somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিপ্রাকৃত বড় গল্পঃ অংদ্রো দেবী

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




গল্পের শুরু

মেয়েটি উল্টে পড়ে গেল উচু হয়ে থাকা গাছের শিকড়ে আটকে । হাত দুটো পেছন দিক দিয়ে বাঁধা থাকার কারনে উপুর হয়ে পড়লো মাটির উপর । যখন তাকে আবারও তোলা হল তখন মুখ দিয়ে রক্ত পরা শুরু হয়েছে । একজন একটা কাপড় নিয়ে এগিয়ে আসতে গেল রক্ত মোছার জন্য । কিন্তু দলের সর্দার চোখ গরম করে তাকাতেই সে পিছিয়ে গেল ।

সবাই মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু সার্দারের জন্য কেউ কিছু করতে পারছে না । মেয়েটির মাকে গ্রামেই রেখে আসা হয়েছে । তা মা যদি আজকে এখানে থাকতো তাহলে সর্দারের দৃষ্টি উপেক্ষা করেই এগিয়ে আসতো । অন্য কারো সাহস নেই সর্দারের উপরে কোন কথা বলার ।
সর্দার আবার বলে উঠলো
-বেশি দেরি করা যাবে না । কালকের ভেতরই আমাদের পৌছাতে হবে ।
-কিন্তু সর্দার সংজুর অবস্থা খুব বেশি ভাল না তো । ও কি পারবে ?
-ওকে পারতেই হবে । ও যদি না পারে তাহলে আমরা কেউ বাঁচবো না ।

আর কেউ কোন কথা বলল না । আবারও হাটা শুরু হল । কারো কিছু বলারও নেই । যেখানে সর্দার স্বয়ং নিজের মেয়ের প্রতি এমন আচরন করতে পারছেন সমগ্র টোংগার ভালর জন্য সেখানে অন্য কারো কোন কথা থাকতে পারে না । আর সংজু নিজেই এগিয়ে এসেছে এই কাজটা করার জন্য ।

কিন্তু সংজু কয়েক কদমও হাটতে পারলো না । আবারও উল্টে পড়লো । এবার আর উঠলো না সে ! মাটিতে পড়েই রইলো ।




এক
রাত হলেই জামির ভয় করতে শুরু করে । প্রতিদিন জামি তার মাকে বলে রাতে যেন ওর সাথে থাকে কিন্তু এই হাসপাতালে রাতে রোগী ছাড়া আর কারো থাকার কোন নিয়ম নেই । প্রতি ঘন্টায় নার্স এসে সারা রাত রাউন্ড দিয়ে যায় । তবুও জামির ভয় ভয় লাগে । মনে হয় যেন কেউ ওকে দেখছ ওর দিকে ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে রয়েছে ।

আজকেও যখন নার্স শেষ বারের মত ওর কেবিন থেকে ঘুরে গেল তখনও জামি জেগে ছিল । সেই অনুভুতিটা হচ্ছিলো ওর । তবে সারা দিন জেগে থাকার জন্য ওর চোখ লেগে এসেছিলো কিছু সময়ের জন্য । তারপরই ওর চোখ খুলে গেল ।

রাত কত হবে সেটা ও ঠিক বুঝতে পারলো না । একেবারে ঘুরঘটে অন্ধকার। হাসপাতালে এতো অন্ধকার হওয়ার কথা না । রাতে সব সময় একটা ডিম লাইট জ্বলেই । আর করিডোরেও আলো জ্বালানো থাকে । কিন্তু এতো অন্ধকার কখনও হয় না । সেই সময়ই জামির মনে হল কেউ যেন ওর দিকে তাকিয়ে আছে । তীব্র একা ভয়ের স্রোত বয়ে গেল ওর পুরো শরীরে জুড়ে । জলদি করে বালিশের নিচ থেকে মোবাইল বের করে আলো জ্বালতে লাগলো কিন্তু মোবাইলটা বন্ধ পেল না । এবার ভয়টা আরও জাকিয়ে বসলো । মুখ দিয়ে চিৎকার করতে চাইলো কিন্তু কিছুই বের হল না । কেবল গো গো একটা আওয়াজ বের হল । জামির মনে অন্ধকারের ভেতরে কেউ ওর বুকের উপর উঠে বসেছে । এখনই গলা চেপে ধরবে । আর ও বাঁচতে পারবে না । ও মারা যাবে !

কতটা সময় এমন করে পার করেছে জামি বলতে পারবে না হঠাৎই একটা সময় লক্ষ্য করলো যে সব কিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে এসেছে ঘরটা আবারও আলোতে ভরে উঠেছে । দরজা দিয়ে একজন নার্সকে ঢুকতে দেখলো । ওর চেহারা দেখেই নার্সের মনে হল কিছু ঠিক নেই । ওর দিকে দ্রুত ছুটে এল । তবে কি হয়েছে সেটা জামি কিছু বলতে পারলো না । কেবল বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো নার্সের দিকে ।

পরদিন সকাল বেলা জামির বন্ধু ফারহান যখন ওকে দেখতে এল ফারহানের চেহারা দেখে জামির বুঝতে কষ্ট হল না যে ফারহানের সাথেও কিছু একটা হয়েছে । পুরো রাত ভর ফারহানের মনে হয়েছে ওর ঘরে কেউ রয়েছে । ওর দিকে তাকিয়ে আছে । রুমে জামির বাবা মা দুজনেই ছিল তাই মুখে কোন কথা বলল না । কেবল চোখে চোখে দুজনের কথা হল । চুপ করে তাকিয়ে রইলো একে অন্যের দিকে ।

জামির সেই শুরু থেকে জামির উপর বিরক্ত । বারবার তাদএর বেড়াতে যাওয়া নিয়ে তার আপত্তি ছিল । সে বিরক্ত হয়েই বলল
-এই জন্য আমি বেড়াতে দিতে চাই না । এখন হল তো ! পাহাড়ে কি না কি খেয়েছে এখন সেই থেকে পেট ব্যাথা !
জামির মা বলল
-এখন যা হবার হয়ে গেছে । ডাক্তারেরা তো বলেছে ভয়ের কিছু নেই ।

জামি কিংবা ফারহান কেউ কোন কথা বলল না । আবারও দুজন দুজনের দিকে তাকালো । গত কাল রাতে জামি যা দেখেছে সেটা যে ঐ বান্দরবান থেকেই এসেছে এটা বুঝতে ওদের কষ্ট হল না ।

জামির বাবা মা চলে যাওয়ার পরে বেশ কিছুটা সময় ফারহান আর জামি একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলো । ফারহান একটা সময় বলল
-রুপম কে বলে দিব ?
জামি বলল
-তারপর ? ও আমাদের কে কি করবে জানিস ? কোন দরকার নেই । শোন যে কাজটা আমরা করেছি সেটা কারো কাছে বলার মত না ।
ফারহান বলল
-তখন যে মাথার ভেতরে কি চলছিলো জানিই না । আমাদের কাজটা করা মোটেই উচিৎ হয় নি । মোটেই না ।
জামি নিজেও জানে ওরা যে কাজটা করেছে সেই কাজটা ওদের মোটেই করা উচিৎ হয় নি । কিন্তু যে কাজ করা হয়ে গেছে সেটা বদলানোর আর কোন উপায় নেই ।

প্রতিরাতেই ওদের সাথে এই একই ঘটনা ঘটতে লাগলো । কেউ যেন ওদের ঘরে প্রতিরাতেই এসে হাজির হয় । কেউ ওদের দিকে আগ্নি চোখে তাকিয়ে থাকে । একটা সময়ে এমন হল যে জামি কিংবা ফারহান কেউই ঠিক রাতে ঘুমাতে সাহস করে না । সারা রাত দুজন জেগে থাকে । কাকে দেখে যেন ভয় পায় । রাতে আর উপায় না দেখে বাবা অথবা মা জামির সাথেই থাকতে শুরু করলো ।
ওদের বাবা মাও এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশ চিন্তিত হল । ওদেরকে ডাক্তারও দেখানো হল কিন্তু কোন ফল হল না । একটা সময় তাদের মনে হল যে পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েই হয়তো ওদের এই অবস্থা হয়েছে । সেখান থেকে তার ছেলে ফেরার সময় অদ্ভুদ ভয় পাওয়া রোগ নিয়ে এসেছে কিন্তু ওদের সাথে আরও দুইজন গিয়েছিলো । ওদের তো তেমন কিছুই হয় নি ।

জামির অবস্থা যেন সব থেকে বেশি খারাপ । রাতের বেলা তো সে সব সময় ভয় পায়ই, কদিন পরে দিনের বেলাতেও ভয় পেতে থাকে । ফারহান তখনও সুস্থির আছে । কিন্তু একদিন দুর্ঘটনা ঘটেই গেল । সেদিন জামির বাবা ছিল জামির সাথে । জামিকে রেখে কিছু সময়ের জন্য সে বাইরে গিয়েছিলো । অফিস থেকে একটা ফোন এসেছিলো জরুরী ভিত্তিতে । নিজের স্টাডি রুমে বসে কিছু ফাইল পত্র দেখার পরেই মনে হল অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে । তিনি ছেলেকে দেখার জন্য যখনই আবার জামির রুমে গিয়ে হাজির হলেন তখনই দেখলেম যে জামি বিছানার চাদর পেচিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে । বড় বড় চোখ দুটোতে যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে । যেন মরার আগে কাউকে দেখে খুব বেশি ভয় পেয়েছে ।


দুই

রুপম কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। নিজের চোখকে বিশ্বাসও করতে পারছে না। কেবল অবাক হয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।

অনুর মুখ দিয়ে অদ্ভুদ এক ধরনের আওয়াজ বের হচ্ছে। সেটা যে অনুর কন্ঠস্বর না সেটা রুপম খুব ভাল করেই জানে। বারবার রুপমের দিকে তেড়ে আসতে চাইছে কিন্তু সেটা পারছে না কারন ওর দুই হাত দেওয়ালের সাথে শিকল দিয়ে বাঁধা। সেটা ও ছেড়ার চেষ্টা করছে
রুপমের ভয় হল অনু হয়তো সেটা ছিড়েও ফেলতে পারে। রুপমের একটু একটু ভয় করছে। তবে অনুকে ছেড়ে সে চলে যেতে পারছে না। কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

রুপম জানে এই ব্যাপারটা খুব বেশি সময় থাকবে না। আজকে ভরা পূর্নিমা। রাত পার হলেই আবার আগের অনু ফিরে আসবে। বিকেলে যখন অনু ওকে বাসায় আসতে বলেছিলো তখনই রুপমের কেমন জানি সন্দেহ হয়েছিলো। ওর কন্ঠেই এমন কিছু ছিল যা রুপমকে চিন্তিত করে তুলছিলো । বান্দরবান থেকে আসার পর থেকেই রুপম লক্ষ্য করছিলো অনুর ভেতরে কিছু একটা পরিবর্তন এসেছে। ঠিক আগের অনুকে সে খুজে পাচ্ছিলো না।

কিন্তু যখনই জামি মারা গেল তখনই রুপমের মনে হল যে নিশ্চিত কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। আর আজকে এই ব্যাপার।
বিকেল বেলা যখন বাসায় এসে হাজির হল তখন অনু অস্থির হয়ে নিজের ঘরে পায়চারি করছিলো। ওকে দেখে একটু যে ভরশা পেল। রুপম বলল
-কি হয়েছে? তোকে এমন কেন লাগছে?
-আজকে খারাপ কি হবে মনে হচ্ছে ।
-কি হবে?
রুপম কিছুই বুঝতে পারছিলো না। বলল
-কি হয়েছে বলবি?
-আজকে ভরা পূর্নিমা। আজকে সে আসবে আবার!
-কে আসবে?
-অংদ্রো দেবী
-অনু তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
-জামি মারা গেছে গত পূর্নিমাতে। হিসেব আছে? আমি জানি আজকে ও বের হবে। আজকে কেউ মরবে। ফারহান মরবে।
-ফারহান দেশে নেই। ও পালিয়েছে। ও খুব ভয় পেয়েছে।
-তবুও। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আজকে ফারহানের নিস্তার নেই।

রুপম কিছুটা সময় কি যেন ভাবল। তারপর বলল
-আমিও তো ছিলাম তোর সাথে। কিন্তু আমি তো কিছুই অনুভব করি নি। কারো অস্তিত্ব বুঝতে পারি নি। ফারহান যাওয়ার সময় আমাকে বলেছিলো ও নিজেও জানি কিছু একটা দেখতো । অনুভব করতো । কিন্তু আমি তো কিছুই বুঝতে পারি নি । কোন অস্তিত্ব অনুভব করি নি।

অনু কিছু না বলে তাকিয়ে রইলো রুপমের চেহারার দিকে। তারপর বলল
-জানি না। তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ঐ সময়ে জামি আর ফারহান এমন কিছু করেছিলো যা ওদের করা উচিৎ হয় নি। এর জন্যই অংদ্রো ওদের উপর খেপে গিয়েছে। ওদের শাস্তি দিতে চাইছে।

কিছুটা সময় চুপ করে থেকে অনু আবার বলল
-দেখ রুপম প্রথম দিনের পর থেকেই আমি আর নিজের ভেতরে ছিলাম না। কি হয়েছে না হয়েছে আমার কিছুই মনে নেই। এখন আমার কথা হচ্ছে যদি কিছু নাই হয় তাহলে আমার কিছু মনে নেই কেন? কেবল আমার মনে আছে আমি যখন চোখ খুলি তখন আমি ঔ বেদির উপর বসে আছি বিবস্ত্র হয়ে। আমার হাত পায়ের শিকল গুলো কেউ খুলে দিয়েছে। কিন্তু কে খুলে দিল? তোর কাছেও চাবি ছিল না। তাহলে?

রুপম কোন উত্তর দিতে পারলো না। ব্যাপারটা ওর কাছেও পরিস্কার হচ্ছিলো না। অনুকে যখন ওর বেদির উপর রেখে এসেছিলো তখন চারিদিকে তীব্র বৃষ্টি। রুপমের মনে হচ্ছিলো বৃষ্টি তে সব ভেসে যাচ্ছে। ওর শিকলের আংটা টা বেদির সামনেই আটকে রেখে ও নিচে চলে আসে। তারপরই হঠাৎ করেই রুপমের তীব্র ঘুম আসতে লাগে। কিছুতেই সেই চোখ আর ও খুলে রাখতে পারে না।

যখন রুপমের ঘুম ভাঙ্গে তাকিয়ে দেখে অনু ওর দিকে ঝুকে আছে। ওর দিকে তাকিয়ে বলছে
-এতো ঘুমালে চলে! কত সময় ধরে ডাকছি!

ঘুম থেকে উঠে কিছু সময় লাগল আসলে ও কোথায় আছে। তারপর চট করেই সব মনে পড়ে গেল। প্রথম যে কথাটা মনে পড়লো সেটা হচ্ছে বাইরে বৃষ্টি পড়ছিলো প্রচুর কিন্তু এখন আশে পাশে তাকিয়ে মনে হচ্ছে বৃষ্টির কোন নাম ঠিকানাই নেই। এমন কি মনেও হচ্ছে না যে এখানে কোন দিন বৃষ্টি হয়েছে।
রুপমের প্রথম কথাটাই ছিল, কাল না বৃষ্টি হচ্ছিলো!
অনু ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
-তাই নাকি? সত্যিই?
-কেন? তোর মনে নেই?
-আমার কিছুই মনে নেই। আমার শেষ মনে আছে আমি তোর সাথে সাথে হাটছি। আমার গলার শিকলটা তোর হাতে ধরা। জামি আর ফারহান আগে আগে হাটছে। তারপর হঠাৎ করেই আর কিছু মনে নেই। ঝাপসা হয়ে আসছে। আর আমার হাত পায়ের শিকল কে খুলেছে? তুই?
রুপম যেন আকাশ থেকে পড়েছিল। বলল
-আমি কিভাবে খুলবো? আমার কাছে কি চাবি আছে?
ওরা দুজনেই বেশ চিন্তিত হয়েছিলো। ওদের কারো কাছেই চাবি ছিল না। অন্য কেউ যে খুলবে সেটার সম্ভবনা ছিল না, কারন চাবি! দড়ি হলে বুঝা যেত যে কেউ খুলে দিয়েছে । ওগুলো লক করা ছিল চাবি দিয়ে ।
হঠাৎ অনু বলল
-ফারহান আর জামি কোথায়?
-ওরা আসে নি।
-মানে? আসে নি বলতে?
-গতকাল সকালে জামির শরীর হঠাৎ খুব খারাপ হয়ে যায়। ফারহান ওকে নিয়ে ফিরে গেছে।

তারপর ওরাও ফিরে আসে। যদিও ঢাকাতে আসার পরে অনু আর রুপম গিয়েছিলো জামিকে দেখতে । জামি তখনও হাসপাতালে ভর্তি । অনুকে দেখে ফারহান আর জামি দুজনেই কেমন চমকে উঠেছিলো । অনু এটা অবশ্য বুঝতে পারে নি । কিন্তু ওদের চোখ দেখেই মনে হচ্ছিলো যে কিছু একটা ওরা যেন লুকাচ্ছে । তারপর অনু যখন বলল যে ওর কিছুই মনে নেই, ওরা কখন গেল কি হয়েছে শেষের কয় দিনে তখন দুজন যেন একটু হাফ ছেড়ে বাঁচলো ।

অনু এতোটা সময় চুপ করে ছিল। তারপর বলল
-আমার সত্যি মনে হচ্ছে আমি অংদ্রো দেবীকে সত্যি সত্যি নিজের ভেতরে নিয়ে এসেছি। আর এখন খারাপ কিছু হবে।

অনু ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। রুপম অকে জড়িয়ে ধরে বলল
-চিন্তা করিস না। তোর কিছু হবে না। একটা না একটা কিছু বের হবেই। কিন্তু এখন কি করতে বলিশ?
-চল। তোকে বেজমেন্টে নিয়ে যাই। একটা ব্যবস্থা করেছি।

অনু ওকে বেজমেন্টে নিয়ে গেল। সেখানেই দেখতে পেল যে শিকল গুলো রয়েছে। অনু ওকে কি করতে বলবে সেটা বুঝতে কষ্ট হল না। অন্য সময় হলে রুপম হয়তো মানা করতো তবে আজকে কিছু বললো না।
দেওয়ালের দিকে পিঠ করে দাড়ালো অনু তারপর রুপম আস্তে আস্তে ওর হাত আর পা শিকলের সাথে আটকে দিল। একই ভাবে তালা আটকে দিল। যখন কাজ শেষ হল তখন অনু বলল
-তুই দরজা বন্ধ করে উপরে চলে যা। সকাল বেলা আসিস।
-না। আমি এখানেই থাকি। সমস্যা হবে না।
-আমি দাদুর ডায়েরিতে পড়েছি যত সময় না চাঁদ না ওঠে তত সময় কোন সমস্যা নেই । চাঁদের সাথেই সাথেই অংদ্রো দেবী এসে হাজির হবে আমার মাঝে ।
রুপমের তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না । কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । জামির মৃত্যুর পরে রুপমের মাঝে দ্বিধা দেখা দিয়েছে । এতোদিন অনুর কাজ কর্ম গুলো হেসে উড়িয়ে দিলেও এখন দিতে পারছে না । ফারহান তো ভয়ে আর দেশেই থাকে নি । এমন কি বলেও নি যে ও চলে যাচ্ছে । এয়ারপোর্ট থেকে রুপম কে ফোন করে বলছে ও চলে যাচ্ছে । দেশে থাকলে ওকেও মরতে জামির মত করে । রুপম অনেক প্রশ্ন করেছিলো কিন্তু ফারহান কিছু বলে নি ।

টুকটাক কথা বলছিলো ওরা তারপর হঠাৎ করেই যেন ঘরের পরিবেশ বদলে গেল। অনুর মুখের কথাও বন্ধ হয়ে গেল। রুপম কাছে যেতে গিয়েও আটকে গেল। তাকিয়ে দেখলী অনুর চোখের মনি আস্তে আস্তে উলটে যাচ্ছে। রুপম কি করবে বুঝতে পারলো না। তারপর পরই অনুর গলা থেকে অদ্ভুদ সেই স্বর বের হতে লাগলো। যেন কোন যন্তু চাপা গর্জন করছে। রুপম কয়েকবার অনুর নাম ধরে ডাকও দিল কিন্তু কোন কাজ হল না।

সারাটা রাত এমন চলল। অনু কয়েকবার নিজের হাতের শিকল ছিড়তে উদ্ধত হল কিন্তু আটকে গেল। ভোর রাতের দিকে অনু নিস্তেজ হয়ে পড়লো। হাত দুটো বাধা ছিল নয়তো ও হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়তো। দুই হাতের উপর ঝুলে রইলো।
রুপমের যদিও ভয় করছিল তবুও এগিয়ে গিয়ে অনুর শরীরের হাত দিল। অনু যেন একটু নড়ে উঠলো তারপর খুব মৃদ্যু কন্ঠে বলল
-রুপম!
-এই তো আমি!
-আমার কি হয়েছে! আমি.....
বলতে বলতেই কেঁদে ফেলল। রুপম জলদি করে অনুর হাত আর পায়ের শিকল খুলে দিল। তারপর ওকে কোলে করে নিয়ে চলল শোবার ঘরের দিকে।

অনুকে যখনই রুমে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে বসার ঘরে এসে দাড়ালো তখনই দেখলো বসার ঘরের সোফার উপর একজন বসে আছে। তার চোখ হাতের মোবাইলের উপর নিবদ্ধ। এতো সকলে কেউ যে কারো বাসায় আসতে পারে এটা রুপমের জানা ছিল না । অথবা এমন হতে পারে যে লোকটা আগে থেকেই এই বাসায় ছিল ।

রুপম কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না। অনুর পরিচিত কেউ হতে পারে। কিন্তু অনুর বাবা মা কেউ দেশে থাকে না। বলতে গেলে অনু একা একাই এখানে থাকে। চাকর বাকর কিছু আছে। রুপম আগেও অনেকবার এই বাসায় এসেছে। কিন্তু এই মানুষটাকে কোন দিন দেখে নি। একটু গলা গায়েরি দিতেই মানুষটা ওর দিকে ফিরে তাকালো।

বয়স ওর থেকে কিছু বেশি হবে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। সুদর্শন দেখতে। তবে মানুষ টার যে জিনিস টা সব থেকে লক্ষণীয়, সেটা হচ্ছে তার চোখ। রুপম এতো তীক্ষ্ণ চোখ আর দেখে নি। দেখে মনে হয় চোখ দিয়ে তাকিয়েই ভেতরের নাড়ী নক্ষত্র সব জেনে যাবে।

মানুষটা রুপমকে দেখে উঠলো না। একটু যেন হাসলো। কিন্তু সেটা হাসি ছিল না । তারপর রুপমকে জিজ্ঞেস করলো,
-কেমন আছে অনু?
রুপমের মনে হল মানুষটা নিশ্চয়ই অনুর পরিচিত কেউ হবে। রুপম খানিকটা দ্বিধাজনক মনভাব নিয়ে এগিয়ে এসে বসলো মানুষটার সামনে। তারপর বলল
-এখন ভাল। তবে....

রুপম আরেকবার চিন্তা করলো। রুপম এখনও জানে না যে মানুষটা আসলে কে। তাকে কি বলা ঠিক হবে সব কিছু। অবশ্য লোকটা কিছু জানে নিশ্চয়। নয়তো কেন বলবে যে অনু কেমন আছে।
রুপম বলল
-আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না। কে আপনি? আপনাকে এর আগে তো দেখিও নি।

মানুষটা হাসলো। তারপর বলল
-আমার নাম......
-রাফায়েল!!

বিশ্বময় ভরা কন্ঠটা আসলো ওদের পেছন থেকে। রুপম তাকিয়ে দেখে অনু এসে দাড়িয়েছে দরজাতে। একটু আগেই ওকে বিছানাতে শুইয়ে রেখে এসেছিল। এরই মধ্যে জেগে উঠেছে।
তবে অনুকে দেখে সুস্থই মনে হচ্ছে। এরই মধ্যে সামলে নিয়েছে। অনু দ্রুত এগিয়ে এসে বসলো রুপমের পাশে। ওর চোখে তখনও বিশ্ময়। যেন সামনে বসা মানুষটাকে ঠিক যেন চিনতে পারছে না।
অনু বলল
-আপনি সত্যি রাফায়েল?
-হ্যা। ঐটাই আমার নাম।
-আপনার ব্যাপারে দাদুর কাছে শুনেছি। দাদুর ডাইরিতেও অনেক কিছু লেখা আছে আপনার ব্যাপারে। কিন্তু আপনি....
রাফায়েল বলল
-আমি কি?
-দাদু আপনাকে যেভাবে বর্ণনা করে গেছে একদম সেরকমই আছেন। একটুও বদলান নি। কিন্তু তা কিভাবে হয়? আপনার আরও বয়স্ক হওয়ার কথা!

রাফায়েল এবার হাসলো। এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল
-এই ব্যাপারে এখন না জানলেও চলবে। তার থেকে আমাদের সামনে আরও বড় সমস্যা এসে হাজির হয়েছে। ঐ অপদেবীকে নিজের ভেতরে নিয়ে আসার বুদ্ধি তোমাকে কে দিল শুনি?

অনু কিছু না বলে চুপ করে রইলো। রাফায়েল আবার বলল
-এতো কৌতুহল কি ভাল? যে কৌতুহল প্রাণ নিতে পারে সেই কৌতুহল পুরন করতে যাওয়াটা বোকামি ছাড়া আর কিছু না।
রুপম এতো সময় চুপ করেই ছিল। বলল
-দেখুন যা হয়ে গেছে, গেছে। এখন কি সমাধান সেটা বের করতে হবে।

রাফায়েল বলল
-তার আগে আমাকে জানতে হবে আসলে কি হয়েছিলো। শুরু থেকে বল দেখি।
অনু আর রুপম একে অন্যের দিকে তাকালো। তারপর রুপম বলল
-আমি বলছি সব।


রুমপদের গল্প শুরু

পাহাড়ের অন্য রকম একটা সৌন্দর্য্য আছে । এই নির্জনতা আর অন্য কোথাও পাওয়া সম্ভব না । সমুদ্র কিংবা নির্জন কোন গ্রামের আছে আলাদা সৌন্দর্য্য কিন্তু সেগুলোর সাথে এই পাহাড়ের সৌন্দর্যয়ের কোন তুলনায় চলে না । রুপম অচেনা এক পাহাড়ি ঘরের বারান্দায় বসে এই কথায় ভাবছে । তার তাকিয়ে আছে সামনের অন্ধকারের দিকে । আকাশে চাঁদ উঠেছে বেশ খানিকটা সময় আগে । সেই আলোতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে । পাহাড়ের গা বেঁয়ে বেড়ে ওঠা সবুজ গাছ গুলোকে কেমন কালো কালো মনে হচ্ছে । রুপমের কেমন ঘোরের মত লাগছে । এক ভাবে তাকিয়েই আছে নিচের খাদের দিকে !

পাহাড়ে খুব জলদি রাত নামে । তেমনি ভাবে ধুপ করে সব অন্ধকার হয়ে যায়, গ্রাম গুলো সন্ধ্যা হতে না হতেই খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ে । কিছু কিছু পাহাড়ি যুবক এদিক ওদিক আড্ডা দেয় কিছু সময় তাও খুব একটা রাত করে না । কিন্তু শহুরে মানুষদের এতো জলদি ঘুম আসতে চায় না । যদিও ফারহান আর আজমির মরার মত ঘুমাচ্ছে । সারাটা দিন ওদের খুব পরিশ্রম হয়েছে । রুপমেরও অবশ্য এক ধরনের পরিশ্রম হয়েছে । তবে রুপমের ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না । আরও কিছুটা সময় জেগে থাকতে ইচ্ছে করছে । আর এই সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে মন চাইছে ।

একটু একটু ঠান্ডা বাতাস আসছে । তবে বসে থাকতে খুব বেশি চমৎকার লাগছে ওর । ওর মনে এই নির্জনতার মাঝেই যদি বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারতাম তাহলে জীবনটা মন্দ হত না ।

হঠাৎ কুঁচক্যাচ আওয়াজ হল । পেছনে তাকিয়ে দেখে অনু দাড়িয়ে আছে দরজায় । ঘরের ভেতরে একটা প্রদীপ জ্বলছে । সেই আলোতেই অনুকে দেখা যাচ্ছে । অনু এখনও ঘুমায় নি দেখে অবাক লাগলো রুপমের । রুপমের পাশে এসে বসতে বসতে বলল
-ঘুম আসছে না ?
-আসছে তবে এখানে বসে থাকতে ভাল লাগছে ।

অনু রুপমের গাঁ ঘেসে বসলো । রুপমের কাছে একটু অন্য রকম লাগলো । অনুকে সে অনেক দিন থেকেই চেনে । আজকে ওর আচরন কেমন যেন অন্য রকম লাগছে । সকাল থেকেই । তাহলে কে ও একটু দ্বিধায় পড়ে গেছে ? যে কাজটা অতি উৎসাহ নিয়ে করতে এসেছে এতো দিন সেই কাজটা ঠিক মত করতে পারবে কি না এই নিয়ে খানিকটা ভীত কি ?
নাকি অন্য কোন কারন ?

রুপম বলল
-ভয় লাগছে তোর ?
অনু বলল
-ভয় ? কেন ?
-না মানে কাজটা কি করতে পারবি ?
-কেন ? তোর মনে হচ্ছে না যে আমি পারবো ?
-না পারবি না, এই কথা তো বলছি না । কিন্তু ......

রুপম অন্ধকারের ভেতরেই অনুর জ্বলজ্বল করতে থাকা চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুটা সময় । বাইরে থেকে কিছু না বোঝা গেলেও ভেতরে ভেতরে অনু খুব উত্তেজিত হয়ে আছে । অনু খানিকটা হেসে বলল
-কিন্তু কি শুনি ? শুন আমি খুব বেশি এক্সসাইটেড । রিচ্যুয়াল আর পদ্ধতি গুলো আসলেই অন্য রকম, তাই না ?
-হ্যা । সত্যি অন্য রকম ।
-আর যুক্তিযুক্তও মনে হচ্ছে না ? মানে মেয়েটাকে ঠিক যেভাবে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে ঠিক সেই ভাবে তাকে ডাকতে হলে একই ভাবে কষ্ট টা নিজের মাঝে আনতে হবে । সেই কষ্ট গুলো নিজে উপলব্ধি করতে হবে । তবেই না সে আসবে । তাই না ?

রুপম কিছু না বলে কেবল একটু মাথা দোলালো । সে জানে এসব ব্যাপারে অনুকে কিছু বলে লাভ নেই । ওর সাথে তর্ক করেও লাভ নেই । আর এই সব ব্যাপারে অনুর অনেক বেশি জানে !
অনু বলল
-সো ! এতো চিন্তা করতে না । আমি ঠিক ঠিক পারবো । এখন তুই তোর কাজটা করতে পারলেই হবে ।
রুপম একটু হাসার চেষ্টা করলো । অনু যে কাজটা করবে, সেটার তুলনায় ওর কাজটা কিছুই না । অনু বলল
-তবে তোকে কিন্তু একটা কথা দিতে হবে ।
-কি কথা ?
-দেখ, ফারহান আর জামিকে আমি কিছুই করতে বলি নি । তবে ওদেরকে আমি বুঝিয়ে দিয়েছি ওরা কোন বাঁধা হবে না । তোর উপর আমি ভরশা করে আছি । কোন ভাবেই যেন তুই আমাকে হতাশ করবি না ।
-আচ্ছা করবো না ।
-না করতে পারিস । আমি তো তোর মনভাব জানি নাকি !

রুপম অন্য দিকে চোখ সরিয়ে ফেলল । অনুকে ও যে অসম্ভব পছন্দ করে সেটা অনু খুব ভাল করেই জানে । এবং এও জানে ওর ইচ্ছা পূরন করার জন্য রুপম সব কিছুই করতে পারে । তাই রুপমকেই বলেছে ও । অনু বলল
-দেখ কাল থেকে আমাদের আসল কাজটা শুরু হবে । যদিও কাজ ওখানে পৌছাতে পৌছাতে বিকেল হয়ে যাবে । তবুও তোকে আগে থেকেই বলে রাখছি কথা গুলো ।
রুপম অনুর হাত ধরল । তারপর বলল
-আমাকে এর আগেও বলেছিস তো । আমার মনে থাকবে তো ।
-না মনে থাকবে না । কারন আমি তখন অন্য রকম হয়ে যাবো । দেখ তোর জন্য ব্যাপারটা প্রথমে মেনে নেওয়া সহজ হবে না তবে নিতেই হবে । এতো দুর এসে আমি কিছুতেই ব্যাপারটা না করে ফিরে যেতে চাই না । ঠিক আছে ?
-ঠিক আছে ।
-আমার কিন্তু মুখ দিয়ে কিছু বলার থাকবে না । আমি কিছু বলতে পারবো না । সো যতক্ষন না আমি ঐ ইশারাটা দিচ্ছি ততক্ষন কোন ভাবেই যেন তুই কাজটা থেকে ফিরে আসবি না । মনে থাকবে ?
রুপম ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-তুই কি ঐ ইশারা দিবি কোন দিন ?

অনু হাসলো । তারপর বলল
-কোন দিনও না । আমি কোন দিনও ঐ কাজ টা করবো না । যত কষ্টই হোক না । আমি যে কাজটা হাতে নিয়েছি সেটা আমি শেষ করতে চাই ।
-বুঝলাম । আমার মনে থাকবে ।
-থাকতেই হবে ।



অনু আরও একটু সরে এসে বসলো । তখনও রুপমের হাতে ওর হাতটা ধরাই আছে । অচেনা একটা পাহাড়ি গ্রামে অচেনা এক লোকের বাসার বাঁশের মাচায় বসে আছে ওরা পা ঝুলিয়ে । নিচ দিয়ে চলে গেছে পঢ়াড়ি খাঁদ । দুজনেরই অন্য রকম ভাল লাগছে । এভাবে সারাটা রাত কাটিয়ে দিতে পারলে ভাল লাগতো কিন্তু বেশি সময় অপেক্ষা করার উপায় নেই । কারন কাল সকালে ওদের বের হতে হবে । কাল অনেক কাজ পড়ে আছে !



তিন

অনু সব সময়ই খুব কৌতুহলী একটা মেয়ে। বিশেষ করে অলৌকিক বিষয়ে ওর কৌতুহল সীমাহীন । এই নিয়ে অনুর পড়াশুনা অনেক বেশি । গল্প উপন্যাস থেকে শুরু করে ডকুমেন্টারি আর রিসার্স গো গ্রাসে গিলে খায় ও । এই গুণটা ও পেয়েছে দাদার কাছ থেকে । অনুর দাদাও ঠিক এই ব্যাপার নিয়ে পড়ে থাকতো । খানদানী জমিদার হওয়ার কারনে খুব একটা কাজ করতে হয় নি তাকে । ঐ সব নিয়ে অনেক কাজ করে গেছে । এই নিয়ে তার অনেক পড়াশোনা ছিল । জীবনের অনেক টা সময় তিনি এর পেছনে ব্যয় করেছে ।


এবার ঠিক এমন একটা অলৌকিক ব্যাপারের খোজ পেয়েছে অনু । অনুর দাদার একটা পুরানো ডায়েরী ঘেটে ও প্রথম জানতে পারে । সেখান থেকেই অংদ্রো দেবীর মুর্তির খোজ সে পেয়েছে । সেই থেকেই অনুর মাথার ভেতরে এই অংদ্রো দেবী ছাড়া আর কিছু নেই । তারপর সত্যি সত্যিই যখন খোজ খবর নিয়ে জানতে পারলো যে এমন একটা মুর্তি আসলেই আছে তখন থেকেই এখানে আসার জন্য উঠে পড়ে লাগলো ।

তবে সেটা যদি কেবল মন্দির আর মুর্তি দেখার ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকতো তাহলে ব্যাপারটা ঠিক ছিল কিন্তু অনুর মাথায় অন্য এক ভুত চেপে বসলো । সে অংদ্রো দেবীর আরাধনা করতে চায় । ঠিক যেভাবে যেভাবে আচার অনুষ্ঠান পালন করলে অংদ্রো দেবীকে তার ভেতরে আনা যাবে ঠিক সেই সেই কাজ সে করবে । ব্যাপার আসলেই সত্যি কি না এমন হয় কি না এসব তাকে জানতেই হবে ।

কিন্তু যে কাজটা অনু করতে চাইছে সেই কাজটা ওর একার পক্ষে করার কোন ভাবেই সম্ভব না । ব্যাপারটা ঠিক এমন না যে কোন ভুতুরে বাড়িতে একা একা গিয়ে রাত কাটিয়ে এল । এর আগে অনেক ভুতুতে বাড়িতেই সে থেকেছে । কোন কোনটাতে আবার ভয়ও পেয়েছে কিন্তু সে অনু থামে নি । দিনকে দিন ওর কৌতুহল যেন বেড়েই চলেছে । কিন্তু এই অংদ্রো দেবীর ব্যাপারে তার সাহায্য লাগবেই । একা একা কোন ভাবেই হবে না । সেই জন্য রুপম ফারহান আর জামিকে এর যুক্ত করা ।

প্রথমে যখন অনু তাদের কে বলল কাজটা কিভাবে করতে হবে তিজনেরই চোখ কপালে উঠলো । একে অন্যের দিকে চাওয়া চাওয়ি করতা লাগলো । রুপম প্রথমেই মানা করে দিল । সে বলে দিল সে করবে না ! কিন্তু অনুর জেদের সাথে কেউ পারবে কেন ? বাবা মায়ের এক মাত্র মেয়ে হওয়ার কারনে ছোট বেলা থেকেই সে যা ভেবে এসেছে তা সে করেই ছেড়েছে । একবার কোন অপদেবতার পুজা করা করার জন্য নিজের হাতের শিরা কেটে ফেলেছিলো । এই খবরটা রুপমের খুব ভাল করেই জানা । সে জানতো ও রাজি না হলেও অনু ঠিক ঠিক এই কাজটা করবে । তাকে কোন ভাবেই থামানো যাবে না । শেষে আর উপায় না দেখে রাজি হয়ে গেল সবাই ।


চার

সকালবেলা খাওয়া দাওয়া শেষ করে যাত্রা আবার শুরু হল । বান্দরবান মানের মানুষ কেবল কেওকারাডাং, নীলগীরি আর নীলাচল বুঝে । আর যারা আরও একটু সাহস দেখায় তারা চলে আসে নাফাকুম অথবা রেকাক্রিতে । এর বাইরেও যে আরও কিছু স্থান আছে সেটা অনেকে জানেই না । ওদেরই জানা ছিল না ।

তবে সব কিছু জানা গেছে ফারহানের কাছে । ফারহানদের আদি বাসা এই বান্দরবানেই যদিও ও ছোট বেলা থেকে ঢাকাতেই থাকে । কিন্তু ওর দাদা চাচারা এখনও এখানেই থাকে । এখানে ওদের বেশ প্রভাবও আছে । তাই চাইলেও ও অনেক খোজ খবরই বের করতে পারে । ঠিক এমন করেই ও অংদ্রো দেবীর মন্দিরের খোজটা পেয়েছে । অনুই ওকে খোজ খবর নিতে বলেছিলো । খোজ নিয়ে জানা গেছে যে এই দেবী একটা মন্দির আসলেই এখানে আছে । তবে পথটা অনেক বেশি দুর্গম । একেবারে মায়ানমানের সীমানার কাছে । অনেক আগে ওখানে একটা গ্রাম ছিল অন্য এক উপজাতিতেদের কিন্তু সেটা নাকি গায়েব হয়ে গেছে । অনেকে বলে যে ঐ গায়ের উপর অংদ্রো দেবীর অভিশাপ পতিত হয়েছে । তাই গ্রাম ধ্বংশ হয়ে গেছে । এখানকার পাহাড়ি উপজাতিরা ঐ পথে যেতে ভয় পায় । বিভিন্ন কুসংস্থার আছে ওদের মনে । ওরা মনে করে ঐ মন্দিরে গেলে কিংবা ঐ দেবীর এলাকার ভেতরে গেলে নাকি অভিশাপ লাগবে ।

অংরো উপজাতি নামের এক উপজাতি ছিল । ওরা ঐ অংদ্রো দেবীর উপসনা করতো । ঠিক যেমন ভাবে করা উঠিত সেই ভাবেই । যতদিন পর্যন্ত ওরা উপাসনা করতো ততদিন পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল কিন্তু একবার ওরা ঠিক মত উপাসনা করতে পারলো না । অর্থ্যাৎ আচার অনুষ্ঠান করার জন্য যে মেয়েটাকে ঠিক করা হয়েছিলো সেই মেয়েটা মাঝ পথেই থামিয়ে দেয় সে । সেই বার আর উপসনা হয় নি। অন্য কোন মেয়েও ছিল না সেটা পুরন করার জন্য । ব্যাস, তারপর থেকেই ঐ উপজাতি গ্রামের উপর নাকি অভিশাপ নেমে আসে । আস্তে আস্তে সবাই এক অদ্ভুদ ভাবে মারা যেতে থাকে । আর যারা মারা যায় নি তারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেতে থাকে । এভাবে এক বছরের ভেতরে পুরো গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায় । যে সময়টাতে দেবীর উপাসনা করতে হয় সেই সময়টা আসার আগেই গ্রাম একেবারে খালি হয়ে যায়।

অনুরা আজকে যাচ্ছি সেই গ্রামের দিকে । আজ থেকে ঠিক চার দিন পর ভরা পূর্ণিমা । ঠিক সেই রাতেই অনু নিজেকে ঐ দেবীর সামনে উপস্থাপন করবে । এই জন্যই তাদের এখানে আসা ।


ওদের দলটা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে অংদ্রো দেবী মন্দিরের দিকে । সবার আগে রয়েছে ওদের গাইড চ্যাংকি । ফারহানের পরিচিত । অন্য কোন গাইড ওদের ওখানে নিয়ে যেতে রাজি হচ্ছিলো না । ফারহানে একে খুজে নিয়ে এসেছে । তবে চ্যাংকিও ওদের সেই মন্দির পর্যন্ত নিয়ে যাবে না । একটা নির্দিষ্ট এরিয়া পর্যন্ত নিয়ে যাবে । তারপর ফিরে আসবে । ওদেরকে তারপর একা একা যেতে হবে । অবশ্য খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না । চ্যাংকির ভাষ্য মতে কেবল একটা রাস্তায় আছে । আর রাস্তাটা নাকি এখনও টিকে আছে । বিলীন হয়ে যায় নি । আজ থেকে ৭০/৮০ বছর আগে গ্রামটা ধ্বংশ হয়েছে । তারপর থেকে সেই রাস্তায় আর কেউ যায় না । কিন্তু তার পরেও সেই রাস্তাটা নাকি হারিয়ে যায় নি । স্পষ্টই বোঝা যায় । অনেকে বলে যে দেবী এখনও তার উপসকদের জন্য সেটা খুলে রেখেছে । যদি ঠিক মত তার আরাধনা করা যায় তাহলে দেবীর আশীর্বাদ ঠিক ঠিক তাদের উপর পতিত হবে ।
তাই পথ হারানোর কিংবা খুজে পাওয়া নিয়ে ওরা খুব বেশি চিন্তিত না । তার পরেও ওদের কাছে ম্যাপ আছে । আর জিপিএসও নিয়ে যাচ্ছে ওরা ।

অনুর সাথে ওর বন্ধুরা ছিল তার পরেও অনুর একটু যেন অন্য রকম লাগছিলো । যদিও এখনও ওর হাতেই সব কিছু । চাইলেই সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে ও চলে যেতে পারে । কোন কিছু করতে হবে না ওর । কিন্তু ও নিজেকে খুব ভাল করেই চেনে । এই কৌতুহলের কাছে সব কিছু পরাজিত হবে যাবে !

দলটা প্রায় সারাদিন হাটলো । ওরা পাহাড়ি এলাকার যতই ভেতরে ঢুকছে চারিপাশটা ততই যেন চমৎকার লাগছে । এমন মন মাতানো পরিবেশ আমি এর আগে কোন দিন দেখি নি । একেবারে বন্য পরিবেশ । মানুষ জনের চলাচল এখানে খুব কম । কেবল মাত্র কিছু আদিবাসী এখানে আসে কাঠ কাটতে । তাও অনিয়মিত ভাবে ।
হাটতে হাটতে হঠাৎ জামি একটা চমৎকার ফল দেখতে পেল । ওটা হাত দিতে যাবে তখণই চ্যাংকি চিৎকারে সেটা ধরতে মানা করলো । বলল যে ফলটা দেখতে সুন্দর হলেও এই ফল খেলে নাকি মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায় । জামি তবুও বারন শুনলো না । কয়েকটা ফল ছিড়ে ব্যাগের ভেতরে নিয়ে নিল । ঢাকায় গিয়ে নাকি কাজ আছে এটা দিয়ে ।

সন্ধ্যার সময়ে ওরা একটা স্থানে এসে থামলো । অনুকে কেউ বলে দিল না যে ওরা আসল জায়গাতে চলে এসেছে । এখান থেকেই ওদের আসল জার্নিটা শুরু হবে । জায়গাটার দিকে তাকালে প্রথমে কিছু মনে হবে না কিন্তু একটু ভাল করে দেখলেই দেখা যাবে একটা প্রাকৃতিক বেড়া দেওয়া রয়েছে । যেন প্রাকৃতিক ভাবে ভেতর আর বাইরের স্থানটা আলাদা করে রাখা হয়েছে । ওপাশটা কেমন অন্ধকার মনে হল অনুর কাছে । আবারও সেই অস্বস্তিটা ফিরে এল ওর মাঝে । এখনও ওর কাছে সুযোগ আছে চলে যাওয়ার ।
নিজেকে আবারও খানিকটা শান্ত করলো । জোর চলে ফিরে যাওয়ার চিন্তাটা দুর করে দিল । আজকে তাকে এই কাজটা করতেই হবে ।

যদিও দরকার ছিল না, তারপরেও চ্যাংকি বলল
-আমরা চলে এসেছি । এখান থেকেই সেই অংদ্রোদেবীর এলাকা শুরু । এর ভেতরে আমি যেতে পারবে না ।

আজকের মত ওদের আর কোন কাজ নেই ।

রাতে ক্যাম্প ফায়ার করা হল । গল্প গুজব চলল । তবে সেটা খুব বেশি দুর এগোল না । সারা দিনের হাটাহাটিতে সবাই ক্লান্ত । সাথে করে স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে আসা হয়েছে । ওরা সেখানেই শুয়ে পড়লো ।



পাঁচ

সকাল হতেই চ্যাংকি ওদের রেখে চলে গেল । বলে গেল যে ঠিক তিনদিন পরে সকাল বেলা ও এখানে চলে আসবে । যদি কাজটা কারতে ওদের আরও একটা দিন বেশি লাগবে তবুও ও আগেই চলে আসবে । ওদের কে নেওয়ার জন্য । যাওয়ার পথে ফারহান চ্যাংকির হাতে আরও একটা এক হাজার টাকার নোট গুজে দিল । সব টাকা আগেই অগ্রিম দেওয়া হয়ে গেছে যদিও । এটা দিল ওকে খুশি করার জন্য ।

চ্যাংকি চলে যেতেই আসল কাজ শুরু হয়ে গেল । অনু নিজের ব্যাগ খুলে ফেলল । তার ভেতর থেকে সব জিনিস পত্র বের করতে শুরু করলো । হত কয়েক সপ্তাহ ধরে সে এই সব জিনিস পত্রই তৈরি করেছে । তারা দাদার রিসার্স পত্র ঘেটে যে যে জিনিস লাগবে যেভাবে লাগবে সব কিছু সে জোগার করেছে । ঠিক সেই সেই ভাবে তৈরি করে নিয়ে এসেছে ।

জিনিস বলতে কিছু শিকল । রুপম শিকল গুলো হাতে নিয়ে দেখতে শুরু করলো । প্রতিটা শিকলের গায়ে অদ্ভুদ কিছু আকা আছে । কোন চিহ্ন যেন । রুপমের কাছে বাংলা উল্টো "ঐ" এর মত মনে হল আর সেটার মাঝ খান দিয়ে একটা বাঁকা দাগ চলে গেছে । তবে চিহ্নটা হুবাহু তেমনও না । এমন চিহ্ন সে এর আগে দেখেও নি । তাই ব্যাখ্যা করাটা একটু জটিল ! এই সবই অনু নিজে তৈরি করেছে ওর দাদার সেই গবেষণা গেটে । ঠিক হচ্ছে কি হচ্ছে না সেটা বের করার কোন উপায় নেই । ওরা যা করতে যাচ্ছে তা আদৌও কোন কাজে আসবে কি না সেটা ওরা জানে না । ফারহান আর জামির মনে দৃঢ় বিশ্বাস যে, যে কাজটা অনু করতে যাচ্ছে সেটার কোন ফল আসবে না । তবে ওদেরও কৌতুহল আছে । সেই সাথে ঘোরাঘুরি তো আছেই । এটার জন্য ওদের মূলত আসা । রুপমেরও ধারনা যে কোন কিছুই হবে না । কেবলই কষ্ট করছে ওরা । যদি অনু ওদের সাথে মন্দিরটা দেখতে যেতে তাহলে রুপমের কোন সমস্যা ছিল না । কিন্তু অনু যা করতে যাচ্ছে সেটা ও ঠিক মেনে নিতে পারছে না । কিন্তু ওকে যে বাঁধা দিবে সেটাও পারছে না । অনুর জেদ ও খুব ভাল করেই জানে । ও মূলত যাচ্ছে অনুর যাতে নিরাপদ থাকে সেটা দেখার জন্য । ওর ব্যাকপ্যাকের পকেটে একটা রিভালবারও আছে । নিরাপত্তার জন্য ।

কাউকে কিছু বলতে হল না । অনু নিজেই বসে গেল সেগুলো পরার জন্য । কয়েদিদের পায়ে আটকানোর জন্য যেমন বেড়ি পরানো হয় ঠিক সেই ভাবে দুই ভাবে দুটো বেড়ি পরে নিল । দুটো বেড়ির সাথে একটা শিকল যুক্ত আছে । এটা বানানো হয়েছে যাতে অনু ঠিক মত পা ফেলতে না পারে । ফুট দুয়েক লম্বা শিকলটা । হাটতে একটু কষ্ট হবে ওর । বেড়ি দুটো আটকে নিল তালা দিয়ে । এরপর আরেকটা বেড়ি বের করলো । এটার সাথেও লম্বা শিকল রয়েছে । সেটা বানানো হয়েছে ওর গলার মাপে । গলার থাকে পরে নিল ও । তারপর ওটাও আটকে দিল তালা দিয়ে । শিকলের অন্য প্রান্তটা রুপমের হাতে দিল । ওরা তিনজন এতো সময় ওর এই কাজ গুলো দেখছিলো ।

রুপমের কয়েকটা দায়িত্বের ভেতরে একটা আচ্ছে এই শিকলটা থাকবে ওর হাতে । যেমন করে কয়েদীদের কে টেনে নিয়ে যায়ে ঠিক সেই ভাবেই অনুকে নিয়ে হবে । এরপর এগিয়ে এসে হ্যান্ডকাপটাও রুপমের দিকে এগিয়ে দিলো। হ্যান্ডকাপের গায়েও সেই অদ্ভুদ চিহ্নটা আঁকা রয়েছে ।
অনুর দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে রুপম বলল
-আরেকবার ভেবে দেখ ।
-আমি ভেবে দেখেছি । নে ।

এই বলে হাতটা পেছনে দিকে বাড়িয়ে দিল । পেছন দিকে হাতটা হ্যান্ডকাফ দিয়ে আটকে দিল । হাতে হ্যান্ডকাফ , পায়ে আর গলাতেও শিকল পরানো শেষ । একেবারে আসল কয়েদির মত মনে ওকে । ঠিক একই ভাবে সেই রাজকুমারীকে তার রাজ্য থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো । আরাকানের কোন একটা ছোট রাজ্যের রাজকুমারী ছিল সে । সেখানে থেকে তাকে বন্দি করে এই পথ দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছিলো । পথেই সে মারা পড়ে । তার মৃতদেহ নাকি এই অবস্থায় পরে ছিল এই পাহাড়ের কোথায় । তারপর থেকেই তার উপদ্রোপ শুরু হয় । তাকে শান্ত করতেই এতো কিছু করতে হত ।

অনু বলল
-এবার বলগ্যাগটা !
এখনও কিছু বাকি ছিল । রাজকুমারীর মুখের চিৎকার থামাতে তার মুখে কিছু আটকে দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিলো । এখন অনুর জন্য ঠিক ঐ কাজ করতে হবে । একটা বলগ্যাগ ও আগে থেকে নিয়ে এসেছিলো । মুখে আটকে দেওয়ার আগে অনু বলল
-আমি আর কথা বলতে পারবো না । এই শেষ বুঝতে পারছিস ?
রুপম বলল
-হ্যা । বুঝলাম ।
-মনে রাখিস । আমি ওখানে যেতে চাই । যে কোন মূল্যেই । এভাবেই । তোদের কে ঠিক যেভাবে যেভাবে বলেছি তোরা ঠিক সেই ভাবে কাজ করবি । মনে থাকবে তো ?
ওরা তিনজনই বলে উঠলো
-হ্যা বাবা মনে থাকবে ।
আর কথা হল না । মুখে বলগ্যাগটা আটকে দিল । অনু অবশ্য আগে থেকে এই গ্যাগটা পড়ে অভ্যাস করে নিচ্ছিল । কারন একাধানে তিন দিন ওরা ওকে পরে থাকতে হবে ।

অনু বুক ভরে একটা বড় নিঃশ্বাস নিল । এবার আসল কাজটা করতে হবে । অনু চুপ করে দাড়িয়ে আছে । কারন কাজটা করবে রুমপ । কিন্তু রুপম তখনও খানিকটা কনফিউজ ! ফারহান বলল
-তুই তাহলে ওকে নিয়ে আয় । আমরা এগোলাম ।

সব কাজ শেষ হতেই রুপম দেখতে পেল অনুর পিঠেও একই ভাবে আকা সেই ট্যাটু টা । ও নিশ্চয়ই কোথাও থেকে এটা শরীরে আকিয়ে নিয়ে এসেছে ।

এবার ওদের হাটার পালা । রুপম যখন ওর সামনে এল তাকিয়ে দেখলো অনুর পুরো মুখ কাল হয়ে গেছে লজ্জায় । এমনটা হবে সেটা স্বাভবিক । রুপমের নিজেও অস্বস্তি লাগছে । টিভিতে কোন বিবস্ত্র মেয়েকে আর সরাসরি দেখার ভেতরে পার্থক্য আছে । আর কেউ যদি হয় খুব কাছের মানুষ তাহলে কথা নেই ।

অনুর অনেকটা সময় লাগলো নিজেকে সামলে নিতে । তাকিয়ে দেখে ওর সব কিছু এক পাশে গুছিয়ে সেগুলো পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা হল । অনুর ব্যাগটা নিয়ে যাওয়ার কোন মানে নেই । ওর সব কিছু এখানেই থাকবে । আর সেই হিসাব মত ওর শিকলের তালার চাবি গুলোও এখানেই রেখে যাওয়া হবে । কারন রুপমের কোন বিশ্বাস নেই ও জোর করে খুলে দিতে পারে ।
তারপরেই অনুর শিকলে টান পড়লো । তাকিয়ে দেখলো রুপম হাটতে শুরু করেছে । ও হাটতে শুরু করলো । যাত্র শুরু হয়ে গেল ওদের ।

ঠিক ঐ প্রাকৃতিক বেড়াটাতে অনু যখন পা দিল তখনই ওর কেন জানি মনে একটা ঠান্ডা বাতাস ওকে ছুয়ে গেল । সেই সাথে সাথে ও বুঝতে পারলো কিছুটা পরিবর্তন চলে এসেছে ওর মাঝে ! কিছু একটা যেন ওর দিকে প্রবেশ করেছে ।


ছয়

একটা দিন পুরো হাটলো ওরা । রুপমের হাতে অনুর শিকলটা ছিল । রুপম চেষ্টা করছিল আস্তে হাটার জন্য । কারন অনুর পায়ের শিকলটা ফুট দুয়েকের বেশি লম্বা নয় । ও চাইলেও বড় বড় পা ফেলতে পারবে না । তাই মাঝে মাঝে ওর গলার শিকলে টান গেলে যাচ্ছিলো । শিকলটা অনু নিজে বানিয়েছে । ওটার বেড়িটা একেবারে গলার সাথে শক্ত করেই আটকে আছে । সেটা আবার তালা দিয়ে আটকানো ।
সময় যতই যাচ্ছে রুপন ততই অস্বস্থির হয়ে উঠছে । এভাবে অনুর পরিশ্রম ও ঠিক দেখতে পারছে না কিন্তু কিছু বলার কিংবা করার সাহস পাচ্ছে না । অনু ওকে আগে থেকেই বলে রেখেছিলো যে যদি এখন এবারে এই কাজটা না হয়, কিংবা রুপম ওকে বাঁধা দেয় তাহলে আবার আসবে । অনু বলেছে যে যদি রুপম ওকে মাঝ পথেই খুলে দেয় কিংবা এমন কোন কাজ করে যার ফলে কাজটা অসমাপ্ত রেখেই চলে যেতে হয় তাহলে পরে আবার আসবে । এবং সেবার ও ভাড়া করা লোক নিয়ে আসবে । কয়েকজন ভাড়া করা লোকের সাথে অনু এই অবস্থায় যাবে এটা ভাবতেই রূপমের পুরো শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো । এর থেকেই ওর সামনে অনু আছে এটাই ভাল । যে কোন পরিস্থির জন্য অন্তত তৈরি থাকতে পারবে ও ।

ফারহান আর জামি ওদের থেকে থেকে বেশ এগিয়ে গেছে । মাঝে মাঝে ওরা দাড়াচ্ছে । ক্যামেরা দিয়ে চারিদিকের ছবি তুলছে । ওদের ছবিও তুলছে । অনু প্রথমে এই অবস্থায় ছবি তুলতে চাইছিলো না তবে জামি সেটা শুনে নি । আস্তে আস্তে অনুর অস্বস্তিও কেটে গেছে অনেকটা । ও স্বাভাবিক ভাবেই হাটছিলো । রুপম মাঝে মাঝে ফেছন ফিরে তাকাচ্ছিলো আর অনুর সাথে চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছিলো ।


রাতে ঘুমানোর সময় অনুর শিকলটা একটা গাছের সাথে আটকে রাখা হল । অনু কোন ভাবেই বসে থাকতে পারছিলো । যদি পর্যাপ্ত কষ্ট না করে, তাহলে নাকি অংদ্রো দেবী ওর ভেতরে আসবে না । এমনটাই নাকি নিয়ম । কি অদ্ভুদ সব নিয়ম ! রুপমের এসব কিছুই করতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু না করেও উপায়ও নেই ।

পরের দিনটা কাটলো ঠিক একই ভাবে । যতই সময় যাচ্ছিলো অনুর অবস্থা অল্প অল্প করে খারাপের দিকে যাচ্ছিলো । তবে ওর ভেতরে একটা পরিবর্তন আসছে । প্রথম প্রথম ও খুব বেশি লজ্জা পাচ্ছিলো কিন্তু যতই সময় যাচ্ছিলো ততই অনুর কেমন যেন অচেনা হয়ে যাচ্ছিল বিশেষ করে ওর হাটার ধরনাটা একটু একটু করে পরিবর্তন হচ্ছিলো। অনেক আগেই অনু কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে । তার উপর রুপমের মনে হচ্ছে যে অনু যেন আর অনুর ভেতরে নেই । রুপমের চোখ এড়াই নি এটা । আর সেই সাথে চারিদিকের আবহাওয়াও একটু একটু করে অন্য রকম হচ্ছিলো । রুপমের কেমন যেন একটু অস্বস্তি লাগা শুরু করলো । তাহলে কি অংদ্রো দেবী আসলেই এসে ভর করবে ওর মাঝে ? এমন কি হবে ? তখন কি হবে ?

নাহ ! কি ভাবছে এসব ! এসব ও বিশ্বাস করে না । এসব করতে হচ্ছে কেবল অনুর জেদের কারনে । আর ও অনুকে ভালবাসে এই জন্য।


হাটার গতি আস্তে আস্তে কমে আসছিলো তাই প্রায়ই শিকলে টান পরতে লাগলো ।

সন্ধ্যার সময় ওরা একটা বড় বটগাছের নিচে চলে এলাম । গাছটার গোড়াটা বাঁধাই করা । কাছে গিয়ে দেখলাম সেটা ইট দিয়ে বাঁধাই করা না । শক্ত কালো পাথর দিয়ে বাঁধাই করা । কে বা কারা এই জঙ্গলের ভেতরে এই গাছটা এভাবে বাঁধাই করেছে কে জানে । তার মানে এই এলাকাতেও এক সময় মানুষের সমাগম ছিল । নয়তো এমন হত না ।

চ্যাংকি বলেছিলো এই বড় বটগাছটা আমরা পথের মাঝে পাবে ওরা । এটার থেকে ডান দিকে যেতে হবে । দুদিন হেটেছে ওরা । কাল সন্ধ্যায় পুর্নিমা নামবে । তার আগেই ওরা পৌছে যাবে আশা করতে পারছে ।

ঐ গাছটার পাশেই ক্যাম্প করা হল । অনুকে আগের মতই একটা একটা গাছের সাথে আটকে রাখা হয়েছে । ওরা তিনজন বসে বসে কালকে কি করবে সেটা ঠিক করতে লাগলো । জামি ওদের অনেক গুলো ছবি তুলেছে সেটাই দেখতে লাগলো । মাঝে মাঝে হাসাহাসি করতে লাগলো । তবে রুপমের এসব ভাল লাগছিলো না। ফারহান খাবারন রান্না করলো নিজেই । রুপম সেটা খেয়ে শুয়ে পড়লো জলদি জলদি । যদিও ওর চিন্তা অনুকে ঘিরেই আছে ।
রাতে খুব ভাল ঘুম হল । একেবারে এক ঘুমে রাত পার । বেশি পরিশ্রম হয়েছে এই জন্য বোধহয় । তবে আগের দিনও বেশ পরিশ্রম হয়েছিলো সেইদিন তো এতো গাঢ় ঘুম হয় নি ওর । সাপ-পাঁচ আর ভাবলো না ও আর ।

কিন্তু পরদিন সকাল বেলা রুপম অবাক হয়ে লক্ষ্য করল চারিদিকের আবাহাওয়া আরও বদলে গেছে । চারিদিকে তাকিয়ে দেখে অন্ধকার হয়ে এসেছে একদম । এই দুইদিন আকাশে ঠান্ডা একটা ভাব ছিল তবে গাছের ফাঁক দিয়ে যখনই আকাশ দেখা যাচ্ছিলো সেখানে রোঁদ দেখা যাচ্ছিলো । একটা গুমট ভাব ছিল কিন্তু সেই সাথে আলোও ছিল চারিদিকে । কিন্তু আজকে এমন কেন হল । অনু অবশ্য আগেই বলেছিলো যে বৃষ্টি হবে । শেষ দিনটা ওদের বৃষ্টির ভেতরেই হাটতে হবে !

কথায় আছে ঝামেলা কখন একা আসে না । ঝামেলার উপর আরেকটা ঝামেলা দেখা দিল । জামি কেমন যেন আচরন শুরু করলো । ফারহান ওকে সামলনোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না । ওর পেটে নাকি অসম্ভব যন্ত্রনা হচ্ছে । কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না । রুপম কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না ।

অনুর কোথায় ?

যে গাছটার সাথে ওকে আটকে রাখা হয়েছিলো সেটাতে নেই । ফারহান কে জিজ্ঞেস করতেই ও বলল ওকে একটু দুরে রেখে আসা হয়েছে । সকালে কিছু সময়ের জন্য ওকে একটু দুরে রাখা হয় অন্যান্য সব কাজ সারার জন্য ।

একদিনে আবাহাওয়ার এই অবস্থা অন্য দিকে জামির পেট ব্যাথা । রূপম কি করবে ঠিক বুঝতে পারলো না । ওরা প্রায়ই চলে এসেছে । আজকে সারাদিন হাটলে সন্ধ্যার দিকে সেই মন্দিরে পৌছে যাবো । দুইদিনের পথ ওরা এগিয়ে এসেছে আর একদিনের পথ বাকি । এখন কি ফিরে যাওয়া যায় ? অনু কিছুতেই রাজি হবে না !
আর এদিকে জামির কি হবে ?

রুপম যখন কিছু বুঝতে পারছে না, তখনই ফারহান একটা প্রস্তাব দিল । ও বলল যে অনু কিছুতেই এতো দুরে এসে ফিরে যেতে চাইবে না । যাওয়া উচিৎও না । ফারহান বলল যে ও জামিকে নিয়ে ফিরে যাবে । আর রুপম অনুকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে । চ্যাংকি তো ফিরে আসছেই । আর জামিকে সদরে রেখে ও নিজেও ফিরে আসবে ।

আর এই জায়গাটা এমনই যে কেউ ভয়ে এখানে আসে না । সুতরাং কেউ যে ওদের উপর হামলা করবে সেটারও ভয় নেই । তবুও সেফটির জন্য রুপমের কাছে একটা রিভালবার আছে ।

এর থেকে ভাল উপায় আমি আর খুজে পাওয়া গেল না । যেমনটা ঠিক হত তেমন ভাবেই কাজ করা হল । ফারহান আর দেরি করলো না । জামিকে নিয়ে রওনা দিয়ে দিল । তবে রুপমের কাছে কেন জানি মনে হল ফারহান একটু তাড়াহুড়ার ভেতরে আছে । যেন এখান থেকে পালাতে চাচ্ছে ।
ওদের কে চলে যেতে দেখলো । অনু আগেই বলেছিল বৃষ্টি আসবে । তাই একটা রেইন কোর্ট নিয়ে এসেছিলো । সেটা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রেইনকোর্ট টা পরে নিল ।

তারপর ফিরে এল অনুর কাছে । অনু গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসে ছিলো চোখ বন্ধ করে । ওকে দেখে কেমন যে অপ্রকৃতস্থ মনে হল । রুপম যখনই কাধে হাত দিতেই ও চমকে উঠলো । চোখ মেলে রুপমের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় ঘোলা চোখে । অনুকে কেমন অচেনা লাগছে ।
তাহলে কি সত্যি সত্যিই অংদ্রো দেবীর আগমন হচ্ছে !
অনু বলেছিলো ওরা যতই কাছাকাছি যেতে থাকবে ততই দেবী আমাদের বুঝিয়ে দিতে থাকবে তার অস্তিত্ব । তাহলে কি সত্যি ?

জামির পেটে সমস্যা দেখা দিল তারপর আবাহাওয়ার এই দশা । সব শেষে অনুকে কেমন যেন লাগছে !

অন্য কেউ হলে হয়তো রুপম এতোটা করতো না । এতোদুর কেবল মাত্র অনুর জন্য এসেছে সে । অন্য আর কিছু জন্য নয় । ও একটা এডভ্যাঞ্চার চেয়েছিলো সেটার জন্যই এসেছে, এর বেশি কিছু না । আর এখানে কোন অংদ্রো দেবী ফেবী আসবে না । এটা কেবলই প্রাকৃতিক একটা বৃষ্টি । এর ভেতরে কোন অলৌকিক অস্তিত নেই । এমনটা মনে মনে বলা শুরু করলো । এটাকে ভুল প্রমান করতেই যেন ঝুমঝুম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল ! বৃষ্টির ভেতরেই ওদের যাত্রা আবার শুরু হল ।


রুপম অনুকে উঠতে সাহায্য করলো । এই দুই দিনে অনুকে কিছুই খেতে দেওয়া হয় নি । এমনটাই ঠিক হয়েছিলো । ওর মুখে সেই বলগ্যাগটাও একটা বারের জন্যও খোলা হয় নি । কিন্তু ওর চেহারা দেখে সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না । একটা মানুষ দুদিন না খেলে তার চেহারায় সেটা ফুটে ওঠার কথা কিন্তু রুপমের মনে হল যে অনুর মাঝে এমন কোন লক্ষ্যই নেই । দেখলেই মনে হচ্ছে দিব্যি সুস্থ আছে । একটু হয়তো অপ্রকৃতিস্থ আচরন করছে কিন্তু ক্ষুধাতে যে কষ্ট পাচ্ছে এমনটা মনে হল না ওর কাছে । ওরা আবারও হাটতে শুরু করলো ।

দুপুরে কেবল একবার থামলো ওরা । রূপম কেবল বারবার তাকাচ্ছিলো অনুর দিকে । অনু আসলেই অন্য রকম আচরন করছে । ও যে ওর পাশে আছে সেটা দেখেও দেখছে না । কি যেন ভাবছে । কার কথা ভাবছে ও । খাওয়া শেষ করে আবারও হাটতে শুরু করলো ।

অবশেষে ওরা এসে হাজির হল অংদ্রো দেবীর সেই মন্দিরে । মন্দির না বলে কেবল একটা মুর্তি বলাই ভাল । এতো সময় ওরা নিচেই নামছিলো । একটা পাহাড়ের পাদ দেশে সমান কিছু জায়গা । সেখানে একটা উচু বেদীর উপর সেই মুর্তিটা দাড় করানো । সন্ধ্যার আলো তখনও অনেকটাই বাকি আছে । রুপম অবাক হয়ে মুর্তির টার দিকে তাকিয়ে ছিল । অপূর্ব সূন্দর একটা নারী মুর্তি । যে বানিয়েছে সুনিপুন হাতেই বানিয়েছে । একটু ব্যাঁকা হয়ে নাচের ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে । উচ্চতায় ১০/১২ ফুটের বেশি হবে না ।

এবার শেষ কাজ । অনুকে সেই মুর্তির সামনে নিয়ে গেল রুপম । সেখানে ওকে বসানো হল । তারপর ওর গলার শিকলটা অন্য অংশটা নিয়ে মুর্তির পায়ের কাছে গিয়ে দেখলো সেখানে আসলেই আংটার মত একটা জিনিস আছে । সেটার সাথে আটকে দিল । এরপর ও নিচে চলে এল । তখনও তীব্র ভাবেই বৃষ্টি পড়ছে ।

কিছু সময় এমনই কেটে গেল । রুপমের মনে হল ও যেন অনন্ত কাল ধরে অপেক্ষা করেই চলেছে । ততক্ষনে অন্ধকার নেমে গেছে । কিন্তু আকাশে মেঘ থাকার কারনে চারিদিকে ঘুরঘুরে অন্ধকার হয়ে আছে, যদিও আজ আকাশে চাঁদ থাকার কথা । কেবল মাত্র টর্চের আলোতে অনুকে দেখা যাচ্ছে । রুপম দেখলো অনুকে ঠিক যেভাবে বসিয়ে রেখে এসেছিলো ও ঠিক একই ভাবে বসে আছে , রুপম তাকিয়েই ছিল কিন্তু ও শরীর ক্লান্তিতে ভেঙ্গে আসছিলো । রুপম কেবল অনুভব করলো ওর তীব্র ভাবে ঘুম আসছে । ও কিছুতেই চোখের পাতা খুলে রাখতে পারছে না । এমন কেন হচ্ছে ওর সাথে ও ঠিক বুঝতে পারছে না । এমন তো হওয়ার কথা না । রুপমের মনে যে কেউ ওকে জোর করে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে । ও জেগে থাকতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না । একটা সময় তীব্র বৃষ্টির ভেতরেই রুপম ঘুমিয়ে পড়লো ।


সাত

রাফায়েল চুপ করেই শুনছিলো এতোটা সময়। চুপ করে ওদের গল্প শুনলো । প্রথমে কিছুটা সময় অনু বললেও পরের পুরোটা সময়ই রুপম বলেছে । কারন অনুর নাকি এসব কিছু ঠিক মনে নেই । ওর কেবল মনে আছে যে হাটছিলো । এর বেশি কিছু মনে নেই ওর । রাফায়েল অনুর দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি বলতে চাচ্ছো প্রথম দিনের পর থেকে তোমার আর কিছুই মনে নেই?
অনু মাথা নাড়লো। ওর কিছুই পরিস্কার মনে নেই। কেমন ঝাপসা স্মৃতি!
রাফায়েল বলল
-তাহলে এই মাঝের দুই দিনেই কিছু হয়েছে। এবং সেই ঘটনার সাথে তোমার ঐ দুই বন্ধু জড়িত ছিল। ওরা এমন কিছু করেছে যা দেবীর পছন্দ হয় নি। কিংবা আরও খারাপ কিছু!
অনু আর রুপম দুজনেই এক সাথে বলল
-কি?
-সেটা আমি জানি না। এটার জন্যই যত সমস্যা হচ্ছে। অংদ্রোর পুজা করা মানুষদের কে ও কোন ক্ষতি করে না । বরং তাদের উপর নানান সৌভাগ্যের ঘটনা ঘটায় । কিন্তু যদি ওর উপাসনা ঠিক মত না হয় তাহলে তাহলে সে রেগে যায় । তোমার ভেতরে সে এসেছে তার মানে তোমার রিচ্যুয়ালে কোন ভুল ছিল না তবে কিছু একটা সমস্যা ঠিকই হয়েছে ।
রুপম বলল
-কি সমস্যা !
-এটা তোমার বন্ধুরা বলতে পারবে ।
-কিন্তু ওরা তো কেউ । আপনি জানেন একজন মারা গেছে আরেকজন এখন দেশের বাইরে ! এখন কি করার ? কি করবো ?

রাফায়েল
-আসলে সমস্যাটা এখানেই । এখন কেবল একটা উপায় আছে । অনুর দেহ থেকে অংদ্রোকে আলাদা করতে হবে ।
রুপম আর অনু এক সাথেই বলে উঠলো
-কিভাবে ?
রাফায়েল বলল
-আবার সেখানেই যেতে হবে যেখান থেকে এসব শুরু হয়েছিলো । এবং আরেকটা কথা বলে রাখি যে এই প্রক্রিয়াটা মোটেই সহজ না ।
রুপম বলল
-আগেরটাই বা কি সহজ ছিল ? তবুও তো ও ঠিকই করেছে ।
রাফায়েল বলল
-তুমি একদম তোমার দাদুর মতই হয়েছে । একরোখা !
অনু বলল
-আপনি কিন্তু বললেন না ?
-কি ?
-দাদু আপনার কথা তার ডায়েরিতে লিখে গেছে । এমন ভাবে আপনার বর্ণনা দিয়েছে যে আমি আপনাকে দেখেই চিনে ফেলেছি ।
রাফায়েল হাসলো । তারপর
-হ্যা । সাজিদ রহমান বেশ মানুষ ছিল । আমাকে কেন জানি খুব পছন্দ করতো । উনি দুইবার আমার কাছে এসেছিলেন সাহায্যের জন্য । আমি সাহায্য করেছিলাম ।
রুপম বলল
-তার মানে আপনি অনুর দাদুর কে ভাল ভাবে চিনতেন । আপনার যে বর্ণনা অনুর দাদু দিয়ে গেছে আপনি একদম সেরকমই আছেন ? কিভাবে ?

রুপমের মাথায় কিছু ঢুকছে না । রাফায়েল বলল
-এখন এসব ভাবার সময় নয় । আমাদের আগামী আমাবশ্যাতেই অংদ্রো দেবীর মন্দিরে পৌছাতে হবে । নতুনবা যত দিন যাবে ততই অনুর ভেতরে অংদ্রো শক্তিশালী হয়ে উঠবে । আর যে কারনে অংদ্রো অসুন্তুষ্ট সেটা সে যে কোন ভাবেই করবেই ।

ওদের দুজনকে রেখেউ রাফায়েল উঠে পড়লো । ওরা দুজন কেবল অবাক হয়ে রাফায়েলে চলে পথে দিকে তাকিয়ে রইলো ।


আট

রুপম অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । তারপর রাফায়েলের দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ? অনু মারা যাবে ?
-না মরবে না । এবং এটাই এক মাত্র উপায় । এটা ছাড়া আর কোন উপায় নেই ।
-তাহলে দরকার নেই ।

অনু বলল
-না দরকার আছে ! আমি রাজি !
রুপম অনুর দিকে তাকিয়ে বলল
-তুই বুঝতে পারছি ? তুই পারবি না ।
অনু বলল
-দেখ আর কিছু করার নেই । আমি একটা কাজ করতে গিয়েছিলাম । সেটা ঠিক মত হয় নি । কোন একটা সমস্যা হয়েছে । এখন এটা থেকে মুক্তি পাওয়ার আর কোন উপায় নেই । কি করা যাবে ? দেখ তুই চিন্তা করিস না । সব ঠিক হয়ে যাবে !

রুপম কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না । কিন্তু এরই সাথে এও বুঝতে পারলো যে এটা ছাড়া আর কোন উপায় নেই । রুপম বলল
-তোবে এবার তোর হাতে কিছু থাকবে না । যদি দরকার হয় তাহলে কিন্তু আমরা সেটাকে স্পট করবো । ঠিক আছে ?
-আচ্ছা ঠিক আছে ।
-আর এর পরে আর কোন এক্সপেরিমেন্ট না ! এসব বাদ দিবি !
-আচ্ছা !


আজকে আমাবশ্যা । আবারও তারা সেই আগের জায়গাতে এসে হাজির হয়েছে । জায়গাটা সেই অংদ্রো দেবীর মুর্তির সামনে । ওরা বেদীর পাশে বসে ওরা তিন জন । বেদীর উপরে জনা দশেক মানুষ কাজ করছে । ওরা অংদ্রো দেবীর মুর্তির সামনে ঠিক ফুট তিনেক দুরুত্ব রেখে প্লাস চিহ্নের আদলে বড় কাঠের ভিম বসাচ্ছে । এই কাঠের সাথেই অনুকে আটকানো হবে । এবং এভাবেই তাকে আটকে থাকতে হবে ।

রাফায়েল যখন প্রথমে বলল যে অনুর দেহ থেকে অংদ্রোদেবীকে আলাদা করতে হলে অনুকে ঠিক ঐ মুর্তির সামনে নিয়ে যেতে হবে । বুদ্ধিটা একদম সোজা । এই অপদেবীর বসবাস এই পুরো এলাকাতেই যার কেন্দ্র হচ্ছে ঐ মুর্তিটা । কিন্তু এখন এই দেবী বাস করছে এই অনুর ভেতরে । অনুকে ঠিক ঐ মুর্তির সামনে নিয়ে গিয়ে তাকে বাধ্য করতে হবে যেন সে আবারও সেই মুর্তির ভেতরেই ফেরৎ যায় । এবং আমাবশ্যার সময়টা ঠিক করা হয়েছে কারন এই আমাবশ্যার সময়েই অংদ্রোদেবীর শক্তি সব চেয়ে কম থাকে । সে সব থেকে দুর্বল থাকে । যখন অনুকে সামনে বসিয়ে মন্ত্রটা পড়া শুরুর হবে তখন অংদ্রো ছুটে চলে যেতে চাইবে । তাই ও যাতে ছুটে যেতে না পরে সেই ব্যবস্থাই করা হচ্ছে ।


কাজ শেষ হতে বিকেল হয়ে গেল । কুলিরা কাজ শেষ করে চলে গেল । রাফায়েল অনুর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলল
-তুমি প্রস্তুত ?
-হুম ।
অনুকে সেই বিমের সাথে শিকল দিয়ে আটকে দেওয়া হল । অনেকটা ক্রস চিহ্নের মত করে । দুই হাত দুদিকে ছড়িয়ে ।

অনু বলল
-আবারও অংদ্রো চলে আমার ভেতরে চলে আসবে । ও চলে আসার আগে একটা কথা বলতে চাই তোকে । বলব ?
-হ্যা । বল !
-আমি জানি তুই আমার ব্যাপারে কি ভাবিস । এই সব কিছু মিটে যাক তারপর আমরা বিয়ে করে ফেলবো । কেমন ? আর এসবের দিকে যাবো না ।

রুপম অনুর দিকে এগিয়ে এল । তারপর ওর ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল
-এরপর তোকে আর কিচ্ছু করতে দিবো না এসব । বুঝেছিস ?

কিন্তু অনুর কাছ থেকে কোন উত্তর এল না । রুপম চমকে পিছনে ফিরে এল । রাফায়েল তখন পেছন থেকে বলল
-সরে এসো । আমাদের দেবি চলে এসেছে ।

রুপম দেখলো অনুর শরীরটা একটু একটু কাঁপছে । জ্বলন্ত আগুনের আলোতে রুপম দেখতে পারলো অনুর চোখ দুটো কেমন কাঁপছে । রাফায়েল দ্রুত বেদির উপর উঠে চলে এল । অনুর মুখ দিয়ে সেই অদ্ভুদ স্বর বের হওয়া শুরু করেছে । রুপম কেবল সেটা যে অনুর কন্ঠ নয় সেটা বুঝতে রুপমের কষ্ট হল না ।

রাফায়েল আরেকটা আগুনের কুণ্ডলী জ্বালালো মুর্তি আর অনুর মাঝে । তারপর আগুনের পাশে বসেই মুখ দিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো । কিছু একটা পড়ছে যেন । আর তাতেই অনুর কাঁপুনী আরও জোড়ে বেড়ে গেল । একটা পর্যায়ে এমন হল যে রুপমের মনে হল অনু কাঠের বিম টা যেন ভেঙ্গেই যাবেই । অনু নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছে । মনে হচ্ছে ওর ভেতর থেকে কেউ যেন বের হতে চাইছে । একটা পর্যায়ে গগন ফাটানো চিৎকার বেরিয়ে এল অনুর মুখ থেকে । রুমপ কেবল এক ভাবে তাকিয়ে রয়েছে । অনুর যে কষ্ট হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে কিন্তু ওর কিছু করার নেই । কেবল চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া ।

একটা পর্যায়ে রুপম দেখতে পেল অনুর গলা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে । নিজেকে ছাড়াতে গিয়ে হাতের পায়ের অংশ টুকু লোহার বেড়ির সাথে আটকে কেটে গেছে । রুমপ আর স হ্য করতে পারলো না । ওর মনে এসব থামানো দরকার । নয়তো অনু মারা যাবে । এভাবে ও আর সহ্য করতে পারবে না । ও দৌড়ে গেল আগুনের দিকে । রাফায়েল কে থামাতে হবে ।

থামাতেই হবে ।

এই মনে করে যখনই ও এসে রাফায়েলের গায়ে হাত দিতে যাবে তখনই ওর মাথার ভেতরে কেউ যেন আঘাত করলো । তীব্র এক যন্ত্রনা শুরু হল । সেই যন্ত্রনার ভেতরেই রুপম শুনতে পেল কেউ যেন ওকে বলছে, বাঁধা দিও না । এটাই এক মাত্র উপায় । তারপর সেই তীব্র যন্ত্রনা টা এতোই বাড়তে লাগলো যে রুপম জ্ঞান হারিয়ে ফেলল । একেবারে জ্ঞান হারানোর আগে কেবল অনুর দিকে তাকাতে পারলো সে । অনু তখন অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে গেছে । রুপমের কেবল মনে হল ও বুঝি আর কোন দিন অনুকে দেখতে পাবে না ।


নয়

রুপমের যখন চোখ মেলল তখন বাইরে বেশ রোদ । তাকিয়ে দেখে রুমপ এখনও সেই বেদির উপর শুয়েই আছে । ওর মুখের উপর উপুর হয়ে তাকিয়ে আছে অনু । মুখে হাসি নিয়ে । ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-যাক জনাবের ঘুম ভাঙ্গলো তাহলে ?

রুপমের মনে হল ও সম্ভবত স্বপ্ন দেখছে । জ্ঞান হারানোর আগে অনুকে যে অবস্থায় দেখেছিলো তাতে তো ওর এই অবস্থায় থাকার কথা না । রুপম বলল
-আমরা কি মারা গেছি দুজনেই ।
এই কথা শুনে অনু খিলখিল করে হেসে ফেলল । তারপর বলল
-হ্যা । আমি দুজনের মনে গেছি । মরে গিয়ে দোজগে পৌছে গেছি । ওর গাধা । আর কত ঘুমাবি । আর কত সময় ধরে একা একা বসে আছি ।

রুপম উঠে বসলো । মাথাটা তখনও বেশ ভার হয়ে আছে । চারিদিকে তাকিয়ে দেখে ওরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই আশে পাশে । রুপ বলল
-সেই লোকটা কোথায় ?
-জানি না । সকাল বেলা যখন ঘুম ভাঙ্গলো দেখি কেউ নেই । তুই ঘুমিয়ে আছিস । ঐ আগের দিনের মত । এখানে আসলেই কি তোর ঘুম আসে নাকি রে !

তারপর একটা কাগজ দেখালো । দেখানে কয়েকটা লাইন লেখা

"তোমাদের জন্য একজন গাইড অপেক্ষা করবে এই এরিয়ার বাইরেই । এই পথ টুকু তোমাকে একা একাই যেতে হবে । আর এর পরে দয়া করে একম কাজে নিজেকে জড়াবে না । সব কৌতুহল ভাল না"

রুমপ কাগজটা পড়ে অনুর দিকে তাকিয়ে বলল
-তাহলে সব ঝামেলা গেছে ?
-তাই তো মনে হচ্ছে ।
-আর যদি কোনদিন এসব করেছিস । আমার মনে হয়েছিলো আমি তোকে হারিয়ে ফেলেছি !

এই বলে অনুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো । যেন আর কোন ভাবেই অনুকে ছেড়ে দিবে না ।


পরিশিষ্টঃ

বান্দরবানে ওদের নিজেদের এই বাড়িতে ফারহান ফিরে এল প্রায় ছয় মাস পরে । যতই বাইরে থাকুক নিজের মাটি সব সময় সব থেকে প্রিয় । গতকালই ফিরেছে দেশে । রুপমের কাছ থেকে সব শুনেও প্রথমে ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না । আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করেছে । তবে যখন দেখলো রুপম আর অনু বিয়ে করে ফেলেছে । ফেসবুকে ওদের নিত্য নতুন ছবি দেখে ফারহানের বিশ্বাস হল যে অনুর জীবনে অপদেবীর ছায়া ছিল সেটা চলে গেছে । এর অর্থ হচ্ছে ওর জীবনের উপর থেকেও সেটা চলে গেছে । তার আর ভয় করে নি । ফিরে এসেছে ।

প্রথমে ঢাকা আসলেও কয়েকদিন পরে বান্দরবানে ফিরেছে । ও দাদা আর দাদীর বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে । সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ালো । পুরানো সব বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিল খুব । রাতে ঘুমাতে গেল নিশ্চিন্তে । কিন্তু যখন মাঝরাতে ওর ঘুম ভেঙ্গে গেল । সাথে সাথেই ওর মনে হল ওর রুমে কেউ আছে । ওর দিকে সেই ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে ।

ফারহানের সেই ভয়টা আবারও ফিরে এল । ও দৌড়ে পালাতে চাইলো কিন্তু পা নড়াতে পারলো না । সব কিছু যেন বিছানার সাথে আটকে আছে শক্ত করে । ও চিৎকার করতে গেল কিন্তু সেটাও মুখ দিয়ে বের হল না ।

তারপরেই ফারহান সেই মুর্তিটাকে দেখতে পেল । লম্বাতে প্রায় সাত ফুট । একটা নারী মুর্তি ওর বিছানার পাশে এসে দাড়িয়েছে । ওর চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে । ফারহান কেঁদে ফেলল । ছয় মাস আগে করা সেই অপরাধের দৃশ্যটা ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো । বলল
-বিশ্বাস কর আমি কিছু করতে চাই নি । সব জামির জন্য । আমার কোন দোষ নেই ।

অনু ওদের বন্ধু হলেও অনুকে ঐ অবস্থায় দেখার পর থেকে জামি নিজেকে ঠিক নিয়ন্ত্রন করতে পারে নি । ঐদিন ওদের গাইড যখন সেই বিশেষ ফলের কথা বলল তখনই জামির মাথায় বুদ্ধিটা আসে । ও রুপমের খাবারে খানিকটা ফল মিশিয়ে ডেয় । রাতে রুপম তাই গাঢ় ঘুমের ভেতরে তলিয়ে যায় । তখন জামি উঠে যায় অনুর কাছে । অনুর তখন সব কিছু ছিল আটাকনো । হাত পিছে মোড়া করে বাধা মুখেও গ্যাগ পড়ানো । প্রতিদিন ওকে ওভাবে দেখে নিজেকে আর নিয়ন্ত্রন করতে পারে নি । আদিম পশুটা জেগে উঠেছিলো ওর ভেতরে । জামির দেখা দেখি ফারহানও একই কাজ করে অনুর সাথে ।

কিন্তু তখন তো আর অনু নিজের ভেতরে নেই । ওর ভেতরে প্রথম দিন থেকে অংদ্রোদেবী এসে ভর করেছিলো । ওর ঠিক অনুর সম্মানহানি করে নি করেছিলো অংদ্রোদেবির সম্মানহানি । দেবি তো প্রতিশোধ নিবেই ।

পরদিন সকালে ফারহান কেও ঠিক একই ভাবে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে থাকতে দেখা গেল । মুখে একটা তীব্র ভয়ের ছাপ । যেন মরার আগে কোন কিছু দেখে খুব ভয় পেয়েছে ।

সমাপ্ত



গল্পে কিছু বানান ভুল থাকবে । এই জন্য দুঃখিত
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০৬
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও আমার ভাবনা

লিখেছেন মেহেদী তারেক, ১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:৪০

অবশেষে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হলো
আমি সবসময়ই প্রজ্ঞাপন দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে ছিলাম। কারণ, বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী এখনো দলটিকে সমর্থন করে। এত বড় একটি জনগোষ্ঠীর মতামত কিংবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিষিদ্ধ নয়, শুধু নড়াচড়া বন্ধ: আওয়ামী লীগ, ‘কার্যক্রম’ ও বিরোধীদের বিভ্রান্তির রাজনীতি

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই মে, ২০২৫ রাত ১:৫২


“আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে”—এই লাইনটি ফেসবুকে ঝড় তুলেছে, চায়ের কাপে তুফান এনেছে, এবং কিছু বিরোধী রাজনীতিকের মুখে সাময়িক হাসি ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু একটু থামুন ! খেয়াল করুন: বলা হয়েছে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আঁচলে বাঁধা সংসার

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১১ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:২০



আমি তখন কলেজে পড়ি। সবেমাত্র যৌথ পরিবার ভেঙে মায়ের সঙ্গে আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হয়েছে। নতুন সংসার গুছিয়ে নিতে, মা দিনের প্রায় সবটা সময় ঘরকন্নার কাজে পার করে দিতেন। ঘরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৫৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ১১ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:৪৫



কেন জানি মন মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।
কিছুই ভালো লাগছে না। ইচ্ছা করছে ঘোড়ায় চড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। হাতে থাকবে চাবুক। যেখানে অন্যায় দেখবো লাগাবো দুই ঘা চাবুক। সমস্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন

লিখেছেন নতুন নকিব, ১১ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৫

একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

প্রিয় পাঠক, গতকাল ১০ মে ২০২৫। এই দিনটি কোনো সাধারণ দিন ছিল না। এটি ছিল ঐতিহাসিক এমন একটি দিন, যা বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×