আইফেল টাওয়ার পিছনে রেখে এগিয়ে যাই। স্যইন নদীর তীর ধরে মেইন রাস্তার ফুটপাতে যে ভ্রাম্যমান স্ট্রীট আর্টিস্টরা পর্যটকদের তাৎক্ষণিক ছবি একেঁ দেয়, তা দেখি। আমার কেনো জানি ঐ আর্টিস্টদের ছবির বিষয় হতে ইচ্ছে হয় না। নিজেকে একটা ফ্রেমে আটকানোর ইচ্ছে মনে হয় আমার কোনো কালেই ছিলো না! তাই তো এতো যাযাবর জীবন, এতো ছুটে চলা।

আমি রাস্তায় নেমে পড়ি। বিশাল রাস্তা। এপাড় আর ওপাড়ের মাঝে বিরাট ব্যবধান। এই বিশাল রাস্তাটা দেখলে আমার কেবল প্রিন্সেস ডায়নার কথা মনে পড়ে। আমার কেবল মনে হয়, কোনো এক দূর্ঘটনা কবলিত গাড়ির ভেতর থেকে ডায়নার চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকে না কিভাবে এমন একটা রাস্তায় দূর্ঘটনাটা ঘটলো? কতশত প্রশ্ন জাগে! এর আগে বা পরে কি এমন আর কোনো ঘটনা ঘটেছে? রাজনীতি আমি বুঝি না বলেই হয়তো এসব চিন্তা বেশী সময় মাথায় থাকে না। আর এ তো বিশ্ব রাজনীতি!

এভাবেই হেঁটে হেঁটে একটা পার্কে চলে আসি। হয়তো নামফলক দেখলে পার্কের নামটা জানা যাবে, কিন্তু আমার আগ্রহ জাগে না। আমি বরং আরেকটু সামনে এগিয়ে যাই। বিশাল একটা মূর্তির পাদদেশে দাঁড়াই। আমার চোখ বরাবর সেই মূর্তির নামফলক, তা থেকে স্পষ্ট দেখা যায় লেখা আছে; নেপোলিওন বেনাপোর্ট। এই সেই নাম যা শিশুকালেই আমাদের মস্তিস্কে বাসা বেঁধেছিলো, এখনো আছে। তাঁর অপার মহিমা, সাম্রাজ্য জয়ের গল্প আর কতশত বিরত্বগাঁথা। আমি সেই মূর্তিটাকে ভালো করে দেখি। নেপোলিওনের দৃষ্টি এখোনো সেই সুদূরের পানে। এখনো দেখলে মনে হয়, এই বুঝি তাঁর বাহিনীকে নির্দেশ করবে দূরের সেই সাম্রাজ্যে নিজেদের পতাকা স্থাপনের জন্য। আমি নেপোলিওনের মূর্তিটার গায়ে হাত রাখি। তারপর চেষ্টা করি তার চেহারার দিকে তাকানোর। আমি তাকে বলি, হে বিরাট সাম্রাজ্যের অধিকারী, আমাদের আশৈশবের নায়ক, তুমি কি একটু নিচের দিকে তাকাবে? তুমি কি একবার দেখবে, কত কত সাম্রাজ্য জয় করা তোমার সাম্রাজে একজন এসে, সে তার নিজের সাম্রাজ্য হারিয়ে ফেলেছে? বিশ্ব জয় করা হে মহানায়ক, তুমি কি একবার চেয়ে দেখবে? তোমার নিজের সাম্রাজ্যে কেউ একজন নিঃস্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে!

প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর আসে না, কেবল প্রতিধ্বণি হয়। সেই প্রতিধ্বণিগুলোও নাগরিক সন্ধ্যার আকাশে ক্রমাগত মিশে যায়, ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায়।

প্রকাশিত।লেখাটি এই ফেসবুক পেজেও প্রকাশিত
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×