somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কয়েক মিনিটে হাজার প্রান কেড়ে নেওয়া একটি ঘাতক লেকের কাহিনী

২০ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২১শে আগস্ট ১৯৮৬। পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ ক্যামেরুনের বর্ষাসিক্ত উচ্চ ভূমিতে ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে আসে। মেষপালক হাদারী তার পরিবার-পরিজন নিয়ে পাহাড়ের উপর একটি বাড়িতে থাকে। পাহাড়ের নিচেই হালকা আলোতে জ্বলজ্বল করছে লেক নাইওস। কেউই তখন কল্পনা করতে পারেনি যুগ যুগ ধরে ওদের জীবন-জীবিকার উৎস এই লেক তাদের জন্য প্রানঘাতী হয়ে উঠবে।

নাইওস উপত্যাকায় হাদারীদের গ্রাম লোয়ার নাইওস। সারাদিনের কাজ শেষ করে ফেরা গ্রামবাসী সন্ধ্যার খাবার এবং ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। অকস্মাৎ এক বিকট শব্দে হাদারী চমকে উঠে। পাহাড়ের উপর সে তার বাড়ী থেকে বের হয়ে দেখে এক পুঞ্জ মেঘের মতো ধোয়া ভৌতিকভাবে নাইওস লেক থেকে ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠে আসছে। ক্রমেই ধোয়া বাড়তে থাকে। নিমিষেই এ ধোয়া আশেপাশের উপত্যকাগুলোর গ্রামগুলোতেও ছেয়ে যায়। প্রাণভয়ে হাদারী তার পরিবার নিয়ে আরো উচু একটি পাহাড়ের ঝোপে আশ্রয় নেয়। ততক্ষনে পুরো লোয়ার নাইওস গ্রাম এ আজব ধোয়া আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে। সারারাত ঝোপে লুকিয়ে থেকে সকালে গ্রামে ফেরে হাদারী। গ্রামে ফেরে সে তার নিজ চোখকেও বিশ্বাস করতে পারে না। প্রতিটি বাড়ীর দরজায়, শোবার খাটে, ঘরের মেঝেতে শুধু লাশ আর লাশ পড়ে আছে। কেউ কেউ খাওয়ারত অবস্থা মারা গিয়েছে। শুধু মানুষ নয়, গ্রামের ছোট-বড় সব প্রানীকেও মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। কিন্তু বাড়ী-ঘরের কোনই ক্ষতি হয়নি। অনেকটা নিউট্রন বোমার আঘাতের মত।


কি হয়েছিলো ওইদিন??
সেই ঘটনার দুই মাস পর ভূ-বিজ্ঞানী কাট স্টাগার এই দুর্ঘটনার কারন অনুসন্ধানের জন্য সেখানে যান। অনুসন্ধানে বের হয় ওইদিন লেক নাইওস থেকে ১শ কোটি ঘন মিটার গ্যাস উদগিরণ হয় যার কারনে লেকের পানি ১ মিটারেরও বেশী কমে যায়। ওইদিন ছড়িয়ে পরা গ্যাসের ৯৮-৯৯ ভাগ ছিলো কার্বন-ডাই অক্সিড। এই বর্নহীন ঘন গ্যাস পানির চেয়ে দেড় গুন ভারী। এটি বাতাসের অক্সিজেনকে নি:শেষ করে দেয়। একই ঘটনা ঘটেছে লেক নাইওস এলাকার গ্রামগুলোতে। বায়ুতে অক্সিজেন না থাকায় মুহূর্তের মধ্যে লোয়ার নাইওস গ্রামে ১২শ এবং আশে পাশের গ্রামে ৫শ'র মতো মানুষ মারা যায়। পুরো প্রক্রিয়াটি ঘটতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট।

এতো গ্যাস আসলো কোথা থেকে কিংবা এই গ্যাস উদগীরনের কারন কি??

এরকম ভয়ানক একটি ঘটনার মূল কারন এখনো সঠিকভাবে বের করা সম্ভব হয়নি। সম্ভাব্য একটি কারন হলো কয়েকশ বছর ধরে এই গ্যাস পানির সাথে মিশে এই লেকটি একটি টাইম বোমায় পরিনত হয়। কিন্তু এরকম বিস্ফারন্মুখ পরিস্থিতির সৃষ্টি হল কেন?? বিজ্ঞানীদের মতে, পাহাড় থেকে বড় কোন পাথর ভেঙ্গে পানিতে পড়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, ঝড়ো বাতাসের কারনেও এটি ঘটতে পারে। মূল কারন হলো পানিতে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমান বেড়ে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল যা সামান্য পুশেই বিস্ফোরিত হয়।

এ ঘটনার পরে লেকের কিনারে বসবাসরত আদিবাসীদের বাচানোর জন্য নানারকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় কিন্তু এখনও এই লেকের পানিতে গ্যাসের পরিমান বিপদজনক অবস্থায় আছে। স্থানীয় আদিবাসীরা অবশ্য তাদের নিজস্ব পন্থায় চেস্টা করে যাচ্ছে যেমন: তাদের ধারনা লেকের পানিতে মাম্মি ওয়াটার নামের এক ঐশ্বরিক মহিলা বাস করে, সে নাখোশ হলেই এ ধরনের দুর্যোগ আসে। তাই তারা লেকের পানিতে নানারকম পশু-প্রানীকে জবাই করে উৎসর্গ করে তাকে খুশী রাখার জন্য।

বুড়িগঙ্গা নদী হওয়াতে এ আশংকা কম কিন্তু আমার মনে হয় বাংলাদেশ সরকারের উচিত বুড়িগঙ্গা নিয়ে বাস্তব কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া। এরকম একটি ঘটনা সদরঘাট এলাকায় ঘটলে নিমিষেই ৫ লাখ মানুষ মারা যাবে। সংখ্যাটা আরো বেশী হতে পারে।





সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১০:০৩
৪৩টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিটিংয়ের জন্য কেন এত তোড়জোড়?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:১২



অর্থাৎ চীনের সহায়তায় লালমনিরহাটের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এয়ার বেইস চালুর চেষ্টা, তিস্তা মহাপরিকল্পনা চীনকে নিয়ে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ও চীনে গিয়ে ডক্টর ইউনূসের সেভেন সিস্টার্স সম্পর্কিত বক্তব্য ভারতের ভালো লাগেনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কানাডার প্রধানমন্ত্রী ঈদের শুভেচ্ছা এবং বাংলাদেশে এর প্রতিফলন

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:১৮



গত বছরের মতো এবছর আর কানাডার প্রধানমন্ত্রী ঈদের শুভেচ্ছা জানাননি। রোজার শুরুতেও “রামাদান করিম” শুভেচ্ছাবচনটি কেউ পাঠায়নি। আগে যখন ট্রুডো ঈদের ঠিক আগে আগে সরকারি দপ্তর থেকে কানাডার মুসলিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

অকুতোভয় বাসচালক মো. সোহেলকে পুরষ্কৃত করা হোক

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৭

অকুতোভয় বাসচালক মো. সোহেলকে পুরষ্কৃত করা হোক

ছবিসহ মিনি পোস্টারটি এআই দিয়ে তৈরিকৃত।

থেঁতলানো চোয়াল, ভেঙ্গে গেছে দাঁত, রক্তাক্ত অবয়ব—তবু ৪০ কিমি বাস চালিয়ে যাত্রীদের বাঁচালেন! এই সাহসী চালকই বাংলাদেশের নায়ক... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর পর যা হবে!

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৪২



বেহেশত বেশ বোরিং হওয়ার কথা।
হাজার হাজার বছর পার করা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। দিনের পর দিন একই রুটিন। এরচেয়ে দোজক অন্য রকম। চ্যালেঞ্জ আছে। টেনশন আছে। ভয় আছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফ্যাসিবাদ!

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:০৮



অবকাশের দিনগুলোর ছুটির ফাঁদে নিজেকে নতুন করে চেনাই-
আমার বহুদিনের চেনা শহর।
কতকিছু বদলে গেছে নাকি তারোধিক বদলে গেছে,
সুশীলের আবরণে অসুশীল মানুষ?
শৈশবে শহরটা যাদের কাছে জমা রেখে গিয়েছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×