পোস্টটি যখন লেখা শুরু করেছি, তখন ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১১। কুখ্যাত নাইন ইলেভেনের দশম বার্ষিকী। পোস্টের বিষয়বস্তুতে যাওয়ার আগেই তাই নাইন ইলেভেনের হামলায় যেসব নিরীহ প্রাণ ঝরে গিয়েছিলো, তাদের প্রতি জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা। নাইন ইলেভেন নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, হয়েছে অনেক বিতর্ক। এই হামলায় এবং এই হামলার জের ধরে প্রাণ দিতে হয়েছে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষকে, প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে দুটি দেশ। কাজেই, এই হামলা কেনো হয়েছিলো, কে বা কারা করেছিলো, কীভাবে করেছিলো, এসব জানার অধিকার মানুষের আছে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের যে ঘটনা আমরা সবাই জানি, তা হলো একদল মুসলিম টেরোরিস্ট চারটি প্লেন হাইজ্যাক করে দুটি দিয়ে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আর একটি দিয়ে পেন্টাগনে সফলভাবে হামলা চালায়। অপর প্লেনটি পেন্সিলভানিয়ায় ভূপাতিত হয়। কিন্তু যে বড় একটি ব্যাপার অনেকেই জানি না, তা হলো অনেক বিশেষজ্ঞের মতে বিমান হামলার ফলে বিল্ডিং দুটো ভাঙেনি, বরং ভেঙেছে একটি নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে। এঁদের মধ্যে আছেন পদার্থবিদ স্টিভ জোনস, আর্কিটেক্ট রিচার্ড গেজ, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জিম হফম্যান প্রমুখ। উল্লেখ্য, ১১০ তলা বিল্ডিংদুটি মাটিতে ভেঙে পড়তে যথাক্রমে মাত্র ৯ সেকেন্ড ও ১১ সেকেন্ড সময় নেয়, যা মোটামুটি মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর বেগের কাছাকাছি।
ভবনগুলো ধ্বসে পড়ার পর ধ্বংসস্তুপ থেকে কোনো কংক্রিট পাওয়া যায়নি, এত বড় ভবনের কোনো তলার কোনো চিহ্নই পাওয়া যায়নি। যে প্রবল তাপে কংক্রিট জাতীয় বস্তু বাষ্পীভূত হয়ে যায়, তা কোনভাবেই জেট প্লেনের জ্বালানি পুড়িয়ে উত্পন্ন করা সম্ভব নয়। যদি বিল্ডিংগুলো প্লেনের আঘাতেই পুরোপুরি ভাংতো, তাহলে তা এত নিখুঁতভাবে সরাসরি উল্লম্ব দিকে পড়ার কথা না। এভাবে সরাসরি নিচের দিকে ফেলার জন্য শুধু যে বিস্ফোরণ দরকার, তাই নয়, বরং একটি পূর্ব পরিকল্পিত ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির (যে পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির কোনটাই আফগানিস্তানের পাহাড়ের গুহায় বসে করা অসম্ভব) সাহায্যে সেটাকে খুব সাবধানে নিয়ন্ত্রণ করাও দরকার, যেনো বিস্ফোরণের সময় তা কোনো দিকে হেলে না পড়ে। পতনের ক্ষেত্রে আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে পতনের ত্বরণ। যেহেতু বিমানদুটি ভবনগুলোর উপরের দিকে আঘাত করে, কাজেই এরকম পতনের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিচের অংশ উপরের অংশকে পড়তে বাধা দেবে বা পতনের ক্ষেত্রে ত্বরণ নয়, মন্দন লক্ষ করা যাবে। কিন্তু এই হামলার ফলে বিল্ডিংদুটি ত্বরণে পড়ে, মন্দনে নয়, আর এই ত্বরণ ছিলো মোটামুটি অভিকর্ষজ ত্বরণের সমান!
যে দুটি বিল্ডিংয়ে ১১ সেপ্টেম্বর হামলা চালানো হয়, তার মধ্যে দক্ষিন ভবন ৫৬ মিনিটে এবং উত্তর ভবন ১০২ মিনিটে ভেঙে পড়ে (সময়গুলো হামলার পর থেকে মাটিতে পড়া পর্যন্ত গণনাকৃত)। এই হামলার তদন্তের অফিসিয়াল রিপোর্টে বলা হয়, জেট প্লেনের ইঞ্জিনের জ্বালানি পুড়ে যে তাপ উত্পন্ন হয়, তার ফলে ভবনদুটির কলাম ও ফ্লোর এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে, ভবনদুটি ভেঙে পড়ে। কিন্তু ২০০৬ সালে আমেরিকান পদার্থবিদ স্টিভ জোনস ধারণা করেন যে, থার্মাইট বা সুপার থার্মাইট জাতীয় বিস্ফোরক বিল্ডিংয়ের ভেতরে ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। পরবর্তীতে বিল্ডিংদুটির ধ্বংসস্তুপের ভেতর থার্মাইটের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ২০০৯ সালে জোনস এবং আরো আটজন লেখক একটি জার্নাল প্রকাশ করেন, যেখানে তাঁরা দেখান যে বিল্ডিংয়ের ধ্বংসাবশেষের ভেতর ন্যানো থার্মাইট জাতীয় পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ন্যানো থার্মাইট জাতীয় বিস্ফোরক ব্যবহার করলে বিস্ফোরণের ফলে কাঁচা লোহা উত্পন্ন হয়, যাও ঐ ধ্বংসাবশেষে পাওয়া গিয়েছিলো। আমেরিকান সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেকনোলজি জানায় যে ঐ ধ্বংসাবশেষ নাইন ইলেভেনের ধ্বংসাবশেষ নাও হতে পারে। এর প্রেক্ষিতে জার্নালের লেখকগণ তাদের চ্যালেঞ্জ করলেও সংস্থাটি তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেনি।
এছাড়াও, অনেক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন যে তারা ভবনদুটি ধ্বসে পড়ার আগে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। এই শব্দের কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যাও সরকারী রিপোর্টে দেওয়া হয়নি। জোনস তাঁর প্রতিবেদনে বলেন যে, ভবনদুটি ধ্বসে পড়ার আগে দুই ভবন থেকেই কিছু অনুভূমিক দিকে নিঃসৃত ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়, যা তাঁর মতে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণেরই ফসল। ভবনের পিলারগুলোর ধ্বংসপ্রাপ্ত আকৃতিও নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভেঙে ফেলা ভবনের পিলারের আকৃতির সাথে মিলে যায়।
নাইন ইলেভেনের এই হামলার আরেকটি বড় দিক অনেকেই জানেন না, যা হলো সপ্তম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ধ্বংস। মূলত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বলতে মোট সাতটি ভবনের একটি কমপ্লেক্স বুঝানো হতো, যার সবচেয়ে বড় দুটি ভবন হচ্ছে ভবন ১ ও ২। এই ভবনদুটিতেই হামলার দিন মূল আক্রমণ চালানো হয়। কিন্তু আরো একটি ভবন ঐদিন ধ্বসে পড়ে, যার গায়ে বিমানের আঁচড়ও লাগেনি! আর সেটা হলো সপ্তম ভবনটি। এটি ছিলো ৪৭ তলা একটি বিল্ডিং, যা ছিলো মূল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার কমপ্লেক্সের যথেষ্ট বাইরের দিকে অবস্থিত। এই ভবনটি কীভাবে ধ্বংস হয়, তা আজও সরকারী রিপোর্টে প্রকাশিত হয়নি। উপরে উল্লিখিত বিশেষজ্ঞদের মতে, এটাও ছিলো একটি নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, প্রথম ভবনদুটি ভেঙে পড়ে সকাল ১০ তার দিকে। কিন্তু এই ভবনটি ধ্বসে পড়ে বিকাল ৫:২০ এ। এবং এতে সময় লাগে মাত্র সাড়ে ৬ সেকেন্ড।