ঠিক এই সময় তেমন মেজাজ খারাপ হচ্ছে মোবাইলটার উপর । সবে মাত্র চোখটা লেগে এসেছিল আর তখনই যেন ফোনটা বেজে উঠল । কলার কে খুব একটা ধমক দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই ফোনটা হাতে নিলাম কিন্তু স্ক্রিনে নামটা দেখে অবাকই হতে হল ।
নিহিনের মা ফোন দিয়েছে !
এতো রাতে ?
নিহিন ফোন দিলে না একটা কিছু বোঝা যেত !
নিহিনের প্রায়ই ইচ্ছা করে রাত বিরাতে আমার সাথে কথা বলতে । কিন্তু তাই বলে ওর মা কেন ফোন দিবে ? আর ঐ দিনকার ঘটনার পর তো আমার কাছে ফোন দেবার কোন কথা না ।
তাহলে ?
আমি ফোনটা রিসিভ করলাম ।
-স্লামালাইকুম আন্টি ।
নিহিনের মা সালামের উত্তর দিয়ে খানিকটা সময় চুপ করে রইল । তারপর বলল
-তোমাকে ঘুম থেকে তুললাম ! কিছু মনে কর না । কিন্তু ...
-না আন্টি ঠিক আছে । কোন দরকার ছিল ?
-তুমি কোথায় থাকো ?
কি রে ভাই এই রাত বিরাতে আমার বাসার ঠিকানা কেন খুজে ! আমি বললাম
-এই তো আন্টি মোঃপুর ।
-আচ্ছা বাবা তুমি কি একটু আসতে পারবা আমার বাসায় ।
বাসায় ?
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় দুইটার কাছাকাছি বাজে । এতো রাতে আমি কিভাবে যাবো ?
আমি বললাম
-আন্টি এতো রাতে ?
-না কোন সমস্যা নাই । আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি । তুমি একটু আসো । প্লিজ বাবা একটু আসো ।
আমি আর না বলতে পারলাম না ।
ফোন রাখার পর মনে হল যে সমস্যা কি হল যে নিহিনের মা আমাকে এতো রাতে একেবারে বাসায় আসতে বলল । যাই কিছু হোক না কেন এর সাথে যে নিহিন সরাসরি জড়িত তা আমি নিশ্চিত ।
কিন্তু মেয়েটা আবার কি পাগলামো করলো কে জানে ?
ঐ দিনতো পড়াচ্ছি এমন সময় আমার হাত চেপে ধরলো । এই মেয়েটার কি ভয়ডর কিছু নাই ?
তাড়াতাড়ি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম
-কি হচ্ছে এসব ? তোমার মা যে কোন সময় চলে আসবে ।
-আসলে আসবে !
এমন একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব ! আমি বললাম
-তোমার ভয় লাগে না ?
নিহিন আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনার কেন এতো ভয় লাগে ? আমার আম্মু জানলে কি এমন হবে ? আপনাকে মারবে?
-ব্যাপারটা তা না ! আমি এখানে রফিক ভাইয়ের রেফারেন্সে এসেছি । কিছু এদিক ওদিক হলে ওনাকে কি জবাব দিবো আমি বল ?
-ঐ রফিক ভাইয়ের দোহাই দিয়ে একবার চলে গিয়েছিলেন তাই না ? এবার ...
-এবার?
নিহিন একটু হেসে বলল
-কিছু না ! আর আমার জন্য না হয় একটু বকা শুনলেনই !
আমি আর কিছু বলতেই পারলাম না । নিহিন বলল
-কালকে কি আপনার কোন পরীক্ষা আছে ?
-কেন ?
-আছে কি না আগে বলেন ?
-না । তবে ক্লাস আছে ।
-কাল ক্লাস করতে হবে না । কালকে লালটিপ দেখতে যাবো কেমন ?
আহা কত সহজে বলে ফেলল লালটিপ দেখতে যাবো ।
-দেখো কাল আমার ইম্পর্টেন্ট ক্লাস আছে ।
নিহিন আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন এর থেকে অদ্ভুদ কথা আর সে শুনে নাই !
আমি নিচে নেমে আসলাম । ঢাকায় থাকি অনেক দিন কিন্তু রাতে কখনই বাইরে বের হওয়া হয় না ! বাইরে বের হতে না হতেই দেখলাম নিহিন দের লাল টয়োটা হাজির । এতো জলদি কিভাবে আসলো কে জানে ?
আমি গাড়িতে উঠে বসলাম ।
মনের ভিতর চিন্তাটা লেগেই আছে । আসলে কি এমন হল কে জানে ?
এতো জরুরী ভাবে তলব করার মানে কি কে জানে ?
নিহিন কে কি একবার ফোন দিবো ?
না থাক !
ফাকা রাস্তায় গাড়ি চলছে এগিয়ে আমি ভবছি নিহিনের কথা ! মেয়েটা আবার কোন পাগলাম করল !!
ঐদিনের পর নিহিনকে নিয়ে সত্যিই আমাকে লালটিপ দেখতে যেতে হয়েছিল । প্রথমে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু সকাল বেলা নিহিন ইউনিভার্সিটিতে এসে হাজির । ঐ দিন করা মত । তবে আজ স্কুল ড্রেস পরে আসে নি কালো রংয়ের একটা জিন্স আর কামিজ পরেছ ।
আমি বললাম
-বাসা থেকে আসছো ?
নিহিন মাথা নাড়াল ।
-স্কুল ড্রেস কই ?
-এক বান্ধবীর বাসায় থেকে বদলে নিয়েছি ।
-তোমার ঐ বন্ধু কি বলল ?
-কি বলবে ? ও সব জানে ?
না এই মেয়েকে নিয়ে আর পারা যাবে না । আমি যত চাচ্ছি ব্যাপারটা গোপন রাখার জন্য এই মেয়ে ততই আরো সবার কাছে বলে বেড়াচ্ছে । আল্লাহ জানে কি হবে !!
আমার ভয় ছিল একদিন ওর ফ্যামিলি জেনে যাবেই ! কিন্তু এতো জলদি জেনে যাবে ভাবি নাই । লালটিপ দেখে বাসায় আসার পরপরই রফিক ভাইয়ের ফোন ,
-তোমাকে আমি কি বলেছিলাম ?
-কি হয়েছে ভাইয়া ?
-জানো না কি হয়েছে ? কি করেছ জানো না ? অন্তত আমার দিকটা ভেবে দেখতে ?
আমি কিছু বললাম না । কারন খুব ভাল করেই জানি ভাইয়া কি ব্যাপারে বলছে !
রফিক ভাই বলল
-কাল থেকে তুমি আর ও বাড়িতে পড়াতে যাবে না । নিহিনের মা আমাকে পরিস্কার ভাবে বলে দিয়েছে । আসলে দ্বিতীয়বার তোমাকে বলাটাই আমার ভুল হয়েছে !
প্রথম বার যখন নিহিন কে পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছিলাম তখন এই রফিক ভাই ই আমাকে আবার ওখানে নিয়ে গিয়েছিল । এখন মনে হচ্ছে না গেলেই বোধহয় ভাল হত !!
ঐ দিন রাতে নিহিন ফোন দিল কিন্তু আমি ফোন ধরলাম না ! বেশ কয়েকবারই দিল ! আর আজ রাতে এই অব্স্থা !!
আমি যখন নিহিন দের বাসায় পৌছাই তখন সব কিছু যেন নিঝুম পুরি ! নিহিনের বাবা বসার ঘরে মুখ গম্ভীর করে বসে আছে । আমাকে দেখে কিছু বলল না । দেখলাম নিহিনের মা আামর দিকে এগিয়ে এল !
নিহিন কি ঘুমিয়ে আছে ??
আমি নিহিনের মা কে ক্ষীণ গলায় বললাম
-কি হয়েছে ? বস কিছু ঠিক আছে ?
-বসো বলছি !
আমি সোফার এককোনে বসলাম । নিহিনের মা বসলো আমার মুখোমুখি !
-নিহিনের সাথে তোমার একটা রিলেশন চলতেছে, তাই তো ?
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম । এই কথার উত্তর দেওায়র মত কিছু নাই ! কিন্তু আমার মনে হল কেবল এই কথা বলার জন্য নিহিনের মা আমাকে এখানে ডাকে নি । অন্য কোন ব্যাপার আছে !
-আমি জানি নিহিনের আগ্রহেই এটা হয়েছে ! নিহিন বলেছে আমাকে । আসলে নিহিন যখন জানতে পারলো যে তোমাকে আমি আসতে মানা করে দিয়েছি ও খুব বেশি রিএক্ট করল না । আমি খানিকটা অবাক হয়েছিলাম । আমি ভেবেছিলাম ও খুব চিৎকার চেঁচামিচি করবে !
নিহিনের মার কথা শুনে আমিও খানিকটা অবাক হলাম । আমারও মনে হয়েছিল যর নিহিন খুব রিএক্ট করবে ! নিহিনের মা বলল
-কিন্তু নিহিনের মনে অন্য কিছু ছিল । নিহিন ঐ দিন থেকে খাওয়া দাওয়া একদমই বন্ধ করে দেয় !! একফোটা পানি পর্যন্তও ও এখনও মুখে নেয় নি !
মাই গড !!
তাওতো দুইদিন আগের কথা ! এই দুইদিন নিহিন কিছু খাই নি !!
-আমরা অনেক চেষ্টা করেছি । কিন্তু কিছুই খাওয়াতে পারি নি ! তুমি যদি একটু দেখতে !!
একাট হিন্দি প্রবাদের কথা মনে পড়ল ।
আব আয়া উট পাহার কি নিচে !!
একবার মনে হল বলি কেন করবো ? তারপর মনে হল, না থাক !!
নিহিন না খেয়ে আছে আমার জন্য !! এটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ন মনে হল !!
নিহিনের ঘরে লাইট জ্বলছে । নিহিন ওর বিছানা শুয়ে আছে ! চেহায়া কেমন যেন শুকিয়ে গেছে !!
আমি সত্যি আশ্চার্য হয়ে গেলাম ওকে দেখ !!
এই মেয়ে আমার জন্য দুদিন না খেয়ে থেকেছে !!
আমি ওর পাশে বসতেই ও চোখ মেলে তাকাল ! কিছু তাকিয়ে থাকার পর মনে হল যেন ওর চোখে পানি জমতে শুরু করেছে ! বললাম
-এমন পাগলামো কেন করলে ?
-কেন করলাম ? আমার মা আপনাকে আসতে মানা করলো সে দোষ করলো আর আপনি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন ? আমি কি করেছি !
-আচ্ছা ঠিক আছে ? আমার ভুল হয়েছে ! এখন কিছু মুখে দাও !
-না । খাবো না ।
-কেন খাবে না ! এই তো আমি এখানে !
-আমি খাবো না !
-এটা কেমন কথা ?
-আমি খাবো না ।
-আচ্ছা কি করলে খাবে বল ?
-কিছু করলে খাবো না ! আপনাকে সেদিন একটা কাগজ দিয়েছিলাম মনে আছে ?
-আছে ।
-ওখানে কি লেখা ছিল ? আমি বলেছিলাম না আপনাকে ছাড়া আমি মরে যাবো ! এখন সত্যি সত্যিই আমি মরে যাবো !
-আরে বাবা, আমিতো এসেছি । যাই নি তো !
-তাহলে কেন আমার সাথে এমন করলেন ? কেন করলেন ?
আমি কি বলবো ঠিক বুঝলাম না । চুপ করে রইলাম কিছুক্ষন !
তারপর বললাম
-বল কি করতে হবে ? যা চাইবে তাই হবে ?
নিহিন কিছুক্ষন কি যেন ভাবল । তারপর বলল
-আমার হাত ধরে প্রমিজ করেন যে আর কোন দিন আমাকে ছেড়ে যাবেন না ।
-কারলাম !
-হাত ধরে !
আমি নিহিনের হাত ধরেই কথাটা বললাম ।
-আর ?
-আর ......আমাকে একটা কিস করেন ?
-কি ???? তোমার কি মাথা খারাপ নাকি ??
-না হলে নাই । আমি কিছু খাবো না !
আমি অসহায় বোধ করলাম । এই যেমন জেদি যা বলবে তাই করবে !! এখন আমি কি করি ?
-আচ্ছা ! তুমি যা চাও তাই হবে ! এখন কিছু খাও ! তোমার বাবা মা বসে আছে ! কথা দিলাম !
নিহিন কিছু যেন ভাবলো ! তারপর বলল
-প্রমিজ ??
-হ্যা কথা দিলাম !!
কিভাবে কত কিছু হয়ে গেল । আমি তো ভেবেছিলাম আর কোনদিন এই বাসাতে আসা হবে না । কিন্তু ...।
এই হল গল্প ! যেভাবে আমার ছাত্রী আমার গার্লফ্রেন্ড হল । এবার খুব জলদি গার্লফ্রেন্ড থেকে বউ ও হয়ে যাবে !! :!> :!> :#> :#> :#>
আমার ছাত্রী যেভাবে আমার গার্লফ্রেন্ড হল !!