somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিপ্রাকৃত গল্পঃ অশুভ ডিল

১২ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সুমন বিরক্ত হয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে । তবে বিরক্তিটা সে প্রকাশ করতে পারছে না । কারন ঠিক তার পেছনেই ডিরেক্টর সাহেব বসে আছে । তার পাশের সিটে বসে আছে নোভা । কানে হেড ফোন লাগানো থাকলেও তার চোখে একটা সজাগ দৃষ্টি সুমনের চোখ এড়ালো না । এই মেয়েটা সব সময় এমন গম্ভীর হয়ে থাকে । অবশ্য ওর যা পোস্ট সেখানে গম্ভীর আর সতর্ক না থেকে উপায় নেই ।

ওদের একেবারে পেছনের সিটে আরও দুজন অফিসার বসে আছে । সবার চোখেই সতর্ক দৃষ্টি । কেবল সুমনই বিরক্ত বোধ করছে । ওদের গতকালকে পিএম অফিসে একটা ভয়ানক ঘটনা ঘটে গেছে । এমন ঘটনা যে যার মাথা মন্ডু কিছুই বুঝা যাচ্ছে না । কে করেছে, তার থেকেও বড় ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে কাজটা ঘটেছে কিভাবে ।

কোথায় তাদের আরও তৎপর হওয়া উচিৎ, তা না, তারা বসে আছে কোন ওঝাকে ধরার জন্য । তার কাছে গেলেই নাকি সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে । সুমন ভাবতেও পারছে না ওর ডিরেক্টর স্যার এমন একটা কাজ করতে পারেন । এমন কি নোভাও কোন কথা বলছে না ।
সুমন আর থাকতে না পেরে বলল
-স্যার এভাবে আর কতক্ষন ? আমরা তো বাসাট ঠিকানা জানিই । ঢুকছি না কেন ?
-আরেকটু !

ডিরেক্টর হাফিজ আহমেদ বললেন কথাটা । গলার স্বর শুনে সুমন চুপ করে গেল । তিনি যে কতটা গম্ভীর হয়ে অপেক্ষা করছে সেটা সুমনের বুঝতে কষ্ট হল না । পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে নোভা ওর দিকে তাকিয়ে আছে । চোখ সজাগ দৃষ্টির স্থানে একটা সুক্ষ বিরক্তি দেখতে পেল । যেন বলছে, এই আহমকটাকে এখানে কে নিয়ে এসেছে !

সুমন চোখ সরিয়ে নিল । নিজেকে খানিকটা সামলেও নিল । ঠিক তখনই হাফিজ আহমেদ বললেন
-সময় হয়ে গেছে । লেটস গো !


সবাই যেন প্রস্তুতই ছিল । চিপা গলির ঠিক এক পাশে ওদের গাড়িটা দাড় করানো ছিল । রাত অনেক হয়েছে । চারিপাশে একেবারে শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে । পুরান ঢাকার এই এলাকাটার একেবারে খুব দ্রুতই যেন শুয়ে পড়ে । সুমনের মনে হচ্ছিলো যেন ওরা ঢাকার বাইরের কোন গ্রামে প্রবেশ করে ফেলেছে ।

ওর দ্রত গাড়ি থেকে বের হয়ে সামনের কালো রংয়ের একটা একতলা বাড়ির দরজার সামনে এসে হাজির হল । হাত দিয়ে নব ঘোরাতেই দরজা খুলে গেল । এতো রাতে এই দরজা খোলা দেখে সুমন একটু অবাকই হল । তবুও সবার পেছনে প্রবেশ করলো । সবার আগে আছে নোভা । মেয়েটার হাতের ৯ এমএম পিস্তলটা কালো রাতের মাঝে আরও বেশি কালো হয়ে আছে । সুমনের নোভার এই ক্ষিপ্ত ভাবটা সব সময়ই ভাল লাগে । নোভা ওদের মধ্যে সব থেকে চৌকষ আর যোগ্য অফিসার !

পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে আছে । মনে হল যেন বাড়ির বাসিন্দারা আরামে ঘুমাচ্ছে নাক ডেকে । কিন্তু দরজা খোলা রেখে ?
সুমন যতদুর শুনেছে ওরা এসেছে এক ওঝার বাড়িতে । যার অনেক ক্ষমতা । সে অনেক কিছু করতে পারে । গত দিনের ঘটনার যখন কিছুই বুঝতে পারা যাচ্ছিলো না তখন হাফিজ আহমেদ ঠিক করলেন এই লোকটার কাছে আসবে । এর আগেও নাকি সে এই ওঝার কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছে । তার থেকেও বড় কথা এই লোকের কাছে নাকি আসতে বলা হয়েছে পিএমের বাসা থেকে ! সম্ভবত পিএমের স্ত্রীর কাছ থেকে !
পিএম স্যার এমন কিছুর অর্ডার দিবে না এটা সুমন খুব ভাল করেই জানে ! যাক কিছু করার নেই অর্ডার মানতেই হবে !

আরেকটা ঘর পেতেই ওরা সবাই একটা অবাক হওয়া দৃশ্য দেখলো । হঠাৎ করেই যেন চারিদিক আলোকিত হয়ে গেল । সুমন নিজে একটু বেশি অবাক হয়ে গেল । সারা বাড়ি অন্ধকার হয়ে ছিল । বাইরে থেকে যখন দেখছিলো তখন আলোর ছিটে ফোটা ছিল । আর এখন হঠাৎ করে সব আলোকিত একটা রুমের ভেতরে ওরা ঢুকে পরলো ।
আর সব থেকে বড় কথা ওদের ঠিক সামনে একজন বসে আছে । সুমনের মতই বয়স হবে । কালো রংয়ের একটা টিশার্ট আর ট্রাউজার পরে আছে ছেলেটা । ল্যাপটপ সামনে নিয়ে কি যেন কাজ করছে । ওদের দিকে না তাকিয়েই বলল
-হাফিজ সাহবে, আপনাদের আরও দুই মিনিট পরে বাসায় ঢোকার কথা ছিল । আগে ঢুকলেন কেন ?

সুমন কিছু বলতে যাবে তার আগেই ডিরেক্টর হাফিজ সামনে এসে বলল
-আসলে আমি খুব টেনশনে আছি । বুঝতেই পারছেন !
-এরকম ভুল আর করবেন না । অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে !
কেউ কোন কথা বলল না ।

সুমন কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । দেশের যে পিএম অফিস থেকে সারা দেশের উপর নিয়ন্ত্রন চালানো হয়, সেই অফিসের নিরাপত্তার বিভাগের প্রধান একটা সাধারন ছেলের সামনে এভাবে কথা বলছে !
সুমন ভেবেছিলো ওঝা মানে কোন বয়স্ক লোক হবে । কিন্তু কথা বার্তা শুনে সুমনে মনে হল ওরা যার খোজে এসেছে সেই ছেলেই । এতো অল্প বয়স সে আশা করে নি !

ছেলেটা বলল
-বসুন ।
হাফিজ আহমেদ সামনের সোফাতেই বসলো । বাকি সবাই তখনই দাড়িয়ে । ছেলেটা নোভার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনিও বসুন মিস নোভা !

নোভা একটু চমকে উঠলো । কারন ওর নাম কোন ভাবেই এই ছেলের জানার কথা না । ছেলেটা কিভাবে জানলো ?

নোভা একটু দ্বিধা বোধ করলো । তারপর তার পাশ থাকা একটা চেয়ারে বসে পড়লো ।

ছেলেটা বলল
-আরিবার ঘরের পাশেই তো আপনি ছিলেন, তাই না ?

এবার নোভা আসলেই চমকে গেল । এই কথা কোন ভাবেই এই ছেলের জানার কথা না । কেবল মাত্র পিএম অফিস ছাড়া আর কেউ জানে এটা । তার উপরে পিএম অফিসের সবাই ব্যাপারটা জানে না । তাহলে ডিরেক্টর স্যার কিছু বলেছে ?
কিন্তু সকাল থেকে একেবারে আঠার মত নোভা ডিরেক্টর হাফিজের সাথে সাথে চলছে । কাউকে ফোন করলে সেটা জানতো । সন্ধ্যার একটু আগে একটা অরিচিত নাম্বারে কথা হয়েছে তার । তাও এক মিনিটের কম ।
ছেলেটা অদ্ভুত ভাবে হাসলো । খোঁচা খোঁচা দাড়িতে ছেলেটাকে নোভার কেন জানি ভালই লাগলো । নোভা কি করবে বুঝতে পারলো না ! কেবল বলল
-হ্যা !
-কোন আওয়াজ শুনেছেন ?
-না ! আমি আসলে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম । আমার ডিউটি আওয়ার ছিল না । তাই রেস্ট নিচ্ছিলাম !

ছেলেটা আর কিছু না বলে কিছুটা সময় চুপ করে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল
-আমি দেখি কি সাহায্য করতে পারি । কালকে সন্ধ্যা বেলা আমি পিএমের বাসভবনে একবার যেতে চাই । আমাকে এখান থেকে পিক করে নিবেন ! ঠিক সাড়ে নটার সময় । হাফিজ সাহেব আপনার হাতের ঘড়ি দুই মিনিট এগারো সেকেন্ড ফার্স্ট । সেটা কমিয়ে নিবেন । ঠিক আছে ?
হাফিজ আহমেদ মাথা নাড়ালো !
-আপনারা এখন আসুন । আর আমি কোন সন্ত্রাসী না । এভাবে পিস্তল নিয়ে ঘরে প্রবেশ করার কোন দরকার ছিল না । সামনের বার পুরো বাহিনী না এক দুজন এলেই চলবে !

নোভা খানিকটা অবাক না হয়ে পারছে না ! এমন কি যখন ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছে তখনও কেমন একটা অস্বস্তি কাজ করছে ওর ভেতরে । এমনই একটা অনুভুতি যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাচ্ছে না । নোভার মনে হল ও এমন একজনের সামনে এসেছে যার কাছে ওর কোন সিক্রেট অজানা নেই । ছেলেটার চোখের দিকে তাকাতেই নোভার এই কথাই মনে হয়েছে ।

ওর যখন ঘর থেকে বের হতে যাবে পেছন থেকে আবারও ছেলেটার ডাক শোনা গেল । ছেলেটা বলল
-জেড টিভির রিপোর্টার রিপনকে গিয়ে আটকান । সে আরিবার গায়েব হওয়ার ঘটনাটা জেনে গেছে । ওটা প্রকাশ পেলে ঝামেলা বাড়বে বই কম না ।

হাফিজ আহমেদ কেবল মাথা কাত করে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল । নোভা লক্ষ্য করলো এরই মাঝে হাফিজ আহমেদ বেশ ঘেমে গেছে ।
নোভা কোন কিছুর বুঝে উঠতে পারছিলো না । এই ছেলেটা কে আর কিভাবে জানলো যে পিএমের মেয়ে কিডন্যাপ হয়েছে ?



দুই
নোভার মনে হল সামনে যদি কোন মানুষ কিংবা যানবাহন পড়ে তাহলে সে সেটা উড়িয়ে দিয়েই এগিয়ে যাবে । কারো জন্য একটুও থামার সময় তার নেই । যদিও চারিপাশে কোন মানুষ দেখা যাচ্ছে না । দেখা যাওয়ার কথা না । ঘড়িতে আড়াইটারও বেশি বেজেছিলো যখন সে গনভবন থেকে বের হয় । এখন কয়টা বাজে সেটা ঠিক জানেো না । দেখতেও ইচ্ছে করছে না । তার কেবলই মনে হচ্ছে তাকে যে কোন মূল্যেই নিজের গন্তব্যে পৌছাতে হবে । সবার আগে পোছাতে হবে !

এমন সময় তার মোবাইল বাজতে থাকলো । ব্লটুথ এয়ারফোনটা কানের লাগানো ছিল । অভ্যাস হয়ে গেছে । বাইরে বের হলেই সব কিছু নিয়েি বের হয় ! বাইকের এক হ্যান্ডেল থেকে হাত সরিয়ে ফোনটা রিরিস করলো !

-হ্যালো নোভা !

সুমন ফোন করেছে । নোভা খানিকটা যেন বিরক্ত হল । ইদানিং কেন জানি সুমনকে নোভার ঠিক পছন্দ হচ্ছে না । ছেলেটা যেন দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে । বিশেষ করে যদিন থেকে নোভার মনে হয়েছে সুমন ওদের পেশাগত সম্পর্কের বাইরেও ওর সাথে অন্য একটা সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে আগ্রহী !
নোভা নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রেখে বলল
-বল !
-কোথায় তুমি ?
-আমি তোমাকে বলেছিলাম আমি কোথায় যাচ্ছি !
-আরে এভাবে একা একা যাওয়ার মানে নি । আমাদের জন্য অপেক্ষা করবা না ?
-শোনা তোমরা আসো, আমি যাচ্ছি !
-তা তো বুঝলাম কিন্তু এভাবে একা একা.... জানো কত কিছু হতে পারে !

নোভার বিরক্তিটা আরও একটু বাড়লো । কোন কথা না বলে সে ফোন রেখে দিল । বাইকের গতি আরও একটু বাড়িয়ে দিল ।
এদেশে একটা মেয়ে স্কুটি চালাচ্ছে এই দৃশ্যও খুব একটা স্বাভাবিক ভাবে দেখা হয় না সেখানে একটা মেয়ে ছেলেদের মত বাইক চালিয়ে চলে যাচ্ছে সেটা তো স্বাভাবিক ভাবে নেওয়ার কোন কারন নেই । নোভা খুব একটা বেরও হয় না নিজের বাইক নিয়ে । তবে এখন পরিস্থিতি আলাদা আর দেখার মত কেউ নেইও ।

গাজীপুর চৌরাস্তা ছাড়িয়ে আরও কিছু সামনে চলে এসেছে অনেক আগেই । শিববাড়ির আরও কিছুটা দুরে এসে ওর বাইকটা থামলো । হেলমেট খুলে সামনে তাকালো । এক টানা এতো সময় বাইক চালালেও ওর মনে ক্লান্তির কোন ছাপ নেই । বরং একটা অন্য রকম উত্তেজনা আছে ।

ওর ঠিক সামনেই একটা খোলা মাঠ । চারিদিকে সুনশান নিরবতা । রাতের না থাকলেও বাইকরের আলোতে অনেক অংশ দেখা যাচ্ছে । একটা নতুন স্কুল ভবন দেখা যাচ্ছে । ঠিক তার পাশেই একটা বড় কড়ই গাছ । কড়ই গাছের পেছনে একটা পূরতন বিল্ডিং । এখানেই ওর আসার কথা ! ফোনে এরকমই বলা হয়েছিলো ।


ফোন !
নোভা আরেকবার ভাবলো । নিজেকে খানিকটা বোকা বোকা মনে হল ওর কাছে । এরকম কারো ফোন পেয়ে সে এর আগে এভাবে ছুটে এসেছে কি না ওর ঠিক মনে পড়লো না । কিন্তু আরিবার গায়েব হয়ে যাওয়ার পর থেকে কিছুই ঠিক মত চলছে না । ওর মাথাও যেন ঠিক মত কাজ করছে না । কোথায় ওরা পুরো টিম নিয়ে আরিবাকে খুজতে বের হবে তা না, ওরা হাজির হল একটা ভুতের ওঝার কাছে । অবশ্য প্রথম দিনই সেই ওঝা মশাই ওদেরকে যথেষ্ঠ ভড়কে দিয়েছিল ।

ঐদিনের পরদিনই ওঝা সাহেব হাজির হয় রাতের বেলা । কারো সাথে কোন কথা না কেবল আরিবার রুমে বেশ কিছুটা সময় সে বসে রইলো চুপ করে । কিছু ভাবছে কিংবা কিছু যেন খোজ করছে !

তারপর ওদের ডিরেক্টর সাহেব আর সুমনও ছিল তখন রুমের ভেতরে । নোভা চুপচাপ কেবল তাকিয়ে দেখছিলো । একবার মনে হল ছেলেটা কেবলই ভন্ডামী করছে । এখনই ঘাড় ধরে বের করে দেওয়া দেয় কিন্তু সেটা করতে পারলো না ।

হঠাৎ ছেলেটা চোখ খুলে নোভার দিকে তাকালো । নোভার বুকের ভেতরটা কেমন যেন কেঁপে উঠলো সাথে সাথেই । ঠিক ভয়ে নয় বরং এক ধরনের অনাবৃত্ত্ব অনুভব করলো নিজের কাছে । ওর মনে নিজের মনের সব কথাই যেন ছেলেটা জেনে যাচ্ছে ।
ছেলেটা খানিকটা হাসলো । অদ্ভুদ রহস্যময় হাসি । তারপর নোভার দিকে তাকিয়ে বলল
-কদিন থেকে কি আরিবা কোন কারনে অস্থির ছিল ?

নোভার দায়িত্ব হচ্ছে সারাটা সময় আরিবার সাথে সাথে থাকা । পিএম হাউজনের প্রত্যেকজন সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য আলাদা আলাদা লোক আছে । আরিবা আর নোভার বয়স প্রায় কাছা কাছি বলে ওকে এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে । তাছাড়া আরিবা নোভাকে বেশ পছন্দ করতো । অনেক কথাই হত ওদের মাঝে । নোভা নিজেও আরিবাকে পছন্দ করতো । এর পেছনে অন্য একটা কারন অবশ্য আছে তবে সেটা অন্য একটা ব্যাপার !

নোভার মনে হল এই ছেলেটা এতো সব কিভাবে জেনে যাচ্ছে । নোভা বলল
-হ্যা ! খানিকটা ছিল । আমি ওকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেসও করেছিলাম কিন্তু ও আমাকে কিছু বলে নি ।
ছেলেটা এবার হাফিজ আহমেদের দিকে তাকালো । সরাসরি তাকে বলল
-পিএমের মেয়ে গায়েব হয়েছে সবার আগে পুলিশ আসার কথা । কিন্তু আপনারা আমার সাথে যোগাযোগ করলেন । তার মানে আপনারা কিছু জানেন । কেন মনে হল এটা অস্বাভাবিক ?
হাফিজ আহমেদের দিকে তাকিয়ে নোভার মনে হল তিনি কিছু জানেন । হাফিজ আহমেদ
-আসলে আমরা পুরো বাসা স্ক্যান করেছি । সিসিটিভি ক্যামেরাও দেখেছি । যদিও ঘরের ভেতরে ক্যামেরা নেই তবে দরজা থেকেই সমস্তটা সিসিটিভির কাভারেজে ! কোন কিছু আমরা পাই নি । মনে হয়েছে এটা স্বাভাবিক কিছু না ! হতেই পারে না ।
চোখ বন্ধ করে আরও কিছু সময় কি যেন ভাবলো ।
হাফিজ আহমেদ বলল
-মিস্টার রাফায়েল ! আসলে.....

গত দিন থেকে এই প্রথম নোভা ছেলেটার নাম জানতে পারলো । এদেশের কারো নাম রাফায়েল হতে পারে এটা নোভার ঠিক ধারনা ছিল না । কোন বিখ্যাত ফুটবল প্লেয়ার না আছে এই নামে !
রাফায়েল হাফিজ আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল
-ডিরেক্টর সাহেব । আপনি ঠিক সত্য বলছেন না কিংবা মুখের ভেতরে অর্ধেক কথা রেখেই কথা বলছেন । আপনার নিশ্চয়ই মনে রাখা উচিৎ যে আমি এখানে আপনাদের সাহায্য করতে এসেছি ।
হাফিজ আহমেদ কিছু সময় চুপ থেকে বলল
-আসলে ম্যাডাম আমাকে বলেছিলো আপনার কথা !
-ম্যাডাম ?

নোভা খানিকটা অবাক হয়ে গেল । স্যার মানে স্বয়ং পিএমের বউ ! এমন কথা তিনি বলবেন কেন ? আর কিভাবেই বা বলবেন !
রাফায়েল বলল
-ডাকুন তাকে !

সুমন এতো সময় চুপ করে দাড়িয়ে ছিল । এই কথা শুনে আর থাকতে পারলো না । ছেলেটা এমন ভাবে কথা বলছে যে দেশের পিএমের বউ না কোন রাম সাম যদুকে ডাকছে । সুমন ভারী গলাতে বলল
-আপনি একটু সাবধানে কথা বলুন !
রাফায়েল বিন্দু মাত্র বিচলিত না হয়ে বলল
-আমি অসাবধানের কি এমন বললাম ? একজন মা তার মেয়েকে খুজে পাচ্ছেন না । আমাকে ডাকা হয়েছে সেই মেয়েকে খুজে বের করার জন্য । এখন আমার সেই মায়ের সাথে কথা বলা জরুরী কারন সে কিছু জানতে পারে ।
-আপনার জানা উচিৎ সেই মা সাধারন কেউ নন !
-আমার কাছে সে এক ভুক্ত ভোগী ছাড়া আর কেউ নন ।

সুমন আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই দরজা খোলা আওয়াজ হল । সুমন তাকিয়ে দেখলো ম্যাডাম ঘরে ঘুকছে । তাদের সবাইকে ঘরের বাইরে চলে যেতে বলে তিনি রাফায়েলের সাথে কথা বলা শুরু করলো । এভাবে অপরিচিত কোন মানুষের সামনে তাকে একা ফেলে যাওয়ার কোন নিয়ম নেই তবে নির্দেশ অমান্য করার উপায় নেই । বিশেষ করে এই পরিস্থিতিতে ।

তার কিছু সময় পরেই রাফায়েল দরজা খুলে বের হয়ে যায় । নোভা তাকে চলে যেতে দেখে । যখন ম্যাডাম দরজা খুলে বের হয়ে এল তখন নোভা তার চোখে একটা অজানা চিন্তার রেখা দেখতে পেল । এমন চিন্তিত সে এর আগে তাকে দেখেন নি । অবশ্য এর আগে তার মেয়েও নিশ্চয়ই এভাবে গায়েব হয়ে যায় নি ।

তারপর থেকে দুইদিন রাফায়েলের কোন খবর নেই । কিন্তু আজকে রাতে হঠাৎই নোভার মোবাইলে একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এসে হাজির । ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠলো
-আরিবার খোজ পেয়েছি । তুমি এখনই চলে আসো । দেখো ঠিকানা এসএমএস করে দিয়েছি ।

নোভাকে বলে দিতে হল না কে ওকে ফোন দিয়েছে । নোভার নাম্বার রাফায়েলের কাছে কিভাবে গেল সেটাও নোভার মনে এল না । কেবল মনে হল এখনই ওর যাওয়া দরকার । এসএমএসটা অন করে ঠিকানাটা দেখে নিল । তারপর সেটা সুমনকে ফরওয়ার্ড করে দিয়ে নিজে বের হয়ে এল কাউকে কিছু না বলেই । এখন কাউকে ডাকার যাবে না । তাহলেই দেরি হয়ে যাবে । আর নোভা মোটেই দেরি করতে চায় না । আরিবা ওর দায়িত্বে ছিল । কেউ কিছু না বললেও নিজের কাছেই সমস্ত দায় ওর নিজের মনে হচ্ছে । তাই সে কোন চেষ্টা বাকি রাখতে চায় না ! আর তার উপর আরিবার সাথে অন্য রকম একটা সংযোগ আছে । যা কেউ জানে না । কেবল ও জানে ! সেটার জন্য হলেও আরিবাকে খুজে বের করতেই হবে !



নোভা বড় কড়ই গাছটার দিকে এগিয়ে গেল । এখানেই ওকে আসতে বলা হয়েছিলো । বাইকের লাইট অফ করে দিলো । আস্তে আস্তে বাইকটা নিয়ে গাছটার কাছে এগিয়ে এল । বড় কড়ই গাছ টার নিচে সান বাঁধানো । নোভা যেই না একটা ঘুরে গাছটার পেছন দিকে গেল একেবারে জমে গেল । এতো সময় গাছটার জন্য নোভা দেখতে পায় নি । একটু সরে যেতেই সেটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম । সাথে সাথেই বাইকের হেড লাইট টা জ্বালিয়ে দিল । বিশ্ময়টা বাড়লো বই কমলো না । নোভার এর আগে এমন কোন দৃশ্য দেখেছে বলে তার মনে পড়লো না । চোখ বড় বড় করে কেবল তাকিয়েই রইলো সামনের অতিপ্রকৃত দৃশ্যের দিকে ।


একটা মেয়ে মাটি থেকে তিন চার হাত উপরে সোজা চিৎ হয়ে শুয়ে আছে । শূন্যের উপরের ভাসছে । মেয়েটাযে আরিবা সেটা নোভার চিনতে একটুও কষ্ট হল না । তখনই নোভার মনে সুমন ঠিক কথাই বলেছিলো । একা একা না আসলেও হত । একটা সুক্ষ অস্বস্থি নোভার মন জুড়ে কাজ করছে এবং সেটা আস্তে আস্তে বাড়ছে ।
নোভা আস্তে আস্তে ভাসন্ত আরিবার দিকে এগিয়ে গেল । এক হাতে পিস্তলটা উঠে এসেছে । যদিও যে জিনিসটা ওকে অস্বস্থি দিচ্ছে সেটাকে পিস্তল দিয়ে কতখানি ঘায়েল করা যাবে সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় ! নোভা এক পা এক করে এগিয়েই যাচ্ছে । তখনই পেছন থেকে আওয়াজ এল
-পিস্তল টা ভেতরে রাখো !

এক ঝটকাতে নোভা ঘুরে গিয়েছিলো । গুলি করে দিতে গিয়েও দিল না । শেষ মুহুর্তে নিজেকে সামলে নিল । রাফায়েলকে দেখতে পেল ওর বাইকের উপর বসে আছে । ওর দিকে তাকিয়েই ! যদিও চেহারা এখনও ষ্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না তবে আবছায়া মুখ দেখে নোভার মনে হল ছেলেটা এখনও সেই র হস্যময় হাসি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।

নোভা নিজেকে শান্ত করলো । সেই সাথে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলো যে যে অস্বস্থিটা এতো সময় ও পাচ্ছিলো সেটা চলে গেছে । রাফায়েল ওর দিকে এগিয়ে এল । ওকে ক্রশ করে সামনে একেবারে আরিবার কাছে চলে গেল । তারপর বলল
-তুমি যখন আরিবাকে স্পর্শ করবে সাথে সাথেই ওর বডিটা ছেড়ে দিবে । ঠিক আছে ! ওকে হোল্ড করবে । বুঝেছো ?
-হুম !

ঠিক হলও তাই । আরিবার শরীরটা স্পর্শ করার সাথে সাথেই নোভার মনে হল দেহটা দেন কেউ ছেড়ে দিল । নোভা প্রস্তুত ছিল তবুও সামলাতে কষ্ট হল । আরিবাকে নিয়ে সে পাশের কড়ই গাছের নিচে রেখে দিল । মেয়েটা চোখ বন্ধ করে আছে । নিঃশ্বাস চেক করে দেখলো চলছে তবে খুব ধীরে !
নোভা বলল
-ও কি অজ্ঞান হয়ে আছে ? ঠিক আছে তো ও ?
-না ! ও ঠিক নেই !
-মানে ? কি হয়েছে ওর ?
-অনেক খারাপ কিছু ! ওর হাতে আর খুব বেশি সময়ও নেই ।
-কি বলছেন এই সব ?
-আমি সত্যি বলছি মিস নোভা ! আর তুমি নিজেকে যে দোষী ভাবছো, তোমাকে বলে রাখি যে এতে তোমার কোন দোষ নেই । আরিবা আজকের জন্য ও নিজেই দায়ী !
-কিন্তু কি হয়েছে বলবেন না ?
-তুমি বুঝবে না নোভা । তুমি এখানে অপেক্ষা কর । সুমন চলে এসেছে প্রায় । আমি যাই !
-প্লিজ এভাবে যাবেন না । প্লিজ !

রাফায়েল তাকালো নোভার দিকে । তারপর বলল
-আগে আরিবাকে নিয়ে যাও বাসায় । দেখো কি হয় ? দরকার হলে আমি পরে যোগাযোগ করবো । যদিও খুব একটা লাভ হবে না । আরিবা নিজের ইচ্ছাতে নিজের সৌউল বিক্রি করে দিয়েছে ।
-মানে ? কি বলছেন আপনি ?
-হ্যা ! আগেই বলেছি বুঝবে না । ঐ দেখো চলে এসেছো ওরা । আমি গেলাম । আমার দায়িত্ব ছিল আরিবাকে খুজে বের করার । আমি খুজে বের করে দিলাম ! ভাল থাকো !

নোভা তাকিয়ে দেখলো রাফায়েল আস্তে আস্তে অন্ধকারের ভেতরে চলে হারিয়ে গেল । একভাবে তাকিয়ে রইলো রাফায়েলের চলে যাওয়ার পথের দিকে । ঠিক তারপরই গাড়ির আলোটা দেখতে পেল । সুমনরা চলে এসেছে । আরিবাকেও খুজে পাওয়া গেছে । কিন্তু নোভার মনে হল সমস্যা এখানেই শেষ হয় নি । বরং সমস্যা যেন শুরু হয়েছে ।


তিন

ঘরের ভেতরে আর কেউ নেই । নোভার এদিক ওদিক দেখছে । ওর কেমন অদ্ভুদ একটা অনুভুতি হচ্ছে । একটু আগেই ওকে রুমের ভেতরে রেখে রাফায়েল ঘরের বাইরে গেছে । একটু আগের রুমটা কেমন যেন অপরিচিত মনে হচ্ছে । নোভার কাছে মনে হচ্ছে দেওয়াল গুলো কেমন যেন নড়ছে !
নোভা চোখ বন্ধ করে ফেলল । চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই মনে হল রুমের ভেতরে কেউ যেন হেটে বেড়াচ্ছে !
নোভার চোখ খুলতে কেমন অস্বস্তি লাগছে । যদিও ওর মনে খুব ভয় ডর নেই তবে অস্বাভাবিক এই পরিবেশে একটু যেন অস্বস্তি লাগতে লাগলো ! মনে হল চোখ খুললে ভয়ংকর কাউকে দেখতে পাবে !
নোভার বুকের ভেতরে ধুকধুক করতে লাগলো । মনের ভেতরে উত্তেজনা যেন বাড়তেই লাগলো । যখন মনে হল ও আর সহ্য করতে পারবে না তখনই কেউ ওর হাত স্পর্শ করলো ! নোভা চিৎকার করে উঠতে গিয়ে নিয়ে নিজেকে সামলে নি । চোখ খুলে দেখে রাফায়েল ওর সামনে দাড়িয়ে !


আরিবাকে খুজে পাওয়ার পর থেকেই দেশের সব থেকে বড় হাসপাতালে ওকে রাখা হয়েছে । কিন্তু এখনও সেখানকার ডাক্তারেরা কিছুই ধরতে পারেন নি । যদিও তাদের রিপোর্ট বলছে আরিবা স্বাভাবিক আছে কিন্তু নোভা জানে আরিবা স্বাভাবিক নেই । অন্তত ঐদিন রাতে ওভাবে আরিবাকে শূন্যের উপর ভেসে থাকতে দেখে নোভার মনে হয়েছে বড় রকমের কোন ঝামেলা আছে । এটা এই রাফায়েল ছাড়া আর কেউ সমাধান করতে পারবে না ।

নোভা তাই রাফায়েলের কাছেই এসেছে । রাতেই বেলাতেই যখন একা একা এসেছে । সুমন আসতে চেয়েছিলো তবে সুমনকে নিয়ে আসে নি । ওর কেন জানি মনে হয়েছে ওর একাই আসা দরকার ! কৌতুহল আর আরিবার জন্য চিন্তা নোভাকে কিছুতেই শান্ত থাকতে দিচ্ছে না । বাইকটা যখন পুরান ঢাকার সেই বাসার সামনে থামলো অনেকেই নোভার দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলো । কিন্তু ওর কোমরে কোজা পিস্তল টা দেখে কেউ সাহস করে এগিয়ে আসে নি ।

আজকেও দরজা ঠেলা দিতেই লক্ষ্য করলো সেটা খোলা । নোভা যদিও কিছু বলে আসে নি, বলার কোন উপায় ছিল না । যে নাম্বার টা থেকে ওকে রাফায়েল ফোন করেছিলো সেটা বন্ধ ছিলো । কিন্তু এতোটা সময় অপেক্ষা করা ওর জন্য কষ্টকর ছিল । তাই আর কোন কথা না ভেবে সে নিজেই হাজির হয় ।

ঘরের ভেতরে ঢুকতেই সেই প্রথম দিনের অনূভুতি এসে হাজির হয় ওর ভেতরে । অদ্ভুদ একটা অনুভুতি । যেন কেউ ওর প্রতিটা পদক্ষেপ দেখতে পারছে । ওকে আড়াল থেকে লক্ষ্য করছে । ওর কেমন যেন পানির পিপাসা পেল । এদিক ওদিক তাকিয়ে খুজতে লাগলো পানির জগ কিংবা বোতল । কিন্তু পরক্ষনের মনে হল ও তো এখানে পানি খেতে আসে নি । অন্য কাজে এসেছে । আবারও খুজতে শুরু করলো যার খোজে এসেছে ।

তবে ঐদিনের মত আজকে কেন জানি বাড়ির ভেতরটা অন্য রকম লাগলো । আবার যখন সেই আগের ঘরে প্রবেশ করলো রাফায়েল আগে যে ঘরে পেয়েছিল, নোভার মনে একটা ভয় ছিল যে ও হয়তো ওকে দেখতে পাবে না । কিন্তু আজকেও ঠিক একই ভাবে রাফায়েলকে দেখতে পেল । একই ভাবে ল্যাপ্টপে মুখ গুজে কি যেন দেখায় ব্যস্ত । ওর দিকে মুখ না তুলেই বলল
-বাঁ পাশের টেবিলে পানির বোতল আছে ।

নোভা অবাক হল না । ওর যে পানির পিপাসা পেয়েছে এটা যেন রাফায়েলের জানার কথা । বোতল থেকে পানিয়ে খেয়ে সোজা রাফায়েলের সামনে এসে বসলো । কিছু বলবে কিন্তু কিভাবে বলবে সেটা খুজে পাচ্ছে না ।
রাফায়েল বলল
-বল ! কেন এসেছো ?
নোভা বলল
-আমার মনে আপনি জানেন আমি কেন এসেছি ! গতদিন আপনি বলেছেন আরিবা ওর আত্মা বিক্রি করেছে । এটার মানে কি ? এটা কিভাবে সম্ভব ?
রাফায়েল এবার নোভার দিকে তাকালো ।
-অনেক কিছুই সম্ভব । এমন অনেক কিছু এই পৃথিবীতে ঘটে যা তুমি জানো না, যা আমি জানি না ।
-কিন্তু আপনি তো এটা জানেন । আমি জানতে চাই । আমার চোখের সামনে দিয়ে মেয়েটার এমন অবস্থা হবে আমি এটা মেনে নিতে পারছি না !
রাফায়েল নিজের ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দিল । তারপর নোভার দিকে তাকিয়ে বলল
কেবল কি এটাই কারন ? নাকি অন্য কোন কারন আছে !
নোভার তখনই মনে আবার সেই অনুভূতিট হল । যে কথাটা সে এতো দিন গোপন করে এসেছে এই ছেলেটা ঠিক সেই কথাটা জানে ! নোভা বলল
-কি যায় আসে ? আমি কারন জানতে চাই । মেয়েটাকে বাঁচাতে চাই !
রাফায়েল আরও কিছুটা সময় চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-দেখো আমি বলবো না আমি সঠিক ভাবে কারন টা জানি । সেটা কেবল আরিবা নিজেই জানে । অন্য কারো জানার কথা না । এমন কি ওর মাও কথাটা জানে না ।
-জানার কি কোন উপায় নেই ? সৌলের ব্যাপারটা আপনি কিভাবে জানেন ?
-এমন কেস আমার কাছে এর আগেও অনেক এসেছে । সেইটা দেখেই অনুমান করেছি ।
-ভুলও তো হতে পারে ?
-অবশ্যই পারে । ভুল হলে আরিবা ঠিক হয়ে যাবে । আর যদি ভুল না হয় তবে সে কিন্তু আর কোনদিন ঠিক হবে না ।
-কিছু করা যায় না ? কোন উপায় নেই ?
-আছে কিন্তু সেটা না করার মতই । এখানে কিন্তু ভিটটিমের উপর ডিমোনটা জোরকে এসে বসে নি । ভিটটিম নিজে তাকে আমন্ত্রন জানিয়েছে । এবং এখানে আমার খুব সামান্য করার আছে ।
-আমি চাই ঐ সামান্য টুকুই আপনি করুন । প্লিজ । আই বেগ ইউ !

রাফায়েল কিছুটা সময় কোন কথা বলল না । তারপর ওকে বসিয়ে রেখেই উঠে চলে গেল ।


চার
রাফায়েল ওকে ওর পেছন পেছন আসতে বলল । দু তিনটা ঘর পেরিয়েই ওরা একটা খোলা উঠানের মত স্থানে চলে এল । উঠানটা যেমন চট করে এল ঠিক তেমনি করে চট করেই শেষ হয়ে গেল । তারপরেই একেবারে অন্ধকার । নোভা ভাল করে তাকিয়ে মনে হল একটু সামনেই দেওয়াল । কেমন অন্ধকার আরও গাঢ় হয়ে আসছে । নোভা রাফায়েলের দিকে তাকিয়ে বলল
-এবার ?
-যেতে থাকুন !
-মানে ?
-যেতে থাকুন !

নোভাকে একটু ইতস্তত করে গাঢ় অন্ধকারের ভেতরে ঢুকে পড়লো । ঠিক তখনও অনুভব করলো রাফায়েল ওর হাত আবারও ধরেছে । ছেলেটার হাত কেমন ঠান্ডা মনে হল । নাকি চারিপাশেই সব কিছু ঠান্ডা ।
রাফায়েল বলল
-আমার হাত কোন ভাবেই ছেড়ে দেবে না, কেমন ?
নোভার একবার মনে হল যে সে বলুক যে কেন ছেড়ে দিবো না কিন্তু তেমন কোন কথা বলল না । কেবল বলল
-আচ্ছা !

নোভা রাফায়েলের হাত ধরেই হাটতে লাগলো । চারিপাশ টা ওর কাছে কেমন যেন মনে হতে লাগলো । ঠিক যেন স্বাভাবিক না জায়গাটা ! নোভা বলল
-এটা কোন জায়গা ? ঢাকাতেই এমন জায়গা আছে ? সব কিছু এমন কেন লাগছে ?
রাফায়েল ওর দিকে আবারও হাসলো । তারপর ওর হাত ধরে ওকে আবারও সেই বাসার সামনে নিয়ে যেখান দিয়ে নোভা একটু আগে প্রবেশ করেছে । রাফায়েল ওকে নিয়ে দরজা দিয়ে ঢুকলো । হাতটা তখনও ধরেই রেখেছে । কয়েক ঘর পেরিয়ে সেই আগের আলো ঘরটাতে প্রবেশ করলো যেখানে একটু আগেও ওরা ছিল । যখন রুমে প্রবেশ করলো তখনই নোভা একটা ধাক্কার মত খেল । নিজের চোখকে ঠিক মত বিশ্বাস করতে পারছে না ।

মেঝের ঠিক মাঝে একজন শুয়ে আছে একটু আগে যেখানে নোভা ছিল । এবং সেই একজনটা আর কেউ নয় স্বয়ং নোভা নিজে !
ওর মাথাতে কিছুই ঢুকছিলো না । কি হচ্ছে কিংবা কি হতে পারে এসব কিছুই ওর মাথায় ঢুকছে না । ওতো এখানে তাহলে মেঝেতে শুয়ে আছে কে ?
ওর অবাক হওয়া দেখেই রাফায়েল আবারও হাসলো । তারপর বলল
-ওটা তুমিই ! আর আমার সাথে তুমি তুমিই !
-মানে !
-এতো কিছু বুঝে লাভ নেই । কেবল জেনে রাখো আমরা আর আগের জায়গাতে নেই । আগের জগতেও নেই । এই পৃথিবীতে অন্য প্রাণীর বাস ! আরিবার সৌলটা এখানে আটকে আছে । আমরা এখানে এসেছি ওর সাথে কথা বলতে । ও কি করেছে সেটা জানতে ! ঠিক আছে !

কিন্তু ওকে কোথায় খুজবো ?
-খুব একটা কষ্ট হবে না । ওর বডি যেখানে আছে স্বাধারনত সেখানেই থাকবে অথবা ওর পরিচিত জায়তে থাকবে ! আসো যাওয়া যাক । মনে রাখো কোন ভাবেই আমার হাত ছাড়বে না কিন্তু !




নোভার কাছে অদ্ভুদ মনে হচ্ছে । ওর আশে পাশের সব কিছুই আছে । বাড়িঘর রাস্তা ঘাট সব কিছু বাস । তবে জগতের মতই তারপরেও একটু যেন অন্য রকম । কেমন অন্ধকার আর ছায়া ছায়া ! নোভার একটু অস্বস্তি বোধ হতে লাগলো । ও রাফায়েলের হাত টা আরও একটু শক্ত করে চেপে ধরলো । তবে একটা ব্যাপার খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো যে ও নিজের শরীরের ওজন অনুভব করছে না । একদমই করছে না, আর খুব দ্রুত চলতে পারছে । যেন একেবারে উড়ে চলছে । দ্রুত চলার জন্যই হয়তো নোভা সামনের মানুষটাকে লক্ষ্য করলো না । কিন্তু যখন লক্ষ্য করলো তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে । নোভাদের সামনে একজন এসে উপস্থিত হল । নোভা নিজেকে ধাক্কা থেকে বাঁচাতে চাইলো । কিন্তু পারলো না তবে সামনের লোকটার সাথে ধাক্কা লেগেই গেল । নোভা ভেবেছিলো বড় ধরনের একটা ধাক্কা খেতে চলেছে কিন্তু অবাক হয়ে দেখলো কোন ধাক্কাই অনুভব হল না । সামনের লোকটা ওদেরকে ভেদ করে চলে গেল । এমন একটা ভাব যেন ওরা যে আছে লোকটা সেটা জানেই না ।


নোভা কিছুটা সময় কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । ও যা দেখছে তার কিছুই ওর বিশ্বাস হচ্ছে না । হবার কথাও না । রাফায়েল বলল
-ওরা জানেও না যে আমরা এখানে এসেছি । আমাদের এই একটা জগতেই ভিন্ন ভিন্ন ফিকোয়েন্সির প্রানী বাস করে । আমাদের দেহের ফ্রিকোয়েন্সি আর ওদের দেহের ফ্রিকোয়েন্সি এক না তাই ওরা আমাদেরকে দেখতে পাবে না অনুভবও করতে পারবে না । তবে অন্য ভাবে যদি আমরা এই জগতে আসতাম তাহলে দেখতে পেত ।
নোভা বলল
-আপনি কি বলছেন তার কিছুই আমি বুঝতে পারছি না ।
-বুঝতে হবে না । আসো !

ওরা দ্রুত হাটতে লাগলো । আরিবাকে খুজে পাওয়া লাগবে !

ওরা আরিবাহকে হাসপাতালের কোথাও দেখতে পেল না । নোভা হাসপাতালের আসে পাশে অনেকে দেখতে পেল । সবাই কেমন বিমর্ষ হয়ে হাটছে কেউ বা বসে আছে ।
রাফায়েল বলল
-আমাদের জগত থেকে এদের স্প্রিট বের হয়ে গেছে । এখানে অপেক্ষা করছে । এখন থেকে অন্য জগতে যাওয়ার অপেক্ষা !
-কোন জগতে ?
-যেখানে মানুষ মৃত্যুর পরে যায় । আমরা যেমন দীর্ঘ যাত্রায় প্লেন বদল করি মাঝের কোন এয়ারপোর্ট থেকে এটাও তেমনই একটা এয়ারপোর্ট ! এখান থেকে হেল হাউন্ড ওকে আরেকটা জগতে নিয়ে যাবে । যদি আমরা সেটা ঠিক মত বের করতে পারি তাহলে সেই জগতে আমাদের যেতে হবে । সেখান থেকে ওকে নিয়ে আসার একটা ক্ষীণ সম্ভবনা আছে । যাক আগে আমাদের জানতে হবে ও কার সাথে ডিল করেছে !

হাসপাতালে না পাওয়া গেলেো আরিবাকে ওদের বাসাতেই পাওয়া গেল । নিজের বিছাতে মাথা নিচ করে বসে আছে ।

নোভা বলল
-এখন ? আমাদের কথা তো ও শুনতে পাবে না ।
রাফায়েল কিছু না বলে নোভার বাম হাত টা নিজের ডান হাতের ভেতরে নিল । তারপর নিজের অন্য হাতটা সোজা আরিবাহর মাথার উপর রাখলো ।

নোভা দেখলো আরিবাহ কেমন মাথা উঠলো । কিছু যেন শুনতে কিংবা বুঝতে পেরেছে । ঠিক তারপরই নোভা আরিবাহর কন্ঠ শুনতে পেল !
-নোভা আপু !
-তুমি আমাকে শুনতে পাচ্ছো ?
-হ্যা ! আমি আপানকে দেখতেও পাচ্ছি ! আপনি এখানে ?

নোভা কথা বলতে যাচ্ছিলো তবে রাফায়েলের চোখের তাকিয়ে থেমে গেল । রাফায়েলের চোখের দিকে তাকিয়েই মনে হল যে ওর এই সংযোগ স্থাপন করতে রাফায়েলের বেশ কষ্ট হচ্ছে ! নোভা সরাসরি আরিবার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি জানো তুমি এখানে কেন ?
আরিবা মাথা নিয়ালো !
-আমাকে খুলে বল । আমরা তোমাকে বাঁচাতে চাইছি !
-আমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না । আমি .....

বলতে বলতেই আরিবা কেঁদে ফেলল ।
-প্লিজ কান্না বন্ধ কর । আমাকে খুলে বল । সব । আমাদের হাতে সময় কম ।

আরিবার কান্না বন্ধ করতে আরও কিছুটা সময় লাগলো । তারপর বলতে শুরু করলো ।

নয় বছর আগের কথা । সেদিন ইলেকশন দিন ছিল । আব্বু খুব হতাশ ছিল । আব্বুর দল খুব খারাপ ভাবে পরাজিত হয়েছিলো । আসলে এই দেশে ঐ দুটো বড় দল ছাড়া আর কোন দল ক্ষমতায় আসতে পারবে না । আমার আব্বুর মনে অনেক আশা ছিল তিনি এই দেশ গড়বেন । সব অনিয়ম দুর করবেন । এভাবেই তিনি নতুন দল গঠন করেছিলেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হল না । আব্বু খুব ভেঙ্গে পড়েছিলেন ।
আমারও খুব মন খারাপ লাগছি । খুব কান্না আসছিলো । বারবার কেবল মনে হচ্ছিলো আমি যদি কিছু করতে পারতাম । এমন কিছু যদি করতে পারতাম বাবা জন্য । বাবার হতাশ তাহলে আমার খুব খারাপ লাগে । বাবাকে আমি অনেক বেশি ভালবাসি !
সেদিন গভীর রাতেই সেই মেয়েটা এসেছিলো আমার কাছে । মুখে একটা হাসি লেগে ছিলো । নাম বলেছিলো "রামাজিনা" । সে কিভাবে আমার রুমে আসলো আমি বলতে পারবো না । আমি আসলে বাবার জন্য কষ্টে ছিলাম যে অন্য কিছু আমার মনে আসেই নি ।
রামাজিনা আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো । হাসিটার ভেতরে অন্য কিছু ছিল আমি কেমন যেন মনে হল । আমি অন্য সব কিছু ভুলে গেলাম মুহুর্তের ভেতরে । আমার কেন জানি মনে হল রামাজিনা আমাকে সাহায্য করতে পারবো । রামাজিনা আমার দিকে টাকিয়ে বলল
-তুমি চাইলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি ?
-সাহায্য ?
-কিভাবে ? কিভাবে সাহায্য করতে পারো ?
-তুমি চাও তোমার বাবার দল ক্ষমতায় আসে ?

আমি জানতাম ব্যাপারটা একেবারে অসম্ভব ! সন্ধ্যা বেলার ফলাফলে আমার বাবার নির্বাচনী ফলাফল বেরিয়েছে । তার ভরাডুবি হয়েছে । কিন্তু সেই সময়ে আমার মাথায় অন্য কিছু ছিল না । আমি রামাজিনাকে বললাম
-আমি চাই । আমি আমার বাবাকে এমন ভাবে দেখতে পারবো না ।
-কিন্তু বিনিমনে আমি কি পাবো ?
-তুমি যা চাও তাই দিব । বল তুমি কি চাও ।
-আমার তোমাকে চাই । তোমার আত্মাকে !

আমি প্রথমে ঠিক বুঝতে পারলাম না রামাজিনার কথা । আমার মাথায় তখন অন্য কিছু ছিল না । কেবল আমার বাবার হতাশ চেহারাটা আমার চোখের সামনে ভাসছিলো । আমি আর কোন কিছু না ভেবে রাজি হয়ে গেলাম । তারপর রামাজিনা আমাকে যা যা করতে বলল তাই করলাম । আমার কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ও আমার হাতের তালুকে একটা ছোট্ট ছুরি দিয়ে পোচ দিল । রক্তে মাখামাখি হয়ে গেল বিছানার চাদর । তবে আমার কেন জানি ব্যাথা লাগছিলো না । আমি কেমন একটা ঘোরের ভেতরে চলে গেলাম ।

সকালে যখন ঘুম থেকে উঠেছে তখন আমার কিছুই মনে ছিল না । কেবল হাতের কাটা জায়গা থেকে একটু একটু ব্যাথা অনুভব করছিলাম । তারপরেই সব কিছু দ্রুত ঘটতে লাগলো । জোট সরকার গঠনের দুই মাসের মধ্যে তাদের ভেতরে ঝামেলা শুরু হল । ছয় মাসের মাথায় সরকার ভেঙ্গে গেল । আবার হল নতুন নির্বাচন । এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে এবার আব্বুর দল ক্ষমতা গ্রহন করে নিল ।
আমার কিছু মনেও ছিল না কিন্তু গত মাসে আবারও রামাজিনা আমার রুমে এসে হাজির হল । ওকে দেখে আমি চমকে উঠলাম । আমি যা ভুলে গেছিলাম সব মনে পরে গেল । সে আমাকে বলল আমার যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে ।

আরিবা আর কিছু না বলে আবারও কাঁদতে লাগলো । নোভা কি বলবে খুজে পেল না । মেয়েটা নিজের অজান্তেই কি করে ফেলেছে সেটা ও নিজেও জানে না । নোভা রাফায়েলের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে ওর চেহারাটা কেমন হয়ে আসছে । ছেলেটার অনেক কষ্ট হচ্ছে সেটা নোভার বুঝতে কষ্ট হল না ।
হঠাৎ আরিবা নোভার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি জানি আমার কপালে কি লেখা আছে । আপনি যখন বাবার সাথে দেখা করবেন বলবেন যে সে যেন আর আমাকে নিয়ে মন খারাপ না করে । আর বলবেন আমি তাকে অনেক ভালবাসি !

রাফায়েল আরিবাহ মাথার উপর থেকে হাত সরিয়ে নিল ।



পাঁচ
সুমনের এখনও নিজকে বিশ্বাস করতে পাচ্ছে না । এমন একটা কাজ সে যে কোন করতে পারবে এমন ধারনা ওর ছিল না । হাসপাতালে পা দিয়েও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলো না, কাজটা ও করতে যাচ্ছে । সুমন হাসপাতালে ওয়ার্ডের বয়ের পোষাক পরে আছে । ওকে প্রথমে দেখলে যে কেউ মনে করতে পারে সে এই হাসপাতালেই কাজ করে !

নিজের হাতের ঘড়ির দিকে আরেকবার তাকালো । আর মাত্র দুই মিনিট । তারপরই কাজটা করতে হবে । বিস্কোয়ার হাসপাতালের ওয়াশ রুমে সে অপেক্ষা করছে । ওর উপর দায়িত্ব পড়েছে একটা ডাইভার্শন তৈরি করা । বাকি কাজ নোভার ।

মেয়েটা একা পারবে তো ?
সুমনের মনে খানিকটা দ্বিধা কাজ করলো । তবে সেটা মুহুর্তের ভেতরেই চলে গেল । কারন সুমন খুব ভাল করেই জানে নোভা মেয়েটা পারবে । ওর দেখা সব থেকে চৌকষ অফিসার নোভা ! সুমনের এই জন্যই মনের কথাটা ওকে বলতে পারে না । মেয়েটা ওকে রিজেক্ট করে দেওয়ার সমূহ সম্ভবনা রয়েছে ।

সময় হয়ে গেছে । আর দেরি করলো না । পকেটে করে আনা অল্প পরিমান বারুদ টুকু একটা কাগজে ভরে ফেলল । তারপর সেখানে আগুন ধরি দিল । ফায়ার সেন্স সরের সামনে ধরার কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই ফায়ার এলার্ম বেজে উঠলো । এবং তার কয়েক সেকেন্ড পরেই কাছেই কোথায় একটা বিস্ফোরনের আওয়াজ হল । যদিও খুব জোরে না তবে পুরো হাসপাতালটা যেন কেঁপে উঠলো । ব্যস আর কিছুর দরকার ছিল না ।

চারিদিকে হইচয়ে ভরে গেল । সুমন ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখে ওর সামনে মানুষ জন ছুটাছুটি শুরু করে দিয়েছে । কিছুটা সময় চুপ করে দাড়িয়ে ভাবতে লাগলো । নোভাকে কাজ করার জন্য সময় দিতে হবে । সবার লক্ষ্যই বাইরের দিকে যাওয়া । সুমন সেদিকে গেল না । সে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলো ওকে কোন দিকে যেতে হবে । ও সেদিকেই যেতে লাগলো ।

যাওয়ার পথেই ওর কিছু কথা কানে এল । রান্না ঘর থেকেই নাকি আগুনের সুত্রপাত হয়েছে । সেই সাথে একটা গ্যাস সিলিন্ডার ব্লাষ্ট হয়েছে । নোভা সব ব্যবস্থা করেছে ।

যখন বেজমেন্টে পৌছালো তখন পনের মিনিট পার হয়ে গেছে । কয়েকজন রোগী স্ট্রেচারে কিংবা হুইল চেয়ারে নিয়ে সেখানে অপেক্ষা করছে । সুমন নিজের সুনিষ্ট করা এম্বুল্যান্সের সামনে গিয়ে হাজির হল । সেখানে অপেক্ষা করার কথা ।
কত সময় লাগবে কে জানে ?

বার বার মনে হচ্ছে ও পারবে তো ? নাকি কোন সমস্যা হল । নিজের মাঝে কেমন অস্থির হয়ে যাচ্ছে । যখন সুমন উত্তেজনার শেষ প্রান্তে পৌছে চলে গেছে তখনই সামনে থেকে একজন নার্সকে স্ট্রেচার নিয়ে তাড়াহুড়া করে আসতে দেখলো । সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত তাই কেউ কারো দিকে লক্ষ্য করছে না । কিন্তু চলে আসার ধরন দেখেই সুমনের বুঝতে কষ্ট হল না কে আসছে ।

নিজে গাড়ি থেকে বের হয়ে পেছনের ঢালা খুলে দিল । তারপর নিজে স্ট্রেচারের আরেক প্রান্ত চেপে ধরলো । দুজন মিলে আরিবাকে গাড়ির পেছনে তুলে দিল ।
-কোন সমস্যা হয় নি ?
নোভা কথার জবাব দিল না । এমন ভাবে তাকালো সুমন বুঝতে পারলো এমন আহাম্মকের মত প্রশ্ন করা ওর ঠিক হয় নি । সুমন আর প্রশ্নের উত্তর আশা করলো না । নোভা পেছন থেকে ঢালা বন্ধ করে দিল । সুমন ততক্ষনে স্টিয়ারিং এ পৌছে গেছে । চাবি ঘুরাতেই গাড়ি চালু হয়ে গেল ।

একবার ভেবেছিলো গেটে হয়তো ওদের চেক করা হবে কিন্তু সবাই রয়েছে তাড়াহুড়ার ভেতরে । কেউ চেক করছে না । সুমন খুব সহজেই গাড়ি নিয়ে পৌছে গেল । গাড়ি সোজা দৌড়ে চলল পুরান ঢাকার দিকে । সেই বাড়তিটার দিকে । পেছন থেকে কেউ ওদের ফলো করছে কিনা এটা সে বারবার দেখলে লাগলো । হয়তো এখনও টের পায় নি যে আরিবা আবারও গায়েব হয়ে গেছে । তাহলে অবস্থা আরও কঠিন হয়ে উঠতো !

সুমনের উত্তেজনা তখনও কমে নি । কিভাবে কি হল এখনও ঠিক বুঝতে পারছে না । সকাল বেলা নোভা এসে যখন বলল যে ওর একটা ব্যাপারে সাহায্য দরকার তখন সুমন খুশিই হয়েছিলো । নোভা নিজ থেকে ওর কাছে সাহায্য চাচ্ছে, এমন ব্যাপার তো আর ঘনঘন ঘটে না ।
কিন্তু সুমন যখন শুনলে ওকে কি করতে হবে ও কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো নোভার দিকে । মনে হচ্ছিলো মেয়েটার মাথা ঠিক আছে তো ! আরিবাকে ও নিজেই খুজে পেয়েছে । হ্যা সেই অদ্ভুদ মানুষটার সাহায্য নিয়ে ও যতদুর জানে । এখন ও নিজেই আবার আরিবাকে হাসপতাল থেকে গায়েব করার কথা বলছে ।

এবং কাজটা আজই করতে হবে । রাতের বেলা আরিবাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার কথা । সুমন যখন বুঝলো যে ও যদি সাহায্য নাও করে নোভা একা একাই কাজটা করবে । রাজি হবে না, হবে না করেও রাজি হয়ে গেল । যদিও কিছুই জানে না সে । কি হবে এই অচেতন মেয়েটাকে নিয়ে নোভার কি পরিকল্পনা । তবে আর যাই হোক না কেন এসবের সাথে সেই অদ্ভুদ লোকটা জড়িত সেটা সে নিশ্চিৎ ভাবেই জানে ! তারা তো সেই পুরানো ঢাকার দিকেই যাচ্ছে ।


ছয়
ঘরটাতে কোন আলো জ্বলছে না। তবে একেবারে অন্ধকার হয়েও নেই । আবছায়া ভাবে সব কিছু দেখা যাচ্ছে । সুমন অটল হয়ে বসে আচে । বুকের ভেততে ঢিপঢিপ করছে । সত্যি বলতে কি ওর ভয় করছে । বেশ ভয় করছে । এক হাতে নিজের পিস্তল অন্য হাতে একটা অদ্ভুদ কারুকার্য করা লাঠি নিয়ে বসে আছে ! যে কোন হামলা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত । তবে এতে করেও ওর ভয় যাচ্ছে না ।

ঘরটা প্রয়োজের তুলায় বেশ বড় । এতোই বড় যে দেওয়াটা অন্ধকারের জন্য ঠিক মত দেখা যাচ্ছে না । এই জন্যই সুমনের ভয়টা আরও একটু বেড়ে গেছে । ওর কেবল মনে হচ্ছে দেওয়াল ঘেসে কেউ না কেউ রয়েছে । ওদের দিকে তাকিয়ে আছে ।

যদিও রাফায়েল নামের মানুষটা বলেছে ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই । ওরা একটা সার্কেলের ভেতরে বসে আছে । এই সারকেল ভেদ করে কেউ আসতে পারবে না । তবুও সুমনের ভয় যাচ্ছে না ।

সারকেলের ঠিক মাঝ খানে আরও একটা সার্কেল । সেই সারকেলের ভেতরে আরিবা আর নোভা চুপ করে শুয়ে আছে ।
ঠিক তাদের মাঝ খানে রাফায়েল ধ্যান করার মত করে বসে আছে । তার সামনে আগুন জ্বলছে । সেও চোখ বন্ধ করে আছে । সেও যে গভীর ধ্যানে আছন্ন হয়ে আছে ।

আর ঠিক ওদের সামনে একটা ধোয়ার মত গোলাকার কুন্ডলি হয়ে আছে । কুন্ডলির মাঝে আরও বেশি অন্ধকার । রাফায়েলের শরীর থেকে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে । এবং সেই ধোঁয়া থেকেই কুন্ডলীটা সৃষ্টি হচ্ছে । দেখতে অনেকটা ছোট একটা ব্ল্যাক হোলের মত দেখতে ! এটা কোন কুন্ডলী না, এটা হচ্ছে একটা দরজা । একটু আগে নোভা এই দরজা দিয়ে ঐ জগতে গেছে ।

ঠিক নোভা যায় নি । নোভার দেহটা এখনও ওর সামনেই পড়ে আছে । নোভার ভেতরের আত্মাটা গেছে । সুমন এখনও ঠিক নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না । নোভা আগেই সার্কেলের ভেতরে শুয়ে পরেছিলো । কিছু সময় পরেই গভীর ঘুমে ঢলে পড়লো । সুমন অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল কেবল । ঠিক তারপরও আসলে ঘটনা ঘটলো । সুমন স্পষ্ট দেখতে পেল নোভার শরীরের ভেতরে দিকে আবছায়া আলোর মত কিছু একটা বের হয়ে আসছে । পুরো জিনিসটা বের হয়ে আসতেই আবছায়া ভাবে নোভার আকার ধারন করলো । সুমন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো । কিছুতেও বিশ্বাস করতে পারছিলো না । নোভা সেই অবস্থাতেই সারা ঘরে ঘুরে বেড়াতে লাগলো ! সুমনের মনের ভেতরে একটা তীব্র ভয় কাজ করতে লাগলো !

রাফায়েলের দিকে তাকিয়ে দেখে ছেলেটা ওর দিকে তাকিয়ে আছে । ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-দেখ এবার আসল কাজ শুরু হবে । আমি মাঝ খানের ব্রীজটা তৈরি করবো । আমার নিজের শরীর দিয়ে বলতে পারো ! মনে রাখবে আমি ব্রীজ তৈরি করতেই নোভা সেটার ভেতড়ে ঢুকে পরবে । এবং কোন ভাবে যদি ব্রীজটা ধ্বংশ হয়ে যায় তাহলে নোভা কিন্তু ঐ জগতেই আটকা পড়বে । আরিবার মত । বুঝতে পেরেছো ?

সুমন কোন কথা বলে কেবল মাথা নেড়েছিলো । ওর কথা গুলো বিশ্বাস না হলেও চোখের সামনে যা হচ্ছে তা অীশ্বাস করার কোন উপায় নেই । বাইরে থেকে কোন ভয় না থাকলেও ঐ জগতের দরজাটা উন্মুক্ত অবস্থাতেই থাকছে । এবং যে কোন সময় কে কোন কিছু সেটা দিয়ে এই জগতে চলে আসতে পারে । আমার উপর হামলা করতে পারে । হামলাতে আমার কিছু না হলেও ব্রীজ ভেঙ্গে যেতে পারে আর একবার ভেঙ্গে গেলে তাহলে ওরা পথ হারিয়ে ফেলতে পারে !
তারপর সুমনের দিকে একটা লাঠি বাড়িয়ে দিল । বলল
-এটা দিয়ে আঘাত করবে । মনে থাকবে ?
-আচ্ছা !

তারপরেই রাফায়েল কাজ শুরু করে দিল । ব্রীজ তৈরি হয়ে গেল একটু পরেই । সুমন দেখলো ব্রীজ তৈরি হতেই ইতস্তত করে ঘুরে বেড়ানো নোভার অয়বয়টা সোজা সেটা দিয়েই ঢুকে পড়লো । সুমন নিজের পিস্তল এক হাতে নিয়ে অন্য হাতে লাঠি নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো !



সাত
ছোট বেলা থেকেই নোভার ভেতরে একটা জিনিস ছিল না, সেটা হচ্ছে ভয় । সে কাউকে ভয় পেত না । তার কিছুতেই কোন ভয় ছিল না । তার পেছনের কারন ছিল অনেকটাই পারিবারিক ! কিন্তু গত কদিন ধরে ওর চোখের সামনে যা হচ্ছে তাতে ওর ভয় না লাগলেও একটা অন্য রকম অনুভুতি হচ্ছে । একটা অস্বস্তি কাজ করছে !
কোন দিন ও ভাবতেও পারে নি এমন একটা জায়গাতে ও পৌছে যাবে । আরিবা মেয়েটা কি বোকামীই না করে ফেলেছে !
অবশ্য বাচ্চা একটা মেয়ে ! বাবার হতাশা ঠিক মত মেনে নিতে পারে নি ।

ও নিজে কি করছে ?
আরিবাকে বাঁচানোর জন্যই কি ওএখানে এসেছে ?
অদ্ভুদ জায়গাতে হাতে হাটতেই নোভার এই কথাটা মনে হল । নাহ !
ও কেবল মেয়েটাকে বাঁচানোর জন্য সে এতো বড় পদক্ষেপ নেয় নি । সে নিয়েছে তার বাবার জন্য ।
এমন একটা মানুষের জন্য যে কি না ......

ভাবনা সরিয়ে দিল । কিন্তু সেটা গিয়ে থামলো রাফায়েলের কথার উপর । অদ্ভুত মানুষ টা । এই জগতের কেউ?
জলজ্যান্ত মানুষ কিন্তু কেমন যেন মনে হয় ! চোখের দিকে তাকানো যায় না !
এতো তীক্ষ চোখ যে কোন মানুষের হতে পারে নোভা ভাবতেও পারে নি এর আগে । একেবারে যেন ভেতরের সব কথা বুঝে ফেলে !

নোভা যখন বলল ও যে কোন মূল্যেই আরিবাকে বাঁচাতে চায় তখন রাফায়েল খানিকটা হেসে উঠেছিলো । এর আগেই বলেছিলো ব্যাপারটা মোটামুটি অসম্ভব !
নোভা আরও দৃঢ় কন্ঠে বলল অসম্ভব তো না ! আমি রিক্স নিতে রাজি ।
রাফায়েল তখন বলল
-কেন ?
নোভা প্রথমে উত্তর দিতে পারে নি । অবশ্য ওর মনে হয়েছে রাফায়েল আগে থেকেই উত্তরটা জানে !
রাফায়েল তাকিয়েই রইলো ! যেন ওর মুখ থেকে কিছু না শুনে সামনে এগোবে না ! নোভা বলল
-আমার মনে হচ্ছে আপনি উত্তরটা জানেন !
রাফায়েল মৃদু হেসে বলল
-আমি অনেক কিছুই জানি । তবুও আমি তোমার মুখ থেকেই শুনতে চাই । আর আমি যতদুর জানি অনেক দিন তোমার ভেতরে কথাটা চেপে আছে !

নোভা একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিল । তারপর বলল
-আরিবা আমার বোন !
-সৎ বোন ?
-হ্যা ! প্রেসিডেন্ট সাহেব যখন কলেজে পড়তো তখন আমার মায়ের সাথে তার একটা কিছু ছিল । কিন্তু সেটা ওনাদের পরিবার মেনে নেয় নি ।
-তারপর ?
-আমি অনেকটা এতিম খানাতেই বড় হয়েছি । তার প্রতি তীব্র ঘৃণা নিয়ে কিন্তু আমার মা তাকে ভালবাসতো । ঠিক করেছিলাম কোন দিন তার মুখ দেখবো না । কিন্তু ভাগ্যের ফেড়ে আমি তার আসে পাশেই থাকি !
-এবং তুমি তোমার মায়ের মত মানুষটাকে ঘৃণা করে থাকতে পারলে না তাই তো ?
-হ্যা ! তিনি খুব ভাল মানুষ । সেই সময় তার কিছু করার ছিল না । মাও কথাটা বলতো আমাকে !
-এই জন্য তুমি তার কষ্ট দেখতে পারছো না ?
-হ্যা ! আরিবাহ তার জান ! তাকে হারিয়ে সে একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে !
-তুমি যেখানে যেতে চাইছো সেই জায়গাটা ভয়ংকর একটা জায়গা ! আর আমি সেখানে তোমার সাথে যেতে পারবো না ! একটু আগে আমরা কেবল স্যাডো হয়ে গিয়েছিলাম বলেই পেরেছিলাম কিন্তু আরিবাকে নিয়ে আসার জন্য স্যাডো হয়ে গেলে হবে না ।
-যেভাবে হোক আপনি ব্যবস্থা করেন । আপনাকে করতেই হবে

রাফায়েল কিছুটা সময় নোভার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো একভাবে ! বুঝার চেষ্টা করলো নোভার মনভাব ! মেয়েটা যে কোন ভাবেই নিজের সিদ্ধান্ত থেকে নড়বে না সেটা বুঝতে পেরে বলল
-আচ্ছা আমি ব্যবস্থা করছি । তবে সেটার জন্য নোভার বডি আমাদের দরকার হবে । রামাজিনা ওর দেহ থেকে ওর আত্মাকে বের করে নিয়ে গেছে । আত্মার সাথে দেহের বন্ড ছুটে গেছে বলতে পারো । সেটা আবার দেহে ঢুকানোর জন্য সেটা এখানে দরকার হবে !

-আমি এখানে নিয়ে আসবো


নোভা ভেবেছিলো একা একাই কাজটা করতে পারবে তবে ব্যাপারটা ওর কাছে অসম্ভবই ঠেকলো । তারপরই সুমনকে সাহায্যের জন্য বলল । সুমন তো প্রথমে ঠিক বিশ্বাস করতেই পারে নি যে এমন একটা কাজ সে করতে পারে । নোভার তখন মনে হল বলে কি ভুলই কলো সে কিন্তু ছেলেটা রাজি হয়ে গেল । রাজি হয়েছিলো বলেই কাজটা স হজে হয়ে গেল ।


আরিবাকে নিয়ে আবারও সেই বাসাতেই হাজির হল । সন্ধ্যা থেকেই সব আয়োজন চলছিলো । সুমন এই সারাটা সময় ওর পাশেই ছিল । ওর চোখ দেখেই মনে হচ্ছিলো ছেলেটা ওর জন্য কেয়ার করে । নোভা সেই শুরু থেকেই ব্যাপারটা জানে । কিন্তু নিজেকে সব সময় সরিয়ে নিয়ে এসেছে । নিজের সামনে একটা বিশাল দেওয়াল দাড় করিয়ে রেখেছে । কেউ সেই দেওয়াল ভেদ করে চলে আসতে পারে না ।

যখন নোভা সার্কেলের ভেতরে শুয়ে পড়লো নোভার পাশে তখনও সুমনের দিকে তাকিয়ে ছিলো । কি এক উৎকন্ঠা নিয়ে ছেলেটা ওর দিকে তাকিয়ে ছিল । তারপর পর আর কিছু মনে নেই । কিছু সময়ের জন্য যেন ও কোথায় হারিয়ে গেল । একটা সময় আবিস্কার করলো ওর নিজেকে খুব হালকা লাগছে । অবাক হয়ে তাকয়ে দেখে ও যেন বাতাশে উড়ছে ।
সুমনকে দেখতে পেল । রাফায়েলকেও ! ওরা কি যেন কথা বলছে । তবে কি বলছে সেটা স্পষ্ট না । এমন নি ওদের কেমন যেন আবছা ভাবে দেখা যাচ্ছে । কিছু বলল ওদের উদ্দেশ্য করে কিন্তু ওর শুনতে পেল না ।

তারপরেই সেই দরজাটা দেখতে পেল । চুম্বকের মত একটা সেখানে চলে এল । ওখানেই যেতে হবে ওকে । আরেকবার চিন্তা করলো কি করতে যাচ্ছে । মায়ের চেহারাটা একবার ভাবার চেষ্টা করলো কিন্তু সেখানে কেবল তার বাবার চেহারাটাই ভেসে উঠলো । আর কিছু না ভেবে ঘুকে পড়লো গোলাকার দরজা দিয়ে !

ওপাশে ঢুকতেই নিজের আসল রূপে আবার ফিরে এল । মাটিতে পা রেখে কেমন একটা অদ্ভুদ মনে হল । জায়গাতে অন্য রকম কিছু একটা আছে । চারিদিকটা কেমন প্রাণহীন রংহীন ! সব কিছুতে একটা ধূসর ভাব রয়েছে ।

নোভা সামনে দিকে হাটতে লাগলো । রাফায়েল বলেছিলো ও নিজ থেকেই পথ খুজে নিবে । আরিবা যেখানে আসে সেদিকেই ওর মন যেতে চাইবে । তবে যত সম্ভব ততদ্রুত আবার ফিরে আসতে হবে । কারন এভাবে দরজা খোলা রাখাটা বেশ বিপদজনক !

নোভা হাটতে পাগলো । দুটো বড় গাছের মত কিছু একটা দেখা যাচ্ছে সামনের দিকে ! একটু অবাক হলেও ওর কাছে মনে হল এই গাছের দিকে গেলেই আরিবার খোজ পাওয়া যাবে ! নোভা হাটতে লাগলো !

তখনই ওর কানে কিছু একটা শব্দ হল । পাতার মড় মড় আওয়াজের মত না তবে সেরকমই ! আওয়াজটা কাছাকাছি ! এসে থেমে গেল ! নোভার মনে হল ওকে দেখছে সেই জিনিসটা !
নোভা কিছুটা সময় চারিদিকে চেয়ে আবারও হাটতে সুরু করলো । তবে ওর চোখ চারি দিকে রয়েছে ।

কিন্তু একটা দিকে ওর চোখ ছিল না । উপর দিকে । উপর থেকে কেউ ওর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে এটা ওর ভাবতে ছিল না । তবে একেবারে শেস মুহুর্তে উপর তাকালো । তখনই দেখতে পেল । একেবারে কাছে চলে এসেছে । শেষ মুহুর্তে নিজেকে এক পাশে সরিয়ে নিল ।

প্রানীটা দেখতে অনেকটা শেয়ালের মত তবে সাইজে আরও একটু বড় । শিয়ালের লেজ থাকে এটার নেই । আর মুখটা যেন আরও একটু চ্যাপ্টা ! নোভা বেশ কিছুটা সময় প্রাণীটার দিকে তাকিয়ে রইলো । চোখের দিকে এক ভাবে ! আক্রমানাত্বক ভাবটা কিছুটা কমে এল । এরপর একেবারেই শেষ হয়ে গেল । পেছন দিকে ঘুরে চলে গেল সেটা !

নোভা ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলো না ।
সামনের দিকে যেতে যাবে ঠিক সেই সময় একটা ছোট খাটো মত ধাক্কা খেল । বুঝতে পারলো কেন প্রানীটা চলে গেছে !


আট

সুমন তীক্ষ দৃষ্টিতে কুন্ডলীর তাকিয়ে । এখনও দরদর করে ঘামাচ্ছে । ও ভেবেছিলো ব্যাপারটা খুব বেশি কঠিন হবে না । কিন্তু এমন কিছু ওকে দেখতে হবে সেটা বুঝতে পারে নি । লাঠি হাতে নিয়ে বসেই ছিল ঠিক সেই সময় কুন্ডলীর মাঝ দিয়ে ছোট একটা মুখ দেখতে পেল । অনেকটা বিড়ালের মত । কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেটা লাগিয়ে চলে এল । নিরিহ একটা চেহারা ! আদুরে পোষা বেড়ালের মত !

এদিক ওদিক দেখতে লাগলো । রাফায়েলের দিকে তাকাতেই হঠাৎ করেই প্রানীটার চেহারার ভাব বদলে গেল । সেখানে একটা হিংস্র ভাব ফুটে উঠলো সাথে সাথে । যেই না রাফায়েলের উপর ঝাপিয়ে পড়তে যাবে সেই সময় সুমন লাঠিটা দিয়ে প্রাণীটাকে বাড়ি মারলো । তারপর অনেকটা পিটিয়েই আবার সেই কুন্ডলীর দরজায় নিয়ে গেল ।

তারপর থেকেই কিছু সময় পর পরই কেউ না কেউ সেদিক থেকে মুখে বের করেছে আর সুমন পিটিয়ে সেটাকে আবার ভেতরে পাঠিয়ে দিয়েছে !



নোভার দ্রুত দৌড়াচ্ছে । ওর জলদিই আরিবার কাছে পৌছাতে হবে । যেকোন ভাবেই ওকে নিয়ে আবারও ফিরে যেতে হবে । নয়তো রামাজিনার খপ্পরথেকে ওকে বাঁচানো সম্ভব হবে না । একটু আগেই সেই রামাজিনা ওর কাছে এসেছিলো । ওর চোখের সামনে !
প্রাণীটা চলে যাওয়ার পরই যখন ও পেছন ফিরে তাকিয়েছিল তখনই তাকে দেখতে পায় !

এই ধূসর পৃথিবীতে তাকে যেন একেবারেই বেমানন লাগছে । ওর বয়সীই একটা মেয়ে । কালো পোষাক পরে আছে । শরীরের রং একেবারে ফর্সা । চুপ গুলোও কালো তবে ঠোটে টকটকে লাল লিপস্টিক ! ওর দিকে খানিকটা হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে ।
-তোমার এখানে আসা উচিৎ হয় নি ।
নোভা কোন কথা না বলে কেবল তাকিয়ে রইলো । ভাবতে মেয়েটা ওকে হামলা করবে কখন ?
মোভার মনের কথাই যেন বুঝতে পেরে মেয়েটা হাসলো । তারপর বলল
-ভুল ভাবছো । আমি তোমাকে হামলা করতে পারবো না । এই এটা ঠিক আমার জগৎ না ! এটা এৎা মধ্যভর্তী এলাকা বলতে পারো । এখানে আমার পোষা প্রানী গুলো থাকে ! এখানে আমার কিছু করার নেই । তবে ওরা অনেক কিছু করতে পারে । তুমি যে কাজে এসেছে সেটা কোন দিন হবে না ।
-দেখা যাক !
মেয়েটা হাসলো । তারপর বলল
-সৎ বোনের জন্য তোমার ভালবাসা দেখে আমার ভাল লাগছে । তাই তোমাকে একটা সুযোগ দেই । যেভাবে এসেছো সেভাবেই চলে যাও । কোন সমস্যা হবে না । কিন্তু যদি ওকে নিয়ে যেতে চাও তাহলে কেউ ফিরতে পারবে না । ও আমার । কেবলই আমার !

যখন বুঝলো মেয়েটার কাছ থেকে ওর কোন হামলা কিংবা ভয়ের আশংকা নেই তখন আর সময় নষ্ট করলো না । আবারও চলতে শুরু করলো । তবে এবার দৌড়াতে শুরু করলো । পেছন থেকে হাসির আওয়াজ তখনও ওর কানে বাজতে লাগলো !

কত সময় দৌড়িয়েছে সে জানে তবে একটা সময় নোভাকে যেন দেখতে পেল । ঐই তো ওর সামনে ! মাথা নিচু করে বসে আছে । ডাক দিতে যাবে তখনই কিছু একটা যেন ওর গায়ের উপর হামলে বসলো । সামনের দিকে এতোই মনযোগ ছিল যে পাশ থেকে কেউ যে ওর উপর ঝাপিয়ে পরতে পারে এটা ওর মনেই ছিল না । নিজের উপরই রাগ হল ওর !

ঝাক্কি খেয়ে খানিকটা দুরে সরে পরলো নোভা । উঠতে গিয়ে দেখলো শারীরের বা দিকটা বেশ ব্যাথা করছে ।
কে জানে কোন হাড় ভেঙ্গেছে কি না । ধাক্কাটা বেশ জোরেই এসেছে । বাঁ দিকে তাকিয়ে প্রানীটা দেখতে পেল!
রামাজিনার পোষা প্রানী !

রাফায়েল বলেছিলো এদেরকে হেল-হাউন্ড বলে ! এদের কাজই এমন সব আত্মকে নরকে টেনে নিয়ে যাওয়া ! একবার কেউ যদি নিজেদের আত্মা শয়তানের কাছে বিক্রি করে দেয় তাহলে তার জন্য একটা হেল-হাউন্ড বরাদ্দ করে দেওয়া হয় । বলা যায় তার আত্মার সাথে সেই হেল-হাউন্ডটাকে যুক্ত করে দেওয়া হয় । সেই আত্মাকে না নিয়ে সে কোন ভাবেই ফিরবে না ! একটাই উপায় আছে হেল-হাইন্ডটাকে মেরে ফেলা । কিন্তু পৃথিবীতে এদের কেউ দেখতেই পায় না । এরা অদৃশ্য ! কেবল মাত্র যাদের জন্য তারা পৃথিবীতে আসে তারাই সেটাকে দেখতে পায় ! তবে রাফায়েল বলেছিলো ও যে জগতে যাচ্ছে সেটা হেল হাউন্ডের জগৎ । সেখানে সেটাকে দেখা যাবে !

নোভা বাঁদিকে তাকিয়ে হেল-হাউন্ডটাকে দেখতে পেল । দেখতে পেয়েই ওর পুরো শরীরটা খানিকটা শিউরে উঠলো । এমন কোন প্রানী জগতে আছে কি না ওর জানা ছিল না । নিজ চোখে না দেখলে হয়তো কোন দিন সে বিশ্বাসই করতো না !

প্রানীটা দেখতে অনেকটা কুকুরের মত তবে সাইজে আরও একটু বড় ! কুচকুচে কারলো রং । তবে সব থেকে ভয়ংকর যে জিনিসটা সেটা হল কাধ থেকে প্রাণীটার তিনটা মাথা বের হয়ে আছে । তিনটা মাথার ভেতরে কেবল দুইটা চোখ বাকি দুইটা চোখের ভেতরে অন্ধকার । রাফায়েল বলেছিলো এই চোখই হচ্ছে ওদের সব থেকে দুর্বল জায়গা । চোখ দুটো নাকি তিন মাথাতেই ঘোরাঘুরি করে । এই চোখ অন্ধ করে দিতে পারলেই হেল-হাউন্ড অকেজো হয়ে পড়ে ! হেল-হাউন্ডটা নোভার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলো । আজকে যে ওটা নোভাকে কিছুতেই ছেড়ে দিবে সেটাই যেন চিৎকার দিয়ে বুঝিয়ে দিল ।

নোভার এখন উচিৎ পেছন দিকে দৌড় দেওয়া কিন্তু নোভা একটা অদ্ভুদ কাজ করলো । পেছন দিকে দৌড় তো দিলোই না সোজা হেল-হাউন্ডের দিকে দৌড়াতে লাগলো । এতে হেল-হাউন্ডটা নিজেই খানিকটা অবাক হয়ে গেল । তার জীবনে এমন কোন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হয় না । সবাই কেবল তার থেকে দুরেই পালিয়েছে । এই প্রথম কেউ তার দিকে তেড়ে আসছে । হেল-হাউন্ড টা যেন নড়তে ভুলে গেছে । নোভা সোজা ঝাপিয়ে পড়লো ওটার উপর । দুই হাত দিয়ে ওটার দুই মাথার ঠিক চোখের ফাকা গর্তের ভেততে চেপ ধরলো । একেবারে যেন ওর হাত দুটো ওখানে ফিট হয়ে গেছে । শক্ত করে চেপে ধরে আছে । প্রানীটাকে যতটা শক্তি শালী মনে করেছিলো আসলে সেটা অতোটা শক্তি শালী না । নোভার সাথেই পেড়ে উঠছে না ! অথবা নোভার নিজের ভেতরে আশুড়ে শক্তি চলে এসেছে !বারবার ওর বাবার মুখটা ভেসে উঠছে ।

নোভার দুই হাত দুই মাথাটকে আটকে রেখেছে কিন্তু অন্য মাথা যেখানে চোখ দুটো রয়েছে সেটা এখনও অক্ষত আছে । আরেকটা হাত থাকলে ভাল হত । প্রানীটা ওর দিকে তাকিয়ে তীব্র একটা চিৎকার দিল । ওর মুখ থেকে মাথাটা খুব বেশি হলে কয়েক আঙ্গুল দুরে । নোভার ভয় পাবে কি সেও চিৎকার করে উঠলো । এবং তারপরেই আরেকটা অদ্ভুদ কাজ করে বসলো ! লাল চোখের উপর কামড় বসিয়ে দিলো ! তারপর তীক্ষ দাঁত দিয়ে চোখটা তুলে উঠিয়ে নিয়ে আসলো !

প্রাণীটা যেন তীব্র ভাবে লাফিয়ে উঠলো । এক ঝাকি দিয়ে নিজেকে ছুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো । নোভার ইচ্ছে করেই ছেড়ে দিল হাত হাত । প্রানীটা নিজেকে ছুটিয়ে দিয়ে দুরে গিয়ে কিছুটা সময় দাড়িয়ে তাকিয়ে রইলো নোভার দিকে । নোভার সামনে সেই চোখটা পড়ে আছে । একটা চোখ দিয়ে নোভাকে দেখছে অন্য চোখ দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে কালচে কিছু পড়ছে ।
হেল-হাউন্ড আর দাড়ালো না । এক ছুটে চোখের আড়ালে চলে গেল । সে ভয় পেয়েছে । হোক সেটা গেল-হাউন্ড, একটা প্রানী সে । বুঝে গেছে নোভার সাথে সে পারবে না । যে হেল হাউন্ডকে ভয় না তাকে ঘায়েল করে চোখ তুলে নিতে পারে কামড়ে তার থেকে দুরে থাকাই ভাল !

নোভার উঠে দাড়ালো । তারপর আরিবার দিকে পা বাড়ালো । ওর কাছে গিয়ে ওকে ডাক দিতেই ও ফিরে তাকালো । এতো সময় ও যেন কিছুই টের পায় নি । ওকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । ঠিক যেন বিশ্বাস হচ্ছে না । নোভা বলল
-চল আমাদের যাওয়ার সময় হয়েছে !
আরিবা প্রথমে ওকে জড়িয়ে ধরলো ।
এতো শক্ত করে যে নোভার দম যেন বন্ধ হয়ে এল । নোভা বলল
-দেরিকরা যাবে না । চল জলদি !
যাওয়ার পথে কি মনে করে সেই হেল হাউন্ডের চোখ টা হাতে তুলে নিল । তারপর আবারও দৌড়াতে শুরু করলো । এখন পথটা খুজে পেলেই হল !



নয়
সুমন ক্লান্ত হয়ে গেছে, দরদর করে ঘামছে । একটা পর একটা অদ্ভুদ প্রানী বেড়িয়েই আসছে দরজা দিয়ে । সে কতটা সময় সেগুলোকে আটকে রাখতে পারবে সে নিজেও জানে না । মনে হচ্ছে না আর খুব বেশি সময় আটকে রাখতে পারবে ।
এই তো আরেকটা বের হচ্ছে সুমন হাতের লাঠিটা উপরে তুলে নিলে সেদিকে বাড়ি দেওয়ার জন্য কিন্তু শেষ মুহুর্তে থেমে গেল । দেখতে পেল সেখান থেকে একটা আবছায়া হাত বের হয়ে আসছে । থেমে গেল । তারপরই পুরো নোভার আবছায়া অবয়টা কুন্ডলীর দরজা থেকে বের হয়ে এল । তার পেছনেই আরেকটা !

সুমন চোখ বড় বড় করে সেদিকেই তাকিয়েই রইলো ।
অয়বয় দুটো কিছু সময় আগের মত ঘরের চারিদিকে চক্কর দিতে শুরু করলো । কিছু যেন খুজছে ।
তারপর ঠিক যেভাবে নোভার শরীর থেকে বেরিয়ে এসেছিলো ওর ওয়বয়টা ঠিক সেভাবেই আস্তে আস্তে শুয়ে পড়লো ওটার ভেতরে । আরিবার বেলাতেও ঠিক একই কান্ড হল । সুমন অবাক হতে ভুলে গেছে । আজকে ওর সামনে যা যা হয়েছে সেটার কাছে এসব কিছুই না ।

কুন্ডলীর দরজা ততক্ষনে আস্তে আস্তে গায়েব হতে শুরু করেছে ।

আরও কিছুটা সময় পার হয়ে গেল । একই সময় দুজন জেগে উঠলো । নোভা আর আরিবা !

আরিবা উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় বোকার মত । নোভার আর সুমনকে দেখে একটু যেন আস্বত্ব বোধ করলো । এরা পরিচিত । একটু আগের কিছুই যেন ওর মনে নেই । ঠিক বুঝতেও পারছে না ও কোথায় আছে । নোভার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমরা কোথায় আপু ?
-যেখানেই থাকি এখন নিরাপদ !
নোভার দিকে তাকিয়ে আরিবাহ কিছু বলতে যাবে তখনই ওর চোখ গেল ঘরের একেবারে কোনার দিকে । তাকিয়েই চিৎকার করে উঠলো ।

নোভা চিৎকার লক্ষ্য করে তাকিয়ে দেখলো সেই হেল-হাউন্ড টা ! একটু আগে যার চোখ সে তুলে নিয়েছে । আরিবা চিৎকার করতেই থাকলো । সেদিকে তাকিয়ে নোভা আবারও নিজের জায়গা থেকে উঠে পড়েছে । আরিবাকে আড়াল করে রাখলো । একটু আগে প্রানীটা পালিয়েছে । এবারও পালাবে ।

সুমন কিছুই বুঝতে পারছিলো না । কারন সে দেখতে পাচ্ছে না কিছুই । তবে সে একটা চাপা গর্জন শুনতে পাচ্ছে । কিছু একটা দেখে আরিবাহ ভয় পাচ্ছে । নোভা সেই জিনিসটাকে মোকাবেলা করার জন্য দাড়িকয়েছে।

তাহলে ও দেখতে পারছে না কেন ? তখনই রাফায়েলের কথা মনে পড়লো ।
নিশ্চয়ই ওটা সেই প্রানী । রাফায়েল বলেছিলো ঐ দরজা দিয়ে এমন প্রানী বের হয়ে আসতে পারে যেটা সবাই দেখতে পাবে না । সুমন যখন জানতে চেয়েছিলো যে দেখতে না পেলে সেটাকে মারবে কিভাবে ? রাফায়েল বলেছিলো মারা যাবে না তবে সেটা থেকে ভয় নেই । ওটা আমার কিংবা তোমার কিছু করতে পারবে না । ওটা কেবল বিশেষ কিছু মানুষের জন্য । আরিবা তেমন একজন !

তাহলে কি এটাই সেই প্রানী । রাফায়েলের দিকে তাকিয়ে দেখে রাফায়েল এখনও সেই আগের মত আছে । তার এখন সেন্স আসে নি । সুমন দেখলে নোভা আর আরিবাহ দুজনেই পড়ে গেল । মনে হল কেউ যেন তাদের কে এসে ধাক্কা দিয়েছে । দুজনে দুদিকে সরে পরেছে । একবার নোভা আরেকবার আরিবার দিকে তাকিয়ে সুমন বুঝতে পারলো সেই অদৃশ্য প্রাণীটা নোভার শরীরের উপর উঠে বসেছে । নোভা ছোটার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না !

কি করবে সে এখন ?
হাতের লাঠিটা দিয়ে এতো সময় সব প্রাণিকে পিটিয়েছে আচ্ছা মত । আর কোন কিছু ভাবলো না । গায়ের শক্তি দিয়ে সেটা নোভার শরীর বরাবর বাড়ি মারলো । যদি হিসাবে ভুল হয় তাহলে বাড়িটা নোভার গায়ে লাগবে !

কিন্তু নোভার শরীরের ঠিক দুই ফুট উপরেই কিছু একটা সাথে ধাক্কা খেলা । সাথে সাথেই তীক্ষ একটা গর্জন শুনতে পেল । নোভা উঠে পড়েছে । সুমনের হাতের লাঠিটা নিয়ে সোজা ঘরের কর্নারে চলে গেল । তারপর কিছু একটা উপর একের পর এক আঘাট করতেই লাগলো ! বারবার !

প্রতিটি গর্জনের সাথে সাথেই সেই গর্জন ভেসে আসছে লাগলো । তবে একটা সময় সেই গর্জন আত্মনাদে নেমে এল ।
-নোভা ! নোভা !

নোভার উপরে যেন অন্য কিছু ভর করেছে । একের পর এক আঘাত করেই চলেছে ।
সুমন ওকে আটকালো ।
-থামো ! থামো !

নোভার যখন হুস হল তখন তাকিয়ে দেখেন সেই প্রানীটা কোনায় পরে আছে । মরে নি তবে অবস্থা ভাল নয় ! চোখের লাল মনিটা নিভু নিভু করছে ! আর বেশি সময় টিকবে না !



পরিশিষ্টঃ
রাফায়েলের ঠিক হতে আরও বেশ কিছু সময় লেগেছিলো । ওর এই মাঝের জগতের দরজা খুলতে বেশ ঝাক্কি সহ্য করতে হয়েছে । ও সুস্থ হলে নোভা আর সুমন দেখা করতে গেল তার সাথে । আরিবাকে সাথে করে নিয়ে গেল । ওকে দেখে রাফায়েল বলল যে আর কোন ভয় নেই । ডিল ভেঙ্গে গেছে । এখন কেবল একটা সমস্যা হবে না ।
সবাই জানতো কি সমস্যা হবে । আরিবা যে কাজটার জন্য নিজের আত্মা বিক্রি করেছিল সেটার তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে যেহেতু সে আত্ম দেয় নি !

ঠিক হলও তাই ! ঐ ঘটনার ঠিক দুই মাসের মাঝেই আরিবার বাবার পার্টির ভেতরে আন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা দিল । এবং সেটা মাসের ভেতরে ভেঙ্গে গেল । সরকার ভেঙ্গে যেতে মাস খানেকও লাগলো না ।

নোভা সুমনকে নিজের জীবনের সব ঘটনাই শেয়ার করেছে সুমন সব কিছু শোনার পরেও ওর পাশে থাকার কথা দিয়েছে । নোভা অনেক বার বলতে চেয়েছে তার বাবাকে কিন্তু বলতে পারে নি । মাঝে মাঝে আরিবার সাথে দেখা করার নাম করে ওরা দুজনই প্রাক্তন পিএমের বাসায় যায় । দুর থেকেই ওর বাবাকে দেখে !

আরিবার বাবা আবারও দল গঠন করতে চলেছে । সামনের নির্বাচনে সে আবারও ভোটে দাড়াবে । দেশের জন্য তাকে কাজ করতেই হবে ।



রাফায়েল সিরিজের আগের গল্প
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:১১
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গেলো বসন্ত এলো বৈশাখ এলো নতুন বাংলা বছর ১৪৩২

লিখেছেন শায়মা, ০৬ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২০


রঙে রঙে রঙিন বসন্ত ফুরোতে না ফুরোতেই চলে এলো বাঙ্গালীর প্রানের উৎসব নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া পহেলা বৈশাখ। সেই উৎসব ঘিরে কেটে গেলো বেশ কিছুদিন। ব্যস্ততায় কাটলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির শহরে নিঃশব্দ প্রতিক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৬ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৮



নিঃশব্দ শূন্যতার ভেতর দাঁড়িয়ে
আমি খুঁজি এক হারিয়ে যাওয়া তোমায়
নগরজীবনের কোলাহলে চাপা পড়ে
তোমার কণ্ঠস্বর যেন কোন প্রাচীন সংগীত,
শুধু আমার স্মৃতিতে বাজে ক্ষীণ তরঙ্গে।

হাঁটতে হাঁটতে পেরিয়ে যাই অলিগলি
যেখানে একদা ছায়ার আড়ালে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামীর তরুণ রাষ্ট্র নায়কদের জন্য ড. ইউনূস হতে পারেন অনুকরণীয় আদর্শ !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:৪০


আগামীর বাংলাদেশে আমরা কি করাপ্টেড অথবা বাবার উত্তরাধিকারী কাউকে রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে ক্ষমতায় দেখতে চাই ? অবশ্যই না ! বাংলাদেশের তরুণেরা চায় ভবিষ্যতের রাষ্ট্রনায়ক হবে ইয়ং এবং ডায়নামিক চরিত্রের অধিকারী। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Natural Justice.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:০৯

Natural Justice.....

Natural Justice বা প্রকৃতির বিচার কিম্বা রিভেঞ্জ অব ন্যাচার বলে যে একটা কথা আছে, সেই ব্যাপারটা গভীরভাবে অনুধাবন করার একটা বাস্তব উদাহরণ আশা করি সবার সামনেই এখন ভিজিবল।

আমরা অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

মধ্যরাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাল ভারত

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৭ ই মে, ২০২৫ রাত ৩:৫২


পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুর, কোটলি ও মুজাফফরাবাদের পাহাড়ি অঞ্চলের কাছে একাধিক জায়গায় হামলা চালিয়েছে ভারত। এ হামলায় এক শিশু নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×