somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিপ্রাকৃত গল্পঃ সৌল-মেইট

২০ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




এক

জায়গাটার ভেতরে কেমন একটা অশুভ একটা ছায়া আছে । লম্বা করিডোরের সামনে দাড়িয়ে আছি আমি । আমি যেন হঠাৎ করেই এখানে চলে এসেছি । গাঢ় অন্ধকার । অনেকক্ষন অন্ধকারে থাকার কারনেই হয়তো অন্ধকার সয়ে গেছে চোখে । আমি আবছায়া ভাবে কিছু কিছু দেখতে পাচ্ছি । লম্বা করিডোরটা তাই একটু অস্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে । তবুও হাটছি অন্ধের মত । মাঝে মাঝে এটার ওটার সাথে ধাক্কা লাগছে । অসংখ্য জিনিস পত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এদিক ওদিক । প্রতি পদক্ষেপেই যেন কিছু সাথে আমার ধাক্কা লাগছে । আমি হাটছি আস্তে আস্তে । সামনে হেটেই চলেছি ।

লম্বা করিডোর শেষ করেই আমি আরও কয়েকটা বাক নিলাম । একেবারে শেষ মাথায় কোন কিছুর আওয়াজ আসছে । মনে হচ্ছে লোহার কোন কিছু বারবার কিছুর ধাক্কা লাগছে । ব্যস । এই আওয়াজ টুকু ছাড়া আর কোন আওয়াজ নেই । চারিদিকে কবরে নিরবতা । আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমার এখানে আসার প্রধান কারনই ঐ আওয়াজটাই । আমাকে ওখানে যেতেই হবে ।

আমি এগিয়ে যাই । আওয়াজটার একদম কাছে চলে এসেছি । মনে হচ্ছে সামনের অন্ধকারটা পার হলেই আমি আওয়াজটার উৎস দেখতে পাবো । আমি আরও কয়েক পা এগিয়ে গেলাম । তখনই হঠাৎ করেই কিছুতে একটা আমার মাথাটা ঠুকে । আমি মেঝেতে পরে গেলাম মাথায় হাত দিয়ে । ব্যাথার জন্য ঠিক মত সামনে তাকাতে পারছি না কিন্তু সেই আওয়াজটা ঠিক ঠিক শুনতে পাচ্ছি । আরও স্পষ্ট এবং আরও জোরে ।

কোন রকমে সামনে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে দেওয়ালের এক কোনে চুপ করে পরে আছে । দেখতে পাচ্ছি কারন মাথায় ব্যাথার পাওয়ার পর তাকিয়ে দেখি দেওয়ালের ঠিক এক কোনায় যেদিকে মেয়েটা পরে আছে সেখানে একটা টিমটিমে আলো জ্বলছে । ঠিক ইলেক্ট্রিক লাইটের মত লাগছে না কিংবা মোম অথবা মশলাের আলোও না । সেদিকে খেয়াল দেওয়ার সময় নেই ।
আমার চোখটা কেবল মেয়েটার দিকে । মেয়েটার গলার একটা মোটা লোহার বেড়ি পড়ানো । সেটার থেকে শিকল বের হয়ে দেওয়ালের একটা শক্ত আংটার সাথে আটকানো রয়েছে । দুই পায়ে আর দুই হাতেও শিকল পরানো রয়েছে । মেয়েটা একটু পরপর নড়ছে আর লোহার শিকল মেঝে বাড়ি খাচ্ছে । সেখান থেকেই আওয়াজটা আসছে ।
এভাবে আটকে কেন রাখা হয়েছে মেয়েটাকে ?
এতো নির্মম ভাবে ?


মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়েই আমার কেন জানি মনে হল এই মেয়েটা আমার অনেক আপন কেউ । যদিও একে আমি আমার জীবনের কোন দিন দেখেছি বলে মনে পড়ে না ।
আমি মেয়েটার কাছে আরেকটু এগিয়ে যেতেই মেয়েটা বলল
-তুমি এসেছো ? আমি জানতাম তুমি আসবে !
-হ্যা আমি এসেছি ।
-আমাকে নিয়ে যাও । প্লিজ আমাকে নিয়ে যাও । আমি ভুল করেছিলাম । আমি .......।

পেছনে হঠাৎই কারো আসার আওয়াজ পেলাম । দৃঢ় পদক্ষেপে কেউ আসছে যেন । আমি পেছন ফিরে তাকাতেই মেয়েটি বলল
-তুমি পালাও । তোমাকে দেখতে পেলে তোমাকে আটকে রাখবে । তুমি যাও যাও তুমি ......
আমি মেয়েটিকে বললাম
-আমি আবার ফিরে আসবো !

কিভাবে আসবো আমি তখনও জানি না কিন্তু মনে হল আমাকে আবারও ফিরে আসতেই হবে এখানে । মেয়েটাকে ঠিক ঠিক উদ্ধার করতে হবেই । আমি উঠতে যাবো ঠিক তখনই আবারও কিসের সাথে যেন ধাক্কা খেলাম মাথায় । প্রচন্দ ব্যাথায় মুখ দিয়ে একটা চিৎকার বেরিয়ে এল । সেই সাথে সাথেই আমার চোখ খুলে গেল !
স্বপ্ন দেখছিলাম !


কিন্তু নিজেকে ঠিক শান্তনা দিতে পারলাম না । দিন দিন স্বপ্ন টা আরও যেন বাস্তব হয়ে উঠছে । আমি বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম । বাইরে তখনও আলো ফোটে নি ঠিক মত । রান্নাঘর থেকে আওয়াজ ভেসে আসছে ।
মা নিশ্চয়ই উঠে পড়েছে । বাবা নামাজের পর এক কাপ চা খান । মাঝে মাঝে আমিও সেখানে যোগ দেই । মা মনে হয় সেটারই প্রস্তুতি নিচ্ছে ।


দুই

আমি আবারও স্বপ্নটা নিয়ে ভাবতে লাগলাম । প্রথম দিন এই স্বপ্ন দেখার পর তেমন কিছু মনে হয় নি । কিন্তু সপ্তাহ খানেক পরে আবার যখন একই স্বপ্ন টা দেখলাম একটু চিন্তা লাগছিলো । পরপর একই স্বপ্ন দেখা নিয়ে একটু পড়া শুনা করলাম কিন্তু কোন লাভ হল না । কিন্তু ঠিক তার তিন দিন পর যখন হুবাহু একই স্বপ্নটা আবার আমি দেখলাম তখন চিন্তিত না হয়ে আমি পারলাম না ।
কেবলই মনে হচ্ছিলো যেন কোন একটা সমস্যা আছে । কি সমস্যা আছে সেটা বুঝতে পারছি না কিন্তু কিছু একটা সমস্যা নিশ্চয়ই আছে । তার পরের সপ্তাহ দেখে আমি প্রতিদিনই একই সময়ে একই স্বপ্ন দেখি একই ভাবে শুরু হয় আর ঠিক সেই মাথায় ব্যাথা পেয়ে স্বপ্নের শেষ । কেউ আমাকে কিছু ইংগিত দেওয়ার চেষ্টা করছে ?


------
অফিসে এসে শুনলাম সকাল বেলা নাকি আমাদের বসের হার্ট-এটাকের মত কিছু একটা হয়েছে । তাকে এপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । অনেকেই নাকি গেছে স্যারকে দেখতে । আমারও যাওয়া দরকার । কিন্তু আমার আবার হাসপাতাল ভীতি আছে । কেন জানি ভাল লাগে না । আমার মনে আছে আমার মায়ের একবার পেটের পাথর অপারেশন হল সামরিটা হাসপাতালে । সবাই গেল দেখতে আমিও গেলাম । একবারও গিয়েই ফিরে এলাম সাথে সাথেই । তারপর থেকে আর যাই নি । এমন কি আমার পরিচিত বন্ধু-বান্ধবও হাসপাতালে থাকলে আমি কোন দিন তাদেরকে দেখতে যাই না ।

কিন্তু এখন ঠিক ঠিক যাওয়া লাগবে । প্রাইভেট চাকরি করলে কত কিছুই না করতে হয় । তবে যে কয়জন আছে তাদের কাছ থেকে শুনতে পেলাম যে স্যারের অবস্থা এখন অনেকটাই ভাল । তাই এখন আর কাউকে যেতে মানা করেছে । অবশ্য গিয়েও লাভ নেই । ভিজিং আওয়ার নাকি বিকেল বেলা । তার আগে গিয়ে লাভ নেই । তবে আমার অবশ্য আজকেই স্যারের সাথে দেখা করাটা জরুরী । কারন কয়েকটা ফাইলে স্যারের সাইন না নিলেি নয়। স্যার নিজেই সেটা বলেছেন । লাঞ্চ আওয়ার পরের যাবো ভাবলাম । তারপর সেখান থেকে বাসায় !




তিন

অফিসের কাছেই এই পার্কটা । আমি সব সময়ই দুপুরে লাঞ্চ করার পর এখানে এসে একটু বসি । শহুরে বাতাসের ভেতরে একটু তাজা আর নির্মল বাতাস পাওয়া যায় । একটু ভাল লাগে নিজের কাছেই । আমার মতই অনেকেই এখানে আসে তবে তাদের আসার সময় সকাল আর বিকেল বেলা । এই সময়ে খুব বেশি মানুষ এখানে আসে না । এখান যারা এই পার্কে এসেছে তাদের বেশির ভাগই ফকির হকার কিংবা ঢাকার শহরে আরও কিছু খেটে খাওয়া মানুষ যারা এই দুপুর বেলা একটু বিশ্রামের জন্য এসেছে । আজকে অবশ্য আমার হাসপাতালে যাওয়ার কথা । তবুও কিছুটা সময় বসেই যেতে মনে বলল । প্রতিদিনের অভ্যাস ।

আমি কিছু সময় বসে থাকি আপন মনেই । চারিদিকে দেখি । দেখতে দেখতেই ঘন্টা পার হয়ে যায় । সময় কেটে যায় ভাল ভাবেই ।
-৫ টা টাকা দে !

বসে ছিলাম পার্কের একটা সিমেন্টের বেঞ্চে । তখনই পাশে এসে একজন বলল কথাটা প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো ফকির হবে । কিন্তু তাকিয়ে দেখি এক সাধু বাবা টাইপের মানুষ । ধুসর আর ময়লা রংয়ের একটা একটা আলখাল্লা পরে আছে । মাথায় জট ধরা আর দাড়ি গোফের জংগল হয়ে আছে । আমি সাধারনত এই টাইপের মানুষকে টাকা পয়সা দেয় না । কিন্তু লোকটা এক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল আর লোকটা চোখে খুব বেশি তীক্ষ ছিল । আমি পকেট থেকে একটা ১০ টাকার নোট বের করে দিলাম ।

তারপর আবারও অন্য দিকে তাকালাম । লোকটা তখনই বলল
-তুই প্রতিদিন ঐ মেয়েটাকে দেখি স্বপ্নে ?

চমকে গিয়ে লোকটার দিকে তাকালাম আবার । লোকটা তখনও আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি কিছুইতেই বুঝতে পারলাম না যে লোকটা আমার স্বপ্নের কথা কিভাবে জানলো । আমার মুখে একটা বিশ্ময়ের ভাব চলে এল । এটা দেখেই সম্ভবত লোকটা হাসলো একটু । তারপর হাতটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । হাত টা মুঠো করা ছিল । বোঝা যাচ্ছে আমাকে কিছু দিতে চাচ্ছে । আমি হাত বাড়ালাম !
সাধু সাহেব আমার হাত কিছু ছেড়ে দিল । হাতে নিয়ে দেখি একটা লেবুর মত ফল । যদিও সেটা লেবু মনে হল না । লেবু এটোটা গোল হয় না । রংটাও ঠিক লেবুর মত না । হালকা সবুজের সাথে একটু গোলাপী গোলাপী ভাব আছে । আমি যেই না জিজ্ঞেস করতে যাবো এটা কি তাকিয়ে দেখি সেই সাধু সাহেব কোথাও নেই । খুব বেশি হলে কয়েক সেকেন্ড হয়েছে এরই ভেতরে লোকটা কোথায় গায়েব হয়ে গেল ।


আমি দৌড়ে গেলাম পার্কের দরজা পর্যন্ত কিন্তু কোথাও দেখতে পেলাম না লোকটাকে । এতো দ্রুত কারো পক্ষে চলে যাওয়া সম্ভব না । যদিও আর খোজ করার সময় পেলাম না । ঘড়ির দিকে তাকালাম । মনে হল এখন যাওয়া দরকার হাসপাতালেরর দিকে ।


চার


স্যার আমাকে দেখে বেশ খুশি হলেন । হাতের ফাইলের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললেন
-তুমি আর বদলাবে না ?
আমিও কেবল হাসলাম । তারপর হাতের ফাইলটা এগিয়ে দিলাম তার দিকে । স্যার না দেখেই সাইন করে দিল । আর বলে দিলো সামনের কদিন তিনি অফিস যাবেন না । জিএম সাহেবকে সামলে নিতে বললেন ।
আমি ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে হাটতে লাগলাম লম্বা করিডোর দিয়ে । আসলে যতটা খারাপ লাগবে ভেবেছিলা ততটা খারাপ লাগছে না । ! আমি এর আগে খুব একটা হাসপাতালে আসি নি । এই টাইপের বড় বড় হাসপাতালে তো আসাই হয় না । এখানে এসে মনে হচ্ছে কোন হাসপাতালে নয় বরং কোন ফাইভ স্টার হোটেলে চলে এসেছি । আবার এই দিক টা হচ্ছে ভিআইপি কেবিনের সারি । বিশাল হাইফাই অবস্থা । এখানে একদিন থাকতে কত টাকা করে দিতে হয় কে জানে । আমার এক মাসের বেতন থেকেও বেশি নিশ্চয় । তাই হবে ।



আমি হাটতে হাটতে হঠাৎ একটা দরজার সামনে দাড়িয়ে গেলাম । কোন কারন নেই দাড়ানোর । আমি দরজার দিকে তাকিয়ে কেন যেন মনে এই দরজার পেছনে কেউ আমার পরিচিত জন রয়েছে । নিজেই নিজের আচরন দেখে অবাক হয়ে গেলাম । কোন কারন নেই এমন টা ভাবার । আমার পরিচিত জনের ভেতরে কেউ এখানে এই বড়লোকের হাসপাতালে থাকতে পারে আমার ধরনার বাইরে ।
তাহলে কেন এমন টা মনে হল ?

একবার মনে হল চলে যাই । আরেকবার মনে হল নাহ, একবার ধাক্কা দিয়ে দেখি দরজার পেছনে কি আছে । তাকিয়ে দেখি কেবিনের নাম্বার জি ৩ ! স্যারের টা আই ১ । আমি আরও কিছু টা সময় চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম দরজার সামনে । কি করবো ঠিক বুঝতে পারছি না । কাউকে দেখাও যাচ্ছে না যে তাকে জিজ্ঞেস করবো ভেতরে কে আছে !
তারপর আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করার পর কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলাম ।

ঘরটা কেন যেন খুব বেশি ঠান্ডা ! উজ্জল আলো না তবে সব কিছু পরিস্কার দেখা যাচ্ছে । আমার চোখ প্রথমেই গেল বেডে শুয়ে থাকা একজন মানুষের দিকে । একটা মেয়ে শুয়ে আছে । মুখে কিছু একটা লাগাঅ আছে । আরেকটু কাছে যেতে বুঝতে কষ্ট হল না মেয়েটাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে । আরও বিভিন্ন রকমের যন্ত্র লাগানো আশে আশে ।
রুমে আর কেউ নেই ।
আমি আরও কিছুটা কাছে যেতেই মেয়েটার চেহারা একটু নজরে এল ভাল ভাবে । আর তখনই আমি ধাক্কাটা খেলাম । আমার কেন মনে হচ্ছিলো এমন টা সব পরিস্কার হয়ে গেল মুহুর্তেই ।


মেয়েটাকে আমি চিনি । মেয়েটা আর কেউ না আমার সেই স্বপ্নের মেয়েটা যাকে শিকল দিয়ে আটকানো অবস্থায় আমি দেখি প্রতি দিন । আমি আমার নিজের চোখ কে ঠিক মত বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । আজকে একটু আগে একজন অদ্ভুদ লোকের সাথে আমার দেখা হল, যে কি না আমার স্বপ্নের কথা জানে । এমন একটা স্বপ্ন যেটার ব্যাপারে আমি কাউকে কোনদিন বলি নি । আর তারপর পরপরই আমি আমি সেই স্বপ্নে দেখা মেয়েটাকে আবিস্কার করলাম আমার সামনে । আমিও আরও কিছুটা সময় মেয়েটার দিকে কেবল তাকিয়েই রইলাম । নিজের শরীরের ভেতরে কেমন যেন একটা দুর্বল অনুভব করছি । এমন কেন হচ্ছে ! তার মানে আমি যাকে স্বপ্ন দেখছিলাম তার অস্তিত্ব আসলেই আছে ।
এটা কি আসলেই সম্ভব ?
আমার মাথায় কিছু আসছিলো না ।


-কে আপনি ?


কতক্ষন এভাবে দাড়িয়ে ছিলাম আমি বলতে পারবো না । পেছনে একজনের ডাকে বাস্তবে ফিরে আসলাম । পেছনে ফিরে চাইলাম । তাকিয়ে দেখি সাদা এপ্রোন পরা একজন নার্স ! আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।
আবারও বলল
-কে আপনি ? এখানে কি করছেন ?
আমি নার্সের কথার কোন উত্তর না দিয়ে বললাম
-এই মেয়েটা কে ?
-আশ্চর্য আপনি কে ? এই মেয়েটাকে সেটা আপনি জেনে কি করবেন ?
আমি কেবল ব্যকুল হয়ে বললাম
-প্লিজ ম্যাম, এটা জানা আমার জন্য খুবই জরুরী ! বলুন মেয়েটা কে ?
আমার কন্ঠে কিছু একটা ছিল মনে হয় এই জন্য নার্স কিছুটা নমনীয় হল ! তারপর এগিয়ে এসে বেডের কাছে রাখা মেডিক্যাল রিপোর্ট একটু পরীক্ষা করলো । তারপর বলল
-দেখুন খুব তো বেশি কিছু জানি না তবে ইনার নাম রিয়া, রিয়া হাসান ! উনার বাবার নাম কামাল হাসান । আর কিছু আমি জানি না !
-কত দিন থেকে এখানে আছে ?
-এই মাস খানেক !
আমিও মেয়েটাকে তখন থেকেই স্বপ্নে দেখতে শুরু করেছি । আমি আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না । এর ভেতরে অন্য কিছু আছে । সেই অন্য কিছুটা আমাকে ঠিক ঠিক বের করতে হবে । আমি আর দাড়ালাম না । কেবিন থেকে বের হয়ে এলাম । আসা আগে রিয়া নামের মেয়েটার হাতটা ধরলাম । কেবল ঠান্ডা ঠান্ডা লাগলো । তবে কেমন যেন মনে হল এই হাতটা ধরার জন্য আমি অনেক দিন ধরেই অপেক্ষা করছিলাম ।


পাঁচ


আমি আবারও ঠিক আগের জায়গায় চলে এসেছি । প্রতিদিন যেটা স্বপ্নে দেখতাম ঠিক সেই করিডরে । সামনে সেই অন্ধকার কিন্তু আমার চলতে অসুবিধা হচ্ছে না । দিনের পর দিন আমি এই পথ দিয়ে হেটে গেছি । আমার হাটছে সমস্যা হওয়ার কথা না । আমি শব্দ করে হাটতে থাকি । শব্দটা বাড়ছেই । আমি ঠিক যে পথ দিয়ে ঢুকেছি সেটা দিয়েই আমাকে বের হতে হবে ।
আমাকে দেখতেই রিয়া সেই আগের মতই খুশি হয়ে উঠলো ।
-তুমি সত্যি আবার এসেছো ?
-হুম ! আজকে তোমাকে নিয়ে যাবো । যাবোই ।
ঠিক তখনই আবার সেই আওয়াজ টা পেলাম । কেউ গমগম পায়ে এগিয়ে আসছে । রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটার মুখটা আবারও কেমন হয়ে গেছে ।
-তুমি চলে যাও ! ও আসছে তোমাকে পেলে তুমিও আটকে যাবে !
-আজকে না ! আজকে তোমাকে নিয়েই যাবো ।
-না তুমি চলে যাও !
-না যাবো না !
-না যাও প্লিজ ! আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো । তুমি যাও । ও চলে আসলে তোমাকে যেতে দিবে না ।
এই বলে রিয়া আমাকে ধাক্কা মারলো । ধাক্কা খাওয়ার সাথে সাথে আমার ঘুম টা আবার ভেঙ্গে উঠলো । বিছানা ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠলাম । বাইরে তাকিয়ে দেকি তখনও আলো ফোটে নি । বুকটার ভেতরে কেন জানি আর ধরফর করে না এখন । কেবল রিয়ার জন্য কেমন করতে করছে । মনে হল মেয়েটাকে আমি কেন প্রতিদিন স্বপ্নে দেখি সেটার রহস্য আমি ঠিক ঠিক বের করে ফেলবো ! আমাকে বের করে ফেলতেই হবে !




ছয়


আমার জীবনটা সেদিনই বদলে গেছিলো যেদিন আমি রিয়াকে প্রথম স্বপ্নে দেখি । তারপর ওকে এভাবে হাসপাতালে নির্জীব হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে আমার সব কিছুই কেবল আরও একটু বদলে গেল । অফিসের পরে আমি প্রায় প্রতিদিনই রিয়ার পাশে গিয়ে বসে থাকতাম চুপ করে । যদিও তখন ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়ে যেত তবুও কেন জানি কেউ কিছু বলতো না । নার্সরা আসতো ওকে চেক করতো আবার চলে যেত । আমাকে দেখেও যেন না দেখার ভাব করতো সবাই । কেন করতো আমি ঠিক জানি না ।

হয়তো সবাই মনে করেছে আমি রিয়ার কোন আত্মীয় কিংবা কাছের কেউ হই । আমি যেতাম, ওর বেডের পাশে চুপচাপ বসে থাকতাম । মনিটরে দেখতাম ওর পালস চলছে ধীর গতিতে ।
বারবাই মনে হত এই বুঝি ও জেগে উঠবে । কিন্তু ও উঠতো না । মেয়েটার জন্য কেমন অদ্ভুদ মায়া অনুভব করতাম । ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে সময় গড়িয়ে যেত আমি নিজেই বুঝতে পারতাম না । এদিকে রাতে বাসায় চলে আসতাম ।

রাতে স্বপ্নে আবারও ওর দেখা পেতাম । এ কদিনে ওর সাথে আমার কথোপকথোন আর আচরন ভঙ্গি অনেকটাই বদলে গেছে । ওকে তখন আর আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করতাম না, জনাতাম লাভ হবে না । ওর পাশে গিয়ে চুপচাপ বসতাম কিছুক্ষন । টুকটাক কথা বলতো ও । ওর কথা ওর জীবনের কথা ।
আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করতাম যে ঘুম থেকে জাগার পরেও আমার ঠিক ঠিক সেই কথা গুলো মনে থাকতো ! একদিন রিয়া স্বপ্নে হঠাৎ করে বলল
-জানো তোমাকে আমি কেন দেখি কিংবা তুমি আমাকে কেন দেখো ?
-কেন ?
-আমার মনে হয় আমরা সৌল-মেইট । ইউ নো, উপরওয়ালা সবার জন্যই সঙ্গী সৃষ্টি করে পাঠিয়েছে । তোমার আর আমার নিশ্চয়ই জীবনটা একসাথে কাটানোর কথা ছিল । কিন্তু আমি সুইসইড করায় সেটা ভেস্তে গেছে । আমি নিয়ম ভেঙ্গেছি তাই শাস্তি পাচ্ছি এখানে !

আমার মাথায় তখন অন্য চিন্তা । ওকে কিভাবে এখান থেকে বের করবো সেটা চিন্তা করছি ! রিয়া আবার বলল
-বাট, আমার কেন এখানে আর আগের মত ভয় লাগে না । প্রতিদিন জানি তুমি ঠিক ঠিক আসবে । কিন্তু .....
-কিন্তু কি ?
-কিন্তু এখানে আমি আর বেশি দিন থাকবো না । আমি বুঝতে পারি !

আমি কিছু জানতে চাইলাম না । রিয়া মনে হয় পুরোপুরি মারা যাওয়ার কথা বলছে । ও অর্ধেক মরেই আছে । কোমায় আছে । অনেকে বলে নাকি কোমায় যারা থাকে তারা জন্ম আর মৃত্যুর মাঝামাঝি একটা জগতে থাকে । সেখানে না চলে জীবনের কোন নিয়ম না মৃত্যুর কোন নিয়ম । কিন্তু একজন তো সারাটা জীবন এই মাঝামাঝি জগতে থাকতে পারে না । হয় এদিকে নয়তো অন্য দিকে যেতে হবে । রিয়া সেই কথাই কি বলছে ?
প্রতিদিনই এরকম কথা হয় । অতি অল্প সময় । তার কিছু সময় পরেই সেই হাটার আওয়াজ আসে । কেউ এগিয়ে আসছে । আর তখনই রিয়া আমাকে ধাক্কা দেয় । আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় !



একদিন অফিস থেকে হাসপাতালে করিডোরে দিয়ে হাটছি এমন সময় এক ভদ্রলোক আমাকে থামালো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-রিয়ার কাছে যাচ্ছো ?
আমি খানিকটা অবাক হলেও সামলে নিলাম । ভদ্রলোক বলল
-আমি রিয়ার বাবা !
-ও !
আর কি বলবো খুজে পেলাম না ।
রিয়ার বাবা কামাল হাসানের নাম টা আমার মনে আছে । ঐ নার্স বলেছিলো । তিনি বললেন
-তুমি প্রতিদিন আমার মেয়ের রুমে গিয়ে বসে থাকো ! কারন টা জানতে পারি ?
আমি আবারও কোন কথা খুজে পেলাম না বলার মত । কারন আমি যা বলবো তা ঠিক বিশ্বাস করার মত না । কেউ বিশ্বাস করবে না । রিয়ার বাবা আবার বলল
-দেখো আমি প্রথমে ভেবেছিলাম তোমার কোন খারাপ উদ্দেশ্য আছে কিন্তু পরে তোমার ব্যাপারে সব খোজ নিয়েছি । তোমার ব্যকগ্রাউন্ড ভাল । আমি কোন কিছুতেই বুঝতে পারি নি তুমি একটা অচেনা মেয়ের পাশে কেন বসে থাকো ঘন্টার পর ঘন্টা । আমি যতদুর জানি তুমি আমার মেয়েকে চিন্তে না । না আমাকে চেনো ! তাই না !
-জি ! আমি আপনাকে চিনি না । তবে......
কিছু সময় চুপ করে থেকে বলাম
-তবে আমি রিয়াকে চিনি !
-কিভাবে ?
কি বলবো এবার সত্যি সত্যিই খুজে পেলাম না । চুপ করে থাকতে দেখে কামাল সাহেব বললেন
-প্লিজ বল । আমার জানতে ইচ্ছে করছে । কেন জানি মনে হচ্ছে এর সাথে রিয়ার ভাল হওয়ার ব্যাপার টা জড়িত ! প্লিজ বল !
-বললে আপনি বিশ্বাস করবেন না !
-ট্রাই মি ! বিশ্বাস করতেও পারি !

আমি কিছু সময় চুপ করে থেকে আমার গল্পটা বলা শুরু করলাম । রিয়ার বাবা চুপ করে সব শুনে গেল । যখন আমি সব বলা শেষ করলাম তখন রিয়ার বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি এই গল্প আমাকে বিশ্বাস করতে বল ?
-আমি জানি কেউ বিশ্বাস করবে না । তাই কাউকে বলি না । তবে আপনার কাছে কেবল একটা প্রশ্ন জানতে চাই যে আমি রিয়াকে কিভাবে চিনলাম বলেন ? ও আমাকে যা বলেছে তা যদি ওর কাছের মানুষ না হয় তাহলে কারো জানার কথা না । আবার আপনিই বলছেন আমি রিয়াকে চিনি এরকম কোন কিছু আপনি খোজ পান নি । তাহলে আমি এতো কিছু জানলাম কিভাবে বলুন !

আমি আর দাড়ালম না । রিয়ার কেবিনের দিকে পা বাড়ালাম । দেখলাম একটু পরে রিয়ার বাবাও আসলো আমার পেছনে । দুজন চুপচাপ বসে রইলাম অনেকক্ষন !



সাত


রিয়ার বাবার সাথে কদিনের ভেতরে বেশ কয়েকবার দেখা হল । আমাকে উনি কয়েকবার দেখেছেন । রিয়ার ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন । যতই শুনছেন ততই কেন জানি মেয়ের জন্য অস্থির হয়ে উঠছেন । কোন বাবার পক্ষেই মেয়ের এমন অবস্থার কথা চিন্তা করা সম্ভব না । বাস্তব দিক দিয়ে, মানে অর্থ বিত্তের দিক দিয়ে তিনি শক্তিশালী হলেও এইসব দিক দিয়ে তিনি কিছুই করতে পারছেন না এটা যেন তার জন্য আরও বেশি পীড়াদায়ক হয়ে গেছে ।


সপ্তাহ খানেক পরে তিনি আমাকে নিয়ে গাজীপুরের এক তান্ত্রিকের বাসায় এসে হাজির হলেন । আমি অবাক না হয়ে পারলাম না । অনার মত লোকও এই সব জিনিসে বিশ্বাস রাখে । অবশ্য কাছের কেউ যখন বিপদে পড়ে তখন মানুষ সব কিছু করতে পারে । তবে উনি কি করতে চাইছেন সেটা আমার ঠিক বোধগম্য হল না ।

আমাকে নিয়ে গিয়ে বসলেন সেই তান্ত্রিকের সামনে ।

ছোট্ট একটা ঘরের ভেতরে আগুন জ্বলছে । তার সামনেই লোকটা বসে আছে । মুভি সিনেমায় আমরা যেমন কালো পোষাক পরা জটাধারী তান্ত্রিক দেখি এই বেটা সেরকম কেউ না । দেখে মনে হচ্ছে মুদি দোকান চালায় । পার্ট-টাইম এখানে চাকরী করে !

আমি যখন এই কথা ভাবছি মনে মনে তখনই লোকটা আমার দিকে তীক্ষ চোখে তাকালো । তার নজর এতোটাই তীক্ষ যে আমি সত্যি সত্যি চমকে উঠলাম । লোকটা বলল
-আমার কিন্তু একটা মুদি দোকান সত্যিই আছে । আমার পেট ওটা থেকে চলে । এই সব আমি টাকার জন্য করি না ।

আমি আবার বেশ চমকে উঠলাম । ঐ দিন পার্কে লোকটা কিভাবে আমার স্বপ্নের কথা বলে ফেলল আর আজকে এই লোকটা কিভাবে আমি কি ভাবছি সেটা টের পেয়ে গেল । আমার অবাক হওয়াটা লোকটা নিশ্চয়ই উপভোগ করলো কিছুটা সময় । মৃদু ভাবে হেসে বলল
-তোমার কথা আমি শুনেছি । এবং বেশি অবাক হয়েছি ! এরকম সাধারনতো হয় না ।
-কি রকম হয় না ?
-এই যে একজন মানুষ তার আত্মা-সঙ্গীর সাথে যোগাযোগ করতে পারে না যতক্ষন না তার সাথে দেখা না হয় !
-আত্মা-সঙ্গী ?
-হুম ! দেখো না প্রেমিক প্রেমিকা কিংবা স্বামী স্ত্রী দুর থেকেই অনেক সময় একে ওপরের মনের কথা বুঝতে পারে, কারো কোন বিপদ হলে টের পায় সে রকম । কিন্তু সেটার জন্য আগে দেখে চেনা জানা হওয়াটা জরুরী । কিন্তু তোমার বেলায় দেখছি সেরকম হয় নি ।
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে লোকটা আবার বলল
-তোমার সাথে হয়তো আর কদিন পরেই ওনার মেয়ের সাথে কোন না কোন ভাবে ঠিকই দেখা হত । তার পরপরই তোমরা এক হতে, এমন টাই ভাগ্যে লেখা ছিল । কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো মেয়েটা তার আগেই মারা যাওয়ায় !
আমি বললাম
-এখনও ও মারা যায় নি ।
-হুম ! জানি । কিন্তু এই জগতে আর নেই । অন্য আরেকটা জগতে চলে গেছে । জীবন আর মৃত্যুর মাঝামাঝি একটা জগতে । এখন ঐ জগৎ থেকে দুদিকেই সে যেতে পারে । যেহেতু অন্যায় করেছে তাই এদিকে না আসার সম্ভাবনা ।
-অন্যায় ?
আমি ঠিক মত বুঝলাম না কিসের অন্যায় ?
লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো । তারপর বলল
-দেখ, আমাদের জীবনটা একটা জটিল নকশার মত । একেজনের কাছে অর্ধেক জটিল নকশা থাকে । আমরা একটা একদিন পার করি আর আমাদের জীবন নকশার একটু একটু করে বিস্তৃত করি । যখন আমাদের কারো সাথে পরিচয় বিয়ে হয় তারপর আমরা যেমন এক সাথে থাকতে শুরু করি ঠিক তেমনি এই জটিল নকশা টাও এক সাথে যুক্ত হয়ে এক সাথে চলে, অর্ধেক নকশা পূর্ণ হয় । এটাই নিয়ম । তোমার জীবনের সাথে ঐ মেয়েটার জীবন এক সাথে চলার কথা ছিল । কিন্তু তার আগেই মেয়েটা কি করে ফেলল ? একা একা নিজে নিজে নিজের জীবন নিতে চাইলো । এর ফলে তোমার জীবনের নশকা টা যেটা কিনা ওর সাসে মিশে পূর্ন হত সেটা হল না । জায়গাটা ফাঁকাই রয়ে গেল, এটা কি তোমার প্রতি অন্যায় করে ফেলল না ও ? ও তো নিজে মারা গেলই সেই সাথে তোমাকে চিরো জীবনের জন্য অপূর্নতার ভেতরে ফেলে গেল । এটাই হচ্ছে অন্যায় ।


আমি কিংবা রিয়ার বাবার কোন কথা বললাম না । লোকটা কি কি বলে গেল সব শুনতে থাকলাম । আসলেই কি এমন কিছু ?
তাহলে কি এই জন্যই আমার এর আগে যে দুইটা মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠতা হয়েছে তাদের প্রতি আমি খুব বেশি আকর্ষন বোধ করি নি । কেন জানি আমার ভেতর থেকে তেমন অনুভুতি আসে নি । আমার কোন দিন ইচ্ছেই হয় নি সেই মেয়ে গুলোর সাথে সম্পর্কে এগিয়ে নিয়ে যেতে । পরিচয়ের কিছু দিনের ভেতরেই আমার আগ্রহ হারিয়ে গিয়েছিল ।
তার মানে যতদিন আমি রিয়ার দেখা না পেতাম ততদিন আমার এরকমই হত ! আর যদি কোন দিন না পাই তাহলে সারাটা জীবন আমার দিন টা অপূর্নই থেকে যাবে ? আমি পরিপূর্ণ শান্তি পাবো না !


লোকটা আমাকে কাছে আসতে বললেন হঠাৎ করেই । আমি এগিয়ে যেতেই লোকটা আমার হাত ধরলো । এবং ধরার সাথে সাথেই চট করে আবার ছেড়েও দিল ।
আমি লোকটা চোখে অদ্ভুদ একটা কিছু দেখতে পেলাম । বিশ্ময় কিংবা ভয় অথবা দুটোই ।
লোকটা কেবল আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার সাথে কারো দেখা হয়েছিল ?
এবার আমার অবাক হওয়ার পালা ।
রিয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি তিনিও আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন । আমি ওনাকে সেই পার্কের লোকটার কথা কিছু বলি নি ! উনি জানেন না । কিন্তু এই লোকটা কেবল আমার হাত ধরেই কিভাবে কথাটা বলে দিল ।
আমি বললাম
-হ্যা ! একজনের সাথে দেখা হয়েছিল !
তিনি যদিও বলেন নি যে কার সাথে দেখা হয়েছিল কিন্তু আমি ভাল করেই জানি উনি ঠিক কার কথা বলছে । তান্ত্রিক আবার বলল
-সে কিছু দিয়েছিলো তোমাকে ?
-হ্যা !
-কি ?


আমি কথা না বলে কেবল পকেট থেকে সেই লেবুর মত জিনিসটা বের করে দিলাম । তান্ত্রিক লোকটা অবাক চোখে সেটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন । আমি কেবল লক্ষ্য করলাম লোকটার হাত কাঁপছে । এক ভাবেই কেবল লেবুর মত জিনিস টার দিকে তাকিয়ে আছে । কি এমন আছে জিনিস টার ভেতরে !!




আট

সেই তান্ত্রিকের কাছ থেকে এসেছি তাও সপ্তাহ খানেকের মত হয়ে গেছে । এর ভেতরে আর একবারও ঐ দিকে যাই নি । কেবল রিয়ার পাশে গিয়ে বসে থাকতাম ওর হাত ধরে । কয়েকদিন ওর বাবার সাথেও দেখা হয়েছে । তবে এবার ভদ্রলোক কোন কথা বলেন নি । কেবল নিরবে আমার দিকে তাকিয়ে থেকেছে । কিছু বলতে চেয়েছে কিন্তু বলতে পারে নি ।

গতকাল চলে আসার সময় আমাকে থামিয়ে বলল
-ইউ ডোন্ট হ্যাভ টু ডু দিস ! আই মিন একজন বাবা হয়ে আমি চাইবো যে কোন ভাবেই আমার মেয়েকে বাঁচাতে চাই কিন্তু তার মানে এই না যে আমি অন্য বাবা মায়ের বুক খালি করতে চাই !
রিয়ার বাবা আরও কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বলল
-যদি তোমার জীবনের ঝুকি না থাকতো তাহলে এই কাজ টা করার জন্য আমি দরকার হলে আমার সব কিছু তোমাকে দিয়ে দিতাম কিন্তু .....

আমি কেবল রিয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে হাসলাম । তারপর বললাম
-চিন্তা করবেন না । আমি ঠিক ঠিক বের হয়ে আসবো । এবং রিয়াকে নিয়েই আসবো ।

আমি জানি রিয়ার বাবা কেন এই কথা বলছে । ঐদিন তান্ত্রিক সাহেব আমার হাতে লেবুর মত ফল টা দেখে খুবই অবাক হয়েছিল । আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল কিছু সময় । তারপর বলল যে আমার আসলে যার সাথে দেখা হয়েছিল সে এই পৃথিবীর কেই না । সে একজন প্রহরী !
আমি বললাম
-প্রহরী ?
-হুম ! যেমন প্রত্যেক টা দেশের সীমান্ত পাহারা দেওয়ার জন্য প্রহরী থাকে ঠিক তেমনি এই পৃথিবীর সীমানা পাহারা দেওয়ার জন্যও প্রহরী থাকে ঠিক তেমনি দুই জগতের মাঝে সীমানা পাহারা দেওয়ার জন্যও প্রহরী থাকে । তারা অসম্ভব ক্ষমতাবান হয় । এক জগৎ থেকে তাই চাইলের অন্য জগতে ইচ্ছে করলেই যাওয়া যায় না । তারা যেতে দেয় না !
-তাহলে ? আর কোন কি উপায় নেই ?
-আছে । সম্ভব হত না যদি না ঐ ফলটা না থাকতো ! ওটা অনেকটা ভিসার মত । ওটা দিয়েই তুমি লাইনক্রস করে ওপারে যেতে পারবে .... তবে....।
-তবে ?
-তবে এখানে একটা সমস্যা আছে । তুমি আসলে ঐ ফলটার কারনেই যখন জীবনের লাইন ক্রস মাঝের পৃথিবীর ভেতরে প্রবশ করবে তখন তোমাকে ওরা সেখানকার প্রহরীই মনে করবে । ঐ ফল টার কারনেই । কিন্তু তুমি যে সেটা নও সেটা ধরে ফেলতে ওদের সময় লাগবে না । তোমার এই সময়ের আগেই বের হয়ে আসতে হবে মেয়েটা কে নিয়ে । যদি না পারো, যদি ওরা তোমাকে ধরে ফেলে তাহলে তুমি রিয়ার মতই ওখানে আটকে থাকবে । তোমার দেহটা এপারে পরে থাকবে কিন্তু আত্মাটা আটকে থাকবে আজীবন । বিশেষ করে প্রহরীদের যে প্রধান সে যদি একবার খোজ পায় তাহলে তোমার আর ফিরে আসা হবে না ।
-হু !
-তাই তুমি যেতে চাও কি না সেটা তোমাকে আগে ভেবে নিতে হবে । ঝুকি নিতে হবে । এখন প্রশ্ন তুমি ঝুকি নেবে কি না ?

একবার মনে হল নেবই তো, আমার জীবন সঙ্গীর জন্য আমি এই টুকু করবো না । পরক্ষনেই মনে হল আসলেই কি সে আমার জীবন সঙ্গী ? এমন হতে পারে এসব সব কিছুই মিথ্যা ।

কিন্তু আমি যদি না যাই তাহলে সারাটা জীবন আমার মনে একটা আফসোস থেকেই যাবে । মনে হবে আমি চাইলেই হয়তো রিয়াকে বাঁচাতে পারতাম কিন্তু বাঁচাই নি নিজের জীবনের মায়া করে । আর মরতে তো হবেই একদিন !

আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে তান্ত্রীক বলল
-বাসায় যাও । ভাল করে ভেবে তারপর এসো । ১৭ তারিখে আসবে যদি আসো । ঐদিন সাথে করে ঐ ফল টাও নিয়ে আসবে । আমি অন্য সব ব্যবস্থা করে রাখবো ! আর না আসলে তো নাই ।


সেদিনই চলে এসেছিলাম । আর কালকে যাবো আবার । রিয়ার বাবা অবশ্য আমাকে বার বারই যেতে মানা করছে । যদিও জানি উনি নিজেও চান আমি যাই । কিন্তু ওনার বিবেক আমাকে বিপদের ভেতরে ফেলতে বাঁধা দিচ্ছে ।



নয়


১৭ তারিখ সন্ধ্যার সময় ঠিক ঠিক হাজির হয়ে গেলাম । সেই আগের ঘরেই । তবে আজকে কেন জানি ঘরটা কে সেদিনের থেকে অন্য রকম লাগছিল । একটু যেন বড় মনে হচ্ছিলো হঠাৎ করেই । সেদিনের মত আগুন জ্বলছিলো না, তার বদলে মোমবাতি জ্বলছিল । আমি আর রিয়ার বাবার গিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম সেখানে । লোকটা আমাদের ঘরের ভেতরে রেখে চলে গেল কোথায় যেন । ফিরে আরও আধা ঘন্টা পরে । তার হাতে একটা ছোট্ট ব্যগের মত টোপলা ।
আমাদের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো । বলল দরকার কিছু নিয়ে আসতে গিয়েছিলাম ।
-তুমি তৈরি তো ?
-জি !

রিয়ার বাবা বলল
-আরেক বার ভেবে দেখো । এখনও সময় আছে ।
-আমি ভেবে দেখেছি ! আমি এটা করতে চাই । যদি ফিরে না আসি তাহলেও ওর কাছেই থাকবো ।

রিয়ার বাবা কেবল তাকিয়ে রইলো কিছু টা সময় । তান্ত্রিক বলল
-আপনি তাহলে এবার বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করুন । এখানে আপনার আর কোন কাজ নেই ।
রিয়ার বাবা চলে গেল ঘর থেকে ।


রিয়ার বাবা চলে যাওয়ার পরপরই আমার মনে ভেতরে কেমন যেন করে উঠলো । বলা চলে এর আগে আমি কোন দিন এরকম কোন পরিস্থিতিতে পরি নি । তান্ত্রিকের সাথে এই প্রথম একা ঘরে রয়েছি । তান্ত্রিক আমার দিকে তাকিয়েই মনে হয় আমার মনের খবর ধরে ফেলল চট করে । হেসে বলল
-এখনই ভয় পেও না । ভয় পাওয়ার আরও অনেক কিছু রয়েছে ।
আমি কেবল একটু ঢোক গিললাম । মুখে কিছুই বললাম না ।

তান্ত্রিক আমার মোমবাতির দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো । আমি জ্বলতে থাকা মোমবাতির গুলোর দিকে ভাল করে তাকাতেই বুঝতে পারলাম আসলে সে কি বলতে চাইছে । আগে টেনশনের কারনে আমি ঠিক মত বুঝতে পারি নি কিন্তু একটু ভাল করে দেখতেই ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে গেল । মোমবাতি গুলো এমন ভাবে বসানো হয়েছে যাতে তার ভেতরে একটা মানুষ ঠিক ভাবে এটে যায় ! আমাকে তান্ত্রিক সেই মোমের ভেতরে শুয়ে পরতে বলল । আমি বাক্য ব্যয় না করে শুয়ে পড়লাম ।
-চোখ বন্ধ কর । আর ফলটা দু'হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখো !

আমি চোখ বন্ধ করে ফল টা চেপে ধরে রাখলাম । তান্ত্রিকের মন্ত্র পরা শুনতে শুনতে কখন যেন ঝিমুনি চলে এসেছে বুঝতে পারি নি । হঠাৎ করেই ঝিমুনি কেটে গেল । আমি তখনও চোখ খুলি নি । তবে মনে হল আমি আর সেই ঘরের মাঝে নেই । অন্য কোথায় আছি । চোখ খুলতে ভয় হচ্ছিল কিন্তু যখন চোখ খুললাম তখন আসলেই ভয় লাগলাম । চারিদিকে কেবল অন্ধকার । কিছুই দেখা যাচ্ছে না । আমি উঠে বললাম । চারিদিকে তাকিয়েই বুকের ভেতরে কেমন করে উঠলো ।

কোথায় ঘর ? আমি কোন ঘরের মধ্যে শুয়ে নেই । যেন খোলা কোন মাঠের ভেতরে শুয়ে আছি । অদ্ভুদ দর্শন কালো কালো চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । আরেকটু ভাল করে তাকাতেই বুঝতে পারলাম আসলে ও গুলো কোন গাছ জাতীয় কিছু ।

-চল !
কেউ একজন গম্ভীর ভাবে বলে উঠলো । বুকের ভেতরে যেন ঠান্ডা একটা প্রবাহ বয়ে গেল । ভয়ে জমে গেলাম সাথে সাথেই । পেছনে তাকাতে সাহস হল না । কিন্তু কথাটা যে বলল সে আমার পেছনেই রয়েছে । আমি একটু একটু করে পেছনে তাকাতে একটু আলোর আভাস পেলাম ।

আমার পেছনে যে আছে তার হাতে আলো জাতীয় কিছু আছে । একটু যেন ভরশা পেলাম । আস্তে করে পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলাম । কালো আলখেল্লা পরা । মুখ আর মাথাতেও কাপড় দিয়ে ঢাকা । আমি ওনার চেহারা দেখতে পাচ্ছি না । লোকটা এক হাতে একটা ছোট্ট হ্যারিক্যান জাতীয় কিছু যেখান থেকে আলো আসছে । আর অন্য হাতে একটা ছোট্ট টোপলার মত ব্যাগ । ব্যাগটা আমি চিনতে পারলাম । তান্ত্রিকের হাতে যে ব্যাগটা ছিল ।

লোকটা আর কোন কথা বলে হাটতে লাগলো সেই ঘন কালো কালো গাছ গুলোর পাশ দিয়ে । একটু পরে বুঝতে পারলাম আসলে এটা একটা জঙ্গল জাতীয় কিছু । আমি লোকটা পেছনে হাটছি মন্ত্র মুগ্ধের মত । বুকের ভেতরে ভয়টাকে কেবল চেপে রেখেছি । নিজের মন কে বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করছি যে এই লোকটা অথবা লোক ছাড়া আর যাই হোক না কেন আমার কোন ক্ষতি করবে না । ক্ষতি করলে এতোক্ষনে করে ফেলতো । আমাকে সাহস করে এগিয়ে যেতে হবে । রিয়া আমার জন্যা অপেক্ষা করছে ।


একটা সময় হাটতে হাটতে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে গেছি তখন লোকটা দাড়িয়ে গেল । আমি পাশে গিয়ে দাড়ালাম । সামনে দেওয়াল জাতীয় কিছু একটা ছিল । লোকটা বলল
-আমি আর যাবো না । এখন থেকে তোমার একাই যেতে হবে !
-একা !
-হুম ! মনে রেখো এই দরজা দিয়েই তোমাকে বের হয়ে আসতে হবে । আমি এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো !

এই বলে লোকটা কোথাও একটা হাত দিলো । সাথে সাথেই মৃদ্যু স্বরে কিছু একটা খুলে গেল । তাকিয়ে দেখি সেই দেওয়াল থেকে একটা দরজা খুলে গেছে । ভেতর থেকে একটা নীলাভ আলো আসছে ।
-যাও । দেরি কর না । আর এটা নিয়ে নাও ।

এই বলে লোকটা ঐ তান্ত্রিকের দেওয়া পুটলীটা আমার হাতে দিল । আর দরজা দিয়ে পা বাড়ালাম । তখনও জানি না আমি কি করতে যাচ্ছি কোথায় যাচ্ছি । যেখানে যাচ্ছি সেখান থেকে কোন দিন ফেরৎ আসতে পারবো তো ! কেন জানি মায়ের কথা মনে পড়লো । আসার সময় মাকে কিছু বলে আসি নি । যদি কোন দিন ফিরে না আসি তাহলে মা হয়তো জানতেই পারবে না আমার কি হয়েছিল ?



দশ

আবার সেই পরিচিত জায়গা চলে এসেছি । দিনের পর দিন যে স্বপ্নটা আমি দেখেছি ঠিক সেই জায়গা । কালো লোকটার দরজা খোলার পর থেকেই কিছুটা সময় আমি কেবল অন্ধকারে হেটেছি । কোথায় যাচ্ছিলাম কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । তারপর হঠাৎ করেই সেই আগের জায়গায় চলে এসেছি । সেই পরিচিত জায়গাটা !

এতোক্ষন যে ভয়টা করছিল সেটা চলে গেল মুহুর্তেই । আমি ঠিক ঠিক জানি আমাকে এখন কোথায় যেতে হবে এবং কি করতে হবে । আমি দ্রুত পা চালালাম । পথ চিন্তে আমার মোটেও সমস্যা হচ্ছে না । করিডোরে ছড়িয়ে ছিটিয়া থাকা জিনিস পত্র গুলো আমি পাশ কাটিয়ে চললাম !
তবে একটা ব্যাপার আমাকে মনে রাখতে হবে যে রিয়া কে নিয়ে আমাকে আবার ঠিক এই পথ দিয়েই ফেরৎ আসতে হবে । সেই একই দরজা দিয়ে বের হতে হবে । লোকটা বলে দিয়েছে । রিয়া কে নিয়ে এই পর্যন্ত, মানে এই করিডোরে পর্যন্ত চলে আসতে পারবো ঠিক ঠিক কিন্তু এরপরে ? ঐ অন্ধকার টুকু পার হব কিভাবে ?

আমি সামনে হেটেই চলেছি ! পরে ওটা নিয়ে ভাবা যাবে !

রিয়ার কাছে পৌছে দেখি ও চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে । আমার আসার আওয়াজ পেয়ে চোখ মেলে তাকালো । আজকে কি আমার ভেতরে কোন অস্বাভাবিকতা আছে । রিয়া কেমন অস্বাভাবিক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু টা সময় !
আমি বললাম
-হ্যা ! যাবোই । তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এসেছি ।
রিয়া আমাকে ওর হাত আর পায়ের শিকলটা দেখালো । আরে তাই তো ?
এটা কাটবো কিভাবে ? আমি আগেই এটা নিয়ে বেশ কয়েকবার টানাটানি করেছি কোন লাভ হয় নাই । তাহলে এখন কিভাবে হবে । আমি কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না । যখন তাহলে এই আসাটা বৃথাই যাবে । ঠিক তখনই আমার চোখটা গেল আমার হাতের পুটলির দিকে । এটা আমার হাতে কেন ?
ওটা খুলতেই অদ্ভুদ একটা বস্তু দেখতে পেলাম । অনেকটা প্রথম দর্শনের গরুর দাঁতের হাত মনে হল । কেন জানি মনে হল ওটা গরুর হাড়-ই ! চোয়ালের হাত । এখনও দাত লেগে আছে ।
এটা আমাকে কেন দিয়েছে । এটা দিয়ে আমি কি করবো । তখনই আরেকটু ভাল করে তাকালাম চোয়ালের হাড় টার দিকে । জিনিসটা একটু উল্টে দেখলে অনেক টাই করাতের মত দেখতে মনে হয় । মনের ভেতররে একটা আশা দেখা দিল । আমি ওটা হাতে নিয়ে রিয়ার শিকলের উপরে বসিয়ে দিলাম । তারপর করাতের মত করে টান দিল । এবং আমাকে অনেক টাই অবাক করে দিয়ে শিকলের অনেক টা কেটে গেল ।

রিয়া খুশিতে হাত তালি দিয়ে উঠলো ।
-কাজ হচ্ছে ।
আমি দ্বিগুন উৎসাহে কাটতে লাগলাম । যখন সব গুলো শিকল কেটে ওকে মুক্ত করেছি তখনই সেই গমগম আওয়াজটা শুনতে পেলাম । কেউ এদিকে আসছে । প্রতিদিন যেমন আসে ।
রিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এখন কি হবে ?
-আজকে আমাকে ডাক্কা দিও না । কারন আজকে ধাক্কা দিলেও কোন কাজ হবে না !
-মানে ?
-বুঝবে না ।

আমি রিয়ার হাত ধরে বললাম
-দৌড়াতে হবে । পারবে তো ?
-হু ! কোন দিকে যাবে ? কিভাবে যাবো ?

এবার আর দেরি না করে ওকে নিয়ে দৌড় শুরু করলাম । যেদিক থেকে আওয়াজটা আসছে তার উল্টো দিকে নয় ঐ দিকেই । রিয়া প্রথমে আমাকে তাকতে চাইলেও আমি বললাম
-আমার কথা শুনো ! এটা ছাড়া আর কোন উপায় নেই ।
আমি ওকে নিয়ে দৌড়াতেই থাকলাম । আওয়াজটা একদম কাছে চলে এসেছে । আমার কেন মনে হল এরেক টা বাক ঘুরলেই আমি তাকে দেখতে পারো ।


এই কদিনে এই জায়গা দিয়ে এতো বার গিয়েছি যে আমার এটার সব কিছু একেবারে পরিচিত হয়ে গেছে । আমি ঠিক ঠিক জানি কোথায় কি আছে । কোথায় লুকাতে হবে । করিডোরের আশে পাশে হাজার টা জিনিস পত্র ছিল । শক্ত শক্ত কত কিছু । কোন দিন দেখার চেষ্টা করি নি আসলে সেগুলো কি ! । আগে যেগুলোর সাথে আমি ধাক্কা খেতাম ।

আমি রিয়া নিয়ে দৌরাচ্ছি । যতটা সম্ভাব নিঃশব্দে দৌড়ানোর চেষ্টা করছি । তবে সামনে দিয়ে যে আসছে তার পায়ের আওয়াজ এতোই হচ্ছে যে আমার দৌড়ানোর আওয়াজ শুনতে পারার কথা না !

আমার যখন মনে যে আরেকটা বাক ঘুরলেই সেই প্রানীটা আমাদএর মুখো মুখি চলে আসবে ঠিক তখনই আমি রিয়া কে নিয়ে একটা বড় বাক্সের আড়ালে চলে গেলাম ।

আমি খুব ভাল করেই জানি যে আসছে সে যদি একবার যাওয়ার পথে পেছনে ফিরে তাকায় তাহলেই আমাদের দেখে ফেলবে । তবে কেন জানি মনে হল সে তাকাবে না । সে হয়তো ভাবতেই পারবে না যে তার এই জায়গা থেকে কেউ পালাতে পারবে । তাই সে অনেকটাই নিশ্চিন্ত থাকবে । আমাকে কেবল এই সুযোগেই পালাতে হবে । এটাই আমার হাতে এক মাত্র অপশন ।




এগারো


আমি রিয়াকে নিয়ে সেই বাক্সের পাশেই লুকিয়ে পড়লাম । বুকের ভেতরে ঢিপ ঢিপ করছে । আওয়াজটা আরও কাছে শুনতে পাচ্ছি । যখন সেই প্রানীটা আমাদের কে ক্রোস করে গেল তখন তখনও আমরা কেবল একে ওপরকে জড়িয়ে ধরে আড়াল করার চেষ্টা আছি । রিয়া আমাকে জড়িয়েই ধরে আছে শক্ত ভাবে । আমি একটু মাথা তুলে চলে যাওয়া প্রানীটির দিকে তাকালাম ।

আমার পুরো জীবনে এরকম কোন প্রানী আমি দেখেছি কি না জানি না । এই জায়গাটা এমনিতেই অন্ধকার । তবে আমি আবছায়া সব দেখতে পাচ্ছি । প্রতিদিনই এখানে আসা হয় এই জন্যই মনে হয় । অন্ধকারের ভেতরেই আমি কোন কিছু একটা থপথপ করে এগিয়ে যেতে দেখলাম । মুখটা দেখা যাচ্ছে না । কেবল পেছন থেকে দেখতে পাচ্ছি । অন্ধকারের ভেতরে আরও একটু বেশি অন্ধকার । আকৃতিতে মানুষের থেকে বেশ বড়, প্রায় দেড় গুন । কাধের উপর যেটা রয়েছে আর যাই হোক সেটা মানুষের মাথার মত কিছু না । মাথা টা মনে হল যেন কোন অর্ধ গোলকের মত কিছু একটা বসে আছে । কোন দিকে তাকাচ্ছে না । অনেক টা নিশ্চিন্তেই এগিয়ে যাচ্ছে । আমিও এটাই আশা করলাম যেন বেটা নিশ্চিন্তই থাকে ।

বাক ঘুরে চলে যেতেই আমি রিয়াকে নিয়ে উঠলাম । আর দেরি করা যায় না কোন ভাবেই । রিয়া যে ওখানে নেই সেটা খুজে বের করতে ঐ যন্তুটার খুব বেশি দেরি হবে না । আমার এরই ভেতরেই সেই দরজার কাছে পৌছাতে হবে । আমি রিয়া কে নিয়ে দৌড় দিলাম আবারও । প্রতিদিনের সেই চিরো-চেনা পথ চলতে আমার খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না । আমি রিয়ার হাত ধরেই হাটছি যত দ্রুত সম্ভব ।

আমি প্রতিদিন যেখান থেকে আমার স্বপ্ন টা শুরু করি ঠিক সেখান থেকেই পৌছে গেলাম । আর ঠিক তখনই একটা বিকৎ আওয়াজ শুনতে পেলাম পেছন থেকে । আমার কিংবা রিয়ার কারো বুঝতে কষ্ট হল না যে চিৎকার টা কোথা থেকে আসছে । ঐ প্রানীটা নিশ্চয় রিয়ার বন্দি থাকার জায়গায় পৌছে গেছে । ওকে ওখানে দেখতে না পেয়ে চিৎকার করছে ।

আমার ভেতরে চিন্তা দ্রুত গতিতে চলছে । আমি ঠিক এই পর্যন্তই ভাল করে চিনি কিন্তু এর পরে কোন দিকে যাবো খুজে পেলাম না । প্রতিদিন কেবল এই জায়গা থেকেই আমার যাত্র শুরু হয় কিন্তু আজকে আমি এই জায়গা থেকে আমার যাত্রা শুরু করি নি । অন্য দরজা দিয়ে প্রবেশ করে এখানে এসেছি কিন্তু এখন কোন দিকে যাবো ?
আমার কেবল এদিক ওদিক তাকালাম কিছু টা সময় । নিজেকে কেম যেন অস হায় মনে হল । এদিকে আবারও কোন কিছুর এদিকে আসার শব্দ শুনতে পারছি । বুঝতে কষ্ট হল না যে সেই প্রানীটা এদিকে আসছে । এখানে আসতে আর খুব বেশি মিনিট খানেক লাগবে । এখন ?

আমি কোন দিকে যাবো ?

যেদিকেই যাই সেদিকেই কেবল ধূ -ধূ অন্ধকার মনে হচ্ছে । কোন কিছু পরিচিত না ।
রিয়ার দিকে তাকিয়ে মনে হল ও আমার ব্যাপার টা বুঝতে পেরেছে । রিয়া বলল
-তুমি আমাকে রেখে চলে যাও । আমাকে পেলে আর ও তোমাকে আর খুজবে না !
-না ! যদি ধরা পরি তাহলে দুজন এক সাথেই ।

আমি কোন দিকে যাবো এই সিন্ধান্ত আমি তখনও নিতে পারছি না । এদিকে আওয়াজ কাছে কাছে থেকে কাছে এগিয়ে আসছে । আমি রিয়া বললাম
-যা থাকে কপালে চল সামনে যাই !
-কোন দিকে যাবো ?
-আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি ডান দিক থেকে এখানে এসেছিলাম । ঐদিকেই যাই ।

আমি রিয়াকে নিয়ে যেই না ডান দিকেই এগোতে যাবো ঠিক তখনও আমাদের সামনে কেউ এসে হাজির হল । ঠিক যেন অন্ধকার ফুটো করে বেরিয়ে এল । আমি চিৎকার দিতে গিয়ে গিয়ে নিজেকে সামলে নিলাম, রিয়ার মুখ দিয়ে চিৎকার বের হয়ে এল ঠিকই । অন্ধকারের হলেও আমার কেন জানি আয়বয় টা একটু পরিচিত মনে হল ।

অন্ধকারের ভেতর থেকে আরও সামনে আসতেই আমি তাকে চিনে ফেললাম ।
পার্কের সেই সাধু !

আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-ওটা ভুল পথ !
-কি !
-আমার সাথে আয় !

আর আর কোন কথা বললাম না । উনিও কোন কথা বলল না । কেবল সামনে এগুতে লাগলো । আমি রিয়ার হাত ধরে অন্ধের মত দৌড়াতে থাকি । এদিকে পেছনে সেই আওয়াজ টা আস্তে আস্তে বেড়েই চলেছে । বারবার মনে হচ্ছে এই বুঝি পেছন থেকে আমাদের ধরে ফেলবে ।

আমার কেবল মনে হল যেন আমি ঐ সাধুর পেছনে অনন্তকাল ধরেই দৌড়ে চলেছি কিন্তু আসার সময় আমার এতো সময় লাগে নি । তাহলে এখন কেন লাগছে ? কিছু জানতে চাওয়ার উপায় নেই । সেই তান্ত্রিক বলেছিল যে এরা খুব ক্ষমতাবান হয় । যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে ।

অবশেষে আমাদের যাত্রা শেষ হল । সামনের লোকটা একটা জায়গায় এসে থামলো । আমার তারপর হাত দিয়ে কি যেন করলো । মনে হল কোন সুইট জাতীয় টিপছে । কয়েক মুহুর্ত যেন কিছুই হল না । তারপরেই আমি কিছু একটা সরে যাওয়ার শব্দ পেলাম । ঠিক এই এরকম আওয়াজই আমি পেয়েছিলাম আসার সময় !


ঠিক একই ভাবেই দেখতে পেলাম অন্ধকারের ভেতরে একটা জায়গা থেকে নিলাভ আলো দেখা যাচ্ছে । লোকটা নিঃশব্দে আমাদের ঐ পথে চলে যেতে বলল । আমি রিয়াকে নিয়ে পথ দিয়ে বের হয়ে গেলাম ।

বাইরে বের হয়ে পেছন ফিরে তাকালাম । এখন আমি যেখানে দাড়িয়ে আছি সেখানে অন্ধকার লাগছে আর ভেতরে আগের মত নীলাভ আলো দেখা যাচ্ছে । সেই নীলাভ আলোতে আমরা সেই সাধুকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম । সাধু বলল
-আমার জিনিস টা আছে তোর সাথে !
-হ্যা !
-থাক । ওটা রেখে দিস । সামনের কোন বিপদ হলে কাজে লাগবে । আর তুমি, এরকম ভুল আর কর না । আমি বারবার আসবো না তোমার কে বাঁচাতে !

আমি আর রিয়া দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে আবারও তাকালাম লোকটার দিকে কিন্তু ততক্ষনে দরজাটা বন্ধ হয়ে গেছে । আমরা আবারও গাঢ় অন্ধকারের ভেতরে দাড়িয়ে রইলাম কিছুটা সময় ।

কোথায় যাবো কিছু জানি না । আসল বিপদ থেকে তো বের হয়ে এলাম এখন ? কোন দিনে যাবো ?
ঐ লোকটা বলেছিল আমাদের জন্য এখানে দাড়াবে । আচ্ছা ঠিক জায়গা মত এসেছিতো । হয়তো অন্য কোন দরজা দিয়ে বের হয়ে এসেচি । এখন হয়তো তাকে আর খুজে পাওয়া যাবে না ! সে কোথায় ? এই রাস্তাটা টুকু পার হতে আমাদএর তার দরকা কিন্তু কোথায় সে ?
-এই তো !

পেছনে কারো আওয়াজ পেলাল দুজনেই পেছনে তাকিয়ে দেখি সেই আলো হাতে কেউ এগিয়ে আসছে । বুকে যেন পানি ফিরে এল ।


পরিশিষ্টঃ

যখন আমি আবার জেগে উঠলাম তখন দেখি আমার সামনে উপর হয়ে রিয়ার বাবা চেয়ে আছে । চোখ মেলতে দেখে তার মুখে হাসি ফুটলো । আমি চোখ সরিয়ে ঘরের অন্য দিকে তাকালম । ডান দিকে সেই তান্ত্রিক বসে আছে । তার চোখে একটা তৃপ্তির ছায়া !
-রিয়া কোথায় ?

তান্ত্রিক বলল
-তার যেখানে থাকার কথা সেখানেই থাকবে ।
-জেগে উঠবে তো ?
-ওঠার তো কথা । এতোক্ষনে মনে হয় উঠেও গেছে ।


চলে আসার সময় রিয়ার বাবা তান্ত্রিককে অনেক টাকা সাধলো । কিন্তু সে কিছুতেই নিতে চাইলো না । বলল সে এই সব কেবল মানুষের উপকার করতে নেয় । অন্য কোন কারনে নয় । টাকা নেওয়া তার চরিত্রে নেই । আমার কি মনে হল আমি আমার পকেট থেকে সেই লেবুর মত ফল টা বের করে তান্ত্রিকের হাতে দিলাম । বললাম
-এটা আপনার কাছে থাক । এটার মূল্য আমি বুঝবো না আপনি হয়তো বুঝবে ।

এবার দেখলাম তান্ত্রিকের মুখে আনন্দের হাসি ফুটলো । তার মুখ দেখে মনে হল সে আসলেই এতে খুশি হয়েছে । বলল
-ধন্যবাদ । এটা আমার জন্য আসলেই অনেক কাজে দিবে !
-তবে এটা দিয়ে কোন অন্য রকম কিছু করবে না । অনুরোধ রইলো ।
-করবো না ! মানুষের উপকারই কেবল করবো !


যখন গাড়িটা দ্রুত গতিড়ে ঢাকার দিকে ছুটে চলেছে তখনই খবরটা রিয়ার বাবার মোবাইলে এল । রিয়ার জ্ঞান ফিরছে । আমি জানি ফিরবে । ফিরতে হবেই । তাকে ছাড়া আমার জীবন যে অপূর্ণ রয়ে যাবে । আমাকে পূর্ন করতে তার যে জ্ঞান যে ফিরতেই হবে । তার জন্য এতো কিছু করলাম এখন কি তার জ্ঞান ফিরলে চলে । না ফিরলে থাপড়ায়া জ্ঞান ফিরাবো !

গাড়ি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলল হাসপাতালের দিকে । আমি অপেক্ষা করতে থাকি আমার সৌল মেটের সাথে দেখা করার জন্য, এবার সত্যি সত্যি.... বাস্তবে !
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিচারের জায়গা না পেলে মানুষ প্রেত হয়ে ওঠে

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১২ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩৯


(সামাজিক অবিচার, রাষ্ট্রীয় অনুপস্থিতি এবং আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঠামোর মধ্যে সাধারণ মানুষ কীভাবে হারিয়ে যায়।)

মানুষ যখন বারবার অবিচারের শিকার হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একদিন এসো সন্ধ্যে ফুরোলেই=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১২ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৫



ভালোবাসা ছড়ানো পাতায় পাতায়, সবুজাভ স্নিগ্ধ প্রহর আমার
এখানে উঁকি দিলেই মুগ্ধতারা চুয়ে পড়ে টুপটাপ;
ধূসর রঙ প্রজাপতিরাও এখানে রঙিন ডানায় উড়ে,
কেবল অনুভূতির দোর দিতে হয় খুলে, চোখগুলো রাখতে হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

চীনের জে-১০ যুদ্ধবিমান কোনো চকচকে ল্যাব বা বিলাসবহুল ফ্যাক্টরিতে জন্মায়নি

লিখেছেন নাঈম আহমেদ, ১২ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৬

চীনের জে-১০ এর পেছনেও রয়েছে সেই ত্যাগ আর সংকল্পের গল্প—
১: গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) দলের অক্লান্ত পরিশ্রম।
২: বাইসাইকেলে চেপে কাজে যাচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলী সু চিশৌ।
৩: প্রথম উড্ডয়নের পর কেঁদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Bangladesh bans ousted PM's Awami League under terrorism law

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১২ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৬





হায়রে এরেই বলে কর্মফল। ১৭ টা বছর গুম , খুনের মাধ্যমে এক ভয়ের রাজ্য তৈরী করে কেড়ে নেয়া হয়েছিল মানুষের বাকশক্তি। চোখ, কান, মুখ থাকতেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিন গেলে আর দিন আসে না ভাটা যদি লয় যৌবন

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১২ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:২৬


এমন কোনো ইস্যু আছে, যা নিয়ে জাতি পুরোপুরি একমত? ৫০%ও একমত এমন কোনো বিষয় চোখে পড়ে না। একপক্ষ রবীন্দ্রনাথের গান জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মনেপ্রাণে ধারণ করে, আরেক পক্ষ বদলাতে চায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×