জার্মান ব্লগগুলোতে যারা লেখালেখি করেন তাদের অনেকেরই খুব নাক উঁচু। এক শ্রেনীর ব্লগাররাতো তাদের লেখার সাহিত্যমান নিয়ে খুবই সচেতন। কারো কারো ব্লগে লেখা নিয়ে রীতিমত রিডিং সেশন হয়। একবার একজন রাস্তায় খাবার বিক্রেতা একটি ব্লগে লেখা শুরু করল এবং তা খুব জনপ্রিয় হলো। সেই ব্লগে একদিন একজন মন্তব্য করল যে এরপরে আমরা দেখব যে একজন ক্লোফ্রাউ (টয়লেট পরিস্কারকারী নারী) ব্লগিং শুরু করেছে। এই মন্তব্য জার্মান ব্লগোস্ফিয়ারকে দুভাগ করে দিল। একদল বলল আরে ভারী মজা হবে তো -শুরু হোকনা। আরেকদল নাক সিটকালো। বলল সাহিত্যমান ছাড়া আবার ব্লগ হয় নাকি? সব আনকালচারড, অশিক্ষিতের ভিড়ে ব্লগের বারোটা বাঁজতে দেরী নেই। বিতর্কটি এখনও হয়তো চলছে সেখানে। কিন্তু সেদিন টিভিতে ডকুমেন্টারী দেখলাম এক ঘানার মহিলা ক্লোফ্রাউ জার্মান একটি শহরের টয়লেটে কাজ করে তার আয় থেকে জমিয়ে তার দেশে একটি এতিমখানা চালাচ্ছে। কি উজ্জ্বল এবং অনন্য সে এসব অনেক কালচার্ড এর মাঝে থেকেও।
বাংলাদেশে ব্লগিংয়ের চিত্রটি পর্যবেক্ষন করলে দেখা যায় সাধারনত: মধ্যবিত্ত -উচ্চ মধ্যবিত্তরাই ব্লগায়। কারন একটাই- ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও মুল্য। উচ্চবিত্তদের বিনোদনের অন্যান্য উপায় রয়েছে। নিন্মবিত্তদের নেই কোন উপায়।
সাহিত্য চর্চা ও বইপ্রকাশনার দিকে তাকালে দেখা যায় সেখানে উচ্চ এবং উচ্চ মধ্যবিত্তের দাপট। নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে বই প্রকাশ করে বন্ধুদের মাঝে বিলোতে হয়। অথচ মধ্যবিত্ত অথবা নিন্ম মধ্যবিত্ত অনেক লেখক বছরের পর বছর অপেক্ষা করে একটি বই ছাপানোর সুযোগের জন্যে। ইন্টারনেট তাদের জন্যে হতে পারে একটি অপুর্ব সুযোগ। উদাহরনস্বরুপ আমি সচলায়তনের ই-বুকের কথা বলব।
কিন্তু আমাদের দেশে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রেনী রয়েছেন। তারা হচ্ছেন প্রান্তীক ও কর্মজীবি নারীরা। এদের মধ্যে কাউকে আপনারা দেখেন সকালে টিফিন ক্যারিয়ার হাতে মিছিল করে চলতে। তাদের গতিতেই দেশের গতি, বৈদেশিক মুদ্রা, অথবা মালিকের মার্সিডিজ অফরোড ভেহিকেল।
তাদের কন্ঠ কি আমরা কখনও কেউ শুনতে চেয়েছি? জানতে চেয়েছি তাদের প্রিয় চলচিত্র কি? তাদের মা কি কষ্ট করে তাদের এত বড় করেছেন? তাদের সুখদু:খ, দেশভাবনা, আশা বেদনার কথা?
ইন্টারনেট একটি খুবই উর্বর মাধ্যম। গ্লোবাল ভয়েস অনলাইন হার্ভার্ড ল স্কুলের বার্কম্যান সেন্টার ফর ইন্টারনেট এন্ড সোসাইটিতে (সমাজে ইন্টারনেটের প্রভাব সম্পর্কে একটি গবেষনা প্রতিষ্ঠান) প্রতিষ্ঠিত একটি অলাভজনক আন্তর্জাতিক নাগরিক মাধ্যম (সিটিজেন মিডিয়া) প্রকল্প। তাদের আরেকটি নুতন প্রকল্প হচ্ছে রাইজিং ভয়েসেস। এটির উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ওয়েবে আন্ডার রিপ্রেজেন্টেড কমিউনিটির কন্ঠগুলোকে তুলে ধরা। তাদের ৫০০০ ডলার মূল্যের মাইক্রোগ্র্যান্ট পেয়েছেন পাঁচটি সংগঠন যার মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশের [wjsK=http://www.narijibon.com/নারী জীবন প্রকল্প]।
কাজী রফিক ইসলাম এবং ক্যাথি ওয়ার্ড হচ্ছেন ঢাকার নারী জীবন প্রকল্পের যথাক্রমে সমন্বয়কারী এবং নির্বাহী পরিচালক। এদের ওয়েবসাইট থেকে আপনি জানতে পারবেন তারা ঢাকার যুবনারীদের নিয়ে চোখে পড়ার মত কাজ করছেন। রাইজিং ভয়েসেস ক্ষুদ্র অনুদানের সহায়তায় তাদের বর্তমানে সেবাদানরত বাংলা, ইংলিশ এবং কম্পিউটার ক্লাসের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশী নারীদের ব্লগিং, ফটোগ্রাফী এবং ভিডিওব্লগিং করতে শেখাচ্ছেন। আপনারা ‘বাংলাদেশ ফ্রম আওয়ার ভিউ’এই ইংরেজী ব্লগে এবং 'আমাদের কথা' নামক বাংলা ব্লগে এইসব নারীদের লেখা দেখতে পারবেন। এখানে প্রকল্পটির অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত রয়েছে।
ওদের বাংলা ব্লগটি আমার মনযোগ আকর্ষন করেছে। যদিও লেখাগুলো কিছুটা সম্পাদন করা হয়েছে, তবুও এইসব নারীদের গ্রামের বধুর সৌন্দর্য নিয়ে পদ্য, মায়ের মৃত্যু, বা কর্মজীবি মহিলার সংগ্রামের কথা ওগুলো মৌলিক এবং সবই হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আমরা হয়ত এরকম কিছু কখনও পত্রিকায় দেখেছি রিপোর্টারের চোখে। কিন্তু এখানে তাদের নিজস্ব কথা তারা নিজেরাই টাইপ করেছে তাদের কম্পিউটার শিক্ষার অংশ হিসেবে। এরকম আরও কত গল্প রয়েছে আপনারা নিজেরা পড়ে দেখুননা।
আমি চিন্তা করছি কোনদিন কি ইন্টারনেট আমাদের সমাজে শ্রেনীভেদ ঘুঁচিয়ে নিজেকে প্রকাশ করার সমান অধিকার দেবে? কোন দিন কি এদের মাঝ থেকে কোন লেখকের বই আমাদের শেল্ফে শোভা পাবে?

আলোচিত ব্লগ
গণতন্ত্র ও নির্বাচিত শব্দের নয়া ব্যাখ্যা দিলেন ফরিদা-মজহার দম্পতি !
বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুটা ছিল জনতার কণ্ঠে, এখন সেটা রূপ নিচ্ছে কিছু নির্দিষ্ট গলার একচেটিয়া লোকের তর্জন-গর্জনে । শুরুর দিকে বলা হয়েছিল, এটা অস্থায়ী সরকার—জনগণের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমেরিকা আমাদের দেশে সরকার পরিবর্তনে সক্ষম হয় কেন?
আমাদের দেশের সরকার সমূহ যখন সরকার পরিবর্তনের ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয় তখন বিশ্ব মোড়ল হিসাবে আমেরিকা আমাদের দেশের সরকার পরিবর্তন তাদের দায়িত্ব মনে করে। তারা এটা করে আমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিছক যড়যন্ত্র নয়(কপি পেস্ট)
*গা শিউরে ওঠার মত ঘটনা... বাংলাকে ঘিরে গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ্যে? পড়ুন বিজেপির নিজেদের মধ্যেকার এক ব্যক্তির ফাঁস হওয়া মেসেজ..*
-------------------------------
আমায় আমার নাম, পরিচয় প্রকাশ করতে অনুরোধ করবেন না। চাকরি সহ জীবনটাও... ...বাকিটুকু পড়ুন
আজকের ডায়েরী- ১৫০
গতকাল ছিলো বাংলা নববর্ষ।
সকালে এক জরুরী কাজে আমি উত্তরা গিয়েছিলাম। আমার তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার কথা। কিন্তু দেরী করে ফেললাম। আজ বাসার সবাই মাওয়া যাবে। সেখানেই... ...বাকিটুকু পড়ুন
এই সময়ের কিঞ্চিৎ ভাবনা!
বাক স্বাধীনতা কিংবা যা মনে আসছে তাই লিখে বা বলে ফেলছেন, খুব একটা ব্যাক স্পেস চাপতে হচ্ছে না এখন, তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে এবং যে কোন দল নির্বাচিত হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন