বেচারী একটা কথাও বলেনি । কেবল আমার দিকে নির্বাক চোখে তাকিয়ে ছিল । আসলে ও ভাবতেও পারেনি যে আমি ওর গায়ে হাত তুলতে পারি ! কিন্তু মাথা গরম হয়ে আমার কান্ড জ্ঞান কিছু থাকে না । কাকে কি বলছি কি করছি কিছুর ঠিক থাকে না ।
অফিসের কেবিনে চুপচাপ বসে ছিলাম । সকাল থেকে নিশি একবার আসে নি । আগে প্রতি দিন অফিস এসেই ও আমার কেবিনে আসতো আজ লাঞ্চ আওয়ার হয়ে আসছে এখনও ও আসছে না । মেজাজটা গরম হচ্ছে । তার উপর নিশির উপর রাগ লাগছে খুব ।
ওর উপর রাগ উঠছে ঠিক এমন সময় নিশি দরজা ঠেলে কেবিনে ঢুকল । আমার দিকে খানিক ইতস্তত তাকিয়ে সামনের চেয়ারটাতে বসল ।
-এতোক্ষন আসো নি কেন ?
আমার কথার জবাবে ও চুপ করে থাকল ।
-চুপ করে থাকবে না । কথার জবাব দাও । এতোক্ষন কেন আসো নি ?
নিশি ক্ষীন গলায় বলল কাজ
-করছিলাম ।
-¿¥§&%£€ ! তুমি কি কাজ করছো আমার জানা আছে !!
হঠাৎ করে আমার রাগ বেড়ে গেল ।
-কালকে চড় খেয়ে তোমার শখ মেটে নি ?
নিশি এবার কোন কথা বলল না । চুপ করেই থাকল । আমি আমার রাগ চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছি । অফিসে কিছু করে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে ।
নিশি বলল
-আমার একটু কলাবাগান যাওয়া লাগবে । একা একা যেতে ইচ্ছা করছে না । যাবে আমার সাথে ?
-মানে ?
আমি যে এতোক্ষন ওর সাথে চিত্কার চেচামেচি করছি তার কোন ভ্যালুই নাই ওর কাছে । ও আছে ওর কলা বাগানে যাওয়া নি ।
ওর এই দোষটা খুব আছে । আমি একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছি ও সেটা নিয়ে কোন কথা না বলে অন্য একটা ভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলবে । কাল কেও ঠিক এই জন্য ওকে চড় মেরেছিলাম ।
কাল যখন কেবিনে ও আসলো তখন আমার মুখ খুব গম্ভীর ছিল । বাসা থেকে খুব চাপ দিচ্ছে বিয়ে জন্য । মা তো একে বারে বিয়ে করানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে । আমার মুখ গম্ভীর দেখে নিশি বলল
-কি হয়েছে ?
বিয়ের কথা বললাম ওকে ।
-তাই নাকি ?
যেন খুব মজার কোন কথা বলেছি ।
-করে ফেল । আমি মেয়ে দেখবো ।
-নিশি ফাজলামো করবে না ।
-আচ্ছা করবো না । এখন আমার সাথে একটু নিউ মার্কেটে যেতে পারবে ? একটু দরকার ।
-নিশি আমি কিন্তু সিরিয়াস ।
-আরে আমিও তো সিরিয়াস । আমাকে নিউ মার্কেট যেতেই হবে ।
মেজাজটা সত্যি সত্যি গরম হয়ে গেল । কষে একটা চড় লাগালাম ওকে ।
-এক্ষনি বেড়িয়ে যাও । আমার সামনে থেকে ।
নিশি কিছুক্ষন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । তারপর মাথা নিচু করে চলে গেল ।
-যাবে না ? নিশির কন্ঠে কেমন একটা আকুতি ।
-কেন যাবো আমি তোমার সাথে ? তুমি কে আমার ?
-চল না প্লিজ ।
-শোন ঢং করবা না , ঠিক আছে ? তোমার সাথে আমি যাবো না । যাকে বিয়ে করবা তার সাথে যাও গে । আমাকে যখন রিফিউজ করেছ তখন আমার সাথে যাওয়ার এতো শখ কেন ?
নিশি একটু মন খারাপ করল । বলল
-এমন কেন করছ আমার সাথে ? আমি ....
ও বলতে গিয়ে থেমে গেল ।
-আচ্ছা ঠিক আছে যেতে চাও না যেতে হবে না । আমি যাই ।
ও যেন কি বলতে চেয়েছিল । কিন্তু থেমে গেল । আসলে ও আমাকে কেন বিয়ে করতে রাজি হল না আমি এখনও ঠিক বুঝতে পারি নি । গভীর কোন কারন আছে কি ? ওর চোখ দুটো চিৎকার করে বলছে যে ও আমাকে ভালবাসে ।
তাহলে বিয়েতে রাজি কেন হচ্ছে না ?
-দাড়াও ।
নিশি দাড়াল ।
-কখন যেতে হবে ?
নিশির মুখে হাসি ফুটে উঠল । কি মিষ্টি একটা হাসি ! তবে একটু যেন বিষন্ন ।
-অফিসের পর । ও আবায় হাসল ।
রিক্সায় চড়ার সময় নিশির হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিলাম । বহুদিন ওর হাতটা ভাল করে ধরা হয় না ।
-খুব ব্যাথা পেয়েছিলে ?
-ব্যাথা ? কেন ?
-ঐ যে কালকে চড় মারলাম তোমার গালে ।
ওর গালটা আলতো করে স্পর্শ করল । ও ওর মুখটা একটু সরিয়ে আরো একটু ভাল করে আমার হাতের উষ্ণতা নিল ।
-রাগ করেছ আমার উপর ?
- আমি কখনও তোমার উপর রাগ করেছি কখনও ?
ও ওর হাতটা দিয়ে আমার হাত আর একটু ভাল করে ওর গালের সাথে চেপে ধরল
-তুমি ছাড়া আর কে আছে আমার এখানে ?
আমি নিশির দিকে তাকিয়ে থাকি । আমার জন্য মেয়েটার ভালবাসার কোন কমতি নেই । আমাকে ছাড়া ও আর কিছু ভাবেও না । তাহলে ও আমাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না কেন ?
আমি বলল
-জানো নিশি আমি এখনও সেই স্বপ্নটা দেখি ।
নিশি আমার দিকে বিষন্ন চোখে তাকিয়ে রইল ।
-মনে আছে আমরা ঠিক করেছিলাম আমরা প্রতিদিন রাতে ছাদে যাবো । তোমার কোলে মাথা রেখে শোবো । তুমি আমার বিলি কেটে দিবে । রাত বেশি হয়ে গেলে বাসায় যাবো । কোন কোন দিন সারা রাত গল্প করবো । তুমি ঘুমাতে চাইলেও তোমাকে ঘুমাতে দেবো না ।
নিশি এক ভাবে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে । ওর চোখে পানি জমতে শুরু করেছে । আমি আবার বললাম
-বিয়ের দুবছর পর আমরা একটা বাবু নেব । তোমার মনে আছে সব সময় একটা মেয়ে বাবু চাইতে । এমন কি তার নামও ঠিক করে রেখেছিলে । নাম টা মনে আছে তোমার ?
-অপু চুপ কর ।
নিশির চোখ দিয়ে ততক্ষনে পানি পরতে শুরু করেছে । আমি আবার বললাম
-মনে আছে তোমার ?
নিশি কাঁদতে কাঁদতেই বলল
-মনে আছে আমার !
-তাহলে অন্য কিছু কেন তোমার মনে নেই ? তুমি কেন আমাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছ না ? আমরা পারফেক্ট কাপল । একে অপরকে এতো ভালবাসি তাহলে তুমি কেন রাজি হচ্ছ না ?
নিশি কোন কথা বলল না । মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগল ।
-আচ্ছা ঠিক আছে ! আমি বললাম
-তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না , ঠিক আছে । মেনে নিলাম । আমাকে তুমি একটা যুক্তি সঙ্গত কারন কারন দেখাও ।
আমি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললাম
-হ্যা এমন হতে পারে যে এখন তুমি আর আমাকে ভালবাসো না ।
নিশি জট করে আমার দিকে তাকাল ।
-কি ভালবাসো না আর ?
নিশি নিরব চোখে তাকিয়ে থাকল আমার দিকে । ওর চোখ দিয়ে এখনও পানি পড়ছে । কেমন যেন একটা অভিমান দেখলাম ওর চোখে ।
-কি ভালবাসো ?
ওর চোখে দিকে তাকালাম । আবার বললাম
-বাসো না ?
অনেকক্ষন পর বলল
-বোঝ না? অপু আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি । অনেক বেশি । তাইতো তোমার ভাল চাই । আমার কারনে তোমার কোন ক্ষতি হবে এটা আমি কোন দিন মেনে নিতে পারবো না ।
-মানে কি ? তোমার দ্বারা আমার কিভাবে ক্ষতি হবে ? ও কোন কথা বলল না ।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৫:২০