আঁতুড় ঘর । #রাজা সরকার।
ভূমিকা-
আমি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ।যদিও জন্মসুত্রে পূর্ববঙ্গের।আপাতত যাকে বলা হয় 'বাংলাদেশ'।১৯৬৪ সালের এক সকালে আমাদের ছাড়তে হয় জন্মের ভিটেমাটি ।তখন আমার বয়স মাত্র ১১ ।
এটা এখন ইতিহাসের বিষয়।দেশভাগ বা পরবর্তীতে বাংলাদেশের জন্ম বা সে দেশে একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু অংশের মানুষের অবস্থা---এসবই এখন গবেষণার বিষয়।কিন্তু আমি আমার বিবর্তন এই দীর্ঘ সময় ধরে লক্ষ্য করেছি যে আজো আমি আমার জন্মসুত্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। পারিনি অখন্ড হতে যেতে । বর্তমান প্রেক্ষিতে এটা কোনো ব্যথর্তা কিনা জানিনা ।
অথচ একই শ্রেণী-অবস্থানের মানুষদের দেখেছি যে তাদের এবিষয়ে কোনো যাতনা নেই।অনেকের সেসব তেমন মনেও নেই। নাকি মনে রাখার ইচ্ছাটাও নেই! সেটা অবশ্য জানা যায়না।এই প্রসঙ্গে কোনো কথা উঠলেই প্রথমে যেটা শুনতে হয় তার নির্যাস অনেকটা এরকম--"না না ঐদেশের কথা ছাড়োতো,ওখানে থাকতে হলে হয় মুসলমান হও নয়তো জান মান ওদের কাছে জমা দাও।যে কয় খান হিন্দু এখনো ওখানে আছে তারা কি ভালোমত আছে মনে করো? খোঁজ নিয়ে দেখো,বুঝতে পারবে,তখন তোমার এইসব আবেগ কোথায় থাকে দেখবো"।
এভাবেই এসব কথা চলতে থাকে। আমি কোনো উত্তর দিইনা বা বলা ভালো দিতে পারিনা। দিতে গেলে তথ্য দিতে হয়,তথ্য দিয়ে আবার বিশ্বাস করাতে হয়।অনেকসময় তাতে কিছুটা কাজ হয়।অনেকসময় কোনো কাজ হয়না।বুঝতে পারি ঘা শুকোয়নি আজো ।হতে পারে, কিন্তু 'ঘা' যে সবখানি সত্য নয় তা কবে শোনা যাবে ?
একটা আঘাত, আঘাত থেকে ঘা,যা অস্বীকার করা যায়না।ফলে আমাকে শুনতেই হয়।যেহেতু কথাটা আমিই তুলি। কিন্তু আমার মতো দ্বিখন্ড কে আছে আর ! না কেউ নেই, একা এক অদৃশ্যের এই আত্মরক্ষায় ।
আমি আর কোনো কথাই বলতে পারিনা।কিছুতেই ঢুকতে পারিনা এই বেড়াজাল ভেঙ্গে। যদিও বুঝতে পারি এর ভেতরই জমে আছে দ্বিখন্ডিতের যন্ত্রণা। জেগে আছে সেই সব উদ্বাস্তু বালক বালিকারা ।
৩০ ৪০ ৫০ ৬০ দশকের বিবর্ণ বছরগুলো যেন বাতাসে উড়ছে---পাশের বাড়ির ঘটি(পশ্চিম বঙ্গীয়) বউটি বলছে--দূর হ, দূ হ মুখপোড়ারা,বিদেয় হ দিকিনি---।
---তো এরা যাবে কোথায়?????
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১২:২৭