somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় গ্রামবাসী ঠিক করল যে তারা নামাজ পড়ে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করবে। উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা করে বৃষ্টি তারা নামাবেই। নির্ধারিত দিনে সবাই মাঠে গিয়ে হাজির। এদের ভেতরে দেখা গেল একটা বাচ্চা ছেলে সাথে করে ছাতা নিয়ে এসেছে। অর্থ্যাৎ যে মনে প্রাণে বিশ্বস করেছে যে এই দোয়ার ফলে বৃষ্টি নামবেই। আর কারো মনে এই বিশ্বাস ছিল না। আচ্ছা আপনাদের ভেতরে কয়জনের এি বাচ্চা ছেলের মত বিশ্বাস আছে?

এই গল্পের আসলে এই লেখার সাথে খুব একটা সম্পর্ক নেই । গল্পটা বললাম কারণ আগে যখন ছোট ছিলাম তখন এমন গল্প প্রায়ই শুনতাম । গ্রামে গ্রামে এমন তীব্র গরমের সময়ে মানুষ দল বেধে নামাজ পড়ছে এবং প্রায় সব জায়গাতেই নাকি নামাজের পরপরই বৃষ্টি নামত। আমি যদিও নিজ চোখে কোন দিন দেখি নি তবে শুনেছি । তবে এমন একটা চল আমাদের দেশে রয়েছে । অন্য মুসলিম দেশগুলোতে এই রকম কিছু আছে কিনা সেটা অবশ্য আমার জানা নেই । এই ধরনের নামাজকে বলে ইসতিসকার নামাজ। এই নামাজে মুসলমানরা দল বেধে খোলা মাঠে বা কোন প্রান্তরে গিয়ে হাজির হন । সেখানে নামাজ পড়েন এবং এরপরে বৃষ্টির জন্য দোয়া করেন । আমার কখনও এমন নামাজ পড়ার সুযোগ হয় নি তবে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে ।

কয়েকদিন ধরে এই ইসতিসকার নামাজের খবর কয়েকটা গনমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে । সেই সাথে আরও একটা মজার খবরও দেখা যাচ্ছে । সেটা হচ্ছে ব্যাঙের বিয়ে। আগে মানুষ বিশ্বাস করত যে ব্যাঙের বিয়ের দিলে নাকি বৃষ্টি হয় । এই বিশ্বাসটা এখনও রয়েছে গেছে । অনেকে দুটো ব্যাঙ ধরে নিয়ে এসে তাদের বিয়ে পড়িয়ে দিচ্ছে । বিয়ের পরে আবার খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা যাচ্ছে । মূলত এই চল টা এসেছে সনাতন ধর্মীয় লোকেদের কাছ থেকে । তাদের বিশ্বাস যে ব্যাঙের বিয়ে দিলে দেবতা বরুণ দেবের সন্তুষ্টি পাওয়া যাবে এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টি নামবে। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আরেকটা কথা প্রচলিত ছিল । এমন অনেক সময় দেখা যেত যে আকাশে রোদ রয়েছে । অর্ধেক মেঘাচ্ছন্ন । কিন্তু তার পরেও বৃষ্টি নেমেছে । তখন আমরা বলতাম রোদ হচ্ছে বৃষ্টি হচ্ছে খ্যাক শিয়ালের বিয়ে হচ্ছে ।



ইসতিসকারের নামাজের কথা অনেক আগে থেকেই জানা ছিল । ব্যাঙের বিয়ের ব্যাপারটাও জানা ছিল । তবে আজকে কী মনে হল আরও এই ধরনের কিছু আছে সেটা জানার জন্য গুগলে সার্চ দিলাম। দেখা গেল যে এই দুইটা ছাড়াও আরও বেশ কিছু লোকসংস্কৃতি আমাদের দেশে রয়েছে যা আমাদের দেশের মানুষ আগে পালন করত বৃষ্টির আশায় । ডেইলি স্টারে বেশ চমৎকার একটা প্রতিবেদন করেছে । কিছু অংশ সেখান থেকে তুলে দিচ্ছি।

তালতলার শিন্নিঃ গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল, দুধ, গুড় তোলা হত তারপর সেগুলো দিয়ে শিন্নি বানানো হয় কোন তাল গাছের নিচে । সেই শিন্নি খেতে গ্রামের সবাই এসে হাজির হত । শিন্নি খাওয়ার পরে সেখানে বসেই বৃষ্টির জন্য প্রার্থণা করা হত । শিন্নির স্থানে খিচুড়ি রান্নারও প্রচলন ছিল ।

কুলা নামানিঃ কুলা নামানি প্রথাটা আমার কাছে বেশ চমৎকার মনে হল । প্রথমে একটা কুলাতে নানান ধরনের জিনিসপত্র রাখা হয়। ধান, ফুল, ঘাস, কাকের বাসার খড় কাটি। এরপর সেটা বসানো হয় একটি কলসির উপরে। কলসির ভেতরে থাকে সোনারূপা ভেজানো পানি । তারপর সেখান থেকে কুলাটি গ্রামের কোন কিশোর বা কিশোরির মাথায় তুলে দেওয়া হয়। এই কিশোর এবার সেটা মাথায় করে পুরো গ্রামে ঘুরে বেড়ায় । তার পেছনে থাকে আরও অনেক কিশোর কিশোরির দল । এদের সবার মুখে চুন এবং কালী দেওয়া হয়। চুন কালী হচ্ছে মেঘের প্রতীক। এই দল প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তোলে । চাল ডাল তেল ইত্যাদি । সেই চাল ডাল দিয়ে কোন এক বাড়িতে খিচুড়ি রান্না হয় । রান্নার সময় বৃষ্টির প্রার্থনার গান গাওয়া হয় । উপরের ছবিটা এমন এক কুলা নামানি প্রথার ছবি।

মেঘপুজাঃ এটি উত্তরবঙ্গের একটা প্রথা । এই পুজাতে কেবল মেয়েরা অংশগ্রহন করতো । এখানে কোন পুরুষ থাকত না।
হুদমা গানঃ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বিশ্বাস যে মেঘের দেবতা হুদমাকে সন্তুষ্ট করা গেলে বৃষ্টি নামবে । তাকে সন্তুষ্ট করতে গাওয়া হত হুদমা গান!

এছাড়া আগে আরও একটা প্রথা প্রচলিত ছিল। সেটা হচ্ছে কুয়োতে কুমারি উৎসর্গ। এখানে বৃষ্টির জন্য গ্রামের কোন কুমারিকে নির্বচিত করা হত । তাকে নিয়ে দল বেঁধে নেচে গেয়ে সারা গ্রাম ঘোরানো হত । এরপর তাকে কুয়োতে ফেলে দেওয়া হত ।

বিবিসির একটা ভিডিও দেখতে পারেন



আরো বিস্তারি পড়তে
ডেইলি স্টারের ফিচার
কুলা নামানি (ছবি উৎস)
বৃষ্টি নামাতে প্রচলিত মিথ
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০৩
১৩টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×