প্রিয় এবং অপ্রিয় ব্লগারগন, আশা করি ভাল আছেন। প্রতি মাসের মত এই মাসেও হাজির হয়ে গেলাম আরেকটি ব্লগার'স ইন্টারভিউ নিয়ে। আজকে আমাদের সাথে হাজির আছেন ব্লগার মনিরা সুলতানা আপু । সময় নিয়ে মনিরা আপু আমার প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এই জন্য তাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। আসুন তাহলে আর কথা বাড়িয়ে পুরো ইন্টারভিউটা শুরু করা যাক।
অপুঃ কেমন আছেন?
মনিরা সুলতানাঃ আস সালামু আলাইকুম ! ধন্যবাদ অপু । আমি আলহামদুল্লাহ ভালো আছি । এটা তো সাধারণত সবাই বলে। আমি কেমন কেমন আছি, আপনি বলুন আপনি কেমন আশা করছেন! বেইসড অন আপনি আমার ফেসবুকে আছেন, সেখানে আমার কার্যক্রম, ব্লগে আমার পদচারণা সেসব মিলিয়ে আপনার কী মনে হয়, কেমন আছি আমি ?
ও হ্যাঁ ব্লগার শেরজা তপন আপনি চিন্তা করবেন না মোটেও - বরাবরের মত এবারও ব্লগের নারী কল্যাণ সম্পাদক আপনিই থাকছেন। অপু তানভীর কে আপনার সহ সম্পাদক করা যায় কিনা সেটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে।
অপুঃ নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন। এই প্রশ্নটা সবাইকে করার পরে এই কথাটাও বলি যে অনলাইনে নিজের সম্পর্কে যতটুকু বলা নিরাপদ ততটুকুই বলুন।
মনিরা সুলতানাঃ সত্যি বলতে আমার অনলাইন জীবন অনেকটাই খোলাবই। ব্যক্তিগত জীবন থেকে অনলাইন জীবনের আকাশ পাতাল তেমন পার্থক্য নেই। তবে বলতে পারি এটুকু-
সমস্ত জীবন আমি ভালো মানুষ হবার সাধনা করে গেছি- পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে আমি জানলাম আমি আসলে একজন বোকা মানুষ।
অপুঃ ছোট বেলা থেকে বই পড়া বা লেখালাখির অভ্যাস ছিল?
মনিরা সুলতানাঃ একজন আবেশিত পাঠক হিসেবে বই পড়ার অভ্যাস শৈশব থেকেই ছিলো। বছরের শুরুতেই বড় ভাই বোনদের সহ নিজের বাংলা বইয়ের সব গল্প পড়া শেষ করতাম। শুধু কবিতা একটু কম বুঝতাম। ইত্তেফাক পত্রিকায় শিশুপাতা, টারজান এর ধারাবাহিক। এমন কি মায়ের বেগম পত্রিকাও বাদ যেত না।মজার ব্যাপার হচ্ছে হরলাল রায়ের একটা ভীষন পেটমোটা বাংলা ব্যাকারন বই ছিলো, কিছু না পেয়ে সেখানকার নৌকা ভ্রমন, ‘আমার জীবনের লক্ষ’ এসব রচনা প্যারাগ্রাফ সব পড়ে শেষ করতাম। আর একটা ছিলো অসমাপ্ত গল্পের সমাপ্তি করণ।
তবে লেখালিখ’র অভ্যাস একটু বড় হবার পর। “বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া স্কুল কর্মসূচীতে’’ বই এর সাথে ওদের আসন্ন শিরোনামে একটা পত্রিকা বের হত সেখানে মাঝে মাঝে কুইজ এর উত্তর অথবা ছোট করে কিছু লেখা পাঠাতাম। ছাপাও হত।
অপুঃ ব্লগিংয়ের শুরুটা কিভাবে হল? ব্লগের কথা, বিশেষ করে সামহোয়্যারইন ব্লগের কথা কিভাবে জানলেন?
মনিরা সুলতানাঃ ব্লগিংয়ের শুরুটা ছিলো - ফেসবুকে একটা পোস্ট থেকে- আমার বন্ধু তালিকায় তখন অনেক নামিদামী ব্লগাররা ছিলেন। যারা ছিলেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত মুখ ।
“এই মুহূর্তে আমি সামু’র লক্ষাধিক ব্লগারের সাহায্য প্রার্থনা করছি শিরোনামে” যতটুকু মনে আছে ইভটিজিং বা এমন কিছু নিয়ে।
এরপর ধীরেধীরে ব্লগিং শুরু। আর ব্লগের কথা জেনেছি - ২০০৭ এ অনলাইন পত্রিকায় একটা আর্টিকেল পড়ে। লেখকের লেখার প্রশংসা করে একটা মেইল করেছিলাম। উত্তরে লেখক ভদ্রলোক উনার লেখার আরও কিছু লেখা সহ ব্লগের আইডি লিংক শেয়ার করেছিলেন। সেই তখন থেকে ব্লগে পাঠক। কিছু মন্তব্য করতে গেলে কিছু লিখতে হবে এই ভয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হয় নি। তখন ভ্রমন পোস্ট আর আড্ডা পোস্ট বেশি দেখতাম।
অপুঃ হ্যা সেই পোস্টের কথা আমারও মনে আছে । যাইহোক, সামুতে যে সময় ব্লগিং শুরু করেছিলেন সেই সময়টা কেমন ছিল?
মনিরা সুলতানাঃ আমি যখন লেখালিখি আর মন্তব্য শুরু করি সে সময়টা আমার পাঠক সময়ের চাইতে একটু আলাদা ছিলো। তখন অনেকেই নিজেদের ব্যক্তিগত লেখালিখি নিয়ে পেশাগত জীবনে ব্যস্ত । মাত্রই সামু তখন ছোট পরিবার হতে চলছে। নাগরিক সাংবাদিকতা, তুমুল আড্ডা, কবিতা রম্য খুব চলছে। এ্যানিনোমাস ব্লগাররাও ততদিনে পরিচিত মুখ। ভীষন মজার সময় কাটিয়েছি। এরপর তো এলো শাহাবাগ । রাজনৈতিক ক্যাচাল বা অন্য যে কোন ক্যাচাল আমাকে বিব্রত করে, আমি এসব থেকে সরে থাকতেই অনেক সময় লম্বা বিরতি নেই।
ব্লগ তখন ছিলো আমার খোলা জানালা। ভারতে থাকি বাংলাদেশি কোন টিভি চ্যানেল নেই, পেপার পত্রিকা নেই। পডুয়া আমি’র হাতে বাংলা বই ও নেই। অনেকদিন পাঠক থাকর পর একদিন বাংলিশে একটা লেখা পোস্ট করেই ফেললাম। “আমার ফেসবুক নামা”
ভেবেছিলাম হয়তো কোন পাঠকই পাবো না , কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম কেউ একজন মন্তব্য করেছে- এবং বাংলাতে লেখার চেষ্টা করতে বলেছেন। এরপর সেই শুরুর পোস্ট মুছে দিয়ে বাংলা হরফে লিখে ফেললাম আমার বাংলায় প্রথম পোস্ট।
অপুঃ তখন ব্লগিং করতে কেমন লাগত আর এখন কেমন লাগে?
মনিরা সুলতানাঃ ব্লগিং সবসময় আমার হৃদয়ের খুব কাছের। এবং শুরু থেকেই আমি একজন আগোছালো অনিয়মিত ব্লগার। তখন ও ভালো লাগত এখনও অগ্রহ নিয়েই ব্লগিং করি।
অপুঃ ইদানীং ব্লগে সময় দেন অনেক কম? কারণটা শুনি।
মনিরা সুলতানাঃ কারনটা আমার ব্যক্তিগত জীবনের ব্যস্ততা। বেশ লম্বা একটা সময় ধরে অনলাইনের সবকটি প্লার্টফর্ম এ রাজনৈতিক এক্টিভিজম করে, জুলাই বিপ্লবে সরাসরি মাঠে অংশগ্রহনের পর। ফেসবুক ব্লগে যে পরিমান অপপ্রচার চলছে তাতে আমি সত্যি বিপর্যস্ত। সে জন্য অনলাইন থেকে লম্বা ছুটি নিয়েছিলাম। পুরুদুইমাস আমি কেড্রামা আর মুভি নিয়ে আছি। এছাড়া আমাকে প্রতি সপ্তাহে ঢাকার বাইরে যাতায়াত করতে হয়। সব সময় ল্যাপটপ থাকে না। ল্যাপটপ ছাড়া লেখালিখি করে আরাম পাই না। স্ক্রিন টাইম কমে গেছে।
অপুঃ আপনার মত অবস্থা আমারও। যদিও ব্লগারদের ভেতরে নারী-পুরুষ ভেদ করা ঠিক না তারপরেও জানতে চাই যে নারী ব্লগার হিসাবে সামুতে ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে অন্য পুরুষ ব্লগার থেকে কোন সুবিধা বা অসুবিধা অনুভব করেছে কিনা?
মনিরা সুলতানাঃ সেটাই দেখছি, অপু তানভীর আজকাল প্রেমের গল্প লেখা প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। ব্লগে সুবিধা পেয়েছি কিনা জানি না তবে অসুবিধা ! না এমন টা কখনোই অনুভবে আসে নাই। সামু সবসময় আমি একজন শুধুই ব্লগার, কোন ধরনের ট্যাগিং ব্যতিত এই কমফোর্টটুকু দিয়েছে।
আমার মনে আছে - শুরুর দিকে একজন রম্য লেখক ব্লগার আমার নাম ব্যবহার করে একটা রম্য লিখেছিলো। সে পোস্ট আমি নিজেও দেখি নাই কিন্তু সামু সেই লেখা সরিয়ে নিয়েছিলো। এই ঘটনা আমি অনেক পরে জানতে পারি।
অপুঃ আপনার বই পড়ে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা কিছু জেনেছি। আরো কিছু যদি বলতেন আমাদের।
মনিরা সুলতানাঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ছিলো আমার জীবনের রোলার কোস্টার রাইড। প্রচন্ড গতিময়, আনন্দময়। বিএনসিসি, বিতর্ক, ডাকসু সাংস্কৃতিক দল, প্রেম রাজনীতি পার্টটাইম চাকুরী সব করেছি।
এইযে বর্তমান ছাত্র সমন্বয়কদের উপদেষ্টা পদ নিয়ে এত সমালোচনা হচ্ছে। আমি তো মনে করে একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র যদি বিসিএস বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হবার জন্য শুধু মাত্র একাডেমিক পড়া না পড়ে সাথে সহ শিক্ষা কার্যক্রমে সমানভাবে সময় দেয় তাহলে তার অভিজ্ঞতাই তাকে অনেক গুরুত্বপূর্ন পদের যোগ্য হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে।
আরও কিছু নির্দিষ্ট করে কিছু জানতে চাইলে, প্রশ্ন করতে হবে।
অপুঃ আরে বাহ আপনি বিতর্ক করতেন। এই সম্পর্ক কিছু বলুন শুনি ? সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি কেমন ছিল? এখনকার সময়ের মতই কি ছিল?
মনিরা সুলতানাঃ আমাদের সময়ে ডিবেটরা ছিলেন জাতীয় স্টার। কতটা যে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম একেকটা পর্বের জন্য। তুমুল জনপ্রিয়তা বিটিভির জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের। সেই সময় গুলোতে শুরুটা স্কুল কলেজ থেকে, বিটিভিতে জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা দেখতাম। সেসময় সার্ক বিতর্ক আয়োজন করলো বাংলাদেশ, ইংলিশে ছিল সব বুঝতে না পারলে ও দেখেছিলাম সবগুলো পর্ব। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সব সিনিয়র বিতার্কিক কে পেলাম মোটামুটি। বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন গঠিত হলো - জাতীয় বিতর্ক উৎসব করলাম। বিভিন্ন জেলায় বিতর্ক কর্মশালার আয়োজন হত, দল বেঁধে প্রীতি বিতর্ক করতাম। বাংলাদেশের বিতর্ক চর্চার শুরু দিকে সনাতনী ধারায় চলত বিতর্ক। এরপর এলো সংসদীয় ধারায় বিতর্ক, আঞ্চলিক ভাষায় বিতর্ক। আমরা নাট্য বিতর্ক ও করেছি , রম্য ধারা এমন বেশ কয়েকটা ধারায় চলত। ভীষণ জনপ্রিয় ছিলো , একদম সাধারণ খেটে খাওয়া দর্শক ও আমাদের নাট্য, আঞ্চলিক এবং রম্য ধারা বিতর্কে রিলেট করতে পারতেন। টেলিভিশনে ও বিভিন্ন উৎসব অংশ গ্রহণ করতাম। বিশাল এক মেধাবী জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ততা ছিল আমার তার্কিক হবার কারনে।
আমার ক্যাম্পাস তো স্বৈরাচার পরবর্তী রাজনৈতিক পরিবেশ। আক্ষরিক অর্থেই মেধবিরা ছাত্র রাজনীতি করতেন। রাজনৈতিক সদ্ভাব, বোঝাপড়া ও চমৎকার ছিল।
অপুঃ পার্ট টাইম চাকরি করেছেন কোথায় করেছেন?
মনিরা সুলতানাঃ খন্ডকালীন চাকুরী হিসেবে, হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল, তখনকার শেরাটন হোটেল, কুয়েত এয়ারওয়েজ এমন বেশ কয়েকটা প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া বিএনসিসি র একজন ক্যাডেট হিসেবে জাতীয় বিভিন্ন খেলা বা উৎসবে ও কাজ করলেও আমাদের বেশ ভাল পরিমাণ সন্মানী দিত। সবচাইতে মজা পেতাম যেদিন ক্রিকেট খেলোয়াড়দের ভিআইপি গেটে দায়িত্ব পেতাম।
অপুঃ জীবনে কয়টা প্রেম করেছেন? বিয়ে কি প্রেম করে নাকি এরেঞ্জ?
মনিরা সুলতানাঃ জীবনে সফল প্রেম তো একটাই করেছি। সেই সুবাদে বিয়েও সিরিয়াস প্রেম করেই করেছি তবে, এরেন্জ করিয়ে।
অপুঃ ব্লগে কয় জনের উপরে ক্রাশ খেয়েছেন? অথবা কারো লেখার প্রেমে কি পড়েছেন?
মনিরা সুলতানাঃ ব্লগে তো আসলে ক্রাশ বা প্রেম লেখার সাথেই হয়। লেখার ক্রাশ ও প্রেম আইডির লেখার উপর। যেহেতু আমি মোটামুটি মোহগ্রস্ত পাঠক ধুপ করেই পড়েছিলাম এবং মুগ্বতার রেশ রয়েই গেছে।
অপুঃ এমন কয়েকটা নিকের নাম বলে ফেলুন দেখি যাদের উপর, অর্থ্যাৎ যাদের লেখার উপরে ক্রাশ খেয়েছিলেন?
মনিরা সুলতানাঃ কয়েকটা কিভাবে বলবো ? মাত্র তো দুইজন, নাম বলে দিলে ব্লগের বাকি লেখকদের সাথে অন্যয় হবে । সর্বভুক পাঠক হিসেবে অনেক পছন্দের কিছু ব্লগার রয়েছেন ।
অপুঃ ব্লগটা আর আগের মত নেই কেন বলে আপনার মনে হয়?
মনিরা সুলতানাঃ কী বলছেন ব্লগ আগের মত নেই !!!
ব্লগ এক্সাটলি আগের মতোই আছে। ২০০৫ এর পর সাইবার জগত ভার্চুয়াল লাইফ কতকিছু পাল্টে গেছে। কিন্তু সামু এ্যাপস তোমনই আছে!
মজা করলাম যাই হোক -
সত্যি বলতে কী কোন কিছুই আগের মত থাকে না, আমি নিজেও আগের মত নেই। অনান্য ব্লগারাও নিজেরা আগের মত নেই সে জন্য ব্লগটাও আগের মত নেই। ব্লগারদের নিয়েই তো ব্লগ তাই না !
অপুঃ এটা অবশ্য ঠিকই বলেছেন। কোন কিছুই আগের মত থাকে না। আচ্ছা ব্লগে যদি আপনাকে ধরে জোর করে মডু বানিয়ে দেওয়া হয় কোন ব্লগারকে সবার আগে ব্যান করবেন?
মনিরা সুলতানাঃ এই মুহূর্তে তেমন কেউ নেই তো, ব্লগ তো আমাদের সমাজের মত, এখানে বিভিন্ন ধরনের পেশার মানুষ থাকবে।সবাইকে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। তবে আই উইশ আমি বাংলাদেশিদের নিয়ে রম্যলেখা গেছো বজ্জ্বাত এর কলম বন্ধ করতে পারতাম !!!!
অপুঃ এই প্রশ্নটা যতজনকে করেছি সবাই এড়িয়েই গেছে । আপনি অন্তত একটা নাম বললেন। এবার অন্য প্রশ্ন, ভালোবাসার স্কেলে সামুতে ১০এ কত দিবেন?
মনিরা সুলতানাঃ হ্যাঁ সেজন্যই বলেছিলাম” মাপা হাসি চাঁপা কান্না টাইপ উত্তর পড়তে ভালো লাগবে না। আসলে জীবনের প্রথম প্রেমের মত প্রথম ব্লগ সামু দশে দশ ই পাবে। সামুর পর ই আমি অন্য সব ব্লগের খবর পেয়েছি, কয়েকটাতে নিক ও খুলেছিলাম কিন্তু ধাতে সয়নি।
অপুঃ আচ্ছা নিক তাহলে অন্য ব্লগে খুলেছিলেন। এখন বলেন দেখি মাল্টি নিক কয়টা আপনার? মাল্টি নিক দিয়ে কখনও কার পেছনে লেগেছেন কি?
মনিরা সুলতানাঃ হ্যাঁ তা তো খুলেছিলাম। সচলায়তন আর একটা কী ব্লগ যে নাম মনে করতে পারছি না। একজন চরম লেভেলের অশিষ্ট; অভদ্র; রুঢ়; ব্লগার। তার কর্মকান্ডে সহ্যের সীমা ছাড়ানোর পর, ঠিক পিছনে লাগতে না। তাকে তিতাসত্য কিছু বলতে এবং রাজনৈতিক পোস্ট দিতে মাল্টি একটা নিয়েছি এবং আছে সেটা। আর যে দুইটা নিক আছে সেগুলো শুরুর দিকে মনিরা সুলতানা নিকে লগ ইন করতে না পেরেই খুলেছিলাম।
অপুঃ সেই ব্লগারের নাম বলা যাবে কী?
মনিরা সুলতানাঃ বলে দিতেই পারি। তাতে সেই ব্লগারকে জাতে তোলা হবে। সে নিজেকে সেলিব্রেটি ভাবতে শুরু করবে।
অপুঃ এমন কোন ব্লগার কি আছে যাকে আপনি আপনার নিকের পাসওয়ার্ড দিয়ে দিবেন? এমন বিশ্বাসী কেউ আছে?
মনিরা সুলতানাঃ এখনও তো কেউ আমার কাছে নিকের পাসওয়ার্ড চাইলো না, কাউকে দেয়া হইলো না। তবে নিয়মিত ব্লগিং করছেন যারা- তাদের মাঝে আছে তো বেশ অনেক জনই - শায়মাকে দিবো ও আমার নিকে দারুন সব সাজুগুজু পোষ্ট দিবে। অপু তানভীরকে দিবো দূর্দান্ত গল্প লিখবে মনিরা সুলতানার নামে। কাজী ফাতেমাকে দিবো দারুন সব ছবি পোস্ট করবে আমার ব্লগে। শেরজাকে দিবো রাশিয়ান সেই গল্পগুলো এখানে থেকে পোস্ট করবে যা সামুতে লিখেন নাই, গুগুলে রয়ে গেছে। জুন আপুকে দিবো এবারের ভ্রমন কাহিনী আমার নিক থেকে লিখবেন। করুনা আপুকে দিয়ে বলবো আপু আন্না করেনিনা অনুবাদ করো আমার নিকে। মিরোডডল কে দিয়ে বলবো আমার হয়ে এপিটাফ লিখতে। সাচু যদি সেন্টমার্টিন নিয়ে ভ্রমন ব্লগ লিখে এক্ষুনি দিয়ে দেবো। কাভাকে দিবো আমার ব্লগের পুরানো লেখাগুলো ফিরিয়ে দিতে। ডঃ এম এ আলী ভাইকে দিবো আমার নিকে সিলভিয়া প্লাথ জেন অস্টেন টলস্টয় ভার্জিনিয়া উলফ উনাদের লেখা নিয়ে দারুন প্রবন্ধ লিখে দেবেন। খায়রুল আহসান ভাইয়া কে ভীষন সহজ করে স্নিগ্ধ একটা কবিতা লিখবেন বলে। জুলভার্ন ভাইকে দিবো আমার হয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষন লিখে দেবেন। ব্লগার রাকু হাসানকে দিবো আমার পছন্দের ভ্রমন এলকা নিয়ে লিখবে। এমন অনেকেই দিবো পুরানো সহব্লগার যত। আর আমার ব্লগার ক্রাশ যার লেখার মায়ায আমি বারংবার মোহগ্রস্থ হই - তাকে দিবো আমার সবচাইতে প্রিয় সময় শরৎ সকাল নিয়ে লিখতে, আমার প্রিয় কিছু সাহিত্যকর্ম নিয়ে লিখতে।
অপুঃ সমাজ পরিবর্তনে সামু ব্লগারের এখন কি কোন ভূমিকা আছে? থাকলে কেমন?
মনিরা সুলতানাঃ আমি বলি কী ব্লগাররা সবসময়েই ক্রিম অব সোসাইটি, সময়ের সবচাইতে স্মার্ট জনতা। আর এই তকমাটা পেয়েছে বলেই যদুমধু সবাই উৎসাহিত হয়ে ব্লগিং এ আসে তা আসুক সবাইকে নিয়েই সমাজ। সবসময় যে ব্লগে প্রতিবাদী লেখা বা বক্তব্য দিতে হবে তেমন নয়। ভীষন লুতুপুত ব্লগিং করা একজন ও ব্যক্তি জীবনে সমাজ সংস্কারক হতে পারেন। সব সময় তো ব্লগিং ব্যক্তিজীবনের প্রতিফলন হতে পারে না। বাংলাদেশের সমাজ পরিবর্তনে সামু ব্লগারদের ভূমিকা ব্লগের শুরু থেকে ছিলো এখনও আছেই, থাকবে। কারন এখন ও যারা সমাজ পরিবর্তন করছেন তাদের অধিকাংশই সামু “র ব্লগার হয়ত কেউ নিয়মিত অথবা বর্তমানে নিয়মিত নন।
অপুঃ আজকের ইন্টারবিউ আপাতত এখানেই শেষ। শেষ করার আগে ব্লগাদের উদ্দেশ্য কিছু বলতে চান?
মনিরা সুলতানাঃ অপু তানভীরকে ধন্যবাদ আমাকে ব্লগের জনপ্রিয় এই ইন্টারভিউ সেশনে আসবার সুযোগ করে দেবার জন্য। আমাকে স্টাডি করে প্রশ্নপত্র সাজানোর জন্য। আর সমস্ত ব্লগারদের বলতে চাই- আপনাদের মূল্যবান সময় থেকে বেশ খানিকটা সময় অপচয় করবার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলাম। কারন যে পরিমান বকবক করেছি মিনিংলেস ভাবে তাতে করে পড়া শেষ হলেই যারযার ডিভাইসের সামনে উচ্চারণ করবেন।
হুরর হুদাই টাইম লস !
তবে ব্লগিং এর শুরু থেকে সহব্লগারদের যে হৃদ্যতা আর সহযোগিতা পেয়েছি - সেটুকু আজকের লেখক মনিরা সুলতানা! তাই ব্লগ আর ব্লগাররা সমসময় আমার কাছের মানুষ প্রিয় ব্যক্তিত্ব ! ব্লগ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এবং সকল ব্লগারদের জন্য শুভ কামনা। আমাদের ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা জানা আপার জন্য ভালোবাসা।
আমার নেওয়া আজকের ইন্টারভিউটা এখানে শেষ তবে আপনারা চাইলে ব্লগার মনিরা আপুকে আরও প্রশ্ন করতে পারেন । উনি সময় করে আশা করি জবাব দিবেন ।
পুরো ইন্টারভিউটা পড়ার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
আগের পর্বগুলো
শেরজা তপন
জুল ভার্ন
সাড়ে চুয়াত্তর
কাল্পনিক_ভালোবাসা
ভুয়া মফিজ
শায়মা
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:১৩