হাসপাতাল আমার কাছে কখনই ভাল লাগে নি । হাসপাতালের ফিনাইলের গন্ধ কেন জানি খুব অসহ্য লাগে ! কিন্তু এই হাসপাতালে আশ্চার্য ভাবে কোন ফিনাইলের গন্ধ নাই । তার বদলে এরার ফ্রেশারে গন্ধ আছে চারিদিকে । আমি গন্ধটা চেনার চেষ্টা করি । কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছি না এয়ার ফ্রেশার টা ঠিক কিসের গন্ধ ছড়াচ্ছে ।
পুরো করিডরে কাউকেই দেখা যাচ্ছে না । কেমন একটা অন্ধকার অন্ধকার ভাব । চারিদিকে নিরবতা । কেবল এসির মৃদু আওয়াজ ছাড়া আর কিছু নেই ।
আমি শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি কিছুক্ষন । কোন কিছুই আমার মাথার ভিতর আসছে না । বারবারই মনে হচ্ছে আমি হয়তো স্বপ্ন দেখছি । যে কোন সময় আমার ঘুম ভেঙ্গে নিজের বিছানায় নিজেকে আবিস্কার করবো । কিন্তু তা আর হয় না ।
প্লাষ্টিকের চেয়ারটা ছেড়ে আমি উঠে দাড়ালাম । আইসিইউ এর কাচ ঘেরা জানালা দিয়ে এলিনের দিকে তাকাই ।
কি নিষ্পাপ একটা মুখ !
আমি কেবল চেয়ে থাকি ।
মনে হয় এই মুখটার এখানে থাকার কথা না ।
কিছুতেই থাকার কথা না ।
কিছুতেই না ।
আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না এলিন এখানে শুয়ে আছে । নিশ্চুপ হয়ে !
আমি আই সি ইউ এর দরজার কাছে গিয়ে দাড়াই । ভিতর থেকে বন্ধ ! মনে হচ্ছে এলিন এখনই দরজা খুলে দাড়াবে !
একটু হাসি দিয়ে বলবে আমাকে নিয়ে চলতো ! এই বদ্ধ ঘরে আর থাকতে ভাল লাগছে না ।
প্রতিবার যখন এলিনের সাথে দেখা করতে যেতাম ও নিজে দরজা খুলতো ! কাজ শেষ শেষ হবার পরও চলে আসতাম না । দরজা ধরে দাড়িয়ে থাকতাম !
গতবারও ঠিক একই ভাবে দাড়িয়ে ছিলাম ! এলিন বলল
-আর কিছু বলবা ?
আমি আর কিছু বলার খুজে পাই না । আমি মাথা নাড়াই । এলিন বলল
-চলে যাবা এখন ?
-হুম ।
চলে যাবো বললেও কেন জানি চলে যেতে ইচ্ছা করে না । আমার দাড়িয়ে থাকা দেখে এলিন হেসে ফেলল । বলল
-যেতে ইচ্ছা করছে না ?
আমি খানিকটা লজ্জায় পড়ে যাই । একটু লজ্জা মিশ্রিত হাসি দেই । এলিন বলল
-তুমি ইচ্ছা করলে কিন্তু বাসায় আসতে পারো । বাসায় কেউ নেই ।
-না ঠিক আছে । এখানেই থাকি কিছুক্ষন । একা বাসায় যাওয়া কেমন দেখায় !
এলিন আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন । বলল
-এই জন্য তোমাকে ভাল লাগে । এসো আমার সাথে ।
এলিন আমার হাত হাত ধরলো । তারপর এক প্রকার জোর করেই লিফ্টের দিকে টেনে নিয়ে গেল ।
এলিন ইচ্ছা করলেই আমার হাত ধরতে পারে !
কিন্তু আমি কেন জানি পারি না !
এমন কি ও যখন আমাকে হাত ওর হাত ধরতে আহবান জানায় তবুও আমি ওর হাত ধরতে পারি না ।
কি এক দ্বিধা আমার ভিতর কাজ করে !
এলিনের সাথে আমি কোন দিন কথা বলবো ভাবি নি অথবা ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব হবে এটাও আমি ভাবি নি ।
আচ্ছা এলিন সত্যি কি আমার বন্ধু ?
শুধুই কি বন্ধু ?
না ।
শুধু কেবল বন্ধুত্ব নয় । আরো বেশি কিছু । অনেক বেশি কিছু ।
আমি এলিনকে ভালবাসি । প্রথম দেখার দিন থেকেই ভালবাসি । আমার কাছে আর কিছু সত্য হোক বা না হোক এই কথাটা সব সময় জলন্ত সূর্যের মতই সত্য ।
আর এলিন !
আচ্ছা ও কি আমাকে ভালবাসে ?
আমি জানি না । হয়তো বাসে না ।
নাহ ।
এলিন আমাকে ভালবাসে না । এটা আমি খুব ভাল করেই জানি ।
এলিন কাউকে ভাল বাসে না । ওর কাছে মনের সম্পর্কের কোন দাম নাই ! ও কেবল শরীরের ভাষা জানে ! ও মানতে নারাজ যে মানুষ মানুষকে মন দিয়ে ভাল বাসতে পারে ! মানুষের ভালবাসা কেবলই শারীরিক !
এলিন যে আমাকে ভালবাসে না এই কথাটা এলিন আমাকে পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিল । বলেছিল যে সে আমার টাইপের মেয়ে না ।
এলিনের প্রতি ভাল লাগার কথা গুলো আমি সব সময় নিজের কাছেই লুকিয়ে রাখতাম । যখন দেখতাম এলিন অন্য কারো কাছে আড্ডা মারছে হাসা হাসি করছে কেমন জানি বুকের ভিতর একটা কষ্ট অনুভব হয় । কিন্তু সব থেকে বেশি কষ্ট লাগত রিয়াদ কে দেখে ।
রিয়াদ এলিনের বয়ফ্রেন্ড । অবশ্য এলিনের আরো অনেক গুলোই বয়ফ্রেন্ড ছিল কিন্তু রিয়াদের আনাগোনা বেশি ছিল । প্রায় দিন ক্লাস শেষে রিয়াদ ফারারী গাড়ি নিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসের সামনে আসতো । এলিনকে নিয়ে চলে যেত । এতো খারাপ লাগত মনে হত দশতলা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মরে যাই ।
কষ্টের কথা গুলো মাঝে মাঝে ব্লগে লিখতাম । কিন্তু কোন দিন এলিনকে বলতে পারি নি এই অনুভূতির কথা । প্রায় প্রতিদিনই এই রকম চলত । ক্যাম্পাসে যাওয়া দুর থেকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকা তারপর একবুক কষ্ট নিয়ে ফিরে আসা ।
কিন্তু একদিন এই রুটিনের ব্যতিক্রম হল । এলিনের খোজে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলাম ও সরাসরি এদিকেই আসছে । প্রথমে মনে হল হয়তো আমার পাশ দিয়ে হয়তো চলে যাবে কিন্তু তারপর মনে হল যে এলিন আমার দিকেই আসছে এবং আমাদেই দিকেই !
এটা মনে হতেই বুকের ভিতরকার হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেল । ভাল করে খ্যাল করে দেখলাম আমার হাত ও খানিকটা কাঁপছে ।
বারবার মনে হত মেয়েটা এদিকে কেন আসছে ?
আমার সামনে এসে এলিন বলল
-কোথাও যাবা তুমি ?
আমি তখন কোন জায়গায় আছি ঠিক বলতে পারবো না । তবে এলিন খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমার সাথে কথা বলছিল । আমি একটু ধীর স্থির হয়ে বললাম
-কোথাও ... মানে ?
-না মানে কোন কাজ আছে তোমার ?
-না ।
-আচ্ছা এসো আমার সাথে । তোমার সাথে কয়েকটা কথা আছে আমার ।
আমি সত্যি খুব অবাক হলাম !
খুব বেশি অবাক !
আমার না করার কোন ক্ষমতাই ছিল না । আমি কেবল রোবটের মত এলিনের পিছু নিলাম ।
লিফ্টের ভিতরেই এলিন আমার হাত ধরেই রইলো । আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল
-এমন করে দাড়িয়ে আছো কেন ? একটু ইজি হয়ে দাড়াও ।
-এই তো !
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম । আসলে এলিন যতবার আমার হাত ধরে বুকের ভিতর কেমন একটা ধরফরানী শুরু হয়ে যায় । সহজ হতে পারি নি । যখন এলিনদের ফ্লাটে ঢুকলাম তখনও এলিন আমার হাত ধরেই রেখেছে অস্বস্থি যে লাগছিল না তা কিন্তু ভাল লাগছিল খুব বেশি ।
ড্রয়িং রুমে ঢুকে একটু অবাক হলাম । মাঝবয়সী এক মহিলা বসে বসে পেপার পড়ছেন । আমাদের আওয়াজ পেয়ে মুখ তুলে তাকালেন ।
এলিন বলেছিল বাসায় কেউ নেই । এই জন্য অস্বস্থিটা একটু বেশিই লাগছিল কিন্তু এখন এই মহিলাকে দেখে অস্বস্থিটা একটু কম লাগছে । মনে মনে গেস করার চেষ্টা করলাম ইনি কে হতে পারে !
এলিনের মা ?
এলিন বলল
-আম্মু এ হচ্ছে অপু । আমার সাথে পড়ে । তোমাকে বলেছিলাম না অপুর কথা ?
ভদ্রমহিলা আমাকে বসতে বললেন । তারপর এলিনকে বললেন
-যাও অপুর জন্য কিছু নিয়ে এস ।
-আনছি ।
বলে এলিন চলে গেল ।
এলিনের মা আমাকে বললেন
-তুমি অপু ! এলিন তোমার কথা প্রায়ই বলে ।
-আমার কথা ?
-হুম । আসলে ও ওর বন্ধদের কথা কখনও বাসায় বলে না । হয়তো বলার মত কিছু নাই । মেয়েকে ঠিক মত ধরে রাখতে পারি নি তো ! তবে তোমার কথা ও প্রায়ই বলে ।
এলিনের নামে ক্লাসে অনেক রকম কথাই শোনা যেন । যার একটাও খুব একটা ভাল না । মনে মনে খারাপ লাগত । কিন্তু তবুও এলিনকে একটু ক্ষনের জন্যও মন থেকে দুর করতে পারি নি । শুনেছিলাম ও নাকি ড্রাগস নেয় । বয়ফ্রেন্ডের সাথে বিভিন্ন নাইট ক্লাবেও নাকি ওর আনা গোনা ।
এসব কথা আমি কেবলই শুনতাম আর আমার কষ্টের পাল্লাটা আসতে আস্তে ভারি হত । নিজের মনকে কতবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে আমি খুব সাধারন মানুষ, ওর মত মেয়েকে ভালবাসা মানায় না । কিন্তু মনকে কিভাবে বোঝায় ! এলিনও একই কথা বলেছিল ।
আমাদের ক্যাম্পাসের একটু পিছনে খুব বড় একটা লেক আছে । লেকের ধারে সাদা কাশ বনের মেলা । এলিন আমাকে এখানে নিয়ে এল । আমার কাছে তখনও ব্যাপারটা খানিকটা ঘোলাতে লাগছিল ।
আমি ওকে কত কথা বলতে চাই সেটা ঠিক আছে কিন্তু এলিনের কি কথা থাকতে পারে ? লেকপাড়ের একটা জায়গা দেখিয়ে এলিন আমাকে বসতে বলল । চুপচাপ কিছুক্ষন বসার পর এলিন বলল
-খুব অবাক হয়েছ তুমি ?
-কিছু টা !
এলিন বলল
-তোমার উপর আমি খানিকটা মনক্ষন !
আমি এলিনের কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম । আমার মুখে অবাক হবার ভাব দেখে এলিন বলল
-দেখ আমি খুব বেশি ভাল মেয়ে না আমি জানি । ক্লাসের অন্যান্য রা আমার সম্পর্কে কি ভাবে সেটাও আমি খুব ভাল করেই জানি । কিন্তু আমি কখনও চাই নি যে আমার কারনে কেউ কষ্ট পাক । কোন দিনও চাই নি ।
আমি চুপ করেই রইলাম । তবে মনের ভিতর একটা প্রশ্ন জাগছিল এলিনকে এসব কথা কে বলল । আমি তো কারও কাছে এসব কথা বলি নি । কেবল মাত্র ব্লগে ....
তাহলে কি !
-দেখ অপু তুমি খুব ভাল ছেলে । কিন্তু আমার জন্য ঠিক তুমি না । আবার জন্যও ঠিক আমি ফিট না ।
আমি বলতে চাইলাম যে মন কি এসব মানে ? কিন্তু খানিকটা নাটকের ডায়লগ হয়ে যাবে তাই বললাম না । বললাম
-আমি জানি আমি তোমার টাইপের না । এই জন্য কিছু বলি নি ।
-কিন্তু কষ্টতো পাচ্ছ ?
-এটাতে তো তোমার কোন হাত নেই ! তুমি কেন এতো ভাবছ ?
-কিন্তু কারনটা তো আমি । এটাই আমার কাছে ঠিক ভাল লাগে না ।
তারপর কিছুক্ষন কেউ কোন কথা বলি না । এলিন সাথে সময় যেন থেমে গেছে । এলিন দুরে লেকের পানির দিকে তাকিয়েই বলল
-তুমি আর কষ্ট পাবে না কেমন ?
আরে এটা কি আমার হাতে নাকি ? কত সহজে বলে দিলে যে আর কষ্ট পারে না ! এটা কি হয় নাকি !!
আমি আবার বাস্তবে ফিরে এলাম ।
আমি প্লাস্টিকের চেয়ারে বসেই থাকি । কিছুতেই যেন এখান থেকে যেতে ইচ্ছা করে না । এলিনকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করে না ।
-তুমি বাসায় যাবে না ?
এলিনের মা আমার কাধে হাত রাখলেন । ভদ্রমহিলাকে বেশ শক্ত মনে হল । এলিন বলেছিল তার মা তাকে একা একাই মানুষ করেছে । ওর বয়স যখন চার বছর ঠিক তখন ওর বাবা ওদের ফেলে চলে যায় । তারপর থেকেই ভদ্রমহিলা একা একা ই আছেন ।
এলিনের এই রকম মন ভাবের পেছন তার বাবার চলে যাও টাও একটা কারন ।
এলিন বলত আমি তোমাকে মন প্রান দিয়ে ভালবাসবো আর তুমি একসময় আমাকে ছেড়ে চলে যাবে তা হবে না !
তাই আসো আর যাও ! মনের কোন বাঁধনের ভিতরে আমি নাই । আমাকে বাধনের জড়ানোর চেষ্টা না করলেই ভাল ।
আমি বললাম
-আমি থাকি আন্টি । ওকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছে না ।
আন্টি আমার পাশেই বসেই বসে পড়লেন । কিছু ক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
-তুমি আমার মেয়েটাকে অনেক ভালবাসো তাই না ?
আমি চুপ করে থাকি । আন্টি আবার বললেন
-আসলে এলিন ওর বাবার চলে যাওয়াটা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না । ও ভেবে রেখেছে সবাই বুঝি ওকে ছেড়ে চলে যাবে । তাই হয়তো তোমার ভালবাসা ও বুঝে পারে না ! হয়তো চেষ্টাও করে না !
এলিনের সাথে ঐদিনের কথার পর থেকে নিজের কষ্ট টা একটু হলেও কম হল । ওর সাথে টুকটাক কথা বলতাম । ও নিজেও কথা বলতো আমার সাথে । যেদিন ক্লাস থাকতো না সেদিনও ওর বাড়ির সামনে যেতাম । গেটে দাড়িয়ে কথা বলতাম কিছুক্ষন । তারপর চলে আসতাম ! এভাবেই কাটছিল । কিন্তু...
ডাক্তারকে আইসিইউ থেকে বের হতে দেখলাম । আন্টি উঠতে গেলে আমি বললাম -
-আমি যাচ্ছি ।
এলিনার অবস্থা বেশ ক্রিটিক্যাল ছিল । জানি না ওর এখনকার অবস্থা কেমন ! আমি প্রথম যখন শুনলাম এলিন হাসপাতালে ভেবেছিলাম যে হয়তো এক্সসিডিং করেছে ! কিন্তু পরে শুনলাম রিয়াদ আরও কয়েকজন মিলে ওর পেটে ভাঙ্গা কাচের বোতল ঢুকিয়ে দিয়েছে !
এমন একটা কাজ কেন করলো ওরা ?
আমাকে দেখে ডাক্তার বলল
-রোগী আপনার কি হয় ?
-আমার বন্ধু ! এক সাথে পড়ি !
-আর কেউ আছে ?
-আমাকে বলুন ! ওর মা রয়েছে ! কিন্তু আমাকে বলুন প্লিজ !
ডাক্তার কি যেন ভাবলো !
-রোগীর অবস্থা খুব একটা ভাল না ! আমরা কেয়ারে রেখেছি । কিন্তু কিছু বলা যাচ্ছে না ।
আমি চুপ করে তাকিয়ে রইলাম ।হঠাৎ বললাম
-বাঁচবে তো ?
-এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না ! রোগী ড্রাগড ছিল । প্রচুর এলকোহল পাওয়া গেছে । আর কাঁচের ভাঙ্গা বোতল দিয়ে হিট করা হয়েছে তো ! আবস্থা বেশ খারাপ ।প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে । আর ..
ডাক্তার একটু যেন দ্বিধা করলো !
-আর কি ডাক্তার সাহেব ?
কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর ডাক্তার বলল
-শি ওয়াজ রেপড্ ! সেভার্যাল টাইম বিফর শি ওয়াজ হার্ট !
আমি কিছুক্ষন তাকিয়েই রইলাম !
ডাক্তার আবার বলল
-সময় না গেলে আমরা কিছু বলতে পারছি না ।
আমি কেবল চুপ করে দাড়িয়েই রইলাম !
এলিন আমাকে প্রায়ই বলতো
-আচ্ছা তুমি আমাকে সত্যি ভালবাসো ?
আমি কোন উত্তর দিতাম না ! কেবল তাকিয়ে থাকতাম অথবা হাসতাম !
-দেখ আমি বিশ্বাস করি না যে মানুষ কেবল মানুষের মন ভালবাসে ! এটা হতেই পারে না ! তুমি হয়তো মুখে বলছো না কিন্তু তোমারও ঐ একই দিকে আকর্ষন ! তুমি চাইলে আমার হাত ধরতে পারো ! অথবা আমাকে কিস করতে পারো ! আরো কিছু.....।
-চুপ ! প্লিজ !!
এলিন হাসে !!
-দেখি হাতটা ধরো তো !
-না ! আমি তোমার হাত ধরবো না !
-আমি জানি একদিন তুমি আমার হাত ঠিকই ধরবে ! আমি খয়ব ভাল করে জানি !
এলিন হাসতেই থাকে !
এই ভাবে এলিন প্রায়ই ওর হাত ধরতে বলতো ! আমি ধরতাম না । মনে মনে ভাবতাম যেদিন সত্যি ও মন থেকে হাত ধরতে বলবে সেদিন ওর হাত ধরবো !
কিন্তু আর কি সময় পাবো !!
আমি আস্তে আস্তে আইসিইউ এর দিকে এগিয়ে গেলাম । দরজায় ধাক্কা দিলাম ।
-কি দরকার ?
-আমি একটু ওর হাত ধটে চাই !
আমি জানি না আমার বলার ভিতর কি ছিল অথবা ডাক্তার কি মনে করলো ! দেখলাম সে আমাকে পথ ছেড়ে দিল ।
বলল
-বেশি সময় থাকবেন না । ঠিক আছে !
ডাক্তার বেড়িয়ে গেল ।
আমি চুপচাপ বসে রইলাম ! ওর পাশে । ওর হাত ধরবো !
ধরবো !
মনে মনে বললাম, আজকে বলবে না হাত ধরতে !!
আজ তুমি না বললেও আমি তোমার হাত ধরো !! অবশ্যই ধরবো !!
বাড়িয়ে দাও তোমার হাত !! আমি আবার তোমার আঙুল ধরতে চাই !!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৭৪টি মন্তব্য ৭৪টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন


আলোচিত ব্লগ
জানবেন কিতাব ও হিকমাত, কিন্তু মানবেন শুধুই হিকমাত
সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন
নবীজির জন্মের আগে আরবে গজব অবস্থা ছিলো
নবীজির জন্মের আগে আরবে বেশ কিছু ধর্ম ছিলো।
ধর্ম না বলে কুসংস্কার বলা ভালো। সেই সময় মানুষ রসিকে সাপ মনে করতো। মগজহীন মানুষ দিয়ে ভরা ছিলো আরব। সেই... ...বাকিটুকু পড়ুন
অনু গল্পঃ ব্যর্থ বাসনার দাহ
খুব তাড়াহুড়া করে বের হয় তন্দ্রা, আজ স্কুলে যাবে না, কোনো টিউশনি করাবে না, ফোন করে সব student-কে মানা করে দিয়েছে। এগারোটার আগে ওকে এয়ারপোর্ট পৌঁছতে হবে।
নাবিল আসছে,... ...বাকিটুকু পড়ুন
আজকের ডায়েরী- ১৫২
এনসিপি আওয়ামীলীগকে এত ভয় পাচ্ছে কেন?
অলরেডি আওয়ামীলীগের তো কোমর ভেঙ্গে গেছে। তবু রাতদুপুরে এত আন্দোলন কেন? দেশে ১৮/২০ কোটি মানুষ। তারা তো আওয়ামীগকে ভয় পাচ্ছে না। তাহলে এনসিপির এত... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি কি দু’জন ভারতীয়র আচরণ দিয়ে পুরো ভারতকে বিচার করব?
সাম্প্রতিককালে একটি আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে ভারত এবং চীনের জনসংখ্যাগত আনুপাতিক কারণে অংশগ্রহণ বেশি। এই কমিউনিটিতে ভারত, চীন ছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, ইউক্রেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন