somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্ন ভ্রমনের কথা টি....

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটি একা একা সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে হাটছে । অনেকক্ষন ধরে । কারও হয়তো পাশে থাকার কথা ছিল এখন কিন্তু সে নেই দেখে খানিকটা মন বিষন্ন । যদিও অল্প কিছুক্ষনের ভিতরেই তার চলে আসার কথা ! মেয়েটি একা একাই হাটতে থাকে পানিতে পা ভিজিয়ে !



আরেকটু কাছ থেকে দেখলে হয়তো তেমন কিছু মনে নাও হতে পারে । বিশাল সমুদ্র মাঝে মাঝে মানুষকে বিষন্ন করে তোলে । হয়তো এই বিশাল সমুদ্রের কাছে নিজের ক্ষুদ্রতা দেখে মেয়েটির মন সহসাই বিষন্ন হয়ে ওঠে ।
সন্ধ্যার আগের আলো চারিদিকের বিষন্নতা যেন আরও একটু বাড়িয়ে দেয় । নিজের কাছের মানুষটির পাশে থাকাটা বড় বেশি অনুভত হয় !



সমুদ্রের নরম বালিতে পা রেখে মেয়েটি এগিয়ে চলে সামনে । হয়তো তার বিষন্নতা কাটানোর উপকরন আরও সামনে রয়েছে । ছেলেটির এই দিকেই আসার কথা । মাত্র কিছুক্ষন সময় আগে গিয়েছে কিন্তু মেয়েটার মনে হচ্ছে কতক্ষন হল তাকে ছেড়ে গিয়েছে সে ।
নরম ভেজা বালির উপর দিয়ে হেটে চলে মেয়েটি !



এতোক্ষনে মেয়েটিকে ভাল করে দেখা যায় । এতোক্ষনে যেখানে মনে হচ্ছিলো বিষন্নতার ঘনঘটা আসলে সেখানে দেখা গেছে এক চিলতে হাসির রৌদ্রছায়া ! তার প্রিয় মানুষটির হাত ধরে মেয়েটি হাটছে সমুদ্রের পাড়ে রাখা বড় বড় পাথরের মসৃন পাটাতনের উপর । একটু পরপর বড় বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে সেই বড় পাথরের পাটাতনের উপর ! হাত ধরে হাটছে দুজন !
দুর থেকে দেখলে যে কারো মনে হতে পারে পৃথিবীর সব থেকে সুখী একটা কাপল হাটছে একে অন্যের হাত ধরে । নিজেদের মাঝেই কথা বলায় ব্যস্ত । অন্য কোন দিকে দেখার সময় কোথায় তাদের !



-আর পাথরের উপর দিয়ে হাটবো না !
-তাহলে ?
-চল ঐ বালির উপর দিয়ে হাটি । তুমি আসার আগে আমি একা একা ওদিক দিয়ে হাটছিলাম ।
-একা একা !
-হুম ! জনাবের তো কত কাজ ! আমাকে সময় দেওয়ার সময় কি আছে ?
-আরে কাজ কোথায় ? একজনের সাথে একটু দেখা করতে গিয়েছিলাম । তাও মাত্র আধা ঘন্টার জন্য !
-হুম ! জানি তো ! তোমার ঐ সুন্দরী বান্ধরীর সাথে না ?
-আরে কিসের ভিতর কি ? এর ভিতর জিনিয়ার কথা কেন আসলো ?
-বাহ ! আমি তো কারো নাম নেই নাই তাইলে তুমি কিভাবে বুঝলে জিনিয়ার কথা বলছি !
-না মানে ...। আর কি ..
-তোমরা ছেলেরা না ! যাও তোমার সাথে কোন কথা নেই । যে ছেলে নতুন বউ রেখে পুরানো বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যেতে পারে তার সাথে কোন কথা নেই !
-আরে শুনবা তো .
-কোন শুনা শুনি নাই । তুই সর এখান থেকে !



মেয়েটি রাগ করে হাটা দেয় । ছেলেটি তার পিছন পিছন হাটতে থাকে । মেয়েটি হাটতে হাটতে দুর সমুদ্রের দিকে রওনা দেয় । ছেলেটি তখনও এক ভাবে ডাকতেই থাকে মেয়েটিকে !



হাটতে হাটতে যখন দুজনেই ক্লান্ত মেয়েটি তখন সমুদ্র সৈকতে রাখা একটা গাছের গুড়ির উপরে গিয়ে বসে । ছেলেটিও বসে গুড়িটার আরেক পাসে !
-আচ্ছা এরকম ভাবে রাগ করার কোন মানে আছে ?
-হুম ! এখন আমার রাগ তো তোমার কাছে অর্থহীনই মনে হবে । যাও তোমার বান্ধবীর কাছে ।
-আরে ও কাছে যাবো কেন ?
-তাহলে কেন গিয়েছিলে শুনি ?
-আরে বাবা ওর কাছে যাই নি তো ! আর ও এখন এখানে থাকে না ।
-আচ্ছা খোজ খবর তো খুব ভাল রাখো দেখছি !
-ক্ষমা কর ! আর কোন দিন খোক খবর রাখব না ! এই কথা দিলাম !
-সত্যি তো !
-একদম সত্যি ! এখন থেকে আমার বউ ছাড়া দুনিয়ার আর কোন মেয়ের কোন খোজই আমি রাখবো না ! হল ?



ছেলেটির কথা শুনে মেয়েটির মুখে হাসি ফোটে । মেয়েটি আবারও ছেলেটির হাত ধরে হাটতে থাকে !



-এই এই কি কর ? একটু এদিকে সরে এসো না ?
-কেন ?
-আরে দেখছো না ভিজে যাচ্ছো !
-তো ?
-তো মানে ?
-আরে এই সমুদ্রের কাছে এসে যদি একটু নাই ভিজলাম তাহলে এখানে আসার মানে কি শুনি ?
-তাই না ?
-হুম তাই ! জানো না আমি সারাটা জীবন কেবল এই একটা স্বপ্ন দেখেছি । তোমার হাত ধরে সমুদ্রের তীরে হাটবো । মাঝে মাঝে সমুদ্রের বড় ঢেউ এসে আমাদের ভিজিয়ে দিবে । তুমি জানো না আমার স্বপ্নের কথা ?

মেয়েটি খুব ভাল করেই জানে ছেলেটির এই স্বপ্নের কথা ! কেবল মাত্র মেয়েটির হাত ধরে এই বিশাল সমুদ্র দেখবে বলে ছেলেটি কোন দিন এই সমুদ্রের তীরে আসে নি । স্কুল কলেজ আর ভার্সিটিতে থাকতে ছেলেটির বন্ধুরা মিলে কত বার এখানে এসে অথচ ছেলেটা আসে নি ! কেবল মাত্র মেয়েটির হাত ধরে প্রথম বারের মত এই বিশাল সমুদ্রটা দেখবে বলে !



-আচ্ছা অনেক হয়েছে । এবার একটু পাড়ে এসো ।
মেয়েটি ছেলেটাকে ধরে একটু উপরে নিয়ে এল । মুখো মুখি হয়ে দাড়ালো । পেছনে বিশাল সমুদ্রের জল বারবার ওদের পায়ের কাছ পর্যন্ত এসে চলে যাচ্ছে । মেয়েটি এক ভাবে কেবল ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছে !

-কি দেখো এমন করে ?
-আজকে তুমি খুশি তো ?
-হুম ! জীবনের অন্যতম চাওয়া টা পূর্ন হয়ে যাচ্ছে । খুশি হব না ?
-শুনেছি চাওয়া পুর্ন হলে মানুষ সেটার প্রতি আকর্ষন হারিয়ে ফেলে, আমার প্রতি আকর্ষন হারাবে না তো ?
-তোমার তাই মনে হয় ?
মেয়েটা কিছু বলতে পারে না । কথাটা বলা মনে হয় ঠিক হয়নি ।
ছেলেটা আবার বলল
-তোমার সত্যি কি তাই মনে হয় ? আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল তোমার তাই মনে হয় নাকি ?
মেয়েটি কিছু বলতে পারে না । কেবল তাকিয়ে থাকে ছেলেটির দিকে



-এই আর একটু কাছে আসো । ভিজে যাচ্ছো তো ?
-হুম ! কাছে আসতে আসতে তোমার কোলের উপর উঠে পড়ি !
-হুম উঠো ! কে মানা করেছে ?
মেয়েটি চোখ কপালে তুলে বলে
-তুমি এতো অসভ্য হয়েছো না ! ঘরে তো শয়তানী কর এখন পথে ঘাটেও ।
-শুনুন মিসেস রহমান আপনি এখন আমার বিয়ে করা বউ । আমার কোলে আপনি উঠতেই পারেন । বুঝছেন !
-বুঝলাম মিস্টার রহমান ! বউ তো কেবল আপনার একারই আছে ।
-হুম ! এমন বউ আমার একারই !



সেই কখন থেকে এক ভাবে বৃষ্টি পড়তে থাকে । এক ছাতার নিচে দুজন হাটতে থাকে একভাবে ।
-আচ্ছা এমন হলে কেমন হয় বল তো ?
-কেমন হয় ? কি কেমন হয় ?
-মনে কর এমন ভাবে সারা দিন বৃষ্টি হল । তুমি আর আমি সারাটা দিন এভাবে হাটতে লাগলাম এক ছাতার নিচে ।
-হুম ! বুঝেছি ! এই ছিপছিপে বৃষ্টি তোমার ভাল লাগছে ?
-লাগবে না কেন ? এই যে তুমি আমার গা ঘেষে হাটছো এখন যেখানেই যাই না কেন আমার কাছে সব স্বর্গীও মনে হবে !



-চল ওখান টাতে গিয়ে বসি !
-আবার ?
-হুম ! বৃষ্টি থেমে গিয়েছে তো ! আর এতো জলদি রুমে গিয়ে কি করবো শুনি ?



মেয়েটির কাছে থেকে ছেলেটি একটু দুরে বসে । কেন জানি আজকে তার অনেক বেশি ভাল লাগছে । কত দিন ধরে এমন একটা দিনের জন্য অপেক্ষা করছিল । নিজেকে আজকে অনেক বেশি সুখী মনে হচ্ছে । এমন একটা দিনের জন্য কতটা সময় ধরে অপেক্ষা করছিল সে !





এই লেখাটা কোন মানে নেই । এলিটা আর মাহদির নিঝুম রাত গানটা দেখতে দেখতে মনে হল আচ্ছা এমন একটা স্বপ্ন তো আমার নিজেরও আছে । গানের ভিডিওর কয়েকটা ছবি নিয়ে এই কথা গুলো লিখলাম ! তবে বাস্তবে ছেলেটির স্বপ্ন কোন দিন পূর্ন হয় না । পৃথিবীর সব থেকে বড় সমুদ্র সৈকত টা তার অদেখাই রয়ে যায় !
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হেজেমনি, কাউন্টার-হেজেমনি ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক যুদ্ধ !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:২৪


একটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে নিঃশব্দ অথচ গভীর যুদ্ধ চলে তার ইন্টেলেকচুয়াল সেক্টরে। গোলা-বারুদের বদলে এখানে অস্ত্র হয় কলম, টকশো, নাটক, পাঠ্যবই, এবং ইউটিউব। বাংলাদেশে এই হেজেমনি বহুদিন ছিল প্রথম আলো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে দলীয় সরকার কখনই জনগণের সরকার হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:২৫



সবাই মিলে দেশ স্বাধীন করলেও আওয়ামী লীগ সেটা স্বীকার করলো না। সেজন্য তারা বাকশাল নামে একদলীয় শাসন শুরু করে ছিল। কিন্তু সেনা বিদ্রোহে তাদের বাকশালী শাসনের অবসান ঘটে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রস্থান-পথ কঠিন হয়ে গেছে মুহাম্মদ ইউনূসের

লিখেছেন কবির য়াহমদ্্, ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ২:২৪



অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের (৮ই আগস্ট ২০২৪ থেকে চলমান...) প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা ছাড়ার পথ কঠিন হয়ে গেছে।

এমনিতেই তার পদ ছাড়ার প্রবল অনাগ্রহ, তার ওপর আছে ক্ষমতা গ্রহণের পরের মাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাতক্ষীরার হিম সাগর আম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১:৪৪




আম খাচ্ছি , সাতক্ষীরার হিম সাগর আম । সিজনে প্রথম । রাসায়নিক মুক্ত । খুব মিষ্টি ভাই । এরপর কুষ্টিয়া , চাপাই , রংপুরের আম আসবে । আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃষ্টি ঝরছে সারাদিন

লিখেছেন সামিয়া, ৩১ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৪



ইচ্ছা ছিল প্রথম আষাঢ়ে ছাদে যাবো
বৃষ্টি দেখতে,
যাওয়া হয় নাই।
বৃষ্টি তো আর ক্যালেন্ডার দেখে আসে না।
সে কখনো মাসের আগেভাগেই দরজায় কড়া নাড়ে,
আবার কখনো হুট করে হাওয়ায়
হালকা জলছবি আঁকে।

বৃষ্টি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×